হোমপেজ/কেনো বিখ্যাত
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
হলিউডের ‘পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান’ মুভি কিংবা ইউবিসফটের অ্যাসাসিন্স ক্রিড গেইম সিরিজের সুবাদে ‘পাইরেট’ বা জলদস্যু তকমাটা বেশ খ্যাতি পেয়ে গিয়েছে। ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো অনেকেরই ‘প্রিয়’ জলদস্যু। কিন্তু ঐতিহাসিক দিক থেকে চিন্তা করলে দস্যুপনা আদৌ কখনো ‘প্রিয়’ খেতাব পাবার কথা না। তবে প্রিয়-অপ্রিয় যেবিস্তারিত পড়ুন
হলিউডের ‘পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান’ মুভি কিংবা ইউবিসফটের অ্যাসাসিন্স ক্রিড গেইম সিরিজের সুবাদে ‘পাইরেট’ বা জলদস্যু তকমাটা বেশ খ্যাতি পেয়ে গিয়েছে। ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো অনেকেরই ‘প্রিয়’ জলদস্যু। কিন্তু ঐতিহাসিক দিক থেকে চিন্তা করলে দস্যুপনা আদৌ কখনো ‘প্রিয়’ খেতাব পাবার কথা না। তবে প্রিয়-অপ্রিয় যেমনই হোক না কেন, ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত জলদস্যু ছিল ব্ল্যাকবিয়ার্ড। আজকের লেখা তাকে ঘিরেই।
অ্যাসাসিন্স ক্রিড গেইমে চিত্রায়িত দস্যু ব্ল্যাকবিয়ার্ড
কেউ জানে না তার জন্ম কবে। যখন তিনি মারা যান তখন তার বয়স ছিল ৩৫ থেকে ৪০ এর মাঝে। সে হিসেবে তার জন্ম হতে পারে ১৬৮০ সালের দিকে এবং সেটা ইংল্যান্ডে। তার আসল নাম এডওয়ার্ড টিচ কিংবা এডওয়ার্ড থ্যাচ। কিন্তু আসলেই কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না তার পারিবারিক নাম আসলে কী ছিল। কারণ দস্যুরা দস্যিপনা শুরু করবার সময় নাম পরিবর্তন করে ফেলত যেন পারিবারিক নামের হানি না হয়।
যারা অ্যাসাসিন্স ক্রিড গেইম সিরিজের সাথে পরিচিত, তারা হয়ত গেমটির ব্ল্যাক ফ্ল্যাগ পর্ব খেলতে গিয়ে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের দেখা পেয়েছেন। তারা হয়ত এটাও মনে রেখেছেন যে, সে সময় দাস ব্যবসা খুবই প্রকটভাবে চলছিল। ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে তখন খুব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বন্দর, যেখান থেকে দাস ব্যবসা চালানো হত। সেখানেই বেড়ে ওঠেন এডওয়ার্ড।
অ্যাসাসিন্স ক্রিড গেইমের ব্ল্যাক ফ্ল্যাগ পর্বের প্রচ্ছদে ব্ল্যাকবিয়ার্ড
ধারণা করা হয় তিনি খুব উচ্চ বংশ থেকেই এসেছেন, লেখাপড়াও জানতেন। তার মৃত্যুর সময় পকেটে তাকে উদ্দেশ্য করে চিফ জাস্টিস অ্যান্ড সেক্রেটারির লেখা চিঠি পাওয়া গিয়েছিল!
