হোমপেজ/মধ্যযুগের ইতিহাস
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
ফাইল ছবি মধ্যযুগ সম্পর্কে কতটুকু জানা আছে আমাদের? যুদ্ধ, সাহিত্য, রাজনীতি, ধর্মের বিকাশ, জীবনাচরণের পরিবর্তন ইত্যাদি সব কিছুরই যেন মোড় ঘুরে যায় এ যুগে। মধ্যযুগে ইতিহাস লেখা শুরু হয় সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে। চলুন মিলিয়ে নেয়া যাক ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের প্রফেসর জন এইচ আরনল্ড কর্তৃক মধ্যযুগ নিয়ে পবিস্তারিত পড়ুন
ফাইল ছবি
মধ্যযুগ সম্পর্কে কতটুকু জানা আছে আমাদের? যুদ্ধ, সাহিত্য, রাজনীতি, ধর্মের বিকাশ, জীবনাচরণের পরিবর্তন ইত্যাদি সব কিছুরই যেন মোড় ঘুরে যায় এ যুগে।
মধ্যযুগে ইতিহাস লেখা শুরু হয় সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে।
চলুন মিলিয়ে নেয়া যাক ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের প্রফেসর জন এইচ আরনল্ড কর্তৃক মধ্যযুগ নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন বিষয়গুলোর সঙ্গে।
১. মধ্যযুগীয় পেশা ও শ্রেণীবিভাগ:
মধ্যযুগীয় প্রেক্ষাপটকে ভিত্তি করে লেখা বিভিন্ন বই কিংবা সিনেমা দেখে মনে হতে পারে সে যুগে বোধহয় কেবল যোদ্ধা, পাদ্রী, কৃষক কিংবা ক্রীতদাসই ছিল। এছাড়া বুঝি আর পেশা ছিল না। এ ধারনা অবশ্য একেবারে ভুলও না। একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানুষের পেশা ও বৃত্তি মূলত ৩টি ভাগে বিভক্ত ছিল। এদের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চ শ্রেণীর লোক ছিলেন, যারা ধর্ম বা প্রার্থনার কাজ সারতেন। এর পরের শ্রেণীটি ছিল সৈনিক ও যোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ। সর্বশেষ শ্রেণীতে বাস করতেন শ্রমিকগণ।
কিন্তু দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে এ অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। এ সময় ইউরোপের শহরগুলোয় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। শহরগুলো আয়তনেও বড় হতে থাকে। প্যারিসের আয়তন সে সময় প্রায় ১০গুণ বৃদ্ধি পায়। লন্ডনের আয়তন দ্বিগুণ হয়ে যায়। মানুষের আনাগোনা বৃদ্ধির পাশাপাশি শহরগুলোতে কাজের পরিধিও বাড়তে থাকে। সে সময় থেকে একজন মানুষ বিভিন্ন দিক সামলানোর চেয়ে বরং একজন মানুষের একটি পেশাতেই দক্ষতার উপর জোর দেয়া হতে থাকে। এতে উৎপত্তি হয় নানা পেশার। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য কিছু পেশা ছিল- ব্যবসায়ী, বিক্রয়কর্মী, ছুতার, কসাই, স্থাপত্যবিদ, চিত্রকর ইত্যাদি। এছাড়া সে সময় থেকেই মানুষ জমিদারদের প্রভাব থেকে বের হয়ে এসে নিজের জমিতে ফসল ফলানোর কাজ করতে শুরু করে।
২. ভোট ব্যবস্থা:
ভোটাধিকার রাজতন্ত্রের মধ্যযুগের জন্য বড় বেমানান মনে হলেও কিছু ক্ষেত্রে কিন্তু ভোট দানের মাধ্যমে প্রতিনিধি পছন্দ করার এই প্রথাটি চালু ছিল। অবশ্য দেশের সরকার বা জাতীয় পর্যায়ের কোনো কাজের জন্য এ ভোটের বিষয়টি চালু ছিল না। ভোটের ব্যাপারটি চালু ছিল আঞ্চলিক বিভিন্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রে। অবশ্য ভোট তখন বেশিরভাগই উচ্চ শ্রেণীর নাগরিক, ধনী ও পুরুষদের জন্য প্রচলিত একটি প্রথা ছিল। দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সের বিভিন্ন শহর ও গ্রামে বাৎসরিক হিসেবে “কাউন্সেলর” নির্বাচন অনুষ্ঠিত হত, আর তাতে বেশিরভাগ পুরুষ নাগরিকদেরই ভোটাধিকার ছিল। উত্তর ইতালির নির্বাচন ও সরকার পদ্ধতি ছিল আরো জটিল। সেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কয়েকটি স্তর ছিল। এবং সেসব স্তরের জন্যও ছিল বিভিন্ন ধাপের ভোটদান পদ্ধতি। নারীরা এতে সাধারণত ভোটার বা প্রতিনিধি- কোনোটিতেই অংশ নিতে পারতেন না। অবশ্য উচ্চ বংশীয় নারীদের ক্ষেত্রে এ নিয়মের শিথিলতা ছিল।
