হোমপেজ/আসক্তি কি
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
ঘড়িতে সময় রাত ৯ টা। আমি আইআইটি মাদ্রাজের ইউনিভার্সিটি বাসে করে ল্যাব থেকে আমার হোস্টেলের দিকে যাচ্ছি। আমার কানে হেডফোনে বাজছে, "তুমি যে আছো তাই, আমি পথে হেটে যাই… হেটে হেটে বহু দূর বহু দূর যেতে চাই।" বাসটা হোস্টেলের দিকে যাবেনা, উলটো পথে যাবে। ড্রাইভার ইংরেজি বুঝে না, আর আমি তামিল পারিনা। তাই তাকে ইবিস্তারিত পড়ুন
ঘড়িতে সময় রাত ৯ টা। আমি আইআইটি মাদ্রাজের ইউনিভার্সিটি বাসে করে ল্যাব থেকে আমার হোস্টেলের দিকে যাচ্ছি। আমার কানে হেডফোনে বাজছে, “তুমি যে আছো তাই, আমি পথে হেটে যাই… হেটে হেটে বহু দূর বহু দূর যেতে চাই।” বাসটা হোস্টেলের দিকে যাবেনা, উলটো পথে যাবে। ড্রাইভার ইংরেজি বুঝে না, আর আমি তামিল পারিনা। তাই তাকে ইশারায় বুঝালাম হোস্টেলে যাবো। এরপর ড্রাইভার আমাকে গাজেন্দ্র সার্কেলে নামিয়ে দিলেন। এখান থেকে ৫-১০ মিনিট হাটলেই আমার হোস্টেল। বাস থেকে নেমে হাটা দিলাম। আকাশে চাঁদ উঠেছে। ঘন গাছপালা ভেদ করে চাঁদের আলো মনে একটা মাদকতা সৃষ্টি করে। একটা মৃদু বাতাসে আমার গা জুড়িয়ে যাচ্ছে। সত্যি এক অপরূপ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আমার হেডফোনে এখন বাজছে, “এ হাওয়া… আমায় নেবে কত দূরে?” হঠাৎ কেন যেন মনে হলো, আচ্ছা জীবনানন্দ দাশ এরকম পরিবেশ পেলে কি করতেন? তিনি নিশ্চয়ই এই প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতেন, আকাশের চাঁদ দেখতেন, বাতাসে দাঁড়িয়ে গা জুড়িয়ে নিতেন। অতঃপর তার আত্মা মিশে যেতো প্রকৃতির সাথে। আর আত্মা আর প্রকৃতির মিলনের তো সৃষ্টি হয় সাহিত্যের।
আচ্ছা জীবনানন্দ দাশ এ যুগে জন্মালে কি করতেন? তিনিও কি আমার মত কানে হেডফোন গুজে গান শুনতেন? তিনিও কি ফেইসবুকের স্ক্রিন স্ক্রল করে অবসর সময় পার করতেন? এভাবে করলে কি তিনি তার কালজয়ী কবিতাগুলো লিখতে পারতেন? উত্তরগুলো খোজার জন্য আমাকে অনেক ঘাটাঘাটি করতে হলো।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটা সায়েন্টিফিক পেপার খুঁজে পেলাম, যেটার টাইটেল প্রোডাক্টিভিটির উপর একঘেয়েমির প্রভাব। যেটা পড়ে যা জানতে পারলাম তা অনেক আশ্চর্যজনক। একঘেয়েমি বা বোরডম আসলে আমাদের ক্রিয়েটিভিটি বাড়িয়ে দেয়। ধরুন আপনাকে কোনো জায়গায় ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে, আপনি স্বাভাবিকভাবেই ফোনটা পকেট থেকে বের করে টিপা শুরু করবেন। যখন আপনি ফোন টিপেন, আপনার ব্রেইনের বেশিরভাগ অংশ নিষ্ক্রিয় থাকে। কিন্তু মনে করেন আপনি ফোনটি সাথে নিতে ভুলে গেছেন। তখন আপনি এই দুই ঘণ্টা কি করে কাটাবেন? তখন আপনি এদিক সেদিক তাকাবেন, দেয়ালে কয়টি টাইলস আছে তা গুনবেন, পাশে দাঁড়ানো ছেলেটি কালো শার্টের সাথে হলুদ প্যান্ট কেন পরলো তা নিয়ে ভাববেন, রাস্তার ওপাশের ভবনটির কয় তলা আছে তা গুনে দেখবেন, দশ বছর আগে আপনার বন্ধুর সাথে তর্ক করার সময় যে কথাটা বললে তাকে তৎক্ষণাৎ হারানো যেতো তা হঠাৎ মাথায় উঁকি দিবে। অর্থাৎ, আপনি এখন আপনার ব্রেইনের বিভিন্ন অংশকে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করছেন। এতে আপনার ব্রেইনে নতুন নতুন আইডিয়া আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্তু ফোন টিপলে এই আইডিয়াগুলো ব্রেইন থেকে আসায় ব্যাঘাত ঘটতো। সুতরাং জীবনানন্দ দাশ যদি সারাদিন ফোন আর ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে থাকতো, তার আর কবি হওয়া লাগতো না।
অন্যদিকে নিউটন-আইনস্টাইনরাও যদি ফোনে আসক্ত থাকতো, তাহলে তাদের বৈজ্ঞানিক কাজে অনেক ব্যাঘাত ঘটতো, তাদের প্রোডাক্টিভিটি অনেক কমে যেতো। কারণ, বৈজ্ঞানিক কাজে অনেক ভাবতে হয়, অনেক কল্পনা করতে হয়। কিন্তু মোবাইল-ফোনের আসক্তি আমাদের কল্পনা শক্তিকে ধ্বংস করে।
সুতরাং, মোবাইল- ল্যাপটপ কে দূরে সরিয়ে রাখুন। বোর হওয়া ভালো। কারণ, আপনি যখন বোর হবেন, তখন আপনার মাথা থেকে অনেক নতুন আইডিয়া বেরিয়ে আসবে। ধরুন আপনি বাসে বসে আছেন, কিংবা অনেক বড় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন, কিংবা কোনো আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে করার মত কোনো কাজ পাচ্ছেন না। এই মুহূর্তে আপনার ইচ্ছা করবে মোবাইল টা বের করে ফেইসবুকের নিউজফিড টা স্ক্রল করতে। কিন্তু এখানে আপনি নিজেকে থামাবেন। আমি জানি বোর হওয়া অনেক বিরক্তিকর। কিন্তু আপনি যদি নিজেকে ক্রিয়েটিভ হিসেবে গড়ে তুলতে চান তাহলে বোর হতে শিখুন।
লেখাঃ সংগ্রহীত
সংক্ষেপে দেখুন