চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ‘সার্ফেস মার্কিং’ নামক একটি পরীক্ষা হয়ে থাকে। এই পরীক্ষাতে একজন শিক্ষার্থীকে জীবিত মানুষের শরীরে নির্দিষ্ট কোনো অঙ্গ, ধমনী, শিরা কিংবা স্নায়ু এঁকে দেখাতে বলা হয়। প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী শরীরের প্রধান অঙ্গগুলো শরীরের যেখানে থাকে প্রায় হুবহু সেভাবে এঁকে দেখাতে পারে।বিস্তারিত পড়ুন
চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ‘সার্ফেস মার্কিং’ নামক একটি পরীক্ষা হয়ে থাকে। এই পরীক্ষাতে একজন শিক্ষার্থীকে জীবিত মানুষের শরীরে নির্দিষ্ট কোনো অঙ্গ, ধমনী, শিরা কিংবা স্নায়ু এঁকে দেখাতে বলা হয়। প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী শরীরের প্রধান অঙ্গগুলো শরীরের যেখানে থাকে প্রায় হুবহু সেভাবে এঁকে দেখাতে পারে। চলচ্চিত্রে অপারেশন থিয়েটারের কোনো দৃশ্যে দেখে থাকবেন আপনারা, অপারেশনের শুরুতেই মার্কার দিয়ে কিছু জায়গা চিহ্নিত করা হয়, এগুলো হচ্ছে অপারেশনের নিয়ম। কোথায় কীভাবে কাটতে হবে, একজন সার্জন ভালোমতোই জানেন।
ম্যাকবার্নি’স পয়েন্ট (McBurney’s Point) নামক একটি জায়গা রয়েছে মানুষের শরীরে, এই বিন্দুতে কাটা হলেই মাংসপেশী সরানোর পর অ্যাপেন্ডিক্স পাওয়া যাবে। দেখা যাবে, ছোট্ট একটি থলির ন্যায় বাড়তি অংশ সিকামের (বৃহদান্ত্রের একটি অংশ) সাথে জুড়ে আছে।
উপরের ছবিতে ১ নম্বর পয়েন্টটি হলো ম্যাকবার্নি’স পয়েন্ট। আপনি কোমর বরাবর হাত দিয়ে দেখুন, দু’পাশে দুটি জায়গাতে শক্ত হাড়ের উপস্থিতি টের পাবেন। Ilium নামক হাড়ের একটি অংশ এটি, একে বলা হয় Anterior Superior Iliac Spine। ৩ নম্বর পয়েন্টটি হলো এই Anterior Superior Iliac Spine। ২ নম্বর পয়েন্টটি দেয়া হয় একদম নাভীতে। ২ আর ৩ নম্বরকে সংযুক্ত করে একটি লম্বা রেখা আঁকা হয়, এই রেখাকে যদি উপরে দুই ভাগ আর নিচে এক ভাগ রেখে বিভক্ত করা হয়, তবেই আমরা পাবো ১ নম্বর পয়েন্ট তথা ম্যাকবার্নি’স পয়েন্ট।
অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যাসার্ধ ৭-৮ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে সাধারণত, আর দৈর্ঘ্য হয় ২-২০ সেন্টিমিটার। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অ্যাপেন্ডিক্স ৯ সেন্টিমিটার হয়। এছাড়াও অ্যাপেন্ডিক্সের অবস্থান অনুযায়ী এর বিভিন্ন ধরনও রয়েছে। সাধারণত তলপেটের ডান পাশে অবস্থান করে অ্যাপেন্ডিক্স, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে Right Iliac Fossa নামে ডাকা হয়।
আমাদের দেহে অ্যাপেন্ডিক্স কোন দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে, সেই ব্যাপারে এখনো নিশ্চিতভাবে বের করা যায়নি। একে ধারণা করা হয় ভেস্টিজিয়াল র্যামনেন্ট হিসেবে। র্যামনেন্ট হলো শরীরের এমন একটি অংশ যা গর্ভে থাকা অবস্থায় কোনো এক দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলো, কিন্তু জন্মের পর আর কোনো কাজ নেই তার, একটি অবশিষ্টাংশ হিসেবে দেহে রয়ে গেছে। দেহের কিছু লিগামেন্টও র্যামনেন্ট হিসেবে তৈরি হয়েছে। দেহের সবচেয়ে চাক্ষুষ র্যামনেন্ট হলো আমাদের নাভী (আম্বিলিকাস), এই নাভী আম্বিলিক্যাল কর্ডের র্যামনেন্ট। আর ভেস্টিজিয়াল র্যামনেন্ট বলা হয় সেসব অংশকে যা বিবর্তনের মাধ্যমে তার দায়িত্ব হারিয়ে ফেলেছে। আমাদের পূর্ব পুরুষদের কোনো একসময় হয়তো খাদ্য পরিপাকে এর প্রয়োজনীয়তা ছিলো, দিন দিন বিবর্তনে এই অ্যাপেন্ডিক্স ছোট হয়ে তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে এবং র্যামনেন্ট হিসেবে দেহে রয়ে গিয়েছে। মানবদেহে এমন ভেস্টিজিয়াল র্যামনেন্টের নাম প্রায় একশোটি বলা যাবে।
তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, দেহের কিছু লিম্ফয়েড কোষ অ্যাপেন্ডিক্সে রয়েছে, যার দরুন অ্যাপেন্ডিক্স ইনফেকশনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলায় সাহায্য করতে পারে। একটি সময় ছিলো, যখন সার্জনরা কোনো সার্জারির উদ্দেশ্যে কারো পেট কাটলে, এমনি অ্যাপেন্ডিক্স কেটে ফেলে দিতেন, যাতে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা তৈরি না করতে পারে। তবে পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, অ্যাপেন্ডিক্সবিহীন ব্যক্তিদের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি খানিকটা বেড়ে যায়। ২০০৬ সালের পর থেকে তাই এমন ফ্রি অপারেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অ্যাপেন্ডিক্স কেটে দেহ থেকে সরিয়ে ফেলা খুবই সাধারণ একটি অপারেশন। এই অপারেশনটির নাম হলো অ্যাপেন্ডেকটোমি, আর সমস্যাটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয়ে থাকে অ্যাপেন্ডিসাইটিস। মানুষ প্রায়ই বলে থাকে, অমুকের অ্যাপেন্ডিক্স হয়েছে, এখানে শব্দের প্রয়োগটি ভুল। শরীরের এই অংশটির নাম অ্যাপেন্ডিক্স, কিন্তু এতে যখন ব্যাকটেরিয়াল আক্রমণ ঘটে, প্রদাহ (জ্বলুনি) শুরু হয়, তখন একে বলা হয় অ্যাপেন্ডিসাইটিস। ঠিক সেই মুহূর্তেই দেহের অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যাথা শুরু হয়, ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে, একসময় অসহ্য হয়ে দেখা দেয়। অ্যাপেন্ডেকটোমি ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না তখন।
এখানে একটি মজার ব্যাপার রয়েছে, অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যাথাটা হয়ে থাকে সাধারণত রেফার্ড পেইন (Referred Pain) হিসেবে। এক স্থানের ব্যথার অনুভূতি তৈরি হয় অন্য স্থানে। কম-বেশি সকলেরই ঠাণ্ডা লেগেছে নিশ্চয়ই, নাক-গলাতে ব্যথার বদলে সামান্য ব্যথা হয় কানে, লক্ষ্য করে দেখবেন। এটাও একধরনের রেফার্ড পেইন। আমাদের স্পাইনাল কর্ডের বিভিন্ন অংশ রয়েছে পুরো মেরুদণ্ড জুড়ে, এই অংশগুলোর নামকরণ করা হয়েছে মেরুদণ্ডের কশেরুকাগুলোর নামে। অ্যাপেন্ডিক্সের স্নায়বিক অনুভূতি মস্তিষ্কে বহন করে থাকে দশম থোরাসিক স্পাইনাল সেগমেন্টটি।
দশম থোরাসিক সেগমেন্টটি একইসাথে আবার আম্বিলিক্যাল রিজিওনের অনুভূতি মস্তিষ্কে বহন করে থাকে। পেটকে মানচিত্রের গ্রিডের ন্যায় নয়টি রিজিওনে ভাগ করা হয়ে থাকে অপারেশনের সময় অঙ্গগুলোকে খুঁজে বের করার সুবিধার্থে। নাভী ও নাভীর চার পার্শ্বস্থ বর্গাকার অল্প অংশকে আম্বিলিক্যাল রিজিওন বলা হয়।
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা তাহলে সবসময় অনুভূত হবে নাভীর চারপাশের দিকে, তবে আবার নাভীর দিকে ব্যথা করলেই ভয় পেয়ে যাবেন না আপনার অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে ভেবে। দশম থোরাসিক স্পাইনাল সেগমেন্ট আরো অনেক অঙ্গের অনুভূতি বহন করে থাকে।
