ছারপোকা উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট অন্যান্য পোষকের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। পোকাটি বিছানা, মশারি, বালিশের এক প্রান্তে বাসা বাঁধলেও ট্রেন কিংবা বাসের আসনেও এদের দেখা মেলে। বিছানার পোকা হলেও এর অন্যতম পছন্দের আবাসস্থল হচ্ছে - ম্যাট্রেস, সোফা এবং অন্যান্য আসবাবপত্র। পুরোপুরি নিশাচর না হলেও ছারপোকা সাধারণত রাতেই অধRead more
ছারপোকা উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট অন্যান্য পোষকের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। পোকাটি বিছানা, মশারি, বালিশের এক প্রান্তে বাসা বাঁধলেও ট্রেন কিংবা বাসের আসনেও এদের দেখা মেলে। বিছানার পোকা হলেও এর অন্যতম পছন্দের আবাসস্থল হচ্ছে – ম্যাট্রেস, সোফা এবং অন্যান্য আসবাবপত্র। পুরোপুরি নিশাচর না হলেও ছারপোকা সাধারণত রাতেই অধিক সক্রিয় থাকে এবং মানুষের অগোচরে রক্ত চুষে নেয়। মশার মতো ছোট্ট কামড় বসিয়ে এরা স্থান ত্যাগ করে। তাই বলে যে দিনের বেলায় কামড়াবে না এমন না।
ন্যাপথলিন
ঘরের ছারপোকা তাড়াতে ন্যাপথলিন খুবই কার্যকারী। পোকাটি তাড়াতে অন্তত মাসে দু’বার ন্যাপথলিন গুঁড়ো করে বিছানাসহ উপদ্রবপ্রবণ স্থানে ছিটিয়ে দিয়ে রাখুন। দেখবেন ঘরে ছারপোকা হবে না।
কেরোসিনের প্রলেপ
ছারপোকা তাড়াতে মাঝে মাঝে আসবাবপত্রে কেরোসিনের প্রলেপ দিন। এতে ছারপোকা সহজেই পালাবে।
ঘর পরিষ্কার করুন
সপ্তাহে একবার হলেও সারা ঘর ভালো করে পরিষ্কার করুন। ছারপোকা মোটামুটি ১১৩ ডিগ্রি তাপমাত্রাতে মারা যায়। ঘরে ছারপোকার আধিক্য বেশি হলে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কাঁথা ও ঘরের ছারপোকা আক্রান্ত জায়গাগুলোর কাপড় বেশি তাপে সিদ্ধ করে ধুয়ে ফেলুন। ছারপোকা এতে মারা যাবে।
ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে করুন
ঘরের যে স্থানে ছারপোকার বাস সেখানে ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে করুন। দুই থেকে তিন দিন এভাবে স্প্রে করার ফলে ছারপোকা আপনার ঘর ছেড়ে পালাবে।
আসবাবপত্র ও লেপ-তোশক রোদে দিন
আসবাবপত্র ও লেপ-তোশক পরিষ্কার রাখার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত রোদে দিন। এতে করে ছারপোকার আক্রমণ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ই ছারপোকা থাকলে সেগুলো মারা যাবে।
অ্যালকোহল স্প্রে
আপনার ঘরের ছারপোকা তাড়াতে অ্যালকোহল ব্যবহার করতে পারেন। ছারপোকাপ্রবণ জায়গায় সামান্য অ্যালকোহল স্প্রে করে দিন দেখেবেন ছারপোকা মরে যাবে।
বিছানা দেয়াল থেকে দূরে রাখুন
ছারপোকার হাত থেকে রেহাই পেতে আপনার বিছানা দেয়াল থেকে দূরে স্থাপন করুন। শোয়ার আগে ও পরে বিছানা ভালো করে ঝেড়ে ফেলুন সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন।
সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর
See less
ছারপোকার নাম শোনেনি, এমন মানুষ খুব কমই আছে। তবে অনেকেই হয়তো শুধু নামই শুনেছেন ছারপোকার, কিন্তু রক্তচোষা এই পোকাটিকে চোখে দেখার সৌভাগ্য (কিংবা দুর্ভাগ্য) এখনো হয়নি। আর যারা ছারপোকাকে ইতোমধ্যে চেনেন, নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, তাদের সাথে ছারপোকার পরিচয় পর্বটা মোটেই সুখকর কিছু ছিলো না। যারা নিজস্ব অভিজ্ঞতাRead more
ছারপোকার নাম শোনেনি, এমন মানুষ খুব কমই আছে। তবে অনেকেই হয়তো শুধু নামই শুনেছেন ছারপোকার, কিন্তু রক্তচোষা এই পোকাটিকে চোখে দেখার সৌভাগ্য (কিংবা দুর্ভাগ্য) এখনো হয়নি। আর যারা ছারপোকাকে ইতোমধ্যে চেনেন, নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, তাদের সাথে ছারপোকার পরিচয় পর্বটা মোটেই সুখকর কিছু ছিলো না। যারা নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে ছারপোকা চেনেন কিংবা ছারপোকার বিষয়ে লোকমুখে কিছু কথা অন্তত শুনেছেন, তাদের অবশ্যই জানার কথা, এ পোকাটি দৈনন্দিন জীবনে, বিশেষ করে ব্যাচেলরদের জীবনে এক সাক্ষাৎ আতঙ্কের নাম!
