হোমপেজ/সংখ্যা
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
হিসাবের দুনিয়ায় সংখ্যা ছাড়া আমাদের কি জীবন চলে? দিন, মাস, বছরের হিসাব রাখা থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটা কাজে সংখ্যার গুরুত্ব অপরিসীম। আর তাই তো সংখ্যার মাহাত্ম্যে মুগ্ধ হয়ে অনেক প্রাচীন সভ্যতায় মানুষ সংখ্যার সাথে ঐশী সম্পর্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। কিছু সংখ্যাকে মানুষ মনে করত পবিত্র, আবার কিছুবিস্তারিত পড়ুন
হিসাবের দুনিয়ায় সংখ্যা ছাড়া আমাদের কি জীবন চলে? দিন, মাস, বছরের হিসাব রাখা থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটা কাজে সংখ্যার গুরুত্ব অপরিসীম। আর তাই তো সংখ্যার মাহাত্ম্যে মুগ্ধ হয়ে অনেক প্রাচীন সভ্যতায় মানুষ সংখ্যার সাথে ঐশী সম্পর্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে।
কিছু সংখ্যাকে মানুষ মনে করত পবিত্র, আবার কিছু সংখ্যা ছিল মানুষের কাছে আতঙ্ক। এমনকি পাশ্চাত্যে আজও অনেক জায়গায় সেই বিশ্বাস টিকে আছে। Unlucky 13 কিংবা Lucky 7 এর মতো বিষয়গুলো অদ্যাবধি অনেক মানুষ বিশ্বাস করে। তবে নিরীহ গোবেচারা সংখ্যাদের মাঝে আদৌ কোনো শুভত্ব বা অশুভত্ব লুকিয়ে আছে কিনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে সেই বিশ্বাস খণ্ডন করা যতটা না আকর্ষণীয়, তার চেয়ে ঢের আকর্ষণীয় সংখ্যা ও গণনা পদ্ধতির ক্রমবিকাশ ও বৈচিত্র্যময় ইতিহাস সম্পর্কে জানা। এই ফিচারটি সাজানো হয়েছে সংখ্যার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়ে।
শুরুর কথা
সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই গণনার প্রয়োজনীয়তা মানুষ উপলব্ধি করেছে। শিকার করা প্রাণীর সংখ্যা কিংবা দ্রব্য বিনিময় যুগে লেনদেনের সুবিধার্থে হিসাব নিকাশের ধারণা অর্জন করা মানুষের জন্য ছিল অপরিহার্য। তবে শুরুর দিকে সংখ্যা নিয়ে মানুষের ধারণা বেশ অস্পষ্ট ছিল। সংখ্যাগুলো সর্বদাই বস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকত, যেমন- একটি পাখি, এক জোড়া জানোয়ার, দুটো হাত, এক হাঁড়ি মাছ।
আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাঝে এক-দুশো বছর আগেও সংখ্যা নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা ছিলো না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় দক্ষিণ আফ্রিকার হটেনটট আদিবাসীর কথা। তাদের ভাষায় শুধু এক থেকে চার পর্যন্ত সংখ্যা ছিল এবং চারের চেয়ে বড় সব সংখ্যাই তাদের ভাষায় অনেক! আবার অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী কামিলারই গোত্রের মানুষ তিনের চেয়ে বড় কোনো সংখ্যা বোঝাতে সেই সংখ্যাকে এক থেকে তিন পর্যন্ত সংখ্যাগুলোর যোগফল আকারে প্রকাশ করত। যেমন তাদের কাছে মাল মানে এক, বুলান মানে দুই, গুলিবা মানে তিন। তাই চারকে তারা বলত বুলান-বুলান (দুই-দুই) পাঁচকে বুলান-গুলিবা (দুই-তিন) আর ছয়কে (গুলিবা-গুলিবা)।
