প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দেন ভ্রমণপিপাসুরা। কেউ ভালোবাসেন অ্যামাজনের গহীন জঙ্গলে রোমাঞ্চকর মুহূর্তের স্বাদ নিতে, কারও আবার পাতায়া সৈকতে গা এলিয়ে সমুদ্রস্নানের মুগ্ধতায় জড়াতে ভালো লাগে। তবে পৃথিবীর যেকোনও প্রান্তে ঘুরতে গিয়ে সেখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে মিশতে না পারলে অপূর্ণতাবিস্তারিত পড়ুন
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দেন ভ্রমণপিপাসুরা। কেউ ভালোবাসেন অ্যামাজনের গহীন জঙ্গলে রোমাঞ্চকর মুহূর্তের স্বাদ নিতে, কারও আবার পাতায়া সৈকতে গা এলিয়ে সমুদ্রস্নানের মুগ্ধতায় জড়াতে ভালো লাগে।
তবে পৃথিবীর যেকোনও প্রান্তে ঘুরতে গিয়ে সেখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে মিশতে না পারলে অপূর্ণতা থেকে যায়। আর ভিন্ন দেশের ভিন্ন গোত্রে সংস্কৃতির পার্থক্যটা সবচেয়ে বেশি ফুটে ওঠে খাবারে। বিশ্বজুড়ে কিছু কিছু খাবারের উৎসব আছে, যেগুলো দেখলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য! বেড়ানোর ফাঁকে এসব আয়োজন উপভোগ্য লাগে সবার কাছে।
ধরুন– সড়কপথে বেরিয়েছেন, টাইমিংয়ে মিলে গেলে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার পথেই দেখে নিতে পারেন বিচিত্র সব খাবারের উৎসব। কয়েকটিকে মনে হতে পারে বেশ উদ্ভট। কিছু কিছু দেখলে তো বিশ্বাসই হবে না! বানরের জন্য বিশাল ফলের স্তূপ, হাজার হাজার ডিম ভেঙে বানানো অমলেট; এমনকি পোঁকা খাওয়ার মতো অদ্ভুত আয়োজন আছে এর মধ্যে!
মাংকি বুফে ফেস্টিভ্যালপ্রতি বছরের নভেম্বরে মাংকি বুফে ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করে থাইল্যান্ডের খেমের যুগের মন্দির ফ্রা প্রাং স্যাম ইয়ট। মজার বিষয় হলো– মানুষ নয়, উৎসবের মুখ্য চরিত্র হলো বানর! লম্বা লেজ আকৃতির এই প্রাণীদের সামনে কয়েক মন ফল রেখে আতিথ্য দেওয়া হয়। উঁচু আকৃতিতে ধাপে ধাপে স্তূপের মতো সাজানো থাকে বিভিন্ন ফল। খুব কাছে দাঁড়িয়েই অদ্ভুত এই আয়োজনের সাক্ষী হতে পারেন ভ্রমণপ্রেমীরা। গতবার নানান রঙের ফলে উৎসব হয়ে ওঠে আকর্ষণীয়। তখন বানরদের জন্য ছিল তরমুজ, আনারস, ড্রাগন ফ্রুটস। এছাড়া সফট ড্রিংকসেরও ব্যবস্থা রাখা হয়।
ওয়ার্ল্ড টেস্টিকেল ইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ
উৎসবটি খাওয়া-দাওয়া, মজা ও উত্তেজনায় ভরপুর। বিচিত্র এই আয়োজন উপভোগের সুযোগ মিস করা ঠিক হবে না কারও! এমন খাবারের উৎসব দেখার সুযোগ মেলা ভার। উৎসবটা কীসের জানেন? প্রাণীর অণ্ডকোষ দিয়ে বানানো খাবারের! রাঁধুনিদের খাবার প্রতিযোগিতা দেখার জন্য দর্শকরা জড়ো হয়। রন্ধনশিল্পীরা অণ্ডকোষ দিয়ে বানানো পিৎজা ও গোলাস বানাতে প্রতিযোগিতায় নামেন। তাদের তৈরি করা খাবারের স্বাদের ওপর ভিত্তি করে বিচারক বিজয়ীকে দেন ‘দ্য বলিয়েস্ট ম্যান ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর খেতাব।
ওনি প্যানকেক রেসইংল্যান্ডের ওনি এলাকায় হওয়া প্রতিযোগিতাটি বিচিত্র খাবারের উৎসবগুলোর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে মজার। এই উৎসবে খাবার শুধু বানালে হবে না, সেই খাবার হাতে করে দৌড়ে নির্দিষ্ট গন্তব্য পেরোতে হবে প্রতিযোগীকে!
