হোমপেজ/লবণ
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
লবণের এক জীবাণুনাশক ধর্ম আছে। অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীই তাদের খাদ্যে প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে লবণ ব্যবহার করে থাকে। অল্পমাত্রায় হলেও শরীর রক্ষার জন্য এই যৌগিক পদার্থটি গ্রহণ করা আবশ্যক। শারীরবৃত্তীয় কাজে লবণের এই গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতির জন্যই সেই প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগে এসেও মানুষের মনবিস্তারিত পড়ুন
লবণের এক জীবাণুনাশক ধর্ম আছে। অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীই তাদের খাদ্যে প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে লবণ ব্যবহার করে থাকে। অল্পমাত্রায় হলেও শরীর রক্ষার জন্য এই যৌগিক পদার্থটি গ্রহণ করা আবশ্যক। শারীরবৃত্তীয় কাজে লবণের এই গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতির জন্যই সেই প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগে এসেও মানুষের মনে আপনা থেকে লবণ নিয়ে কিছু সংস্কার তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে লবণের প্রচলন
প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবে মানুষ আনুষ্ঠানিকভাবে লবণ ব্যবহার করতে শুরু করে। হয়তো কিছুটা প্রতীকী ব্যাপার হিসেবেই এটা চালু হয়েছিল। তখনও লোহা এবং লবণ এই দুটো জিনিসের উৎস সম্পর্কে মানুষের তেমন কোনো ধারণা ছিল না। তারা মনে করতো কোনো আধিদৈবিক, অলৌকিক কারণে এসব উপাদান প্রকৃতিতে সৃষ্টি হয়েছে। বস্তুত ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো লবণ ছাড়া চলতোই না। এখনো অনেক ধর্মীয় প্রথায় সে সংস্কার মেনে চলা হয়।

প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে লবণ নিয়ে গড়ে ওঠে নানা সংস্কার
দেবতাদের সন্তুষ্ট করতে একসময় যেসব প্রাণীকে ‘বলি’ দেওয়া হতো, তাতে নুন মাখিয়ে রাখা হতো। তাদের বিশ্বাস ছিল, এর ফলে সেই মাংস কখনো বাসী হতো না, তাতে পচন ধরতো না। মায়া সভ্যতায় হিংস্র ও বর্বর অ্যাজটেকরা লবণের এক দেবীকে পুজো করতো। খ্রিস্ট ধর্মে ব্যাপটিজম বা দীক্ষার সময় যে পবিত্র জলে গোসল করানো হয়, সেই জলে লবণ মেশানো থাকে। দীক্ষার পর দীক্ষিত ব্যক্তির মুখে লবণ ছোয়ানোর প্রথা রয়েছে।
বৌদ্ধ ধর্মের ঐতিহ্য অনুসারে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্নের পর বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে কাঁধের উপর দিয়ে লবণ ছিটিয়ে তবেই গৃহে প্রবেশ করতে হয়। কোনো অশুভ আত্মা যাতে তার ওপর ভর করতে না পারে সেজন্যই বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা এই প্রথা মেনে চলেন। শিন্টো মতালম্বীরা তাদের ধর্মীয় কোনো কাজ শুরু করার পূর্বে স্থানটিকে শুদ্ধ করা জন্য লবণপানি ছিটিয়ে দেন।

