Home/আকিজ বিড়ি
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
গুজরাটের গোমতীপুর নিবাসী, জব্বলপুর প্রবাসী মোহনলাল প্যাটেল আর হরগোবিন্দদাস প্যাটেল। একেবারে নিশ্চিত হয়ে বলতে পারব না, তবে স্থানকাল অর্থাৎ জিওগ্রাফিক লোকেশান, আর হিস্টোরিকাল টাইমলাইন মিলিয়ে দিতে পারব আশা করি। সেটুকুতে যদি সন্তুষ্ট থাকতে পারেন তাহলে পড়ুন, নয়ত বাকি স্কিপ করে সিধে মন্তব্যের বাক্সে গিয়েRead more
গুজরাটের গোমতীপুর নিবাসী, জব্বলপুর প্রবাসী মোহনলাল প্যাটেল আর হরগোবিন্দদাস প্যাটেল।
একেবারে নিশ্চিত হয়ে বলতে পারব না, তবে স্থানকাল অর্থাৎ জিওগ্রাফিক লোকেশান, আর হিস্টোরিকাল টাইমলাইন মিলিয়ে দিতে পারব আশা করি। সেটুকুতে যদি সন্তুষ্ট থাকতে পারেন তাহলে পড়ুন, নয়ত বাকি স্কিপ করে সিধে মন্তব্যের বাক্সে গিয়ে আমার গুষ্টি-উদ্ধার করতে শুরু করুন। শুভেচ্ছা রইল।
বিড়ি কাকে বলে? পাতায় মোড়া তামাক, যা আগুনে জ্বালিয়ে, উৎপন্ন ধোঁয়া নিঃশ্বাসের সাথে টেনে নেওয়া হয়, তাই কি বিড়ি? তাহলে সিগারও কি বিড়ি পদবাচ্য?
তাই যদি হয়, তামাকক্ষেতে বসে তামাকপাতা পাকিয়ে প্রথম সিগার বানানো হয়েছিল মধ্য বা দক্ষিণ আমেরিকাতে। কে কবে সে কীর্তি স্থাপন করেছিল, সে কথাটা বুড়ো ইতিহাস ভুলে মেরে দিয়েছে। আমার কাহিনী সেক্ষেত্রে একশ’ শতাংশ ভুল।
নাকি তেন্দুপাতায় মোড়া ছাঁট তামাক হলে তবেই তা বিড়ি?
এই সংজ্ঞা ধরেই চলি আপাতত?
তাহলে প্রথম ক্লু বা সূত্র হল, তেন্দুপাতা, এবং বিড়ি ভীষণ ভাবে ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব সৃষ্টি, কিন্তু তামাক আমাদের দেশজাত নয়। বস্তুত, তামাক মধ্য-আমেরিকার ভূমিজ প্রডাক্ট – অধুনা যা ইকোয়েদর-পেরু সীমান্তবর্তী অঞ্চল, সেখানকার। সেই আমেরিকা, কলম্বাসের আবিষ্কারের আগে যার সন্ধানও জানা ছিল না! (আসলে হয়ত জানা ছিল। এ নিয়ে নানান বিতর্ক রয়েছে, কিন্তু আমেরিকা আবিষ্কার আর কলম্বাস মোটামুটি সমসাময়িক।) ইউরোপের ইতিহাসেও তামাকের চর্চা খুব প্রাচীন নয়।
তাহলে ইউরোপের হাত ঘুরে, তামাক বস্তুটির সাথে কবে ভারতীয় উপমহাদেশের পরিচয় হল, সে কথা জানতে পারলে অনেকটাই সুরাহা হয়।
ইউরোপীয় ঐতিহাসিকেরা মোটামুটিভাবে মেনে নেন যে জন হকিন্স ও তাঁর নাবিকদের থেকে ইউরোপে ১৫৬২ সাল নাগাদ তামাক সেবন চালু হয়। এই ধাপে ইউরোপে তামাক পোড়ামাটির পাইপে ভরে সেবন করা হত।
মোটামুটি এই সময়েই গোয়ার জেসুইট যাজকরা আকবর বাদশাহ(১৫৪২-১৬০৫)কে তামাকপাতা আর বীজ উপহার দেন। আকবরের চিকিৎসক আব্দুল ফতে গিলানি বাদশাহের জন্য হুঁকা নির্মাণ করে দেন। সেই হুঁকা পাওয়া গেছে কি না জানি না, কিন্তু জেডপ্রস্তর নির্মিত সম্রাট জাহাঙ্গীরের হুঁকা এখনও জাদুঘরে দেখা যায়।
মতান্তরে হুঁকা বস্তুটি আব্দুল ফতে গিলানির নিজস্ব আবিষ্কার নয়, পারস্যদেশে প্রচলিত গালিয়ান যন্ত্রের অনুকরণ মাত্র। যদিও পারস্য দেশে তখনও তামাক পাওয়া যেত না, তামাকই একমাত্র ধূম্রোৎপাদক নয়। সম্ভবত গাঞ্জা-হাশিশ ইত্যাদি সেবনের জন্য হুঁকা বা ঐ জাতীয় বস্তু ব্যবহার হত। অপিচ, আকবর বাদশাহের পূর্বেও ভারতে ছিলিমে ভরে গাঁজা টানার প্রচলনও ছিল।