৩. ডাইনি নিধন:
সমগ্র ইউরোপ জুড়ে ব্যাপক হারে ডাইনি নিধনের যে কার্যক্রমটি শুরু হয়, সেটি মধ্যযুগের কোনো ঘটনা নয়। বরং প্রারম্ভিক আধুনিক যুগের ঘটনা। ডাইনি নিধনের এই কার্যক্রমটি চলে পুরো সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দী জুড়ে। মধ্যযুগে ডাইনি নিধনের খুবই সামান্য কিছু প্রমাণ মেলে, জার্মান অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে, সেটিও মধ্যযুগের একেবারে শেষভাগে। মধ্যযুগে বরং গির্জার পাদ্রীরা বলতেন যে, ঈশ্বর মানুষকে নানা অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী করলেও তিনি মানুষকে ভালোবাসেন বলে কোনো রকম খারাপ জাদু তিনি সংগঠিত হতে দেন না। তাই এসব জাদুতে বিশ্বাস স্থাপন করা সম্পূর্ণ বোকামি ও ভাঁড়ামো।
৪. মধ্যযুগীয় শিক্ষা:
রেনেসাঁ বলতেই মধ্যযুগের শেষভাগে গোড়াপত্তন হওয়া ক্লাসিক্যাল সাহিত্য, চিত্রকর্ম, স্থাপত্যবিদ্যা, চিন্তা ও দর্শনের নতুন ধারা। রেনেসাঁর সময়ের সে সব শিক্ষাই মধ্যযুগ থেকে মানবসভ্যতার আজকের এই আধুনিক যুগের মধ্যে সেতু রচনা করেছে। কিন্তু মধ্যযুগেও মানুষ রেনেসাঁর অভিজ্ঞতা লাভ করে। সে সময় ক্লাসিক্যাল সাহিত্য ও শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে রেনেসাঁর সূচনা ঘটে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে ঘটে যাওয়া মধ্যযুগের এই রেনেসাঁর মূল উৎস ছিল এরিস্টটলের শিক্ষা এবং তৎকালীন সময়ের আরব দার্শনিক, কবি ও অনুবাদকদের ছড়িয়ে দেয়া জ্ঞান। এছাড়াও সে সময় পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের সূচনা ঘটে। দার্শনিক রজার বেকনের হাত ধরে পৃথিবী দেখা পায় এক নতুন দিগন্তের। যন্ত্রবিদ্যা, জ্যোতিবিজ্ঞান, রসায়ন প্রভৃতি বিষয়ে তার ছিল অসাধারন দক্ষতা। তার লেখা বই এর নাম “ওপাস ম্যাজাস”।
৫. ভ্রমনে অনীহা:
মধ্যযুগের গ্রাম অঞ্চলে বসবাসরত নাগরিকদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার ক্ষেত্রে অনীহা কাজ করত। কেননা, সে সময় দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক সময়ের প্রয়োজন হতো এবং প্রায়ই দেখা যেত তাদের ভূমি ও সম্পত্তি হাতছাড়া বা দখল হয়ে যেত। এ ব্যাপারটি অবশ্য মধ্যযুগ ছাড়িয়ে আরো অনেক পরেও চলতে থাকে। মধ্যযুগের মানুষের ক্ষেত্রে আরো যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয়, ভ্রমণে মানুষের তেমন আগ্রহ ছিলো না বললেই চলে। অবশ্য অভিযাত্রীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন ছিল। মধ্যযুগের অভিযাত্রীগণ নতুন দেশ ও ভূমি আবিষ্কারের নেশায় সমুদ্রপথে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতেন। বছরের পর বছর তারা নিজেদের ভূমিতে ফিরে আসতেন না। এমনকি অনেকেই ছিলেন, যারা তাদের প্রথম ভ্রমণে বের হয়ে আর কখনো নিজেদের ভূমিতে ফিরে আসেন নি। মধ্যযুগের বণিকগণ অবশ্য দীর্ঘপথ পাড়ি দিতেন। ইউরোপ সিল্কের জন্য চীন, মশলার জন্য এশিয়া- যা মধ্যপ্রাচ্য ঘুরে ইউরোপে আসত এবং পশমী কাপড়ের জন্য বাল্টিক অঞ্চল বিখ্যাত ছিল। আর এসব অঞ্চল থেকে উক্ত পণ্যসমূহ এনে বণিকরা ইউরোপের বাজারে চড়া মূল্যে বিক্রয় করতেন।
৬. গির্জার প্রভাব:
মধ্যযুগে ইউরোপ জুড়ে গির্জার প্রভাব বিদ্যমান ছিল। গির্জাই বলতে গেলে তখনকার সংস্কৃতি নির্ধারণ করে দিত এবং পরিবর্তন করত। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি প্রচলিত ছিল যা গির্জা বা খ্রিষ্ট ধর্মের চেয়েও বহু পুরানো। অবশ্য এসব সংস্কৃতি ও রীতিনীতি পালনে গির্জার অনুমতি ছিল বলেই তখন সেগুলো পালন করা সম্ভব হত। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত ২টি প্রথা। একটি ছিল, গ্রীষ্মের শুরুতে ইউরোপবাসীগণ ব্যারেলের মাঝে আগুন জ্বেলে তা পাহাড় থেকে এমনভাবে ফেলে দিত যেন তা গড়িয়ে পাহাড়ের পাদদেশে নেমে আসে। এছাড়া আরো একটি প্রথা ছিল, নব দম্পতির মাথার উপর দিয়ে তারা গম ছুঁড়ে মারত, যা তারা দান বা চ্যারিটি এবং সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করত। এসব সংস্কৃতির মধ্যে অবশ্য অনেক ছিল কুসংস্কার ছিল। যেমন বিভিন্ন রোগ সারানো, দূর্যোগ প্রতিরোধ, ফসল ফলানো ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন দেখা যেত। তবু এই সব কিছু নিয়েই তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির স্বরূপ দেখা যেত।
