ধরুন, হঠাৎ করে আপনার পকেটে থাকা মোবাইল ফোনটি বেজে উঠলো কিংবা ভাইব্রেট হলো, কিন্তু পকেট থেকে বের করেই দেখলেন, না, ফোনটা বাজছেও না আবার ভাইব্রেটও হচ্ছে না! হ্যাঁ, ঠিক তখনই আপনার হ্যালুসিনেশন হয়েছে! হ্যালুসিনেশন কেনো হয়? হ্যালুসিনেশন শব্দটির সঙ্গে আমরা পরিচিত। অনেকে ইলিউশন বা দৃষ্টিভ্রমকে হ্যালুসিনেশনেবিস্তারিত পড়ুন
ধরুন, হঠাৎ করে আপনার পকেটে থাকা মোবাইল ফোনটি বেজে উঠলো কিংবা ভাইব্রেট হলো, কিন্তু পকেট থেকে বের করেই দেখলেন, না, ফোনটা বাজছেও না আবার ভাইব্রেটও হচ্ছে না! হ্যাঁ, ঠিক তখনই আপনার হ্যালুসিনেশন হয়েছে!
হ্যালুসিনেশন কেনো হয়?
হ্যালুসিনেশন শব্দটির সঙ্গে আমরা পরিচিত। অনেকে ইলিউশন বা দৃষ্টিভ্রমকে হ্যালুসিনেশনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। ইলিউশন ও হ্যালুসিনেশন বিস্তৃত আঙ্গিকে বোঝার জন্য ইলিউশন সম্পর্কে একদম স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার। হ্যালুসিনেশন আর ইলিউশন দু’টোই একধরণের বিভ্রান্তি। তবে ইলিউশনে উদ্দীপক থাকবে, হ্যালুসিনেশনে এমন কোনো উদ্দীপক থাকবে না। সামনের ঝুলে থাকা দড়ি যদি কারো কাছে সাপ মনে হয় তাহলে এটি ইলিউশন। যদি কোনো দড়ির অস্তিত্ব ছাড়াই সাপ দেখতে পায় তাহলে তা হ্যালুসিনেশন।
হ্যালুসিনেশন শব্দটি উচ্চারণে যেমন একটা মজা আছে তেমনি কৌতুহল তৈরি করার মতো এর নানাবিধ উপস্থাপনাও দেখা যায়। কেউ বিষয়টিকে দেখেন একটা মজার বিষয় হিসেবে, কেউ রহস্যময়, কেউ এটাকে নাটক বা উপন্যাসের বিশেষ উপকরণ হিসেবে কেউ আবার বিশেষ ক্ষমতা প্রাপ্তির সঙ্গে হ্যালুসিনেশনকে তুলনাও করে থাকেন। কিন্তু আর যাই হোক, এটি মোটেই মজার কোনো বিষয় নয়। এটি এমন এক দশা যখন কেউ মিথ্যা জালের ভেতরে বসবাস করে অজান্তেই। আসলে মিথ্যার জগতে বসবাস করে কেউ ভাবে সে বাস্তব জগতে বসবাস করছে। এটি এক ধরনের অস্বাভাবিক এবং অদ্ভুত অনুভূতি। এ অনুভূতি স্বাভাবিক অনুভূতির মতোই ঘটে থাকে।
হ্যালুসিনেশন কোনো রোগ নয়, এটি অন্য রোগের উপসর্গ। এটি সাধারণত মানসিক রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তবে কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থেকেও হ্যালুসিনেশন হতে পারে। তাই কেবল হ্যালুসিনেশন দিয়ে কোনো নির্দিষ্ট রোগ নির্ণয় করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন কারণে হ্যালুসিনেশন ঘটতে দেখা যায়-
(১) সিজোফ্রেনিয়া, সিভিয়ার মুড ডিসঅর্ডার, ডিল্যুশনাল ডিসঅর্ডারে রোগীর প্রায়ই হ্যালুসিনেশন হতে পারে
(২) মাত্রাতিরিক্ত ড্রাগস বা অ্যালকোহল সেবনের কারণে
(৩) মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্র এবং ইন্দ্রিয়ের সমস্যায় হ্যালুসিনেশন হতে পারে।
(৪) শরীরে লবণের তারতম্যের জন্যও স্বল্পমেয়াদের হ্যালুসিনেশন দেখা দিতে পারে।
(৫) প্রচণ্ড জ্বর হলে বিশেষ করে শিশুদের হ্যালুসিনেশন হয়। মৃগীরোগ, বিষন্নতা, হিস্টিরিয়া এমনকি ব্রেইন টিউমারের বেলাতেও হ্যালুসিনেশন ঘটতে পারে।
(৬) লিভার বা কিডনির সমস্যা প্রভৃতি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হলে।