খাদ্যের পরিপাক সমস্তই সম্পন্ন হয়ে যায় ক্ষুদ্রান্ত্রে, পরিপাক না হওয়া অংশই ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে বৃহদান্ত্রে প্রবেশ করে। বৃহদান্ত্রের প্রথম অংশই হলো সিকাম। সিকাম একটি থলির মতো, এই সিকাম থেকে অপরিপাককৃত খাদ্যাংশ উপরের দিকে কোলনে প্রবেশ করবে। পেরিস্ট্যালসিসের মাধ্যমে এমনটি হয়ে থাকে, পেরিস্ট্যালসিস ছাড়াও অনেক ধরনের মুভমেন্ট ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের দেহের পরিপাকতন্ত্রের। এই মুভমেন্টগুলো খাবারকে পুরো পরিপাকতন্ত্র ঘুরে বেড়াতে সহায়তা করে। অভিকর্ষের টানে সিকামের নিচের দিকে সংযুক্ত অ্যাপেন্ডিক্সে খাদ্যাংশ যখন প্রবেশ করতে যায়, অ্যাপেন্ডিক্সের মাংসপেশি তখন সংকুচিত হয়ে একটি ধাক্কার মতো তৈরি করে দেয়, এর দরুন অ্যাপেন্ডিক্সের দিকে ধাবিত খাদ্যাংশ উপরের দিকে কোলনে প্রবেশ করে।
সিকাম আর অ্যাপেন্ডিক্সের সংযোগস্থলে একটি ছিদ্রসদৃশ অংশ রয়েছে, এতে যদি অল্প পরিমাণে খাদ্যাংশ জমা হয়ে যায়, একসময় জমতে জমতে ছিদ্রটি বন্ধ হয়ে যায়, তখন ভেতরে থাকা কোনোকিছু আর বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। এভাবেই শুরু হয় প্রদাহ, প্রদাহ বাড়তে শুরু করে, ব্যাকটেরিয়াও বাড়তে শুরু করে। সরু নালীর মতো অ্যাপেন্ডিক্স তখন ফুলে উঠতে থাকে। যদি অ্যাপেন্ডেকটোমি সময়মতো করা না হয়, একসময় অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে বেরিয়ে আসে ভেতরের সমস্ত কিছু। পেটের ফাঁকা স্থানগুলোর সব জায়গায় তখন সমস্ত ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে।
আপনার শরীরের ছোটখাট একটি অংশ, যা প্রায় কার্যক্ষমতাবিহীন; সেটিও আপনার এত বড় ক্ষতি করতে সক্ষম। তাই সচেতনতা তৈরি করুন, অ্যাপেন্ডিসাইটিসকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করুন।
সংক্ষেপে দেখুন
যুগ যুগ ধরে আমরা মোবাইল ফোনে সিম কার্ড ব্যবহার করে আসছি। আমাদের জীবনে সিম কার্ড একটি অপরিহার্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এটি ছাড়া হয়তো মোবাইল অচল হয়ে পড়ে না, কিন্তু মোবাইল ফোন ব্যবহারের অর্থ হারিয়ে ফেলে। ১৯৯১ সালে সিম কার্ড তৈরি হওয়ার পর থেকে একে খুব একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। নতুন সিম প্রযুক্তবিস্তারিত পড়ুন
যুগ যুগ ধরে আমরা মোবাইল ফোনে সিম কার্ড ব্যবহার করে আসছি। আমাদের জীবনে সিম কার্ড একটি অপরিহার্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এটি ছাড়া হয়তো মোবাইল অচল হয়ে পড়ে না, কিন্তু মোবাইল ফোন ব্যবহারের অর্থ হারিয়ে ফেলে।
১৯৯১ সালে সিম কার্ড তৈরি হওয়ার পর থেকে একে খুব একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। নতুন সিম প্রযুক্তির সাথে আকারে ছোট হয়ে ন্যানো, মাইক্রোতে পরিণত হলেও এর মূল ধারণার তেমন পরিবর্তন হয়নি। প্রযুক্তির যুদ্ধে কার্ডটি এতটা সময় টিকে থাকলেও এবার তার অবসরের সময় হয়েছে। বর্তমান সিম কার্ডকে প্রতিস্থাপিত করতে যাচ্ছে ই-সিম বা এম্বেডেড (Embedded) সিম। বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকটি ডিভাইসে এটি যুক্ত থাকলেও ভবিষ্যতে এটিই হবে নতুন স্ট্যান্ডার্ড।
ই সিম কী?