চলুন, রক্তপিপাসু এ প্রাণীটি সম্পর্কে জানা-অজানা অনেক তথ্য আবার নতুন করে জেনে নেওয়া যাক।
পরিচয়
ছারপোকার বেশ কয়েকটি প্রজাতির মধ্যে আমাদের ঘরবাড়িতে যে দুটি প্রজাতিকে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তারা হলো Cimex lectularius ও Cimex hemipterus।
দুটি ভিন্ন প্রজাতির প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ছারপোকা। বাঁ-পাশেরটি Cimex lectularius এবং ডান পাশেরটি Cimex hemipterus প্রজাতি; Image Courtesy: Brittany Campbell/ResearchGate
ছারপোকার একমাত্র খাদ্য রক্ত। তবে এটি শুধু স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখি সদৃশ প্রাণীদের রক্তই পান করে থাকে। এরা উড়তে অক্ষম। কখনো কখনো ছারপোকাকে তেলাপোকার বাচ্চা বা উঁইপোকা মনে করে ভুল হতে পারে। তবে ছারপোকাকে আঘাত করে মেরে ফেললে কিংবা পিষে ফেলা হলে তীব্র ও কটু গন্ধ পাওয়া যায়, যা তেলাপোকার বাচ্চা বা উঁইপোকার সাথে এদের স্পষ্ট পার্থক্য নির্দেশ করে।
আবাস, জীবনচক্র ও বংশবিস্তার
ছারপোকারা নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে বাস করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। এরা অতিরিক্ত গরম সহ্য করতে পারে না; তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে এদের জন্য টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে ওঠে। ২১-২৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছারপোকাদের বসবাসের জন্য সবচেয়ে অনুকূল। ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় কিছুক্ষণের মধ্যেই এরা মারা যায়।
ছারপোকার জীবনচক্রের বিভিন্ন পর্যায়; Image Courtesy: bedbugfoundation.org
ছারপোকার প্রজনন ক্ষমতা মধ্যম প্রকারের। অর্থাৎ, অন্যান্য পোকামাকড়ের মতো খুব বেশি না, আবার তাচ্ছিল্য করার মতো নিতান্ত কমও নয়। অনুকূল পরিবেশ ও পর্যাপ্ত খাদ্য পেলে একটি প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী ছারপোকা যৌনমিলনের পর প্রতিদিন ২-৮টি করে ডিম দিতে পারে এবং তার গোটা জীবদ্দশায় মোট ২০০-৫০০টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ৬-১৫ দিন সময় লাগে, এবং সে বাচ্চাটি প্রায় ৫-৭ সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক ছারপোকায় পরিণত হয়। একটি ছারপোকা মোটামুটি ৬-১২ মাস কিংবা অনুকূল পরিবেশ পেলে তারচেয়েও বেশি সময় বাঁচতে পারে।
একটি প্রাপ্তবয়স্ক ছারপোকার সাধারণত ৬-১০ দিন পর পর রক্ত খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে, একদমই রক্ত পান না করেও একটি ছারপোকা প্রায় ২-৩ মাস পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। আবার, পরিবেশ খানিকটা ঠান্ডা হলে এরা না খেয়ে ১০-১২ মাসও বেঁচে থাকে!