হ্যালুসিনেশন হলো এমনি একটি মানসিক অবস্থা যেখানে ব্যক্তি কোনো প্রকার উদ্দীপনা ছাড়াই বিশেষ ইন্দ্রিয়ানুভূতি লাভ করে। এ অনুভূতির সঞ্চার স্বাভাবিক অনুভূতির মতোই ঘটে। ধরা যাক, কোনো ব্যক্তির সঙ্গে এমন ঘটছে, সে বিশেষ সময়ে কোন ধরণের গায়েবি কথা শুনছেন। তার মানে ঐ ব্যক্তির শ্রবণেন্দ্রিয়ের হ্যালুসিনেশন ঘটছে। এ গায়েবি কথা খুব হাল্কাভাবে ঘটে কিংবা তাতে অস্পষ্টতা থাকে এমন নয় কিন্তু। আশপাশের লোকজনের কথা সে যেমনভাবে শুনতে পায়, কানের মধ্যে আসা গায়েবি কথাও ঠিক তেমনভাবেই তার সঙ্গে ঘটে থাকে। হ্যালুসিনেশন দেহের প্রতিটি ইন্দ্রিয়তে ঘটতে পারে।
হ্যালুসিনেশনকে দু’টি শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে। একটি হচ্ছে হিপনেজোগিক হ্যালুসিনেশন যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তার দশ সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যে যা ঘটে থাকে, আর অন্যটি হচ্ছে হিপনোপমপিক হ্যালুসিনেশন যখন মানুষ জেগে উঠে তারপর যা ঘটে থাকে। তবে আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে হ্যালুসিনেশন হয়ে থাকার কারণে ইন্দ্রিয়ের ওপর ভিত্তি করে হ্যালুসিনেশনের বেশ কিছু ধরনকে বিশেষজ্ঞরা শণাক্ত করতে পেরেছেন। যেমন :
ভিজুয়াল বা দৃষ্টিতে হ্যালুসিনেশন: এক্ষেত্রে এমন কিছু দেখা, যার কোনো বাস্তবিক ভিত্তি নেই। হতে পারে সেটা কোনো আকারের-বর্ণের কিংবা আলোর ছটা, যা অবাস্তব মানব আকৃতি বিশেষ। যেমন মনে হতে পারে পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। অথচ তখন পেছনে বা আড়ালে বস্তুত কেউই নেই।
অডিটরি বা শ্রুতিগত হ্যালুসিনেশন: এমন কোনো শব্দ, মিউজিক হইচই কিংবা কণ্ঠস্বর শোনা, যা নিতান্তই অলীক। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যেটা হয়ে থাকে, তা হলো ক্ষতিকর গায়েবি কথা, আদেশমূলক কিংবা নিষেধমূলক কথা শোনা। এসব কথা মস্তিষ্কের ভেতর বা বাইরে থেকে হতে পারে। পুরুষ কিংবা নারীকণ্ঠ হতে পারে, অপরিচিত কিংবা পরিচিত মনে হতে পারে। সিজোফ্রেনিয়া রোগীর ক্ষেত্রে অডিটরী হ্যালুসিনেশন বেশি হয়ে থাকে।
অলফ্যাক্টরি বা ঘ্রাণজনিত হ্যালুসিনেশন: এক্ষেত্রে হ্যালুসিনেশনে আক্রান্ত ব্যক্তি এমন কিছু জিনিসের ঘ্রাণ অর্থাৎ গন্ধ পাবে, যার কোনো সত্যতাই নেই, শুধুই একটি ভ্রান্ত ধারণা। যেমন: হঠাৎ করে পঁচা মাছের গন্ধ, বমি, প্রস্রাব, সিগারেট এমনকি পঁচা লালার গন্ধও পেতে পারে। এটি মূলত হয়ে থাকে অলফ্যাক্টরি সিস্টেমের স্নায়ুকোষের ক্ষতিগুলো থেকে, যা ভাইরাস ইনফেকশন ব্রেন টিউমার ট্রমা, সার্জারি কিংবা ওষুধের কারণে হয়ে থাকে।
গ্যাস্টেটরি বা স্বাদজনিত হ্যালুসিনেশন: কোনো কিছুর স্বাদকে মুখে বিস্বাদ লবণাক্ত বা মেটালিক মনে হয়, সম্পূর্ণটাই ভুল ধারণা। সাধারণত এপিলেপসি রোগে এ ধরনের হ্যালুসিনেশন হয়ে থাকে। টমেটো, আলু, বেগুন, মরিচ জাতীয় খাবারে ‘সোলানিন’ নামক উপাদান থাকে যেটি হ্যালুসিনেশনে প্রভাব রাখতে পারে। তাছাড়া কফি অতিরিক্ত পান করলেও হ্যালুসিনেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
