প্যান্ডোরার বাক্স: যে বাক্স পৃথিবীতে নিয়ে এসেছে দুঃখ দূর্দশা গ্রীক মিথলজি মতে প্যান্ডোরা হলেন পৃথিবীর প্রথম নারী। আর এই মিথের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় খ্রীস্টপূর্ব ৭০০ বছর আগের গ্রীক লেখক হেসিওদের লেখা থেকে। অলিম্পাসের দেবতারা যখন টাইটানদের কাছ থেকে স্বর্গ ছিনিয়ে নেয়, তার ও কিছু কাল পরে জিউস ওবিস্তারিত পড়ুন
প্যান্ডোরার বাক্স: যে বাক্স পৃথিবীতে নিয়ে এসেছে দুঃখ দূর্দশা
গ্রীক মিথলজি মতে প্যান্ডোরা হলেন পৃথিবীর প্রথম নারী। আর এই মিথের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় খ্রীস্টপূর্ব ৭০০ বছর আগের গ্রীক লেখক হেসিওদের লেখা থেকে।
অলিম্পাসের দেবতারা যখন টাইটানদের কাছ থেকে স্বর্গ ছিনিয়ে নেয়, তার ও কিছু কাল পরে জিউস ও অন্যান্য দেবতারা পৃথিবীতে নতুন প্রাণী সৃষ্টি করার কথা ভাবে। আর এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুই টাইটান এপিমেথেউস ও প্রমিথিউস নামের দুই ভাইকে। প্রমিথিউস সৃষ্টি করতে থাকেন মানুষ আর তার ভাই এপিমেথিউস সৃষ্টি করতে থাকেন অন্যান্য প্রাণী। জেনে রাখা ভালো প্রমিথিউস যেসব মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন সবই ছিলো পুরুষ মানুষ, পৃথিবীতে তখন কোনো নারী মানুষ সৃষ্টি করা হয়নি। প্রমিথিউস মানুষদের খুব ভালোবাসতেন আর এই অতিরিক্ত মানবপ্রেম জিউস একদমই পছন্দ করতেন না। প্রমিথিউস এজন্য দেবতাদের সভায় এ নিয়ে দেবতা জিউসকে অপমান ও করতেন।
মানব সৃষ্টির পর পৃথিবীতে মানুষের জন্য আগুন খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে উঠে। প্রমিথিউস যেহেতু মানুষদের খুব ভালোবাসতেন তাই স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করে মানুষদের হাতে তুলে দিলেন। দেবতা জিউস মানুষদের হাতে আগুন দেওয়াটা একদমই পছন্দ করেননি। কারন মানুষের হাতে আগুন গেলে পুরো পৃথিবী তারা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাঁড়খাড় করে দেবে। আর এজন্য ক্রুদ্ধ হয়ে জিউস প্রমিথিউস কে শৃঙ্খলে বদ্ধ করে রাখলেন। জিউসের ক্রোধ তাতেও শেষ হয়নি। যে মানব জাতীর জন্য প্রমিথিউস জিউসকে এতো অপমান করেছেন। তিনি সেই অপমানের প্রতিশোধ নিতে সৃষ্টি করতে চাইলেন এক নারী মানুষের।
জিউস বিশ্বকর্মা হেফাস্টাসকে আদেশ দিলেন এক নারী মানুষ তৈরি করতে। হেফাস্টাস কাদামাটি দিয়ে তৈরি করলেন এক অপূর্ব মানবীর, তারপর তাতে প্রাণ সঞ্চার করলেন। দেবলোকের প্রত্যেক দেবতাই এই নারী মানবীর তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন। এই নারী মানবীকে তৈরি করার সময় বিশ্বকর্মা হেফাস্টাস প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি কে মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
