দ্রুত গতিতে চার্জের জন্য ১২৫ ওয়াট আল্ট্রাডার্ট চার্জিং প্রযুক্তি নিয়ে এলো রিয়েলমি। স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠানটিই সর্বপ্রথম এ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। অত্যাধুনিক এ প্রযুক্তিতে ৪ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ফাইভ-জি স্মার্টফোনে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ হবে মাত্র ৩ মিনিটে। যা দবিস্তারিত পড়ুন
দ্রুত গতিতে চার্জের জন্য ১২৫ ওয়াট আল্ট্রাডার্ট চার্জিং প্রযুক্তি নিয়ে এলো রিয়েলমি। স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠানটিই সর্বপ্রথম এ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।
অত্যাধুনিক এ প্রযুক্তিতে ৪ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ফাইভ-জি স্মার্টফোনে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ হবে মাত্র ৩ মিনিটে। যা দিয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করা যাবে। ১২৫ ওয়াটের আল্ট্রাডার্ট চার্জিং প্রযুক্তি অধিক কার্যকরী এবং এটি সব ফ্ল্যাশ চার্জিং প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে নেতৃস্থানীয় সমাধান।
ফাস্ট চার্জিং সাধারণত প্রচুর তাপ তৈরি করতে পারে, ফলে ব্যাটারি দ্রুত গতির চার্জিং একটি চ্যালেঞ্জ। ১২৫ ওয়াটের আল্ট্রাডার্ট চার্জিং এর মাধ্যমে মাত্র ১০-১৩ মিনিটের মধ্যে পুরোপুরি চার্জে সক্ষম। পাশাপাশি স্মার্টফোনে মিলবে দীর্ঘস্থায়ী পারফরম্যান্স।
যারা টানা অনেক্ষণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন তাদের জন্য কম শক্তিশালী ব্যাটারি কার্যকরী নয়। যেহেতু স্বল্প মেয়াদে ব্যাটারি শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি সাধন প্রায় অসম্ভব, তাই দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারির গ্যারান্টি দেয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ডার্ট চার্জিং প্রযুক্তি।
সংক্ষেপে দেখুন
ফেয়ারফোন: যে টেকসই স্মার্টফোন খুলে নিজেই ঠিক করতে পারবেন ব্যবহারকারী ফেয়ারফোন ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনগুলোর বিভিন্ন অংশ খুলে নিয়ে ব্যবহারকারীরা নিজেরাই নতুন অংশ লাগিয়ে সারাই করতে পারবেন। এতে অন্য ব্র্যান্ডের তুলনায় খরচও কম পড়ে। কার্বন নিঃসরণ ও ই-বর্জ্য কমানো এ কোম্পানিটির অন্যতম লক্ষ্য। তবে স্মবিস্তারিত পড়ুন
ফেয়ারফোন: যে টেকসই স্মার্টফোন খুলে নিজেই ঠিক করতে পারবেন ব্যবহারকারী
ছোট্ট, চৌকোনো একটি বস্তু উঁচিয়ে ধরে বাস ভ্যান অ্যাবেল বললেন, ‘এটা আমার ফোনের ক্যামেরা।’ একটু আগে ছোট একটা স্ক্রুড্রাইভার দিয়ে নিজের স্মার্টফোন থেকে জিনিসটা বের করেছেন তিনি।
‘মোট আটটা কম্পোনেন্ট আছে, সবগুলো খুলে নেওয়া যায়, নতুন লাগানো যায়,’ নিজের ফোনটাকে খুলতে খুলতে বললেন তিনি। একে একে ফোন থেকে বের হলো ব্যাটারি, ইউএসবি পোর্ট, পর্দা, ও লাউডস্পিকার।
ডাচ সামাজিক উদ্যোগ ফেয়ারফোন-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ভ্যান অ্যাবেল। এ ফোন কোম্পানিটির দাবি, এটি ‘বিশ্বের সবচেয়ে টেকসই স্মার্টফোন’ তৈরি করে। কিন্তু একটি স্মার্টফোন কতটা টেকসই হতে পারে?