শিশু অবস্থায় একটি ছারপোকার রঙ থাকে ঈষদচ্ছ ও কিছুটা হলদেটে-সাদা। ডিম থেকে বের হওয়ার পর একটি ছারপোকা তার জীবনের পাঁচটি পর্যায় অতিক্রম করে পূর্ণবয়স্ক ছারপোকায় রূপান্তরিত হয়। প্রতিটি পর্যায়ে এটি তার পুরনো খোলস ত্যাগ করে। ছারপোকার বয়স যতই বাড়তে থাকে, তার গায়ের রঙ ততই লালচে-খয়েরী বর্ণের হতে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক ছারপোকার গায়ের বর্ণ সাধারণত কালচে-খয়েরী হয়।
এরা একটি ঘরের প্রায় সকল স্থানেই বসবাস করতে পারে। দেয়ালের ফাটল বা ছিদ্র, কাঠের ফার্নিচারের ফাঁক-ফোকরে বা চিপায়, কাপড়-চোপড়, ব্যাগ, লাগেজ, স্যুটকেস, বালিশ, কুশনের কভারের ভেতর, লেপ, কম্বল, কাঁথার ভাজে এদেরকে বসবাস করতে দেখা যায়। তবে এদের সবচেয়ে প্রিয় আবাসস্থল হচ্ছে তোশকের নিচে ও মশারির কিনারায়।
একই ফ্রেমে বিভিন্ন বয়সী ছারপোকা ও ছারপোকার ডিম; Image Courtesy: M.F. Potter/USA Today
আবার গণপরিবহন, যেমন- বাস-ট্রেন বা প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, লঞ্চ, জাহাজ, এমনকি বিমানের সিটেও ছারপোকা বসবাস করতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন আবাসিক হোটেলেগুলোর আসবাবপত্র বা সিনেমা হলের বসার আসনও ছারপোকার আবাসস্থল।
উপদ্রব
ছারপোকার কাছে দেশ বা মহাদেশ, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সীমারেখা বলে কিছু নেই; বিশ্বের প্রায় সকল প্রান্তে, সকল পরিবেশে ছারপোকার দেখা মিলবে। এমনকি উন্নত দেশগুলোর কিছু শহরেও ছারপোকার উপদ্রব অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।
সাধারণত কোনো ঘরবাড়িতে ছারপোকার উপদ্রব শুরু হওয়ার পর সাথে সাথেই সে ঘরের বাসিন্দারা তা টের পায় না। এটা যে ছারপোকারই উপদ্রব, তা বুঝে উঠতে তাদের কিছুটা সময় লাগে। তবে এই সময়টুকুর মধ্যেই সাধারণত ছারপোকারা সে ঘরটিতে তাদের আবাস অনেকটাই পাকাপোক্ত করে নেয়।
ছারপোকার কামড়ের একটি ভিন্নধর্মী প্যাটার্ন রয়েছে, এরা সাধারণত পাশাপাশি কয়েকটি স্থানে কামড় বসায়; Image Courtesy: nozzlenolen.com
কয়েকটি প্রাথমিক লক্ষণ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ঘরে ছারপোকা আছে:
এসব লক্ষণ দেখা দিলে সামনের বেশ কয়েক সপ্তাহ, এমনকি বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত প্রচন্ড রকমের শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক দুর্ভোগ পোহানোর মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। কারণ, ছারপোকা একবার আবাস গেড়ে বসলে, তাদেরকে চিরতরে নির্মূল করাটা খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার! তবে অসম্ভব নয়।
ছারপোকা যে স্থানে কামড়ায়, সেই স্থানটি সাধারণত লাল হয়ে যায় (সবার ক্ষেত্রে না)। কারও কারও ত্বক ফুলেও যায়। ছারপোকার কামড়ের একটি বিশেষত্ব হলো, এরা ত্বকের একই স্থানে পাশাপাশি কয়েকটি কামড় বসিয়ে রক্ত পান করে। ফলে যে অঞ্চলে কামড়ায়, সেখানে কয়েকটি দাগ দেখা যায়। আবার, ছারপোকারা প্রতি রাতেই কামড়াবে, এটা প্রায় নিশ্চিত। তাই একই জায়গায় কয়েকটি ছারপোকার কামড় পড়তে পারে। ছারপোকারা সাধারণত কনুই ও কাঁধের আশেপাশে, পিঠে এবং পায়ে বেশি কামড়ায়। এছাড়াও ঘুমন্ত মানুষের শরীরের খোলা ত্বকের যেকোনো জায়গায় এরা সহজেই কামড় বসাতে পারে।
রোগ ও ক্ষতিকর প্রভাব