সোমাটিক বা স্পর্শগত হ্যালুসিনেশন: এক্ষেত্রে কোনোকিছুর স্পর্শ অনুভূত হওয়া, যা বাস্তবিকভাবে ঘটেনি। যেমন হঠাৎ করে শরীরের ভেতর বা উপরে কিছু উঠে আসছে মনে হওয়া। অন্ধকার ঘরে মনে হবে কেউ স্পর্শ করছে অথচ ঘরে তখন কেউ নেই। এটি মূলত একটি মেডিকেল ডিসঅর্ডার।
কারো প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেলে কিংবা প্রিয় কোনো মানুষকে হারিয়ে ফেললে সেই মানুষটিকে নিয়ে হ্যালুসিনেশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে বলে পরীক্ষা করে দেখা গেছে। হ্যালুসিনেশনের রোগীদের সঙ্গে এমনো হতে পারে, কাছের কোনো একজন মানুষের নাম ধরে গায়েবি কথাবার্তায় সে শুনতে পায়। ক্রমাগত হ্যালুসিনেশন হওয়ায় ঘটে যাওয়া কিংবা শোনা সবকিছুকেই মানুষটি সত্যি মনে করতে থাকে। যার জন্য অনেক বিপদও ঘটে থাকে। সুতরাং এসব বিষয়গুলোকে দ্রুত বুঝে শণাক্ত করা খুবই জরুরি। যত তাড়াতাড়ি তাদের চিকিৎসার আওতায় আনা যায় ততই মঙ্গল।
সংক্ষেপে দেখুন
মশা! ক্ষুদ্র এই প্রাণীটির অত্যাচারে প্রায়ই অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে আমাদের জীবন। চলমান ডেঙ্গুর প্রকোপে মশার দিকেই প্রধানত আঙুল তোলা যায়, কারণ রোগের ভাইরাস ছোট্ট এই পতঙ্গের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। তবে কেবল ডেঙ্গু নয়, আরো বেশ কিছু রোগের ভাইরাস বহন করে থাকে মশা, যার মধ্যে আছে চিকুনগুনিয়া (Chikungunবিস্তারিত পড়ুন
মশা! ক্ষুদ্র এই প্রাণীটির অত্যাচারে প্রায়ই অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে আমাদের জীবন। চলমান ডেঙ্গুর প্রকোপে মশার দিকেই প্রধানত আঙুল তোলা যায়, কারণ রোগের ভাইরাস ছোট্ট এই পতঙ্গের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। তবে কেবল ডেঙ্গু নয়, আরো বেশ কিছু রোগের ভাইরাস বহন করে থাকে মশা, যার মধ্যে আছে চিকুনগুনিয়া (Chikungunya ), ম্যালেরিয়া, এনকেফালাইটিস, ফাইলেরিয়াসিস, জিকা ইত্যাদি।
মশার তিনটি প্রজাতি এসব রোগের ভেক্টর, বা জীবাণুর বাহক হিসেবে কাজ করে। এগুলো হচ্ছে কিউলেক্স, এডিস আর অ্যানোফিলিস। কিউলেক্স তো আমাদের ঘরবাড়ির স্থায়ী বাসিন্দাই হয়ে গেছে বলা যায়, এডিস সেখানে মৌসুমি অতিথি। অ্যানোফিলিস আবার একটু ঘরকুণো, পার্বত্য অঞ্চলেই থাকে বেশি।
তিন প্রজাতির মশা;
চিকুনগুনিয়া
একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে ভারত উপমহাদেশে অন্তত ১১ বার চিকুনগুনিয়ার ব্যাপক প্রকোপ লক্ষ্য করা গিয়েছে। ২০০৮ আর ২০১১ সালে বাংলাদেশে ছোট আকারে দেখা দিয়েছিল এই অসুখ, আর ২০১৭ সালে তো পরিণত হয়েছিলো অনেকটা মহামারীতে। এরপর থেকে প্রতি বছরেই গরমের সময় চিকুনগুনিয়া হয়ে আসছে।
এর কারণ একই নামের ভাইরাস (chikungunya virus /CHIKV)। নারী এডিস মশা এই জীবাণু বহন করে, রক্তপানের সময় মানবশরীরে প্রবেশ করিয়ে দেয় ভাইরাস। সাধারণত উচ্চমাত্রার জ্বর, শরীরে ফোস্কা আর অস্থিসন্ধিতে ব্যথা (joint pain) এই রোগের অন্যতম লক্ষণ, যা কিনা ডেঙ্গুর সাথেও অনেকাংশে মিলে যায়। চিকুনগুনিয়ার জন্য অস্থিসন্ধিতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে দৈনন্দিন কাজকর্ম পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এবং রোগ ভালো হয়ে গেলেও সামান্য ব্যথা থেকে যেতে পারে বছরখানেক।