২০১৩ সালে আমস্টারডামে পথচলা শুরু করে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফেয়ারফোন। এ ব্র্যান্ডের তৈরি ফোনগুলো সহজেই বদলানো, পরিবর্তন, ও সারাই করানো যায়। আর ব্যবহারকারীরা নিজেরাই এ কাজগুলো করতে পারেন।
হালকা কোনো ত্রুটির কারণে ফোন ফেলে দেওয়ার বদলে এভাবে ফোন ঠিক করার উৎসাহ দিয়ে ইলেকট্রনিক বর্জ্য কমাতে সহায়তা করছে ফেয়ারফোন।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতিবছর আনুমানিক ৫০ মিলিয়ন টন ইলেকট্রনিক বর্জ্য তৈরি হয়। এর মাত্র ২০ শতাংশ রিসাইকেল করা হয়।
ই-বর্জ্য বাড়ার অন্যতম কারণ হলো বহনযোগ্য ডিভাইস ও স্মার্টফোনের চাহিদাবৃদ্ধি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ বার্ষিক ই-বর্জ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়ে ১২০ মিলিয়ন টনে পৌঁছাবে।
২০২২ সালে ৫৩০ কোটি মোবাইল ফোন ফেলে দেওয়া হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে প্রতি ১৮ মাস অন্তর মানুষ তাদের ফোন বদলান। এসব ডিভাইসের বেশিরভাগই খোলার কোনো উপায় রাখা হয় না — তাই এগুলো ঠিক করানো খুবই কঠিন ও খরুচে কাজ।
আর দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে পারে এমন ফোন বিক্রি করার মাধ্যমে এ পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনতে চাইছে ফেয়ারফোন।
ভ্যান অ্যাবেল বলেন, ‘আমরা ফোনকে সারাই করার মতো উপযুক্ত করে তৈরি করি যাতে মানুষ সেটা দীর্ঘ সময় ব্যবহার করতে পারেন।’ যুক্তরাজ্যের একটি অলাভজনক সংস্থা দ্য রিস্টার্ট প্রজেক্ট-এর অনুমান, একটি স্মার্টফোনের জীবনকাল ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো গেলে, তা থেকে আয়ারল্যান্ডের মোট বার্ষিক নিঃসরণের সমান পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ কমানো যাবে।
ভ্যান অ্যাবেল জানান, ‘আমরা আমাদের সব ফোনে শতভাগ রিসাইকেল করা প্লাস্টিক এবং ফেয়ারট্রেডের মাধ্যমে কেনা সোনা ও রুপা ব্যবহার করি।’
তবে ফেয়ারফোনের ফোনগুলোর সব উপাদান টেকসই নয়। ফেয়ারফোন ৫-এ ৪০টি আলাদা উপাদান রয়েছে, তবে কেবল ১৪টি উপাদান (ফোনের মোট ওজনের ৪২ শতাংশ) টেকসইভাবে ও এথিক্যালি সংগ্রহ করা হয়। ১৪টি কাঁচামালের কেবল ৭০ শতাংশ ফেয়ারট্রেড বা রিসাইকেল উৎস থেকে আসে।
ফেয়ারফোনের আরেকটি লক্ষ্য হলো সমগ্র সরবরাহ চেইনে এথিক্যাল কর্মপরিবেশের উন্নয়ন ঘটানো। ডিআর কঙ্গোর সংঘাতপূর্ণ খনিগুলো নিয়ে সচেতনতা তৈরি করার লক্ষ্যে কোম্পানিটি ২০০৯ সালে একটি অ্যাক্টিভিজম ক্যাম্পেইন শুরু করে। বর্তমানে কোম্পানিটি ডিআর কঙ্গোর সংঘাতমুক্ত খনি থেকে টিন ও টাইটানিয়াম সংগ্রহ করে।
