হোমপেজ/কেফিয়াহ
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
১৯৩৬-১৯৩৯-এর দিকে অর্থাৎ আরব বিদ্রোহের সময়, ফিলিস্তিনিরা যখন ব্রিটিশ দখলদারিত্বের অবসান ঘুচিয়ে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল, তখন তারা শান্তি এবং সংহতির প্রতীক হিসেবে সাদা-কালো কেফিয়াহ পরিধান করত। কেফিয়াহ পরিহিত দুই ফিলিস্তিনি। সপ্তাহান্তের ছুটির দিনে তিনজন ফিলিস্তিনি কলেজ শবিস্তারিত পড়ুন
সপ্তাহান্তের ছুটির দিনে তিনজন ফিলিস্তিনি কলেজ শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। যাদের মধ্যে দুইজন কেফিয়াহ (স্কার্ফ) পরিহিত ছিল।
মধ্যপ্রাচ্যের সর্বত্রই কেফিয়াহ পরা হয়, কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে কেফিয়াহকে ফিলিস্তিনিদের জাতীয় পরিচয় ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসাবে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে চলা ইসরায়েল এবং হামাস যুদ্ধের মধ্যেও ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে বিক্ষোভকারীদের গলায় এই কেফিয়াহ স্কার্ফ পরতে দেখা গেছে। কেউ কেউ এটিকে মুখ ঢেকে রাখতেও ব্যবহার করেছেন।
“এই কেফিয়াহ যাযাবর বেদুইন, কৃষক এবং রাখালরা পরে বহু যুগ ধরেই। কিন্তু এখন এই কেফিয়াহই এই সময়ে এসে, বিশ্বব্যাপী ঔপনিবেশিকতাবাদ-বিরোধী অনেক বিপ্লবী ও কর্মীদের কাছে একটি আইকনিক পোশাক হয়ে দাঁড়িয়েছে”, কথাগুলো বলেছেন মজিদ মালহাস নামে একজন ফিলিস্তিনি-কানাডিয়ান সাংবাদিক। তিনি কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের একজন পিএইচডি শিক্ষার্থীও।
কেফিয়াহ বলতে যা বোঝায়
কেফিয়াহকে অনেক সময় ইংরেজিতে বলা হয় কুফিয়া বা কাফিয়াহ। ঐতিহ্যবাহী স্কার্ফ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব অঞ্চলের লোকজনই একে নিত্যই ব্যবহার করে। বেশিরভাগ কেফিয়াহ সাদা-কালো বা লাল-সাদা’র। তবে সুতার ব্যবহার বিভিন্ন প্যাটার্নের হয়।
ফিলিস্তিনের পোশাক ইতিহাসের জন্য সুপরিচিত বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ওয়াফা ঘনাইম সিএনএনকে বলেন, ১৯২০ সাল পর্যন্ত কেফিয়াহকে হাত্তা বা শামাঘ বলা হতো যা ফিলিস্তিনের বেশিরভাগ যাযাবর বেদুইন পুরুষরা পরিধান করতেন।
ঘনাইম সিএনএনকে আরও বলেন, উনিশ শতকের দিকে কেফিয়াহ সাধারণত তুলা, সিল্ক এবং সূক্ষ্ম উল দিয়ে তৈরি করা হতো যা সাদা, কালো, সবুজ ও লাল সূতা দিয়ে মোড়ানো থাকতো।
“মধ্যপ্রাচ্যের অঞ্চলগুলোর পুরুষ কিংবা মহিলা সকলকেই হেডড্রেস পরিধান করতে দেখা যেত। বেদুইনদের তুলনায় গ্রাম এবং শহরে বসবাসকারী লোকদের হেডড্রেসের ধরন আলাদা-আলাদা ছিল,” ব্যাখ্যা করে বলেন গবেষক ঘনাইম। বেদুইনরা কেফিয়াহকে আড়াআড়িভাবে ভাঁজ করে মাথায় পরতো এবং মাথায় সুরক্ষিতভাবে রাখার জন্য একটি রজ্জুও ব্যবহার করত।
এছাড়া, মরুভূমির তীব্র দাবদাহ থেকে বাঁচতেও এই কেফিয়াহ পরা হয়।
সাংবাদিক মালহাস বলেন, “প্রতিটি কেফিয়াহর বুনন ফিলিস্তিনের একেকটি দিককে প্রতিফলিত করে। যেমন জলপাই গাছ এবং ফিশনেট।”
সাদা এবং কালো কেফিয়াহকে জর্ডানের জাতীয়তাবাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে মনে করা হয়, কারণ ব্রিটিশ কমান্ডাররা ডেজার্ট প্যাট্রোলের সময় ইউনিফর্মের অংশ হিসেবে এটিকে ব্যবহার করতো। কিন্তু মালহাসের মতে, ফিলিস্তিনের কর্মী-সমর্থক এবং প্রতিরোধ যোদ্ধারা সব রঙের কেফিয়াহ পরিধান করেছে।
ফিলিস্তিনিদের কাছে কেফিয়াহ অর্থ কী