এখন প্রশ্ন চলে আসে কামিলারাই গোত্রের ভাষায় একশ কিংবা এক হাজারকে কীভাবে বলা যায়? খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে হটেনটট কিংবা কামিলারাই গোত্রের গণনা পদ্ধতি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। কিন্তু এতে তাদের কিছুই আসে যায়নি, কারণ একশ পর্যন্ত গণনা করার দরকারই হয়ত তাদের ছিল না। তবে নবপোলীয় যুগে উন্নত সভ্যতাগুলোর বিকাশের সাথে সাথে প্রয়োজন পড়ল আরও উন্নত গণনা পদ্ধতির।
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী
মিশরীয় গণনা পদ্ধতি
মানব সভ্যতা বিকাশের পেছনে মিশরীয়দের অবদান অনস্বীকার্য। প্রাচীন মিশরে ব্যবসা-বাণিজ্য, স্থাপত্য এবং জীবন যাত্রায় প্রভূত উন্নতির সাথে সাথে একটি উন্নত গণনা পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। আর সেই প্রয়োজনীয়তা থেকে বিকশিত হয়েছিল মিশরীয় সংখ্যা পদ্ধতি। প্রকান্ড পিরামিডগুলো নির্মাণের সময় হাজার হাজার শ্রমিকের খোরাক এবং বিপুল পরিমাণ নির্মাণ সামগ্রীর পাকা হিসাব রাখতে তারা সংখ্যা প্রতীক ব্যবহার করত। তবে ধারণা করা হয় মিশরীয়দের সংখ্যা পদ্ধতির সূচনা হয়েছিল পিরামিডেরও আগে, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের দিকে।
মিশরীয় সংখ্যা পদ্ধতি
কিন্তু আমাদের এখনকার মতো ছিল না মিশরীয়দের সেই সংখ্যাপদ্ধতি। সেখানে ছিল না শুন্যের ব্যবহার। বরং ১০ এর বিভিন্ন গুনিতকের জন্য ছিল আলাদা আলাদা প্রতীক। ধরা যাক, মিশরীয় পদ্ধতিতে আমরা ৮৩৭২ লিখতে চাই। এক্ষেত্রে আমাদের ৮ টি ০০০, ৭টি ১০০, ৩টি ১০ এবং ২টি ১ পাশাপাশি লিখতে হবে। ফলে ৮৭৩২ সংখ্যার প্রাচীন মিশরীয় রূপটি হবে নিচের ছবিটির মতো।
মিশরীয় পদ্ধতিতে ৮৭৩২
ব্যাবিলনীয় পদ্ধতি
গণিতশাস্ত্রে ব্যাবিলনীয়দের অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল। একদিকে জ্যামিতি শাস্ত্র বিকাশিত হয়েছিল মিশরে, আর অন্যদিকে পাটিগণিত এবং জ্যোতির্বিদ্যা বিকাশিত হয়েছিল ব্যাবিলনে। ব্যাবিলনীয় বিজ্ঞানের সুদূরপ্রসারী প্রভাব আজও আমাদের মাঝে বিদ্যমান। বৃত্তকে ৩৬০ ডিগ্রি কোণে বিভক্তকরণ এবং ৬০ মিনিটে ১ ঘন্টা ও ১২ ঘন্টায় ১ দিনের প্রচলন কিন্তু ব্যাবিলনীয়রাই করেছিল অর্থাৎ ব্যাবিলনীয় ১ মিনিট ছিল আমাদের এখনকার ২ মিনিটের সমান। তবে ব্যাবিলনীয়দের অর্জিত জ্ঞানের বেশিরভাগই কালের বিবর্তনের হারিয়ে গেলেও মৃতপাত্রে অঙ্কিত ও পাথরের ফলকে খোদাই করা লেখা থেকে জানা যায় ব্যাবিলনীয়রা পিথাগোরাসের উপপাদ্য ও দ্বিপদী উপপাদ্য সম্পর্কে অবগত ছিল।
মিশরীয়দের মতো ব্যাবিলনীয়রাও শুন্যের ব্যবহার জানত না। তবে মিশরীয়দের সাথে ব্যাবিলনীয়দের সংখ্যা পদ্ধতির মূল পার্থক্য হলো- মিশরীয়রা কোনো সংখ্যাকে প্রকাশ করত ১০ এর গুণিতক আকারে অর্থাৎ উপরে যেটা আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি। অন্যদিকে ব্যাবিলনীয়রা সেই কাজটিই করত ৬০ এর গুণিতক আকারে প্রকাশ করে। তাই ব্যাবিলনীয় সংখ্যা পদ্ধতিকে ষাটমূলক পদ্ধতিও বলা হয়।
ব্যাবিলনীয় ষাটমূলক সংখ্যা পদ্ধতি