নারী মানব সৃষ্টির পর প্রত্যেক দেব দেবী সেই নারীকে কিছুনা কিছু উপহার দিয়েছেন। দেবী আফ্রোদিতি দিয়েছিলেন সৌন্দর্য্য, লাবন্য আর আকাঙ্খা। দেবতা হার্মিস দিয়েছেন চাতুর্য ও দৃঢ়তা, অ্যাপোলো তাকে সঙ্গীত শিখিয়েছেন। এমনিভাবেই প্রত্যেক দেবতাই তাকে কোনো না কোনো উপহার দিয়েছেন। সর্বশেষে দেবতা জিউসের স্ত্রী হেরা উপহার দেয় কৌতুহল। আর এই অপরূপ সুন্দরী মানবীর নাম দেওয়া হয় পেন্ডোরা। গ্রীক ভাষায় পেন্ডোরা অর্থ সবার উপহার। কারণ সব দেবতার উপহার দিয়েই এই নারীর সৃষ্টি করা হয়েছে। দেবতা জিউসের এই অসাধারণ সুন্দরী ও কোমল মেয়েকে দেখে দেবলোকের সবাই মুগ্ধ হন।
গ্রীক মিথলজির মতে পেন্ডোরা পৃথিবীর প্রথম নারী। ছবিতে দান্তে গ্যাব্রিয়েলের আঁকা প্যান্ডোরা
প্রমিথিউসের প্রতি প্রতিশোধের ভাসনায় দেবতা জিউস সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি পেন্ডোরাকে প্রমিথিউসের ভাই এপিমিথিউসের সাথে বিবাহ দেবেন। এপিমিথিউস এই প্রস্তাব শুনে বুঝতে পারলেন দেবতা জিউসের নিশ্চয়ই কোনো খারাপ অভিসন্ধি আছে। কিন্তু অপরুপ সুন্দরী মানবী পেন্ডোরাকে দেখে তিনি পেন্ডোরার প্রেমে পড়ে যান এবং জিউসের দেওয়া বিবাহের প্রস্তাবে রাজী হয়ে যান।
এরপর প্রচন্ড জাঁকজমকভাবে দেবতা এপিমিথিউসের সাথে প্রথম মানবী পেন্ডোরার বিয়ে হয়ে যায়। সবার উপহার দিয়ে অপূর্ব সাজে সাজেন প্যান্ডোরা। প্রবেশ করেন এপিমিথিউসের গৃহে অর্থাৎ দেবলোক থেকে পৃথিবীতে।
এপিমিথিউসকে তার ভাই প্রমিথিউস অনেক আগেই জিউসের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছিল, আর তাই বিয়েতে সে জিউস থেকে কোনে উপহার গ্রহণ করে নি। এপিমিথিউস কোনো উপহার গ্রহণ না জরলেও জিওস তার মানব কন্যা পেনৃডোরাকে একটি অদ্ভুত বাক্স উপহার দেন। পরবর্তীকালে এই বাক্সই পরিচিতি পেয়েছে পেন্ডোরার বাক্স।
জিউসের দেওয়া এই বাক্সটি ছিলো খুবই অদ্ভুত। অদ্ভুত এই কারনে বলছি যে বাক্সে লেখা ছিলো ‘কখনে খোলো না’ জিউস এই বাক্সের সাথে একটি চাবিও পেন্ডোরার হাতে তুলে দেয়। কারণ জিউস নিজেই চাইছিলেন পেন্ডোরা কৌতুহলী হয়ে সেই বাক্সটি খুলুক।
বিয়ের পর প্যানডোরা-এপিমিথিউস দম্পতি পৃথিবীতে বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছিলো। কিন্তু একদিন সেই সুখের সমাপ্তি ঘটে সেই সাথে নেমে আসে পুরো মানবজাতির উপর অভিশাপ।
এপিমিথিউস একদিন কাজের জন্য ঘরের বাহিরে গিয়েছেন। পেন্ডোরা তখন ঘরে একা। দেবতা জিউসের দেওয়া সেই অদ্ভুত বাক্স নিয়ে সে ভাবছে কি থাকতে পারে এই বাক্সে? নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানবজাতীয় কৌতূহল সবসময়ই বেশি। পেন্ডোরা তার কৌতূহল আর ধরে রাখতে পারলেন না। চাবি দিয়ে খুলে ফেললেন বাক্সটির মুখ। ঠিক এরপরেই বাক্স থেকে বেরিয়ে এলো শক্তি,হিংসা,ঘৃণা,দুঃখ জরা, শোকের মতো অশুভ সব শক্তিগুলো। পেন্ডোরা সাথে সাথেই বাক্সটি বন্ধ করে দিলেন কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এসব অশুভ শক্তিগুলি ততক্ষণে মিশে গেছে পুরো পৃথিবীতে মানুষদের মনের অন্তরে।