ই-সিম নিয়ে বলার আগে সিম কীভাবে কাজ করে এটি নিয়ে কিছু বলা যাক। সিম শব্দটির পূর্ণরুপ সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিটি মডিউল (Subscriber Identity Module), অর্থাৎ এটি ব্যবহারকারীর পরিচয় বহন করে। সিম ক্যারিয়ার বা সিম কোম্পানির কাছে আপনার পরিচয় নিশ্চিত করে একটি সিম কার্ড। ফলে আপনি সেই ক্যারিয়ারের নেটওয়ার্ক ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারেন। যখন এটি করা সম্ভব হয় না বা কোনো ত্রুটির সৃষ্টি হয় তখনই আপনার ফোনটি নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
একটি সিমের মাঝে থাকে International Mobile Subscriber Identity (IMSI) Number যেটি সম্পূর্ণ ইউনিক বা অনন্য একটি নাম্বার। এই নাম্বারটি মোবাইল ফোন দ্বারা আপনার পছন্দের সিম নেটওয়ার্কের কাছে পাঠানো হয়, যার ফলে তারা আপনাকে চিনতে পারে। এর সাথে একটি অথেন্টিকেশন কি থাকে, যার ফলে ভুল তথ্য পাঠানো সম্ভব হয় না।
ই-সিমের সাথে সাধারণ সিমের পার্থক্য; Source: Thales Group
ই-সিম একইভাবে কাজ করে, কিন্তু এক্ষেত্রে সিমকার্ডের এই প্রযুক্তিগুলো বিল্ট ইনভাবেই ফোনের মধ্যে দেয়া হয়। সহজ কথায়, প্রসেসর যেমন ফোনের চিপসেট-এ বসানো থাকে, তেমনই সিমটিও থাকবে। এজন্যই একে বলা হয় EMBEDDED SIM। সাধাণরত এটি আমরা দেখতে পারবো না কিংবা বেরও করতে পারবো না। একটি সাধারণ সিমে এসব তথ্য একেবারেই লিখে দেয়া থাকে, কিন্তু ই-সিমে এসব তথ্য সিম ক্যারিয়ারভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। অর্থাৎ আপনি আপনার নেটওয়ার্কের তথ্য পরিবর্তন করে সহজেই এক নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে পারবেন।
আজকাল কিছু ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে সাইন ইন করে ব্যবহার করতে হয়, সেভাবে সিমের নেটওয়ার্কে তথ্য দিয়ে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে হবে। সাধারণ সিমের চেয়ে আকারেও এটি ক্ষুদ্রাকার। যেখানে একটি রেগুলার সিম ১৫×২৫ মিলিমিটার এবং বর্তমান সবচেয়ে ক্ষুদ্র ন্যানো সিম ৮.৮×১২.৩ মিলিমিটার আকারের, সেখানে একটি ই-সিমের প্রস্থ শুধুমাত্র ৬.০ মিলিমিটার। এই ক্ষুদ্র আকারের জন্য যেমন কোনো ডিভাইসে অন্যান্য কম্পোনেন্টের জন্য জায়গা পাওয়া যাচ্ছে, তেমনই ক্ষুদ্র বা আইওটি ডিভাইসে সিমের ব্যবহারও বাড়ছে।
সিমের প্রকারভেদ; Source: Hologram
ই-সিমের সুবিধা
বর্তমান সিম কার্ডের তুলনায় ই-সিমের সুবিধার পরিধি অনেক বড়। প্রথমত, এর ব্যবহার অনেক ক্ষুদ্র ডিভাইসে করা যাবে। ফোনের ইন্টারনাল ডিজাইন পরিবর্তন করে আরও নতুন ফিচার যোগ করা যাবে কিংবা আরও স্লিম ডিভাইস আমরা পাবো। কোনো ফোন ওয়াটারপ্রুফ না হওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হচ্ছে সিমকার্ড ট্রে। এটি না থাকলে ওয়াটারপ্রুফ ফোন পাওয়া তুলনামূলক সহজ হয়ে উঠবে।
ই-সিম দিয়ে সবচেয়ে বেশি সুবিধা লাভ করবে যারা ভ্রমণ করে বেশি। এক দেশ থেকে অন্য দেশ কিংবা দেশের অভ্যন্তরেই হোক না কেন, সিম পরিবর্তন করা একটি ঝামেলা। একাধিক সিম ব্যবহারে হারিয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া সিমকার্ড কেনার ব্যাপার তো আছেই। আজকাল সিম হারিয়ে গেলে আবার রিপ্লেস করতে হয়, সিমের নাম্বারগুলো আর পাওয়া যায় না। ই-সিম ব্যবহারে এসব কোনো ঝামেলা নেই। এটি পরিবর্তন করতে হয়তো সাইন আপ বা সিম অপারেটরে একটি কলই যথেষ্ট।