উপর্যুক্ত চিহ্নগুলো ছাড়াও তারা আরও বেশকিছু শর্টকাট পদ্ধতি ব্যবহার করত। এখানে একটি প্রশ্ন অবধারিতভাবে চলে আসে- ব্যাবিলনীয়দের ৬০ প্রীতির কারণটা কী? এর কোনো সরাসরি উত্তর পাওয়া যায় না। অনেকগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ব্যাপার এর সাথে জড়িয়ে আছে। প্রথমত, ৬০ হচ্ছে এমন একটি সংখ্যা যেটি ১,২,৩,৪,৫,৬,১০,১২,১৫,২০ এবং ৩০ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। তাই ভগ্নাংশ সংক্রান্ত কোনো সমস্যা সমাধানে ৬০ বেশ কাজের সংখ্যা।
ধরা যাক, একটি ব্যবসায় ৩ জন অংশীদার এমনভাবে চুক্তি করল যে তারা প্রত্যেকে যথাক্রমে মোট লাভের ১/২, ১/৩ এবং ১/৬ অংশ পাবে। তাহলে যদি ৬০ টাকা লাভ হয় প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয়জন যথাক্রমে ৩০, ২০, ১০ টাকা পাবে। অর্থাৎ লাভ যত টাকাই হোক না কেন, সেটাকে যদি ৬০ এর গুণিতক আকারে প্রকাশ করা হয়, তাহলে হিসাবটা দাঁড়ায় বেশ সোজা। যদি ১০০০ টাকা লাভ হয় (১৬×৬০+৪০=১০০০), তাহলে প্রথমজন পাবে ১৬টি ৩০ টাকা বা ৪৮০ এবং সাথে বাকি ৪০ টাকার অর্ধেক ২০ টাকা। দ্বিতীয়জন পাবে ১৬টি ২০ টাকা এবং তৃতীয়জন পাবে ১৬টি ১০ টাকা এবং প্রথমজন ৪০ টাকা থেকে অর্ধেক টাকা নেবার পর বাকি অর্ধেক টাকা থেকে দুজনই এমন ভাবে ভাগ পাবে যাতে দ্বিতীয়জন তৃতীয়জনের দ্বিগুণ টাকা পায়। খুব সহজেই কোনো গুণ ভাগ করা ছাড়াই হয়ে গেল নির্ভুল বন্টন।
এখানে একটি জিনিস মনে রাখতে হবে- আমাদের মতো চমৎকার গুণ-ভাগ করার পদ্ধতি সেসময়ে জানা ছিল না। বর্তমানে আমরা যে দশমিক অঙ্কপাতন পদ্ধতিতে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করি, সেটা আবিষ্কৃত হয়েছে ব্যাবিলনের আরও ৩০০০-৩৫০০ বছর পরে ভারতবর্ষে। এছাড়া ব্যাবিলনীয়রা এক সৌর বৎসরের দৈর্ঘ্য হিসাব করেছিল ৩৬০ দিন, যেটা প্রকৃত দৈর্ঘ্য ৩৬৫ দিনের বেশ কাছাকাছি। তাদের ১২ ঘন্টায় ১ দিন, ৬০ মিনিটে ঘন্টার কথা তো আগেই জেনেছি আমরা। আর এসব কারণে ব্যাবিলনীয়রা ষাটমূলক পদ্ধতিকেই বেছে নিয়েছিল বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করেন।
ব্যাবিলনীয়দের খোদাই করা শিলা লিপি
গ্রীক ও রোমান পদ্ধতি
ব্যাবিলন ও মিশরের মতো গ্রীক ও রোমানরাও শুন্যের ব্যবহার জানত না। এর একটি বড় কারণ গ্রীক ও রোমানরা অনেক ব্যাপারেই তাদের দ্বারা প্রভাবিত। ১০০, ২০০ প্রভৃতি সংখ্যাকে আজকের জামানার মতো এক বা দুইয়ের পিঠে দুই শুন্য এভাবে না লিখে তারা বরং ব্যাবিলন ও মিশরের মতো আলাদা প্রতীক ব্যবহার করত। তবে গ্রীকরা সংখ্যার জন্য কোনো আলাদা প্রতীক উদ্ভাবন করেনি, বরং গ্রীক বর্ণমালার অক্ষরের সাহায্যে তারা সংখ্যা প্রকাশ করত। আর রোমান পদ্ধতিতে সংখ্যা লেখা আজও প্রাথমিক স্কুলগুলোতে শেখানো হয়। তাই সেটা নিয়ে নতুন করে বলাই বাহুল্য।
গ্রীক সংখ্যার সারণী
উপরের সারণি থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি λ (উচ্চারণ ল্যাম্বডা) দ্বারা বোঝানো হত ৩০ (কারণ λ এর অবস্থান ৩ নম্বর সারিতে এবং ১০ এর কলামে) এবং β (উচ্চারণ বিটা) দ্বারা বোঝানো হত ২। তাই গ্রীক পদ্ধতিতে ৩২ লিখতে চাইলে আমাদের লিখতে হবে λ β। কিন্তু সমস্যা হলো সারণি থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি ১ থেকে ৯৯৯৯ পর্যন্ত সংখ্যা লিখতেই গ্রীকরা ৩৬টি আলাদা আলাদা অক্ষর ব্যবহার করত। একইভাবে একলক্ষ পর্যন্ত লিখতে ৪৬টি, দশলক্ষ পর্যন্ত লিখতে ৫৫ এবং এক কোটি পর্যন্ত লিখতে ৬৪টি আলাদা আলাদা হরফ ব্যবহার করতে হত যেখানে আধুনিক পদ্ধতিতে আমরা পৃথিবীর সকল সংখ্যাকেই ০-৯ এই দশটি প্রতীকের সাহায্যে লিখতে পারি। এতগুলো ভিন্ন ভিন্ন অক্ষর মনে রাখা একদিকে যেমন দুষ্কর, অন্যদিকে তাদের যোগ,বিয়োগ,গুণ,ভাগ করাও কষ্টসাধ্য।