একবার পেটপুরে রক্ত খেতে ছারপোকাদের গড়পড়তা ১০ মিনিটের কিছু কম-বেশি সময় লাগতে পারে; Image Courtesy: imaginecare.co.ke
দিনের পর দিন ছারপোকার কামড় খাওয়াটা খুব যন্ত্রণাদায়ক। তবে গবেষকরা এমন কোনো প্রমাণ পাননি যে, ছারপোকা বড় ধরনের কোনো মহামারী বা সংক্রামক রোগের বিস্তার ঘটায়।
তবে এর কামড়ের ছোট ছোট কিছু ক্ষতিকর প্রভাব বিদ্যমান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
বিস্তার
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে মানবসভ্যতার ইতিহাসে অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের ঘটনা ঘটেছিলো। অনেকগুলো কার্যকরী কীটনাশক আবিষ্কৃত হয়েছিলো তখন। বিভিন্ন দেশের সেনারা প্রতিকূল পরিবেশে, বনে-জঙ্গলে বা দুর্গম অঞ্চলে অবস্থান করার সময় ক্ষতিকর পতঙ্গের হাত থেকে বাঁচতে নানা ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করতো। এ সময় থেকে বিভিন্ন ধরনের কীট-পতঙ্গের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে বা কমে যায়। ছারপোকার উপদ্রবও তখন থেকে কমে এসেছিলো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত শক্তিশালী কীটনাশক DDT (ডাইক্লোরো ডাইফিনাইল ট্রাইক্লোরো ইথেন) একসময় ছারপোকা দমনে কার্যকর ছিলো। কিন্তু বর্তমানে এর চেয়ে শক্তিশালী কীটনাশকের বিরুদ্ধেও ছারপোকা জেনেটিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে; Image Credit: © Zerbor/Fotolia via ScienceDaily
সাম্প্রতিককালে, একদম নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে মোটামুটি ১৯৯৫ সালের পর থেকে ছারপোকারা পুনরায় শক্তভাবেই তাদের অস্তিত্বের কথা জানান দিয়ে আসছে এবং তাদের বিস্তার আশংকাজনকভাবে বেড়ে চলেছে।
এর পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে বলে গবেষকগণ মনে করেন।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, বর্তমান যুগে যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসার ও সহজতর যাতায়াতব্যবস্থা। এই দ্রুততর যোগাযোগ ব্যবস্থার কল্যাণে মানুষের যাতায়াতের সাথে ছারপোকারাও অঞ্চল থেকে অঞ্চলে, দেশ থেকে দেশে, এমনকি মহাদেশ থেকে মহাদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে।
আরেকটি কারণ হলো, বর্তমানকালে মানুষের মধ্যে পুরনো বা সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্য, বিশেষ করে ব্যবহৃত ফার্নিচার ও অন্যান্য ঘরোয়া ব্যবহার্য জিনিসপত্র ক্রয় করার প্রবণতা আগের চেয়ে অনেক বেশি। এসবের মাধ্যমে এক বাসা থেকে আরেক বাসায়, এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে ছারপোকারা ছড়িয়ে পড়ছে।
পর্যটক বা অতিথিরাও ভ্রমণের সময় একস্থান থেকে আরেক স্থানে নিজের অজান্তেই ছারপোকা বহন থাকেন।
আবার ছারপোকা দমন করার জন্য কার্যকর কীটনাশকেরও অভাব রয়েছে। বিদ্যমান কীটনাশকগুলো ছারপোকা দমনে খুব একটা কার্যকর নয়। আবার কিছু কিছু কীটনাশক পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বিভিন্ন দেশের সরকার সেগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এটাও একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, যার জন্য ছারপোকার বিস্তার রোধ করাটা দিন দিন কষ্টকর হয়ে উঠছে।
সতর্কতা
এতদিন আপনার ঘরে ছারপোকা ছিলো না, কিন্তু হঠাৎ একদিন ছারপোকার উপস্থিতি টের পেলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে এলো ছারপোকা? কোত্থেকেই বা এলো?
