হোমপেজ/রঙের রহস্য
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
মানুষের রক্তের রং লাল, সব সময়ই কী তাই? শরীরের কোনো স্থান যখন কেটে যায় তখন লাল বর্ণের রক্তই দেখা যায়। ক্ষতস্থানে টিস্যু পেপার রাখলে রক্ত এক সময় বাতাসে শুকিয়ে যায়। তখন তা গাঢ় বাদামি বর্ণ ধারণ করে। কিন্তু এমনটা কেন হয়? আবার চামড়ার ওপর দিয়ে হাতের যে শিরা-উপশিরা দেখা যায়, তা দেখলে মনে হয় শরীরবিস্তারিত পড়ুন
মানুষের রক্তের রং লাল, সব সময়ই কী তাই? শরীরের কোনো স্থান যখন কেটে যায় তখন লাল বর্ণের রক্তই দেখা যায়। ক্ষতস্থানে টিস্যু পেপার রাখলে রক্ত এক সময় বাতাসে শুকিয়ে যায়। তখন তা গাঢ় বাদামি বর্ণ ধারণ করে।
কিন্তু এমনটা কেন হয়? আবার চামড়ার ওপর দিয়ে হাতের যে শিরা-উপশিরা দেখা যায়, তা দেখলে মনে হয় শরীরে যেন নীল রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। রক্তের এমন রঙের পেছনের কারণটা কী? বিষয়টি বুঝতে প্রথমে জানতে হবে কীভাবে আমরা রং দেখি! কোনো বস্তুর ওপর আলো পড়লে বস্তুটির দ্বারা আলোর কিছু অংশ শোষিত হয়। আর কিছু অংশ প্রতিফলিত হয়। এই প্রতিফলিত আলো চোখের রেটিনার ‘কোণ’ কোষে পড়লে সেখানে উপস্থিত রঞ্জক পদার্থ ওই আলো শোষণ করে। এরপর বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে মস্তিষ্কে সংশ্লিষ্ট রঙের দেখার অনুভূতি হয়।
মানুষসহ প্রায় সব মেরুদন্ডী প্রাণীর রক্তের লোহিত রক্তকণিকায় আছে হিমোগ্লোবিন নামক একটি রঞ্জক পদার্থ। এটি উজ্জ্বল লাল বর্ণের আলোকে প্রতিফলিত করে। হিমোগ্লোবিনের মূল কাজ অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস হৃৎপিণ্ড থেকে কোষে এবং কোষ থেকে হৃৎপিন্ডে বহন করা। হিমোগ্লোবিন একটি জটিল যৌগ। হিমোগ্লোবিনে চার অণু প্রস্থেটিক গ্রুপ ‘হিম’, এক অণু গ্লোবিন নামক সরল প্রোটিন এবং লৌহ অণু ফেরাস আয়ন অবস্থায় থাকে। এক একটি হিমে কার্বন পরমাণুগুলো পরিবর্তনশীল একক ও দ্বিবন্ধনে যুক্ত হয়। এমন পরিবর্তনশীল কার্বন-কার্বন বন্ধনের জন্য হিম দৃশ্যমান আলোর কিছু অংশ শোষণ করে। লৌহ বা আয়রন রক্তে আলোর এই শোষণকে প্রভাবিত করে এবং উজ্জ্বল লাল তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো প্রতিফলিত করে। ফলে এই আলো চোখে পৌঁছালে মস্তিষ্কে লাল রং দেখার অনুভূতি হয়। অক্সিজেনসমৃদ্ধ হিমোগ্লোবিনের রং লাল এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডসমৃদ্ধ হিমোগ্লোবিনের রং কালচে লাল। এই হিমোগ্লোবিন অক্সিজেনসমৃদ্ধ হিমোগ্লোবিনের চেয়ে অধিক লাল আলো শোষণ করে। তাই সেখান থেকে প্রতিফলিত হয়ে চোখে আসা আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য লাল আলোর মত থাকে না বরং কিছুটা কালচে হয়।
শিরার মধ্য দিয়ে যে রক্ত প্রবাহিত হয়, তার রং বাইরে থেকে নীল দেখায়। একসময় রাজপরিবার বা অভিজাত পরিবারের মানুষদের বলা হতো নীল রক্তের মানুষ। এর পেছনের কারণটি হচ্ছে, এসব অভিজাত পরিবারের সদস্যরা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বা বিলাসবহুল প্রাসাদে বাস করতেন। কেউ কেউ হয়তো সূর্যের মুখও দেখতেন না। তাতে তাদের ত্বক থাকতো অনেক বেশি ফর্সা। অনেকটা ইট বা মাটিচাপা ঘাসের মতো। এর ফলে তাদের শিরার প্রবাহিত রক্ত ত্বকের বাইরে থেকেই বেশ বোঝা যেত। সে যাই হোক, শিরার রক্ত নীল দেখা যাওয়ার কারণটি হচ্ছে দৃশ্যমান আলো শিরা এবং শিরা ঘিরে থাকা ত্বকীয় আবরণ উভয়ের দ্বারাই প্রভাবিত হয়। লাল আলো নীল আলোর তুলনায় ত্বকীয় কলাগুছ বা টিস্যুর বেশি গভীরে প্রবেশ করতে পারে। অপরদিকে শিরায় কার্বন-ডাই-অক্সাইডযুক্ত রক্ত প্রবাহিত হয় যা বেশি লাল আলো শোষণ করে। নীল আলো অধিক গভীরে প্রবেশ না করে অশোষিত অবস্থায় প্রতিফলিত হয় এবং শিরাতে নীল রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে বলে মনে হয়। আবার টিস্যু পেপারে রক্ত যখন শুকিয়ে যায় তখন মূলত রক্তের হিমোগ্লোবিনের আয়রন অক্সিজেনের উপস্থিতিতে ফেরাস অবস্থা থেকে জারিত হয়ে ফেরিক অবস্থায় চলে যায়। হিমোগ্লোবিনের এই রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তনের জন্য তার আলো শোষণ এবং প্রতিফলনের মাত্রাও বদলে যায়। ফলে রক্ত তখন গাঢ় বাদামি দেখায়।
কিছু অমেরুদন্ডী প্রাণীর রক্তে হিমোগ্লোবিন ছাড়াও থাকে বিভিন্ন রঞ্জক পদার্থ। সেজন্য তাদের রক্তের রংও ভিন্ন হয়। যেমন মাকড়সা, স্কুইড, কিছু মলাস্কাদের (শামুক,ঝিনুক) রক্তে রঞ্জক হিসেবে থাকে হিমোসায়ানিন। এতে আয়রনের পরিবর্তে তামা থাকে। তাই এদের রক্তের স্বাভাবিক বর্ণ নীল হয়। হিমোসায়ানিনের রাসায়নিক গঠনের ভিন্নতার কারণে এটা নীল আলো প্রতিফলিত করে। কেঁচো, কৃমি প্রভৃতি প্রাণীর রক্তে রয়েছে ক্লোরোকুওরিন নামক রঞ্জক পদার্থ । সেজন্য এদের রক্তের রং সবুজ। কিছু সামুদ্রিক প্রাণীতে হিমোরিথ্রিন নামক রঞ্জকের জন্য তাদের রক্তের রং বেগুনি। অর্থাৎ রক্তের রং শুধু লালই নয়, বিভিন্ন রঞ্জকের উপস্থিতি, তাদের রাসায়নিক গঠন, আলোর শোষণ ও প্রতিফলনের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে রক্ত বিভিন্ন রঙের হতে পারে।