বৌদ্ধ ধর্মে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্নের পর বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে কাঁধের উপর দিয়ে লবণ ছিটানো হয়ে থাকে
ইহুদী উপকথায় লবণের চুক্তিনামার কথা আছে। ঈশ্বর ও ইজরায়েল নামক পবিত্র ভূমির শাশ্বত বন্ধনের কথা নাকি ওই চুক্তিপত্রে বর্ণিত আছে।
বিভিন্ন সমাজে লবণ নিয়ে যত কুসংস্কার
বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সমাজের মানুষের মাঝে লবণ নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানা সংস্কার। অনেক সমাজে বিয়ের সময় কনের পোশাকের পকেটে একটু লবণ রেখে দেওয়ার রীতি আছে। ওই সামান্য লবণ ভবিষ্যতে নাকি বিশাল সৌভাগ্য নিয়ে আসবে বর-কনের দাম্পত্য জীবনে। গুজরাটিরা নববর্ষে কিংবা বিয়ের কেনাকাটার শুরুতে প্রথমে লবণ কিনে থাকেন, যাতে নববর্ষের অনুষ্ঠান বা বিয়ের অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হতে পারে। দক্ষিণ ভারতীয় অনেক হিন্দুর মধ্যে নব বিবাহিত দম্পতিকে বা কোনো নতুন গৃহে প্রবেশের সময় দম্পতিকে লবণ ছিটিয়ে গৃহে অভ্যর্থনা জানানো হয়।


নব বিবাহিত দম্পতিকে লবণ ছিটিয়ে গৃহে অভ্যর্থনা জানানো হয়
জাপানের সুমো কুস্তিগররা কুস্তির খেলার মঞ্চটিকে লবণ ছিটিয়ে শুদ্ধ করে থাকেন। জীবনে সৌভাগ্য আনয়নের জন্য যুবক জেলে বা নাবিকরা তাদের সমুদ্রযাত্রার আগে পকেটে একটু লবণ ছিটিয়ে নিতো। শুধুই যুবক জেলে বা নাবিকদের জীবনেই লবণ সৌভাগ্য আনে না, সদ্যোজাত শিশুর ক্ষেত্রেও লবণের ওরকম প্রভাব আছে বলে ভাবা হতো। কোনো সদ্যোজাত শিশুর ওপর যাতে ডাইনীর প্রভাব না পড়ে, সেজন্য উপহার হিসেবে লবণ দেয়ার প্রচলন ছিল একসময়। পরবর্তীকালে ধনী ব্যক্তিরা অনেকেই লবণের বদলে শিশুকে একটু রুপো উপহার দিতেন। ধারণা ছিল রুপোর মধ্যেও লবণের এই গুণটি আছে; ডাইনীকে দূরে সরিয়ে রাখার গুণ।
সংস্কার হিসেবে সুমো কুস্তিগিররা খেলার মঞ্চটিকে লবণ ছিটিয়ে শুদ্ধ করে নেন
জেলেদের মধ্যে কেউ কেউ এখনও মাছ ধরার জালে একটু লবণ ছড়িয়ে দেন। যারা নৌকো তৈরি করেন, তাদের মধ্যেও এ ধরনের একটি প্রথা আছে। নতুন নৌকোর দুটো কাঠের তক্তার মাঝে একটু লবণ ছিটিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে। তাদের অনেকেই জানেন না, কেন তারা এমন করেন। প্রাচীন সংস্কার থেকেই মূলত তারা এটি করে থাকেন। জেলেদের অনেকেই বিশ্বাস করেন, নৌকো, জাল নিরাপদে রাখার জন্য এটি তাদের এক নীরব প্রার্থনা। এই প্রার্থনা শক্তিমান সমুদ্র দেবতার প্রতি। তাকে তুষ্ট করার জন্যই এভাবে লবণ ছিটিয়ে দেওয়া হয়।
মিশরীয়রা তপ্ত মরুভূমির ওপর যাত্রার প্রাক্কালে লবণ পুড়িয়ে তা মরুভূমির বালির ওপর ছিটিয়ে দিতেন। প্রাচীনকালে সন্ধি স্থাপনের সময় পূর্বতন দুই বিবদমান পক্ষই একসঙ্গে মুখে একটু লবণ পুরে দিতেন। দুজনের একসঙ্গে লবণ খাওয়ার অর্থই হলো এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্বের বন্ধনে বাঁধা পড়া। প্রাচীন জাদুকর ও অ্যালকেমিস্টরা ব্ল্যাক ম্যাজিক, বিভিন্ন ভূতের উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বোতল ভর্তি লবণ ব্যবহার করতেন। তাদের বিশ্বাস লবণ সেই ভূতদের অবসাদগ্রস্ত ও নিষ্ক্রিয় করে দেয়।
পাশ্চাত্যে লবণ নিয়ে যত সংস্কার
পাশ্চাত্যের লোকদের মনেও লবণ নিয়ে নানা সংস্কার আছে। ১৪৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশরে প্রচুর পরিমাণে লবণ উৎপাদিত হতো। প্রাচীন মিশরে রাজ পরিবারের মৃত ব্যক্তিদেরকে মমি তৈরির কাজে লবণ ব্যবহৃত হতো। একসময় লবণ বেশ মূল্যবান দ্রব্য ছিল। মুদ্রা হিসেবে একসময় লবণের ব্যবহার ছিল ব্যাপক। প্রাচীন গ্রিসে দাস বেচাকেনায় লবণকে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এমনকি রোমান সৈন্যদের বেতন হিসেবে লবণ প্রদান করা হতো। সেখান থেকেই লবণ নিয়ে এক অদ্ভুত ধারণা তৈরি হয়।