সে যাই হোক, গাঁজা প্রসঙ্গ থাক। হুঁকাও থাক, আমরা আপাতত বিড়ির খোঁজে চলি।
সিটিয়ারাই(সেন্ট্রাল টোবাকো রিসার্চ ইন্সটিটিউট) এর মতে ভারতে তামাক চাষ শুরু হয় ১৬০৫ সাল নাগাদ, গুজরাটে, পর্তুগীজদের উদ্যোগে। এনারাই হয়ত আকবর বাদশাহের জন্য তামাক পাঠিয়েছিলেন। বাদশা চাষবাস শুরু করছেন না দেখে মনের দুঃখে নিজেরাই শুরু করে দেন। আর হ্যাঁ “উদ্যোগ” বলছি বটে, কিন্তু পরবর্তীকালে পূর্ব ভারতে নীলচাষের “উদ্যোগ” থেকে আমরা আঁচ করতে পারি, উদ্যোগ মানে হয়ত অত্যাচারই হবে।
অনুমান করা যেতে পারে, পর্তুগীজদের হাতে পড়ে তামাকচাষে বাধ্য হওয়া মানুষেরা একসময়ে নিজেরাও তামাক পাকিয়ে জ্বালিয়ে সেবন করতে শুরু করেছিলেন। ছিলিমে হোক বা হুঁকাতেই হোক, একটা বড় সমস্যা ছিল জাত-পাতে বিভক্ত ভারতীয় মানুষের পক্ষে আর যাই হোক, হুঁকা কি কলকে শেয়ার করে টানা অসম্ভব!
নেসেসিটি ইজ দি মাদার অফ ইনভেনশন, কাজেই শুকনো পাতায় তামাক মুড়ে টেনে ফেলা এই সময়েই শুরু। আম-কাঁঠাল-কলাপাতা ইত্যাদি দিয়ে মোড়া হলেও, সবথেকে বেশী প্রচলিত হয় কৈরালা(Bauhinia variegata) গাছের পাতা।
আর গুজরাটিদের ব্যবসাবুদ্ধি চিরকালই প্রখর, অচিরেই নিজেরা বিড়ি টানা ছড়ে দিয়ে এই পাতায়-মোড়া-তামাকের ব্যাবসা শুরু করে দিয়েছিল। তেন্দুপাতার সাথে তামাকের মেলবন্ধন কিন্তু এখনও ঘটে নি। কাজেই আমাদের সংজ্ঞা অনুযায়ী এই বস্তু এখনও বিড়ি নয়। তার আবির্ভাবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও দীর্ঘকাল।
১৮৯৯ সালে পশ্চিম ভারতে এক দুর্ভিক্ষ হয়, ফলতঃ প্রচুর গুজরাটি পরিবার ভারতের নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। এনাদের হাত ধরেই বিড়ির এই পূর্বপুরুষ এই ভারতের মহামানবের সাগরে মিশে যান।
এমত সময়ে বিয়েনার(বেঙল-নাগপুর রেলওয়ে) এর কন্ট্র্যাক্ট নিয়ে মধ্যভারতের জব্বলপুরে এসে উপনীত হন গুজরাটের মোহনলাল প্যাটেল ও তস্য ভ্রাতা হরগোবিন্দদাস প্যাটেল। উদ্যোক্তা প্যাটেল ব্রাদারস (আসলে কাজিন্স) সরকারী কাজের ফাঁকে ফাঁকে খুচরো ব্যাবসাও করতেন। জব্বলপুরের মনিহারি দোকানে আক্রাদামে বম্বে থেকে আনা গুজরাটী বিড়ি বিক্রয় হতে দেখে প্যাটেলদের মাথায় আসে লোকালি বিড়ি নির্মাণ করে সস্তায় বেচে দেওয়ার আইডিয়া।
কিন্তু হায় বিড়ির পাতা মধ্যপ্রদেশে আকাল। সহজে দমে না গিয়ে উদ্যোগীযুগল বম্বে থেকে পাতা আমদানি করে বিড়ি নির্মাণ ও বিপণন করতে থাকেন, আর ফাঁকে ফোকরে চলতে থাকে সস্তা লোকাল পাতার সন্ধান। অচিরেই আমাদের দুই নায়ক খুঁজে পান তেনদুপাতা। রেলওয়ে স্লিপারের জন্য উজাড় করে নেওয়া শালবনে বিনা প্রচেষ্টায়ই এই গাছ গজায়, আর এর পাতা পাড়বার সময় হয় তামাকপাতা পাড়ার উপযোগী হওয়ার ঠিক পরে পরেই!
ব্যস, প্যাটেল ভ্রাতৃদ্বয়ের হাতে আজকের বিড়ী পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়। অচিরেই আরেক গুজরাটী বিলাতী পণ্য বর্জনের আহ্বান দেন, এবং আপামর ভারতবাসী বিলিতী সিগারেট ত্যাগ করে বিড়ীতে মনোনিবেশ করে। তবে সে অন্য কাহিনী।
উৎসাহী হলে প্রণয় লালের লেখা মনোজ্ঞ নিবন্ধ পড়ে ফেলুন।
সুত্রঃ কোরা
লেখকঃ সৈকত রায় মহাশয়
See less