৭. নিজস্ব রীতিতে বিয়ে:
মধ্যযুগে উচ্চ বংশীয়দের বিয়ে গির্জায় সম্পন্ন হলেও, অন্যান্যদের জন্য এ নিয়ম খুব একটা প্রযোজ্য ছিল না। যদিও গির্জা থেকে বলা হত এটি পালনের জন্য এবং বিয়েকে একটি “পবিত্র বন্ধন” হিসেবে ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে জোরেশোরে ঘোষণা করা হয়, কিন্তু মধ্যযুগীয় মানুষের মাঝে গির্জায় গিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করার প্রথা পালনে অনীহাই দেখা যেত। সে সময় তারা ঘোষণা করত যে, একে অপরের সঙ্গে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে ইচ্ছুক। আর সেক্ষেত্রে উভয় পক্ষের সম্মতিই ছিল এক মাত্র শর্ত। বিয়ের ক্ষেত্রে তারা নিজস্ব রীতি পালন করত এবং সাক্ষী রাখার প্রচলন ছিল।
৮. দার্শনিকরা লিখতেন না:
শুধু জ্ঞান থাকলেই হবে না তা লিপিবদ্ধ করতে লিখে রাখা জরুরি। তবে মধ্যযুগে বিষয়টি তেমন ছিল না। তখন দার্শনিক ও চিন্তাবিদগণ লিখতে পারার চাইতে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন ও তার প্রচারকেই শিক্ষিত হওয়ার পূর্বশর্ত বলে গণ্য করতেন। যদিও তাদের বেশির ভাগই লিখতে জানতেন, তবুও তারা নিজেদের অর্জিত জ্ঞান ‘নিজেরা’ লিপিবদ্ধ করতেন না। লেখার কাজকে শিক্ষানবিসদের একটি শ্রম হিসেবেই গণ্য করা হত। এমনকি অনেকে হাতে লেখাকে অপমানজনক বলে মনে করতেন। সেক্ষেত্রে তারা নিজস্ব চিন্তা-ভাবনাগুলোকে মুখে বলে প্রকাশ করতেন, এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষানবিসগণ লিপিবদ্ধ করতেন।
৯. ধর্মীয় বিশ্বাস:
মধ্যযুগের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তখনকার মানুষের ধর্ম ও ধর্মীয় রীতি। কেননা ধর্মের প্রভাব তখনকার মানুষের জীবনাচারণকে প্রভাবিত করত। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রও ধর্মের প্রভাবে চালিত হত। মধ্যযুগে আব্রাহামিক ধর্মগুলোর ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটে। ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিরাট অংশজুড়ে খ্রিষ্ট, ইসলাম ও ইহুদি ধর্মের প্রসার ঘটে সে যুগে। এর ভিত্তিতে রাষ্ট্রগুলোর মাঝে বন্ধুত্ব এবং শত্রুতা গড়ে উঠত। এমনকি এর ভিত্তিতে রাষ্ট্রে যুদ্ধও লাগত। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোর মাঝে বন্ধন এবং অপরদিকে ক্রুসেডের যুদ্ধ। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তখনকার সকল মানুষই ধর্মভীরু ছিলেন। তাদের মাঝে চিন্তা ভাবনায় “সন্দেহবাদ” ও দেখা যায়। তখনকার বিভিন্ন দার্শনিক সে সময়ও নাস্তিকতা চর্চা করতেন।
১০. পৃথিবী গোলাকার:
মধ্যযুগেই মানুষ বুঝতে পারে, পৃথিবী গোলাকার। সে সময় বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিকভাবে এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন মানুষের “প্রতিপাদ স্থান” সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল। কোনো স্থানের ঠিক বিপরীত স্থানকে ঐ স্থানের প্রতিপাদস্থান বলে। অর্থাৎ, কোন নির্দিষ্ট স্থান হতে পৃথিবীর কেন্দ্র ভেদ করে যদি কোন সরলরেখা টানা হয় তা পৃথিবীর অপর যে প্রান্তে ভেদ করবে তাকে ১ম স্থানের প্রতিপাদস্থান বলা হবে। এই “প্রতিপাদস্থানের” ধারণার মাধ্যমে পৃথিবী যে গোলাকার- সে ধারণা মানুষের মনে প্রতিষ্ঠা পায়।