খোঁজ নিয়ে দেখুন, আপনার প্রতিবেশীদের কারও ঘরে ছারপোকা নেই তো?
কিংবা এমনও তো হতে পারে, কিছুদিন আগে আপনার বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন আপনারই কোনো আত্মীয় বা বন্ধু। তিনি ট্রেনে বা বাসে চড়ে আসার সময় ছারপোকা বহন করে নিয়ে আসেননি তো?
কিংবা আপনিই কি সম্প্রতি কারও বাসায় বেড়াতে গিয়ে ছারপোকা সাথে করে নিয়ে এসেছেন?
এক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে ছারপোকার আক্রমণের সম্ভাবনা অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।
গণপরিবহনে চড়ে দূরপাল্লার ভ্রমণ থেকে কিংবা সিনেমা হল থেকে, অথবা আত্মীয়স্বজনদের বাসা, যেখানে ছারপোকা থাকার সম্ভাবনা আছে, সেখান থেকে ফিরে এসে সরাসরি শোবার-রুমে না ঢুকে গোসলখানা বা বাইরের কোনো রুম যেমন গ্যারেজ বা স্টোররুমে পোশাক ত্যাগ করতে হবে এবং সে পোশাকগুলো দ্রুতই গরম পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে ঘরবাড়িতে ছারপোকার আগমন ঠেকানো যাবে।
ছারপোকা গরম সহ্য করতে পারে না বলে আমাদের গায়ের সাথে সেঁটে থাকে না সারাক্ষণ। তবে আমাদের পরনের কাপড়-চোপড় কিংবা ব্যাগ-লাগেজে লুকিয়ে থাকতে পারে ছারপোকা। এবং এভাবে আমাদের সাথেই ফ্রিতে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ভ্রমণ করতে পারে তারা।
আবার কোনো ফার্নিচার, বিশেষ করে কাঠের ও পুরনো বা ব্যবহৃত ফার্নিচার ক্রয় করার সময় নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে যে, তাতে ছারপোকা নেই। যদি থাকে, তাহলে তা ঘরে নিয়ে আসার পূর্বে অতি অবশ্যই পুরোপুরি ছারপোকামুক্ত করে নিতে হবে।
প্রতিকার
ম্যাট্রেসের কিনারা ছারপোকাদের অন্যতম পছন্দের বাসস্থান; Image Courtesy: Pest Control Toronto
ছারপোকার উপদ্রব চরম পর্যায়ে পৌঁছালে এর কামড় থেকে মুক্তি পাবার সহজ কোনো উপায় নেই। একমাত্র রাস্তা হচ্ছে ছারপোকা দমন করা। তবে ছারপোকা দমন সময়সাধ্য এবং অত্যন্ত জটিল ও কঠিন একটি ব্যাপার।
বিশ্বব্যাপী ছারপোকার হাত থেকে মুক্তি পেতে অনেকগুলো পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া হয়। সবগুলো পদ্ধতিই যে সমানভাবে কার্যকর, তা কিন্তু নয়। একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে ছারপোকা দমন করা সম্ভব হবে কি না, তা নির্ভর করে আবহাওয়া, তাপমাত্রা, ঘরের পরিবেশ ইত্যাদিসহ আরও অনেকগুলো বিষয়ের উপর।
আসুন, জেনে নেওয়া যাক বিশ্বব্যাপী ছারপোকা দমন করার জন্য ব্যবহৃত সাধারণ ও সহজ কিছু পদ্ধতি (জটিল, স্বাস্থ্যের জন্য অতিমাত্রায় ক্ষতিকর ও যথেষ্ট ব্যয়বহুল পদ্ধতিগুলো পরিহার করা হলো এবং লেখকের নিজস্ব কিছু অভিজ্ঞতাও শেয়ার করা হলো):
গঠনগত কারণে ছারপোকার পা শিমপাতার সূক্ষ্ম ট্রাইকোমে আটকে যায়। ফলে ছারপোকা চলাচল করতে পারে না; Image Courtesy: University of California, Irvine via ScienceDaily