রোমানদের পদ্ধতিটি ছিল অনেকটা মিশরীয়দের মতো। যেমন কেউ রোমান পদ্ধতিতে ২০১৭ লিখতে চাইলে তাকে দুটি এক হাজার (M), একটি দশ (X) এবং সাত (VII) পাশাপাশি লিখতে হবে। তাই রোমান পদ্ধতিতে ২০১৭ হল MMXVII
মায়া সভ্যতার গণনা পদ্ধতি
এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা যেসব সভ্যতার নাম্বার সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করলাম, সেগুলো প্রত্যেকটি প্রত্যেকের সাথে কোনো না কোনোভাবে সম্পর্কযুক্ত ছিল অথবা প্রভাবিত হয়েছিল। তবে এই লিস্টের ব্যতিক্রম হলো মায়া সভ্যতা। ল্যাটিন আমেরিকার এই সভ্যতাটি সম্পর্কে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মানুষের জানতে পেরেছে মাত্র ৫০০ বছর আগে। অথচ মায়া সভ্যতার বিকাশকাল আজ থেকে প্রায় পনেরশ বছর আগে। মায়া সভ্যতা সম্পর্কে লোকমুখে অনেক রহস্যময় কাহিনী প্রচলিত থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে ক্যালেন্ডারের জন্য মায়া সভ্যতা সবচেয়ে বেশি পরিচিত। মজার ব্যাপার হল তাদের ক্যালেন্ডারে ২০১২ সালের পর আর কোন সাল ছিল না। এর বাখ্যা অনেকে এইভাবে দিলেন যে মায়ানরা বিশ্বাস করত ২০১২ সালের পর পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, যদিও অনেক গবেষক এই মতের সাথে দ্বিমতপোষণ করেছেন। সে যা-ই হোক, মায়া সভ্যতায় সংখ্যা পদ্ধতির বিকাশ ঘটেছিল একদম স্বতন্ত্রভাবে। তাদের সংখ্যাপদ্ধতি ছিল ৫ ভিত্তিক এবং অবাক করা ব্যাপার হলো মায়ারা শুন্যের জন্য আলাদা প্রতীক ব্যবহার করত। শুন্য, এক ও পাঁচ এই তিনটি সংখ্যার জন্য তারা শুধু তারা আলাদা প্রতীক ব্যবহার করত। বাকি সকল সংখ্যাগুলো লিখত এই তিনটি প্রতীক ব্যবহার করে। সেদিক থেকে চিন্তা করলে আধুনিক পদ্ধতির অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল মায়ানরা। তবে যোগ-বিয়োগের জন্য মায়াদের পদ্ধতিও বিশেষ সুবিধের ছিল না।
মায়া সভ্যতায় ব্যবহৃত সংখ্যা প্রতীক
আধুনিক পদ্ধতি
বর্তমানে যে পদ্ধতিতে আমরা সংখ্যা লিখি সেটা প্রাচীন ভারতীয় এবং আরবদের সম্মিলিত অবদানের ফসল। আহুন্য থেকে নয় পর্যন্ত মোট দশটি প্রতীক ব্যবহার করে যেকোনো সংখ্যা লিখতে পারার বর্তমান পদ্ধতিটি ভারতীয়রা আবিষ্কার করেছিল প্রায় ৬০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। যদিও খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক থেকেই এই পদ্ধতির যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন, তবে ৬০০ খ্রিস্টাব্দের আগের কোনো লিপিবদ্ধ প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