প্রাচীনকালে রোমান সৈন্যদের বেতন হিসেবে লবণ প্রদানের প্রথা চালু ছিল
লবণের অপব্যবহার মানে অমঙ্গলকে ডেকে আনা। হঠাৎ খাওয়ার টেবিলে লবণ পড়ে যাওয়ার অর্থ শয়তান ধারেকাছেই কোথাও আছে। অদৃশ্য বাতাসে ভর করে সে কাছে চলে আসবে, কানে ফিস ফিস করে কু মন্ত্রণা দেবে। অমঙ্গল বা শয়তানের অবস্থান বাঁ কাঁধে। তাই লবণের পাত্র থেকে হঠাৎ লবণ পড়ে গেলে শয়তান যাতে কোনো সুযোগ নিতে না পারে, যাতে সে কাছে ঘেঁষতে না পারে, সেজন্য তার চোখ দুটো অন্ধ করে দেওয়ার জন্য এক চিমটি লবণ ছিটিয়ে দেওয়া হয় বাঁ কাঁধে।
অশুভকে কাছে ঘেঁষতে না দেওয়ার জন্য বাঁ কাঁধে এক চিমটি লবণ ছিটিয়ে দেওয়া হতো
জার্মানি ও স্কটল্যান্ডের কিছু কিছু জায়গায় পশুপালকরা তাদের গৃহপালিত পশু থেকে উৎপাদিত মাখনের কিছু অংশে লবণ মেখে খামারের আশেপাশে ছড়িয়ে দেন। খামারের পশুদের ওপর কোনো অশুভ প্রভাব যাতে না পড়ে এবং মাখন ও দুধের উৎপাদন যাতে ব্যহত না হয় এজন্য খামার মালিকেরা কাজটি করে থাকেন।
আইরিশদের এবং ইউক্রেনীয়দের বিভন্ন লোকগাঁথা থেকে জানা যায়, অপদেবতার পুজারী, ভয়ঙ্কর জিপসিদের দেখে ভয় পাওয়া বা তাদের দেওয়া কোনো অভিশাপ কাটানোর জন্য জিপসিদের চলে যাওয়ার পর রাস্তায় একটু লবণ ছিটিয়ে দেওয়ার প্রচলন ছিল।

সংক্ষেপে দেখুনমিশরে রাজপরিবারের মৃত ব্যক্তিকে মমি করার সময় লবণ পানিতে মৃতদহেকে গোসল করানো হতো
লবণ নিয়ে এসব সংস্কার বা কুসংস্কার সেই প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলে আসছে, যার কিছু কিছু এখনো বিভিন্ন সমাজে চালু রয়েছে। মানুষের এসব সংস্কার এক আদিম বিশ্বাস হতে জাত। এসব বিশ্বাস অধিকাংশ মানুষই না জেনেই আজও বহন করে চলেছে যুগের পর যুগ। যদিও সেই বিশ্বাসের অনেকটুকুই এখন শুধু মজার গল্প হিসেবে ঠাঁই নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়।