উপরোক্ত উপায়গুলোর কোনোটিই পুরোপুরি ছারপোকা দমন করার নিশ্চয়তা প্রদান করে না। তবে এগুলোর মধ্যে কয়েকটি একসাথে প্রয়োগ করা গেলে এবং ধৈর্য্য ও অধ্যবসায়ের সাথে অনেকদিন যাবত ছারপোকার সাথে লড়াই করে গেলে একসময় মুক্তি মিলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যখন ফার্নিচারগুলোকে ছারপোকামুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তখন একইসাথে কাপড়গুলো সব গরম পানিতে ধুয়ে নিলে এবং গোটা কক্ষকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরিষ্কার করা হলে প্রথম প্রচেষ্টাতেই হয়তো সব ছারপোকা চলে যাবে না, তবে নিশ্চিতভাবেই তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। অর্থাৎ প্রথম প্রচেষ্টাতেই ছারপোকাদের সাথে যুদ্ধে অনেকটা এগিয়ে গেলেন আপনি। এটা এমন এক যুদ্ধ, যেখানে হয় আপনি হাল ছেড়ে দেবেন, কিংবা হাল ছাড়বে ছারপোকারা। এবার বাকিটা আপনার হাতে; হার মেনে নেবেন, নাকি চূড়ান্ত জয় ছিনিয়ে আনবেন। পর পর বেশ কয়েক সপ্তাহ (কিংবা মাস) চেষ্টা করতে থাকলে অনেকটা নিশ্চিতভাবেই একসময় মুক্তি মিলবে ছারপোকার হাত থেকে।
ছারপোকা দমনের ক্ষেত্রে রাসায়নিক ব্যবহার করার বদলে অন্যান্য উপায়গুলো অবলম্বন করাই শ্রেয়। অনেক গবেষক দেখেছেন, কীটনাশক আবিষ্কৃত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত কীটনাশকের বিরুদ্ধে ছারপোকাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েক হাজার গুণ বেড়ে গেছে! এছাড়া কীটনাশকগুলো শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা ভ্যানগাড়িতে চড়ে রীতিমতো মাইকিং করে তেলাপোকা, উঁইপোকা, ইঁদুর, ছারপোকা ইত্যাদির বিষ বিক্রি করে থাকেন। তাদের কাছেই মিলবে এই অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বা তাদের ভাষায় ‘ছারপোকার যম’; Image Credit: lokaantar.com
আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, এমন কৌশল অবলম্বন করা উচিত, যেন ছারপোকারা পালাতে না পারে; এদেরকে মেরে ফেলা উচিত। কেননা, যদি এরা পালিয়ে পাশের কোনো বাসায় গিয়ে বসবাস করা শুরু করে, তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অর্থাৎ, তাদের উপদ্রব আরো বেড়ে যাবে এতে। পরবর্তীতে সুযোগ পেলেই আবারও আপনার বাসায় হানা দেবে এবং আশেপাশের অন্যান্য বাসা-বাড়িতেও ছড়িয়ে পড়বে।
শেষকথা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ছারপোকাদের বিস্তার সাম্প্রতিককালে অনেক বেড়ে গেলেও সামনে আরও ভয়ানক সময় অপেক্ষা করছে; ছারপোকারা হয়তো সামনে বিপ্লবই ঘটাতে যাচ্ছে।
দীর্ঘসময় যাবত এই রক্তখেকো পতঙ্গটি লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকলেও ইদানীং এটি আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অন্যান্য অনেক কারণের পাশাপাশি এই যন্ত্রণাদায়ক প্রাণীটির বিষয়ে মানুষের সচেতনতার অভাব একে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছে।
যদিও এটি মানুষের বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করে না, তবুও মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সকাল আটটায় উঠে অফিস বা ক্লাসে যেতে হবে, অথচ রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে আসার পরও আপনি সামান্য ঘুমের জন্য ছারপোকার সাথে যুদ্ধ করেই যাচ্ছেন- ভাবতে পারেন!
See less