এপিমিথিউস ঘরে ফিরে দেখলেন তার স্ত্রী পেন্ডোরা কাঁদছে। এপিমিথিউসকে এই ঘটনা দেখানোর জন্য প্যান্ডোরা আবারো বাক্স খুললেন। এবার বাক্স থেকে বেরিয়ে এলো শুভ শক্তি আশা। আশা পেন্ডোরা তাকে মুক্ত করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে মিশে গেলো পুরো পৃথিবীর মানুষের মাঝে।
আর এই আশাই মানুষকে এতো দুঃখ শোক আর প্রতিকূলতা থেকে মানুষকে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে টিকিয়ে রেখেছে। এই আশার জন্যই মানুষ বেঁচে আছে।
যে মানবের জন্য প্রমিথিউস দেবতা জিউসকে অপমান করেছে ভৎসনা করেছেন। তাদের উপর এবং প্রমিথিউসের উপর এমন ছল চাতুরী ও সূক্ষ্মতার মাধ্যমেই জিউস তার রাগের প্রতিশোধ নিলেন। গ্রীক মিথলজির পেন্ডোরার বাক্স মূলত আমাদের নির্দেশ করে নারীদের অতিরিক্ত কৌতূহল সম্পর্কে। আর এই অতিরিক্ত কৌতূহলই জিউসকে সু্যোগ করে দিয়েছে মাবজাতীর জন্য চির অশুভকে দুয়ার খুলে দিতে।
চাঁদকে ঘিরে এখনও অনেক রহস্য। পৃথিবীর এই উপগ্রহটি সম্পর্কে শোনা যায় নানা কথা। অনেক রোমান্টিক নামও আছে তার-ব্লু মুন, ক্রিসেন্ট মুন, ফুল মুন ইত্যাদি ইত্যাদি। রাতের আকাশে খালি চোখে দেখা এই উপগ্রহটি সম্পর্কে এখানে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো: ১. চাঁদ গোলাকার নয়: চাঁদের আকৃতি আসলে ডিমের মতো। আপনি যখন এর দিকেবিস্তারিত পড়ুন
চাঁদকে ঘিরে এখনও অনেক রহস্য। পৃথিবীর এই উপগ্রহটি সম্পর্কে শোনা যায় নানা কথা। অনেক রোমান্টিক নামও আছে তার-ব্লু মুন, ক্রিসেন্ট মুন, ফুল মুন ইত্যাদি ইত্যাদি। রাতের আকাশে খালি চোখে দেখা এই উপগ্রহটি সম্পর্কে এখানে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো:
১. চাঁদ গোলাকার নয়: চাঁদের আকৃতি আসলে ডিমের মতো। আপনি যখন এর দিকে তাকান তখন কিন্তু এর ছোট দুই প্রান্তের কোন একটিকে দেখতে পান। চাঁদের ভরের কেন্দ্র ঠিক এর জ্যামিতিক কেন্দ্রে অবস্থিত নয়। এটি জ্যামিতিক কেন্দ্র থেকে ১ দশমিক ২ মাইল দূরে।
২. সবসময় আমরা চাঁদের পুরোটা দেখতে পাই না: আমরা যখন চাঁদের দিকে তাকাই তখন এর ৫৯ শতাংশ দেখতে পাই। পৃথিবী থেকে চাঁদের বাকি ৪১ শতাংশ কখনোই দেখা যায় না। আপনি যদি এই তথ্য বিশ্বাস না করেন এবং এটা সত্য কিনা সেটা যাচাই করে দেখতে চাঁদের লুকিয়ে থাকা ওই ৪১ শতাংশের উপরে গিয়ে দাঁড়ান তাহলে কিন্তু সেখান থেকে আপনি এই পৃথিবীকে দেখতে পাবেন না।
৩. ব্লু মুন হয়েছে আগ্নেয়গিরি কারণে: ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নুৎপাতের পর ১৮৮৩ সালে ‘ব্লু মুন’ পরিভাষার জন্ম হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। সেসময় অগ্নুৎপাতের ফলে বায়ুমণ্ডলে এতো বেশি ধুলো ও ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছিল যে মানুষ যখন পৃথিবী থেকে চাঁদের থেকে তাকিয়েছিল তখন তাকে দেখতে নীল মনে হয়েছিল। আর এ থেকেই তৈরি হয়েছে ‘ওয়ান্স ইন এ ব্লু মুন’ কথাটি। বিরল কোন ঘটনা বলতে এই বাক্যটি ব্যবহার করা হয়।