এত উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা সত্ত্বেও মোবাইল ফোনের বাজারে এখনো ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান ফেয়ারফোন। শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ লাখ ফোন বিক্রি করতে পেরেছে এটি। তুলনা বোঝানোর জন্য, কেবল ২০২২ সালেই বিশ্বে ২৩২ মিলিয়নের বেশি আইফোন বিক্রি করেছে অ্যাপল।
টেকসই-এর সঙ্গে দামটাও বেশি পড়ে। ফেয়ারফোনের সর্বশেষ মডেলটির দাম ৬৯৯ ডলার। ভ্যান অ্যাবেল জানান, এর একটা কারণ হলো ফেয়ারফোনকে সবকিছু নিজেদেরই তৈরি করতে হয়। অ্যাবেল বলেন, ‘আমাদেরকে নিজেদেরই সফটওয়্যার আপডেট করতে হয়, কারণ দুনিয়ার কোনো কোম্পানিই দীর্ঘমেয়াদি ফোনের পক্ষে না।’
তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের তুলনায় ফেয়ারফোনের সারাইয়ের খরচ অনেক কম। যেমন ফেয়ারফোন ৫-এর একটি নতুন ব্যাটারির দাম পড়ে ৪৯ ডলার, যেখানে আইফোন ১৫-এর ব্যাটারি বদলাতে অ্যাপল নেয় ৯৯ ডলার আর গ্যালাক্সি এস২৩-এর জন্য স্যামসাং ১৩৫ ডলার। ফোনের নতুন পর্দা লাগাতে ফেয়ারফোনে দরকার হয় ১১২ ডলার, অ্যাপলে ৩৫৯ ডলার ও স্যমাসাংয়ে ২৯৭ ডলার।
যেসব ফোন আর সারাই করা সম্ভব হয় না, সেগুলোর জন্য একটি রিসাইক্লিং প্রোগ্রামও রয়েছে ফেয়ারফোনের। রিসাইক্লিং করার পর ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত উপদান সংগ্রহ করা যায়। রিসাইক্লিংকে শেষ উপায় হিসেবে বিবেচনা করে ফেয়ারফোন।
যুক্তরাজ্যের ডিজাইন কাউন্সিল-এর প্রধান ডিজাইন অফিসার ক্যাট ড্রু বলেন, বেশিরভাগ স্মার্টফোনের নকশার কারণে এগুলো সারাই করতে উৎসাহবোধ করেন না ব্যবহারকারী। ফোনের ডিজাইন সহজে খোলার মতো করা হয় না। আবার হালকা, পাতলা ফোনগুলো খোলাও মুশকিল।
ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি সারাইয়ের খরচের কারণেও মানুষ আর পুরোনো জিনিস ঠিক করান না। ‘একটা ল্যাপটপের ডিসপ্লে ঠিক করাতে অনেক সময় নতুন ল্যাপটপের দামের চেয়ে বেশি খরচ করতে হয়,’ বলেন ড্রু।
স্মার্টফোন সারাইয়ের ক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ হলো ইলেকট্রনিক্স শিল্পের ব্যবসায়িক মডেলের পরিবর্তন আনা। দশকের পর দশক ধরে এ শিল্পের সরবরাহ চেইন গড়ে উঠেছে, চাহিদা ও পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। সেটায় পরিবর্তন আনা, এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা কোম্পানিগুলোর পক্ষে কঠিন।
এক্ষেত্রে মার্কেটিংও আরেকটি বড় সমস্যা। ভ্যান অ্যাবেল বলেন, ‘পুরো ব্যবসা মডেলটিই গড়ে উঠেছে প্রবৃদ্ধি ও বেশি বেশি ফোন বিক্রির ওপর। যেসব জিনিসের আমাদের দরকার নেই, সেগুলো আমাদের কাছে বিক্রি করার ক্ষেত্রে মার্কেটিং দারুণ সফল।’