চিকুনগুনিয়া ভাইরাস
চিকুনগুনিয়া সাধারণত মারাত্মক কিছু নয় এবং এমনিতেই সেরে যায়। তবে স্বল্পসংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে স্নায়ু, হৃদযন্ত্র, লিভার, এমনকি শ্বাসতন্ত্রে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এই ভাইরাস শরীরে ঢুকলে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়া অথবা ভ্রুনের সংক্রমণ ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।
ডেঙ্গু
মশাবাহিত আরেক রোগ ডেঙ্গু, যা কিনা ডেঙ্গু ভাইরাস দিয়ে ঘটে থাকে। চিকুনগুনিয়ার মতো এখানেও বাহক সেই নারী এডিস মশা। মূলত ২০০০ সালের পর থেকে ডেঙ্গু আমাদের দেশে বড় একটা স্বাস্থ্যসমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে, তবে প্রথম রোগী কিন্তু শনাক্ত হয় ষাটের দশকে। তখন একে বলা হতো ঢাকা’র জ্বর (Dacca fever)। বর্তমানে প্রতি বছরই মহামারী আকারে ডেঙ্গু দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশকে ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাদের মতে, জনসংখ্যার অন্তত ৫২% লোক এই ভাইরাসের ঝুঁকিতে আছে।’
ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ অনেক সময় একইরকম মনে হতে পারে
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে প্রায় ১০৩-১০৪° ফারেনহাইট জ্বর, শরীর ব্যথা, হাড়গোড়ে আর মাংসপেশীতে ব্যথা, শরীরে ফোস্কা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। সাধারণত ২-৭ দিনের মধ্যে রোগী ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু কিছু লক্ষণ থাকলে রোগীকে অবিলম্বে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত, যেমন- প্রচণ্ড পেটব্যথা বা পেট ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, নাক-মুখ দিয়ে রক্ত পড়া, অবিরাম বমি হওয়া ইত্যাদি। ডেঙ্গু সন্দেহ হলে তাই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
ম্যালেরিয়া
ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়ার আগে মানুষ মশাবাহিত রোগ বলতে বুঝতো ম্যালেরিয়াকেই। পরজীবী বা প্যারাসাইটজনিত এই রোগ ছড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নারী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে। আমাদের দেশে ভারত আর মায়ানমারের সীমান্তবর্তী ১৩টি জেলায় এই রোগ এন্ডেমিক (endemic)। এর মানে সারা বছরই ঐসব এলাকায় ম্যালেরিয়া দেখা যায়। ফলে কেউ সেখানে ঘুরতে যেতে চাইলে ম্যালেরিয়ার প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিয়ে যাবার উপর জোর দেয়া হয়।
বাংলাদেশের ১৩টি জেলায় ম্যালেরিয়ার সারা বছর দেখা যায়;
ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রেও রোগের সূচনা জ্বর দিয়ে, তবে এখানে ভয়াবহ রকম কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। সাথে থাকে মাথাব্যথা, মাংসপেশীতে ব্যথা আর ক্লান্তি। রোগীর রক্তশুন্যতা আর জন্ডিসও দেখা যেতে পারে। তবে ভয় পাবার কারণ নেই, কারণ ম্যালেরিয়ার খুব ভালো কিছু ওষুধ রয়েছে। রোগী কী ওষুধ খাবেন সেটা চিকিৎসক ঠিক করে দেবেন।
এনকেফালাইটিস
মস্তিষ্কের ইনফ্ল্যামেশনকে এনকেফালাইটিস বলা হয়। বেশ কিছু ভাইরাস থেকে এই রোগ হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে জাপানিজ এনকেফালাইটিস ভাইরাস বা জেই (Japanese encephalitis), এবং ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস। দুটোই ছড়ায় কিউলেক্স প্রজাতির মশা দিয়ে, যা কিনা তিন প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
এশিয়াতে জেই ভাইরাস ঘটিত এনকেফালাইটিসই বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশে ব্যাপক আকারে গবেষণা না থাকলেও একেই মূল কালপ্রিট বলে ধরা হয় জীবাণুবাহক মশা কামড়ানোর ৫-১৫ দিনের মধ্যে রোগীর জ্বর, মাথাব্যথা, বমি এসব দেখা যায়। অনেকসময় ঘাড়ব্যথা বা ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি ইত্যাদিও হতে পারে। এনকেফালাইটিস মারাত্মক রোগ, সুতরাং রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে।
জিকা
নারী এডিস কর্তৃক বাহিত আরেকটি ভাইরাস জিকা, যা থেকে উৎপত্তি হতে পারে রোগের। লক্ষণ অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতোই, সাথে চোখ লাল হতে পারে। এক সপ্তাহ পর রোগী সাধারণত ভালো হয়ে যান।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য জিকার সংক্রমণ অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর ফলে বাচ্চা জন্ম নিতে পারে নানারকম শারীরিক ত্রুটি নিয়ে, যাকে বলা হয় Congenital Zika Syndrome। অনেক সময় বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, অথবা প্রসব হয়ে যেতে পারে সময়ের অনেক আগেই (preterm birth)।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য জিকা সংক্রমণ মারাত্মক বিপদজনক
লিম্ফেটিক ফাইলেরিয়াসিস
একসময় ঢাকা শহরে দেখা মিলত এমন কিছু মানুষের যাদের হাত অথবা পা ছিল ভয়াবহভাবে ফোলা। এর কারণ লিম্ফেটিক ফাইলেরিয়াসিস নামে পরজীবীঘটিত একটি রোগ। কিউলেক্স, এডিস, অ্যানোফিলিস তিন প্রজাতির মশাই এদের বাহক হিসেবে কাজ করতে পারে। লসিকা গ্রন্থির সংক্রমণ থেকে এই রোগের উৎপত্তি হয়। বাংলাদেশ একসময় লিম্ফেটিক ফাইলেরিয়াসিসের উচ্চ ঝুঁকিতে ছিল, তবে বিভিন্ন প্রতিরোধক ব্যবস্থা এবং উপযুক্ত চিকিৎসায় এখন এই রোগ নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। সঠিক ওষুধ প্রয়োগে ভালো হয়ে উঠেছেন বহু লোক।
সংক্ষেপে দেখুনলিম্ফেটিক ফাইলেরিয়াসিস/এলিফ্যান্টিয়াসিস
মশা থেকে ছড়াতে পারে অনেক রকম অসুখ। সেজন্য বাড়িঘর পরিষ্কার রাখা দরকার, যাতে মশা বংশবৃদ্ধির সুযোগ না পায়। ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই হয়তো আমরা থাকতে পারবো সুস্থভাবে।