বড় হয়ে এডওয়ার্ড ব্রিস্টল ত্যাগ করেন, চলে যান ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দিকে, যোগদান করেন প্রাইভেটিয়ার হিসেবে। [প্রাইভেটিয়ার হলো সে সকল জাহাজ/জাহাজবাসী যারা শত্রু জাহাজ লুট করে।] তিনি এক ইংলিশ প্রাইভেটিয়ার জাহাজে (কুইন অ্যান’স ওয়ার) কিছুদিন কাজ করেন। তখন তার কাজ ছিল জামাইকা থেকে তরী ছাড়া আর স্প্যানিশ বা ফ্রেঞ্চ জাহাজের সাথে যুদ্ধ করা, যেহেতু সে সকল দেশ ছিল যুদ্ধরত ইংল্যান্ডের শত্রু। সমস্যা দেখা গেল তখনই যখন ১৭১৩ সালে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেল এবং রাজা জর্জ প্রাইভেটিয়ারদের ফেরত আনলেন। তখন বেকার হয়ে পড়লেন এডওয়ার্ড।
তখন অনেক প্রাইভেটিয়ার পাইরেট বা জলদস্যু হয়ে গেল। তাদের সাথে এডওয়ার্ডও যোগ দিলেন। কাজ করতে লাগলেন জলদস্যু ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন হর্নিগোল্ডের অধীনে, জাহাজের নাম ছিল রেঞ্জার। এভাবে চার বছর দস্যিপনা করবার পর তিনি ১৭১৭ সালের সেপ্টেম্বরে পেলেন নিজের জাহাজ, ‘রিভেঞ্জ’। সে জাহাজে করে নিজেই ক্রু নিয়ে জাহাজ আক্রমণ করা শুরু করে দিলেন ক্যারোলাইনাস, ভার্জিনিয়া এবং ডেলাওয়ারে।
নভেম্বরের ২৮ তারিখ এডওয়ার্ড এক ফ্রেঞ্চ জাহাজ দখল করেন। নাম ছিল সেটার ‘লা কনকরদ দে নান্তে’- তার দেখা সবচেয়ে বড় জাহাজ, জৌলুশপূর্ণ। তিনি সেটা নিজের জাহাজ করে ফেললেন, নাম দিলেন “কুইন অ্যান’স রিভেঞ্জ”। এখনও পর্যন্ত সেই জাহাজ ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত জলদস্যু জাহাজ!
“কুইন অ্যান’স রিভেঞ্জ” জাহাজের বিস্তারিত অনুমিত চিত্র
এ জাহাজ চালানো শুরু করবার পর এডওয়ার্ড দাড়ি রাখতে লাগলেন, লম্বা কালো দাড়ি। সে থেকেই তার নাম হলো ব্ল্যাকবিয়ার্ড (“কালো দাড়ি”)।
তখনকার সময় জলদস্যুরা ব্যবহার করত জলি-রজার পতাকা, যেখানে থাকত খুলি আর হাড়ের ছবি। যেমনটা নিচে দেখা যাচ্ছেঃ
ক’দিন পর সেইন্ট থমাস দ্বীপের কাছে ব্রিটিশ রয়াল নেভির দানবীয় জাহাজ এইচএমএস সীফোর্ড-এর দেখা পেয়ে যায় ব্ল্যাকবিয়ার্ডের বাহিনী। তাদের সামনে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের জাহাজে উড়িয়ে দেয়া হয় ব্রিটিশ পতাকা যেন কেউ সন্দেহ না করে। সত্যি বলতে, ব্রিটিশরা আদৌ ধরতে পারে নি যে এটা কুখ্যাত ব্ল্যাকবিয়ার্ডের জাহাজ (সাথে আরো ছোটোখাটো জাহাজও ছিল তার) এবং তাদের চলে যেতে দেয়। কিন্তু গুজব ছড়িয়ে পড়ে কীভাবে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের দল দানবীয় ব্রিটিশ জাহাজকেও কাবু করে ফেলেছে। এই মিথ্যে ঘটনা ব্ল্যাকবিয়ার্ডের যশ আরো বাড়িয়ে দেয়।
পরের কয়েক মাসে ব্ল্যাকবিয়ার্ড গোটা চল্লিশেক জাহাজ লুট করে নেন উত্তর আমেরিকার উপকূল আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ জুড়ে। যদি কোনো জাহাজ আত্মসমর্পণ করত, তাহলে তার ক্রুদের ছেড়ে দিতেন, কিন্তু বাধা দিলেই জাহাজসহ তাদের পুড়িয়ে ফেলতেন। তিনটি বড় জাহাজ নিয়ে তিনি কিউবা আর ফ্লোরিডার উপকূল চষে বেড়াতে লাগলেন।