বিশ্বের অনেক ফিলিস্তিনি এবং আরব বংশোদ্ভূত মানুষেরা ভাবেন যে, কেফিয়াহ তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিরই একটি অংশ।
ফিলিস্তিনের ব্র্যান্ড কৌশলবিদ ও ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ডালিয়া জ্যাকবের মতে, যখন তিনি বাইরের কোনো দেশ ভ্রমণে যান, তখন তার শহর হেব্রনের তৈরি করা কেফিয়াহ পরতে কখনো ভুল করেন না।
এই স্কার্ফকে প্রতিরোধ এবং শান্তির প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করে তিনি আরও বলেন, “যখন আমি কেফিয়াহ পরিধান করে কোথাও ঘুরতে বের হই, তখন মনে হয় সেই জায়গাতে নিজের ঠিকানাকে সঙ্গে বহন করে নিয়ে যাচ্ছি।”
ঘনাইম বলেন, “আমার সুন্দর স্মৃতিগুলোর বেশিরভাগই এই কেফিয়াহকে ঘিরে। যখন এটি গলায় কিংবা মাথায় পরি তখন খুব গর্ব আর আনন্দ অনুভব করি।”
যেভাবে কেফিয়াহ প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে
সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক ছাড়াও এই কেফিয়াহ রাজনীতিতে যুক্ত করেছে এক নতুন মাত্রা। ব্যাপারটি কিছুটা সাংস্কৃতিক কিংবা ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং জাতীয়তাবাদের সঙ্গে মিশে থাকা অন্যান্য পোশাকের মতোই।
ঘনাইমের মতে, ১৯৩৬-১৯৩৯-এর দিকে অর্থাৎ আরব বিদ্রোহের সময়, ফিলিস্তিনিরা যখন ব্রিটিশ দখলদারিত্বের অবসান ঘুচিয়ে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল, তখন তারা শান্তি এবং সংহতির প্রতীক হিসেবে সাদা-কালো কেফিয়াহ পরিধান করত।
১৯৬০-এর দশকে রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে কেফিয়ার আরও এক পুনরুত্থান ঘটে। সে সময় পুরুষ-মহিলা সবাই কেফিয়াহ স্কার্ফ পরতেন। আর ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশনের প্রধান ইয়াসির আরাফাতকে প্রায়ই সাদা এবং কালো কেফিয়াহ পরিধান করতে দেখা যেত যা ফিলিস্তিনের জাতীয় সংগ্রামকে নির্দেশ করত সেই সময়।
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের একজন সাবেক কর্মী ও যোদ্ধা লায়লা খালেদ ১৯৬৯ সালের দিকে বিমান ছিনতাইয়ের জন্য ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তিনিও ফিলিস্তিনের জাতীয় সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে মাথায় এবং গলায় কেফিয়াহ জুড়িয়ে রাখতেন।
কারা কেফিয়াহ পরিধান করতে পারে?
কেফিয়াহকে জাতীয় পরিচয় ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে মনে করা হলেও এটিকে এখন মূলধারার ফ্যাশনের অংশ হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশ্বের নামকরা এবং মূলধারার পোশাক বিক্রেতারা এটিকে এখন ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবেই বিক্রয় করছে।
ঘনাইম বলেন, “গত ১০ বছরে কেফিয়াহ কোনো সাংস্কৃতিক পরিচয় আরোপ ছাড়াই মূলধারার ফ্যাশন হিসেবে বিশ্বে জায়গা দখল করে নিয়েছে।”
তিনি একে ব্যাখ্যা করে বলেন, “সাংস্কৃতিক দখল অনেক সময় সংস্কৃতিকে মুছে দিতে পারে। তাই এই স্কার্ফ পরার আগে সবার উচিত ইতিহাস কিংবা উত্থান সম্পর্কে জানা। এটি আসলে এমন একটি পোশাক যা সংহতি, মুক্তি এবং স্বাধীনতার প্রতীকও।”
অন্যদিকে, মালহাস বলেন, বেদুইনদের ঐতিহ্যবাহী স্টাইলে এই কেফিয়াহ পরিধান করার সময় অ-ফিলিস্তিনিদের এটা জানা উচিত যে, (অ-ফিলিস্তিনিদের) এই পোশাক পরার অর্থ “এক মহান সংহতি”র সঙ্গে ঐক্য প্রকাশ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।