স্থানীয়দের মতে, ১৪৪৫ সাল থেকে হয়ে আসছে প্যানকেক রেস। এই উৎসবে অংশ নিতে পারেন কেবল ১৮-ঊর্ধ্ব মেয়েরা। আর অবশ্যই তাদের প্রত্যেককে অন্তত তিন মাস থাকতে হবে ওনি শহরে। সুতরাং চাইলেই প্রতিযোগিতায় নাম লেখানো যাবে না।
খাবার নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সব মেয়েদের অবশ্যই স্কার্ট, অ্যাপ্রন ও মাথায় কাপড় পরতে হবে। একইসঙ্গে দৌড়ানোর সময় নিজের বানানো প্যানকেক নিতে ভুললে চলবে না। এই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের ওনি মার্কেট পালেস থেকে প্যারিশ চার্চ পর্যন্ত ৪১৫ গজ পথ দৌড়াতে হয়।
জায়ান্ট অমলেট ফেস্টিভ্যালউৎসবটির একটি ইতিহাস আছে। বলা হয়ে থাকে, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট একবার ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চল দিয়ে যাওয়ার পথে বেসিয়েরেসে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন। সেখানকার এক পান্থশালার মালিকের হাতে বানানো ডিম ভাজি (অমলেট) খেয়ে তিনি এতই তৃপ্তি পেয়েছিলেন যে, পরের দিন শহরের সব ডিম নিয়ে আসার আদেশ দেন। তার কথামতো যত ডিম ছিল, সব নিয়ে এসে নেপোলিয়নের সৈন্যবাহিনীর জন্য বিশাল এক অমলেট বানানো হয়েছিল।
এখন পর্যন্ত বেসিয়েরেস সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। ইস্টার সানডেতে তারা ১৫ হাজার ডিম দিয়ে বানায় বিশাল আকৃতির অমলেট। কয়েকশ’ মানুষ এই উৎসবে রান্নায় দায়িত্বে থাকেন। আর উৎসবে অংশ নেওয়া মানুষেরা বিশাল অমলেটের খানিকটা অংশ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন।
ফ্রান্সের আরও কয়েকটি শহরে নিজ উদ্যোগে অনেকেই অমলেট ফেস্টিভ্যাল করে থাকে। যার মধ্যে অন্যতম লুইসিয়ানা ও আবেভিল। প্রতি বছরের অক্টোবরে ৫ হাজার ডিম দিয়ে উৎসবের প্রস্তুতি নেয় তারা।
বাগফেস্টযুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার ন্যাচারাল সায়েন্স মিউজিয়ামে আয়োজিত খাবারের উৎসবটি ভয়ঙ্কর! এখানে মানুষ এমন সব খাবার খায়, শুনলেই গা শিরশির করবে। ভাবছেন কী হতে পারে? ঠিক ধরেছেন, পোঁকা খাওয়ার উৎসব এটি। ছোট ছোট পোঁকা দিয়ে বানানো সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয় অদ্ভুত উৎসবটিতে। স্থানীয় শেফরা তৈরি করেন তেলাপোকা ও ছারপোকার মতো ছোট আকৃতির পোঁকা দিয়ে বানানো বিভিন্ন পদ। উৎসবে জড়ো হওয়া দর্শনার্থীরা মুখে রঙ এঁকে উপভোগ করেন অদ্ভুত খাবার। একইসঙ্গে থাকে বিভিন্ন পোঁকার দৌড় উপভোগের সুযোগ।
নাইট অব দ্য র্যাডিশেসমুলা দিয়ে বানানো খাবার নিয়ে অনেকে নাক শিঁটকান! অথচ এই মুলাই মেক্সিকোর ওক্সাকার একটি শৈল্পিক উৎসবের মূল উপকরণ। প্রতি বছরের ডিসেম্বরে স্থানীয় শিল্পীরা মুলা ব্যবহার করে শৈল্পিক চিত্র তুলে ধরেন। সাধারণ এই সবজিকে মানুষের আকৃতি দেন তারা। কেউ বানান গাড়ি, ভালোবাসার কোনও নিদর্শন কিংবা বিখ্যাত কোনও জায়গা। দেখলে বিশ্বাসই হবে না মুলা দিয়ে বানানো হয়েছে এগুলো। অথচ এসব বানাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় পান শিল্পীরা।
ফেলসমেয়ার ফগ লেগ ফেস্টিভ্যালবিশ্বের সবচেয়ে বড় ফগ লেগ ফেস্টিভ্যাল হিসেবে বিবেচি ব্যাঙ নিয়ে ফ্লোরিডার ফেলসমেয়ার এই অদ্ভুত আয়োজন। চার দিনের উৎসবটিতে অংশ নিয়ে ব্যাঙের পা খাওয়ার জন্য পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষকে স্বাগত জানানো হয়। তাদের আগ্রহ ও অংশগ্রহণে ফেলসমেয়ারকে এখন বলা হয় ‘ফগ লেগ ক্যাপিটাল অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। শিশুদের কথা ভেবে ছোট্ট পরিসরে শুরু হয়েছিল অদ্ভুত এই খাবারের উৎসব। এই আয়োজনের সুবাদে ফেলসমেয়ার এখন বিচিত্র খাবারের সন্ধানকারীদের তীর্থস্থান।
সংক্ষেপে দেখুন
যা কিছু আমরা প্রথম দেখি সবগুলোই অদ্ভুত লাগে। সাগর অনেক গভীর। এর যত গভীরে যাবেন তাপমাত্রা ততই কমবে আর চাপ বাড়বে। তাই সেখানে টিকে থাকতে হলে প্রাণিদের বৈশিষ্ট্য আলাদা হতে হয়। আর আমরা গভীর সাগরের প্রাণিদের তেমন দেখতে পাইনা বিধায় আমাদের কাছে সেগুলোকে অদ্ভুত লাগে।
যা কিছু আমরা প্রথম দেখি সবগুলোই অদ্ভুত লাগে। সাগর অনেক গভীর। এর যত গভীরে যাবেন তাপমাত্রা ততই কমবে আর চাপ বাড়বে। তাই সেখানে টিকে থাকতে হলে প্রাণিদের বৈশিষ্ট্য আলাদা হতে হয়। আর আমরা গভীর সাগরের প্রাণিদের তেমন দেখতে পাইনা বিধায় আমাদের কাছে সেগুলোকে অদ্ভুত লাগে।
সংক্ষেপে দেখুন