১৭১৮ সালের মে মাসে সাউথ ক্যারোলাইনার চার্লস্টন অবরোধ করেন তিনি। জিম্মি করেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ নাগরিককে। তার দাবি ছিল অদ্ভুত- কিছু ওষুধ। ওষুধ আনতে তার প্রতিনিধিদের পাঠান তিনি, কিন্তু ওষুধ নিয়ে ফিরতে তাদের বহু দেরি হয়ে যায়। জিম্মিদের তিনি খুন প্রায় করেই ফেলেছিলেন, যখন শেষ মুহূর্তে ওষুধ এসে হাজির হয়। সে ওষুধ নিয়ে তিনি ফিরে যান। আর হ্যাঁ, জিম্মিদের তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন।
অদ্ভুত এক ব্যাপার হলো, ব্ল্যাকবিয়ার্ড নিজের জাহাজ আর ক্রুদের নিজেই ধ্বংস করতেন। এমনকি কুইন অ্যান’স রিভেঞ্জসহ তিনটি জাহাজ তিনি নিজেই ডুবিয়ে দেন, যেন তার সম্পদে তার ক্রুরা ভাগ বসাতে না আসে। নর্থ ক্যারোলাইনাতে এসে তিনি অবশেষে রাজকীয় ক্ষমা পান এবং সেখানের গভর্নরের উপস্থিতিতে ১৪তম বিবাহ করেন, যেখানে তার ১২ জন স্ত্রী তখনও জীবিত।
পরবর্তীতে ক্ষমার ধার ধারেন নি ব্ল্যাকবিয়ার্ড, তিনি ফিরে যান আবারও দস্যিপনায়। নিজের জাহাজ “অ্যাডভেঞ্চার”-এ করে লুট করতে লাগলেন সমুদ্র জুড়ে।
যখন যুদ্ধ শুরু হতো, তখন ব্ল্যাকবিয়ার্ড তার চুলের গোড়ায় ধীরে ধীরে নেভা আগুন জ্বালিয়ে দিতেন, তাকে দেখে মনে হত তার মাথায় আগুন জ্বলছে কিন্তু তার কিছুই হচ্ছে না- শত্রুরা এমনিতেই ভড়কে যেত যুদ্ধে নামার আগেই।
১৭১৮ সালের নভেম্বরে ভার্জিনিয়ার গভর্নর অ্যালেক্সান্ডার স্পটসউড তার মাথার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেন। লেফটেন্যান্ট রবার্ট মেয়নার্ড-এর নেতৃত্বে ২২ নভেম্বর এক নাটকীয় যুদ্ধে পরাস্ত হয় ব্ল্যাকবিয়ার্ডের বাহিনী। চাতুর্যের প্রয়োগে জয় হয় মেয়নার্ডের। মারা যায় ১২ জলদস্যু আর মেয়নার্ডের ৮ জন ক্রু।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডের লাশ পরীক্ষা করে দেখা গেল তার দেহে পাঁচটি গুলি লেগেছিল আর বিশটির মতো তরবারির আঘাত। তার পকেটে পাওয়া গেল চিঠি। তার লাশ থেকে মাথা ছিন্ন করে ফেলা হয় এবং জাহাজের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয় প্রদর্শনের জন্য। বাকি দেহ ফেলে দেয়া হয় সাগরে। গুজব আছে, তার মাথাকাটা লাশ মেয়নার্ডের জাহাজের চারদিকে তিনবার প্রদক্ষিণ করে, এরপর ডুবে যায়। তারপর থেকে হাজারো কুসংস্কার চালু হয়ে যায় তাকে নিয়ে ক্যারিবীয় নাবিকদের মাঝে।
১৯৯৬ সালে নর্থ ক্যারোলাইনার আটলান্টিক বিচের নিকটে গভীর সমুদ্র থেকে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের জাহাজ কুইন অ্যান’স রিভেঞ্জ-এর ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়। তবে তখনোও নিশ্চিত হওয়া যায়নি এটিই সে জাহাজ কিনা। নিশ্চিত হওয়া যায় অবশেষে ২০১১ সালে।
অসংখ্য সিনেমা কিংবা বই হয়েছে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের ওপর, আর ইতিহাস রচনা তো হয়েছে বটেই। রবার্ট লুই স্টিভেনসনের বিখ্যাত ক্লাসিক “ট্রেজার আইল্যান্ড”-এও উপস্থিত ব্ল্যাকবিয়ার্ডের নাম। পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান আর অ্যাসাসিন্স ক্রিড-এর কথা তো আগেই বলা হয়ে গিয়েছে। এখনও তার নাম আর কুখ্যাতি রয়ে গেছে, এত শতাব্দী পরেও। আর সেই যে তার গুপ্তধনগুলো ব্ল্যাকবিয়ার্ড লুকিয়ে গেছেন কারো সাথে ভাগাভাগি করবেন না বলে, সেগুলোর খোঁজ আজও পাওয়া যায়নি। হয়ত কোনো একদিন দেখা মিলবে অজস্র সেই সম্পদের…