৪. চাঁদকে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা: যুক্তরাষ্ট্র একবার সত্যিই সত্যিই চাঁদের উপর পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণের কথা চিন্তা করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করা। বিশেষ করে রাশিয়াকে ভয় দেখানো। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার অত্যন্ত গোপনীয় এই পরিকল্পনার নাম ছিল ‘এ স্টাডি অফ লুনার রিসার্চ ফ্লাইটস’ অথবা ‘প্রজেক্ট এ১১৯।’
৫. ড্রাগনের কারণেই গ্রহণের ঘটনা: সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝে চাঁদ এসে পড়লে অথবা সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে চাঁদ এসে দাঁড়ালে তখন সূর্য বা চাঁদের আলো সাময়িকভাবে ম্লান হয়ে যায়। একে বলা হয় চন্দ্রগ্রহণ কিম্বা সূর্যগ্রহণ। একটি প্রাচীন চীনা বিশ্বাস হচ্ছে- একটি ড্রাগন যখন সূর্যকে গিলে খেয়ে ফেলে তখন সূর্যগ্রহণ হয়। তখন চীনারা তাদের পক্ষে যতোটা সম্ভব আওয়াজ সৃষ্টি করতে থাকে যাতে ড্রাগনটি ভয় পেয়ে দূরে চলে যায়। চীনারা একসময় আরো বিশ্বাস করতো যে চাঁদের গর্তের ভেতরে একটি বিশাল আকৃতির ব্যাঙ বসবাস করতো। চারশো কোটি বছর আগে মহাকাশ থেকে ছুটে যাওয়া একটি পাথর চাঁদকে আঘাত করলে ওই গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল।
৬. চাঁদের কারণে পৃথিবীর গতি ধীর হয়: চাঁদ যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে আসে, তখন জোয়ারের সৃষ্টি হয়। নতুন কিম্বা ফুল মুনের পরপরই এরকম হয়ে থাকে। তখন পৃথিবীর ঘূর্ণন শক্তিও চাঁদ চুরি করে নেয়। আর সেকারণে পৃথিবীর গতিও প্রতি ১০০ বছরে প্রায় ১ দশমিক ৫ মিলি-সেকেন্ড করে শ্লথ হয়ে যাচ্ছে।
৭. চাঁদের আলো: সূর্য একটি পূর্ণ চাঁদের চেয়েও ১৪ গুণ মাত্রায় বেশি উজ্জ্বল। সূর্যের মতো সমান উজ্জ্বলতায় জ্বলতে হলে প্রায় চার লাখ পূর্ণ চাঁদের প্রয়োজন। চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ যখন পৃথিবীর ছায়ার ভেতরে চলে যায় তখন চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা দেড় ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ৫০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটও কমে যেতে পারে।
৮. লিওনার্দো দা ভিঞ্চি বুঝেছিলেন ক্রিসেন্ট কি জিনিস: চাঁদকে আমরা যখন ক্রিসেন্টের আকারে বা অর্ধচন্দ্রাকৃতির মতো দেখি তখন আমরা চাঁদ থেকে ছিটকে আসা সূর্যের আলোকেই দেখতে পাই। চাঁদের বাকি অংশটা খুব অস্পষ্ট দেখা যায়। সেটাও নির্ভর করে আবহাওয়ার উপরে। শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চিই হলেন প্রথম কোন ব্যক্তি যিনি উপলব্ধি করতে পারছিলেন যে চাঁদ আসলে সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হচ্ছে না, বরং এর কিছু অংশ লুকানো থাকে।
৯. চাঁদ পনির দিয়ে তৈরি: চাঁদের আরো অনেক কিছুই আছে যা এখনও আমাদের অজানা। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় এনিয়ে একটি জরিপ চালানো হয়েছিল। তাতে দেখা গেছে জরিপে অংশ নেওয়া লোকজনের ১৩ শতাংশ বিশ্বাস করেন যে চাঁদ চীজ বা পনির দিয়ে তৈরি।
সংক্ষেপে দেখুন