হোমপেজ/মস্তিষ্কের কত শতাংশ
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
সুবিশাল এই জীবজগতে অন্যান্য প্রাণিদের সাথে মানুষের সবথেকে বড় পার্থক্য হলো মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের গঠন, কার্যপদ্ধতি, নিউরন ঘনত্বের আধিক্য আর দেহের অন্যান্য অঙ্গের সাথে এর প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতা অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষকে অনন্যতা দান করেছে। অস্তিত্বের সূচনালগ্ন থেকে মানুষ এই মস্তিষ্ক ব্যবহার করে বুদ্ধবিস্তারিত পড়ুন
সুবিশাল এই জীবজগতে অন্যান্য প্রাণিদের সাথে মানুষের সবথেকে বড় পার্থক্য হলো মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের গঠন, কার্যপদ্ধতি, নিউরন ঘনত্বের আধিক্য আর দেহের অন্যান্য অঙ্গের সাথে এর প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতা অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষকে অনন্যতা দান করেছে। অস্তিত্বের সূচনালগ্ন থেকে মানুষ এই মস্তিষ্ক ব্যবহার করে বুদ্ধিকৌশল প্রয়োগে করেছে কালজয়ী সব আবিষ্কার, রচনা করেছে ইতিহাস আর পরবর্তী প্রজন্মকে দিয়েছে আরো উন্নত জীবন। চিন্তার খোরাক থেকে নতুন কিছু সৃষ্টি করে জন্ম হয়েছে কত কিংবদন্তির।
কিন্তু যে মস্তিষ্ককে ব্যবহার করে করা হয়েছে এত কিছু, সেই মস্তিষ্কের অনেক রহস্য এখনও অধরাই থেকে গেছে বিজ্ঞানীদের কাছে। যুগে যুগে আমরা পেয়েছি মস্তিষ্কের অনেক নতুন নতুন তথ্য, যার কোনোটি আবার পুরানোকে সরিয়ে জায়গা করে নিয়েছে, যেখানে অন্যগুলো প্রমাণের ভিত্তিতে এখনও টিকে আছে। আর তাই এত সংশয়ের জন্যই জন্ম হয়েছে অনেকে গুজব আর আজব সব মিথের। আবার সেসব মিথের অনেকগুলোই অকাট্য প্রমাণের ভিত্তিতে ভুল প্রমাণিত হয়েছে, আবার কোনোটির এখনও প্রমাণ মিলেনি।
Source: Visually
পূর্ণবয়স্ক একজন স্বাভাবিক মানুষের মস্তিষ্কে নিউরনের সংখ্যা কত বলতে পারবেন? উত্তরটা হলো প্রায় ৮৬ বিলিয়ন। আর এতগুলো নিউরনের প্রতিটিতে আছে প্রায় ১০ হাজার সিন্যাপটিক যোগাযোগ। আর সব মিলিয়ে মোট সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১০০ ট্রিলিয়নে, যার সর্বোচ্চ হিসেবটা গিয়ে ঠেকতে পারে ১,০০০ ট্রিলিয়নে। এত এত নিউরন আর সিন্যাপসগুলো বৈদ্যুতিক আর রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে মস্তিষ্কের সাথে সারা দেহের যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে প্রতি মুহূর্তে।
Source: Slide Player
আচ্ছা, কোনো গাণিতিক সমস্যা সমাধান কিংবা কঠিন কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের সময় ভেবেছেন কি আপনি নিজের মস্তিষ্কের কতটুকু অংশ ব্যবহার করছেন? হয়তো কোনো মোটিভেশনাল স্পিচে, জনপ্রিয় কোনো মুভি, বই কিংবা কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনি দেখে থাকতে পারেন ‘মানুষ কেবল নিজের মস্তিষ্কের দশ শতাংশ ব্যবহার করে!’
আচ্ছা তাহলে তাহলে বাকি নব্বই শতাংশ কি অলস হয়ে বসে থাকে? নাকি কোনো অদৃশ্য দেয়াল তাদের আলাদা করে রেখেছে আপনার মস্তিষ্কের কার্যকর অংশ থেকে? যদি একশো শতাংশই আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকত তবে কি আপনি আপনার পছন্দের সুপারহিরো হয়ে যেতে পারতেন! নাকি টেলিকাইনেটিক শক্তির মতো অতিপ্রাকৃতিক কোনো ক্ষমতার জন্ম হতো আপনার মধ্যে! নাকি আইনস্টাইন আর নিউটনের মতো সেরা বিজ্ঞানীগণ একশো ভাগই ব্যবহার করতে তাদের মস্তিষ্কের!