ই-সিমের সুবিধাসমূহের ধারণা; Source: Thales Group
সিম বা নাম্বার হারিয়ে যাওয়ার নেই কোনো সম্ভবনা। আমদের থ্রি-জি থেকে ফোর-জি-তে যাওয়ার জন্য সিম পরিবর্তন করতে হয়েছে, কিন্তু একটি ফাইভজি সমর্থিত ই-সিম সম্বলিত ফোনে এই ঝামেলা নেই। অর্থাৎ ফাইভজি আসলে তারা সবার আগে যুক্ত হতে পারবে কোনোপ্রকার ঝামেলা ছাড়াই।
ফোন চুরির ঘটনা অহরহ শোনা যায় এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছে। ই-সিমে সংযুক্ত থাকলে ফোন চুরিও কমে যাবে বা চুরি হলেও সহজেই পাওয়া যাবে। ফোন চুরি করেই সিম ফেলে দেয়ার সুযোগ ই-সিমে থাকবে না। প্রতিটি ফোন সিমের সাহায্যে সহজেই ট্র্যাক করা যাবে। শুধু ব্যবহারকারীদের জন্য নয়, সিম কোম্পানিগুলোর জন্যও এটি একটি শ্রমসাশ্রয়ী সংযোজন। সিম উৎপাদন এবং ডিস্ট্রিবিউশনে সময় ও সম্পদ দুটোই বাঁচবে। সিম কেনার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না। অপ্রতুল এলাকাগুলোতে সব সিম পাওয়া যায় না। এ সমস্যার সমাধান হবে।
কোনো অসুবিধা রয়েছে কি?
একটি ই-সিমের কার্যকারিতা নির্ভর করে সিম কোম্পানি সেটি সমর্থন করবে কি না তার ওপর। সারাবিশ্বে এটি সম্পূর্ণভাবে ব্যবহারোপযোগী করে গড়ে তুলতে সিম কোম্পানিগুলোর সমর্থন অপরিহার্য। এজন্য বর্তমান ফোনগুলোতে এখনও স্ট্যান্ডার্ড সিম ব্যবহার চালু রয়েছে। তবে বিশ্বের সেরা সিম কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই তাদের সার্ভিসে ই-সিম যোগ করেছে। এসবের মাঝে এটিএন্ডটি, টি-মোবাইল, ভেরাইজন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এ বছর ৯০টি দেশের প্রায় ২০০ মোবাইল সিম অপারেটরদের তাদের সেবা ই-সিমে হালনাগাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করা যায় সমর্থিত ফোন বৃদ্ধির সাথে সাথে সমর্থিত সিম নেটওয়ার্কও বৃদ্ধি পাবে।
ই-সিম সমর্থিত ডিভাইস; Source: Thales Group
ই-সিম সমর্থিত ডিভাইসগুলো
সময়ের সাথে সাথে ই-সিম সমর্থিত ডিভাইসের সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমানেও কিছু ফোন এবং পরিধানযোগ্য ডিভাইস ই-সিম সমর্থন করে। এর মাঝে রয়েছে অ্যাপলের আইফোনগুলো। সর্বশেষ আইফোন ১১, ১১ প্রো ও ১১ প্রো ম্যাক্স ই-সিম সমর্থিত। এছাড়া আইফোন এক্সএস, এক্সআর-ও ই সিম সমর্থন করে। শুধু আইফোন নয়, অ্যাপল ওয়াচ ৩, ৪ ও ৫ এবং কিছু আইপ্যাড মডেলও ই-সিম ব্যবহারযোগ্য।
অ্যাপল ছাড়াও গুগলের সর্বশেষ পিক্সেল ফোনগুলো ই-সিম সমর্থিত। এর মধ্যে রয়েছে পিক্সেল ৪, পিক্সেল ৩ ও পিক্সেল ৩এ। এছাড়া স্যামসাং এর গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ, গ্যালাক্সি ওয়াচ, ওয়াচ একটিভ ২ ও গিয়ার এস২-তে ই-সিম সমর্থন রয়েছে। মাইক্রোসফট, লেনোভো ও হুয়াওয়ের কিছু ডিভাইসেও ই-সিমের সমর্থন রয়েছে।
নেটওয়ার্কের সাথে অপারেটিং সিস্টেমেরও এই প্রযুক্তি সমর্থন করতে হয়। ভালো সংবাদ হলো গুগলের অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, ওয়্যার ওএস এবং উইন্ডোজ ১০ ই-সিম সমর্থন করে। আশা করা যায় আগামী ৫ বছরের মধ্যে সারাবিশ্বে ই-সিম বহুলভাবে ব্যবহার করা শুরু হবে। আধুনিকতার ছোঁয়া কোনো ক্ষেত্রেই বাদ পড়ে না!
সংক্ষেপে দেখুন