সে যা-ই হোক, ব্যবসা বাণিজ্য এবং ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষে আরবদের আনাগোনা সেই সময় থেকেই ছিল। ভারতীয় পদ্ধতিতে যোগ-বিয়োগের হিসাব সে সময়ে আরবে প্রচলিত সিস্টেমের চেয়ে ছিল অনেক সহজ ও কার্যকরী। এই দারুণ পদ্ধতিটি তাই আরবদের মনে ধরে গেল খুব সহজে। ভারত থেকে শিখে আসা পদ্ধতি আরবরা ছড়িয়ে দিল সারা বিশ্বে। আরবীতে শুন্যকে বলা হয় সিফর। আরব বনিকদের কাছে শেখা শূন্য বা সিফরকে ইতালিয়রা ল্যাটিনে বলত জেপিরো। আর ল্যাটিন জেপিরো থেকেই এসেছে ইংরেজি জিরো শব্দটি। যদিও ইতালিয় বনিকরা জানত ইন্দো-আরবীয় পদ্ধতিতে হিসাব নিকাশ খুব সহজে করা যায়, তারপরও ভিনদেশীদের পদ্ধতি বলে বাণিজ্য ছাড়া আর অন্য কোনো কাজে তারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে চাইত না। তবে অচিরেই ইউরোপে জনপ্রিয়তা লাভ করে ইন্দো-আরবীয় পদ্ধতি। আর এই জনপ্রিয়করণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন যে মানুষটি তার নাম লিওনার্দো ফিবোনাচি(১১৭০-১২৫০)। এই ফিবোনাচির নামানুসারেই কিন্তু নামকরণ করা হয়েছে বিখ্যাত ফিবোনাচি সিরিজের, যদিও সংস্কৃত ছন্দ প্রকরণে ফিবোনাচি সিরিজের ব্যবহার বহু শতাব্দী আগে থেকেই ছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না ফিবোনাচি সেখান থেকেই আকৃষ্ট হয়েছিলেন এই ধারাটির প্রতি। সর্বপ্রথম ছন্দ প্রকরণে ফিবোনাচি ধারা ব্যবহার করেন খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের ভারতীয় পন্ডিত পিঙ্গলা। আর এটাই আদ্যবধি জানা ফিবোনাচি সিরিজ ব্যবহারের প্রাচীনতম নজির।
লিওনার্দো ফিবোনাচি
নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায় মানবসভ্যতার আজকের এই অভাবনীয় উন্নতির পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে যে শাস্ত্রটি তার নাম বিজ্ঞান। গণিতকে বলা হয় বিজ্ঞানের ভাষা। আর এতক্ষণ আমরা সেই ভাষার প্রতীক “সংখ্যা”র সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জানার চেষ্টা করলাম।
একটি কথা আমাদের মনে রাখা উচিত, কোনো সভ্যতার পক্ষেই সম্পূর্ণ শুন্য জ্ঞান থেকে জ্ঞানের সুউচ্চ শিখরে পৌঁছানো সম্ভব নয়। প্রতিটি সভ্যতাই কোনো না কোনো ভাবে পূর্বতন সভ্যতাগুলোর কাছে ঋণী। কিন্তু ইতিহাসের ফাঁকতালে হারিয়ে গেছে এদের অনেকের নাম; হারিয়ে গেছে তাদের অবদান। হয়ত তাদেরই কোনো আবিষ্কার অন্য কেউ পুনরাবিষ্কার করে হয়ে গেছেন জগৎবিখ্যাত কিন্তু মূলচিন্তকের নাম পৃথিবীর মানুষ বেমালুম ভুলে গেছে। এ প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন চলে আসা উচিত, গণিত ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের জন্য ইতিহাসে অমর থাকা আদৌ কি খুব জরুরী? হয়ত ইতিহাসের জন্য জরুরী তবে ক্রমবিকাশমান সভ্যতার কাছে সেটি নেহাত কৌতূহল নিবারক তথ্য। কারণ প্রাচীন সভ্যতার অনেক প্রতিভাধর বিজ্ঞানী ও গণিতবেত্তার নাম ইতিহাস থেকে মুছে গেছে, কিন্তু তাদের সুদূর প্রসারী প্রভাব আজও অনুভব করে চলেছে মানবসভ্যতা। তাহলে ইতিহাসের গুরুত্ব কতটুকুই বা রইল? অবশ্যই সেটা ভেবে দেখার বিষয় এবং সেই গুরু দায়িত্ব ন্যস্ত করা হল পাঠকের উপরই।
সংক্ষেপে দেখুন