Source: Ted Ed
মস্তিষ্কের আরো কিছু প্রচলিত মিথের মধ্যে মানব মস্তিষ্কের এই দশ শতাংশের মিথটিও বেশ প্রচলিত। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো এই মিথ কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ আর প্রায় অর্ধেক সংখ্যক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক বিশ্বাস করেন।
এই মিথের জন্মদাতা কে তা স্পষ্টভাবে কারোরই জানা নেই। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশকে আমেরিকার বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমস একটি ছেলের আইকিউ পরীক্ষার পর বলেন মানুষ তার মস্তিষ্কের সবটুকুই সঠিকভাবে ব্যবহার করে না। আর এই বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যায় মানুষের মনে মস্তিষ্কের সেই দশ শতাংশের ব্যবহার আরো দৃঢ়তা পায়। বিভিন্ন প্রচারণা মাধ্যম, ম্যাগাজিন আর লোকমুখে দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এই অপরীক্ষিত অদ্ভুত তত্ত্ব। শুধু তা-ই নয় লুসি, লিমিটলেস, ফ্লাইট অব দ্য নেভিগেটর এর মতো বিখ্যাত কিছু হলিউড মুভিতেও এই তত্ত্বের দেখা মেলে।
Source: Ted Ed
আদতে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন আমরা অনেকেই আমাদের চিন্তা-ভাবনার কাজে মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে উদ্দীপ্ত করতে পারি না বা চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি না। আবার শোনা যায় কালজয়ী বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের নামও জড়িয়ে আছে এই ঘটনা অনেকটা এই ধরনের বক্তব্যের জন্য।
কিন্তু আমরা সকলেই আসলে দিনশেষে মস্তিষ্কের একশ শতাংশই ব্যবহার করি। কীভাবে? তার আগে দেখা যাক প্রচলিত এই মিথটি কেন ভুল?
Source: Slide Share
আচ্ছা মস্তিষ্কের নব্বই ভাগই যদি কোনো কাজে না আসে তবে সেগুলোতে আঘাত লাগলে বা ক্ষতি হলেও তো আমাদের শারীরিক বা মানসিকভাবে কোনো সমস্যা হবার কথা না। কিন্তু সত্যিই কি তাই?
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তি এখনকার মতো অত্যাধুনিক ছিল না। তাই বেশ দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা জানতেন না আমাদের মস্তিষ্কের বিশাল একটি জায়গা ফ্রন্টাল লোব এবং প্যারাইটাল লোবের ভূমিকা কি ছিল! কোনো ধরনের আঘাতে মস্তিষ্কের স্নায়বিক উদ্দীপনায় কোনো প্রকার প্রভাব না ফেলায় তারা ধরেই নিয়েছিলেন এগুলোর কোনো কাজ নেই। আর তাই কয়েক দশক ধরেই এগুলো বিজ্ঞানীদের কাছে ‘নীরব অঞ্চল’ বা সাইলেন্ট এরিয়া নামেই পরিচিত ছিল, যাতে অনেকে ভেবেছিলেন দশ শতাংশ ব্যবহারের ধারণা বুঝি তাই সত্যি।
কিন্তু এখন আমরা জানি যে এই অঞ্চলগুলো আমাদের যুক্তিবিচারে, পরিকল্পনায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণে আর পরিস্থিতিনির্ভর অভিযোজনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। আর আমাদের পরিপূর্ণভাবে মানুষ হিসেবে প্রকাশ করে। আবার কোনো মস্তিষ্কের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্বাভাবিক জীবনে এর প্রভাব আমরা না দেখলেও আদতে তা কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা তৈরি করে।
Source: Dreamstime;
সাধারণত মানব মস্তিষ্ক ওজনের দিক থেকে পুরো শরীরের তুলনায় মাত্র দুই শতাংশ। কিন্তু এই মস্তিষ্ক সারা শরীরের মোট গ্লুকোজের প্রায় বিশ শতাংশই ব্যবহার করে নিজের জ্বালানি হিসেবে। আর একটি শিশুর ক্ষেত্রে সেই পরিমাণ ৫০ শতাংশ এবং একটি নবজাতকের জন্য ৬০ শতাংশ, যেখানে রোডেন্ট এবং কুকুরের প্রজাতিরা পুরো শরীরের মোট গ্লুকোজের প্রায় পাঁচ শতাংশ আর বানর দশ শতাংশ শক্তি ব্যবহার করে। তাহলে যদি নব্বই ভাগই অযথা অব্যবহৃত থাকে তবে এই বিশ শতাংশ শক্তি মস্তিষ্ক কী করে? এত পরিমাণ শক্তি মস্তিষ্কের মাত্র দশ শতাংশের কাজের তুলনায় ঢের বেশি।
Source: Karen Carr Studios;
মানুষের মস্তিষ্কের ওজন আনুমানিক ১.৫ কিলোগ্রাম, যেখানে একটা হাতির মস্তিষ্ক ৫ কিলোগ্রাম আর তিমির ৯ কিলোগ্রাম। কিন্তু এই ১.৫ কিলোগ্রাম মস্তিষ্কে ৮৬ বিলিয়ন নিউরনের উপস্থিতি মস্তিষ্কের ঘনত্ব অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আর সেটাই আমাদের করেছে আরো বেশি চৌকশ।
Source: Ted Ed
কিন্তু চৌকশ এই মস্তিষ্কের জন্য অনেক বেশি পরিমাণ শক্তি প্রয়োজন তা আগেই বলেছি। প্রতি মিনিটে ৩.৪×১০২১ মলিকিউল এটিপি। এটিপি (অ্যাডেনোসিন ট্রাইফসফেট) হলো দেহের জ্বালানি।
Source: Wikimedia Commons;
আর স্পার্স কোডিং পদ্ধতির মাধ্যমে কম শক্তি খরচ করে বেশি তথ্য আদানপ্রদান করে মস্তিষ্ক। আর নব্বই ভাগকে অকার্যকর রেখে কখনোই এত পরিমাণ শক্তির দরকার হবে না। এছাড়া মস্তিষ্কের কোনো অংশ অপ্রয়োজনীয় হলে জিনের বিবর্তনের মাধ্যমে সেই অংশটুকু অনেক আগেই বাদ পড়ে যেত।
কিন্তু মস্তিষ্ক কখনোই একইসাথে একশ ভাগ ব্যবহার করে না। নির্দিষ্ট কাজের জন্য মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ উদ্দীপ্ত হয়। কোনো একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে মস্তিষ্কের এক থেকে ষোল শতাংশ কার্যকর পাওয়া যাব। এমনকি ঘুমানোর সময়ও যে মস্তিষ্ক সচল থাকে তা-ও পরীক্ষা করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। আপনি যখন যে কাজটি করবেন আপনার মস্তিষ্কের সেই অংশটির সাথে যোগাযোগ ঐ মুহূর্তে বেশি হবে। আর তাই একইসাথে আপনি দুইয়ের অধিক কাজ করতে গেলে কোনোটিই ঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন না, কারণ আপনার মস্তিষ্ক একসাথে দুটি কাজের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ মনোযোগের যোগান দিতে পারে না।
একবিংশ শতাব্দীর তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে জীবন্ত মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণার সু্যোগ আমাদের এই এত এত ভুল ভাঙ্গাতে সক্ষম হয়েছে। ইইজি, পিইটি, এফএমআরআই এর মাধ্যমে আমরা মস্তিষ্কের কোন অঞ্চল কী কাজে সাড়া দেয় তা আমরা জানি এখন। কীভাবে সেই ব্রেইন স্ক্যানিং করা হয় তা না হয় অন্য আরেকদিনের জন্য তোলা থাকুক। মস্তিষ্কের আরো অনেক প্রচলিত মিথ নিয়ে জানতে পড়ে আসতে পারেন রোর বাংলার এই লেখাটি।
তাই নিজের মস্তিষ্ককে অলস বা অকার্যকর ভেবে সময় নষ্ট বন্ধ করুন। ৮৬ বিলিয়নের এই দল আপনাকে কোনো অতিপ্রাকৃতিক শক্তি না দিলেও এরা যথেষ্ট চৌকশ যেকোনো অসাধ্যসাধনে। তাই আর দেরি কেন? ক্ষুধার্ত এই নিউরনগুলোর শক্তির ব্যবস্থা করুন আর কাজে নেমে পড়ুন নতুন উদ্যমে।
সংক্ষেপে দেখুন