হোমপেজ/হয় কেন
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
মাঝে মাঝে চোখের রং আলাদা হওয়ার কারণে কেউ অনেক প্রশংসিত হয়, যেমন হয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের ছবিগুলো। আবার মাঝে মধ্যে চোখের রংয়ের কারণে কেউ কেউ দুঃখজনক মন্তব্য শুনে থাকে। এই যেমন আমার দেখা এক মেয়ের চোখের রং একটু আলাদা, এ কারণে তাকে রেফারেন্স দিতে গেলে অন্যরা বলে 'আরেহ আছে না ওই যে বিড়বিস্তারিত পড়ুন
মাঝে মাঝে চোখের রং আলাদা হওয়ার কারণে কেউ অনেক প্রশংসিত হয়, যেমন হয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের ছবিগুলো। আবার মাঝে মধ্যে চোখের রংয়ের কারণে কেউ কেউ দুঃখজনক মন্তব্য শুনে থাকে। এই যেমন আমার দেখা এক মেয়ের চোখের রং একটু আলাদা, এ কারণে তাকে রেফারেন্স দিতে গেলে অন্যরা বলে ‘আরেহ আছে না ওই যে বিড়ালের চোখের মতো চোখওয়ালী…’। মানুষের জাজমেন্ট করার ধরন আর মন্তব্যের রকমসকম যে কত রংয়ের হয়!
যাইহোক, চোখের রংয়ের এই পার্থক্য কি একেবারেই প্রাকৃতিক, নাকি অন্য কোনো কারণ আছে? প্রশ্নটার উত্তর হয়ত আমরা অনেকেই জানি না, তাই কারো চোখের রংয়ের ভিন্নতায় আমরা অদ্ভুত মন্তব্য করে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করি।
রং-বেরং
প্রশ্ন হলো অধিকাংশ মানুষের চোখের রং কালো কেন? কারণ, আমাদের চোখে আছে ‘পিগমেন্টেড সেল’। পিগমেন্ট চোখে প্রবেশ করা আলো শুষে নেয়। ফলে চোখের রং কালো দেখায়। একটু ভেঙ্গে বলা যাক।
আপনার চোখের রংয়ের অংশটুকুকে বলা হয় আইরিস। এই আইরিসের গঠন দুই লেয়ারের, পেছনের লেয়ার হলো এপিথেলিয়াম এবং সামনের লেয়ারটি স্ট্রোমা। এপিথেলিয়ামে কালো, বাদামি পিগমেন্ট থাকে। আর স্ট্রোমা রংহীন ফাইবার দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে। কখনো কখনো স্ট্রোমাতে মেলানিন নামক ডার্ক পিগমেন্ট থাকতে পারে, অথবা অনেক বেশি কোলাজেন ডিপোজিট থাকতে পারে। মূলত এই দুটি ফ্যাক্টরই চোখের রং কেমন হবে তা নিয়ন্ত্রণ করে।
কালো, বাদামী, নীল- বিভিন্ন রংয়ের চোখ হয়
যেমন ধরুন, কারো চোখের রং বাদামি। সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে, তার স্ট্রোমায় উচ্চস্তরের মেলানিন বিদ্যমান, যা চোখে প্রবেশ করা আলোকে কৃষ্ণাভ রকমের রং দেয়। আবার ধরুন, কারো চোখের রং সবুজ। সেক্ষেত্রে আপনাকে বুঝতে হবে, সে ব্যক্তির চোখে মেলানিন একেবারে কম এবং কোলাজেন ডিপোজিটও নেই। ফলে, চোখ হয় সবুজ। তবে সবুজ রংয়ের চোখ অনেক বিরল।
নীল চোখ
সবচেয়ে ইন্টেরেস্টিং হলো নীল চোখ। যাদের নীল চোখ, তাদের স্ট্রোমাতে কোনো রং নেই। তাদের কোনো পিগমেন্টও নেই। ফলে পিগমেন্ট দ্বারা বিভিন্ন রংয়ের আলো চোখ শুষে নিতে পারে না। নীল চোখ যাদের তাদের কোলাজেন ডিপোজিটও নেই একেবারেই। এরফলে চোখের ভেতর যখন নানা রংয়ের আলো প্রবেশ করে বিক্ষিপ্তভাবে তারা চোখের পেছনের অংশে টিন্ড্যাল ইফেক্ট তৈরি হয়। এই টিন্ড্যাল ইফেক্ট নীল রং তৈরি করে।
অ্যালবিনিজম কী?
অ্যালবিনিজম বা লিউসিজমকে বলা হয় জন্মগত রোগ। এই রোগে আক্রান্তদের চুল, চোখ, ত্বক বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে। আগেই বলেছি, আমাদের পিগমেন্ট সেলের কারণে আমরা স্বাভাবিক রংয়ের ত্বক, চোখ, দেহ পাই। এই পিগমেন্টের অভাবে হয় অ্যালবিনিজম। ফলে, এই রোগে আক্রান্ত মানুষরা কিছুটা ইউনিক রংয়ের চোখ বা ত্বকের অধিকারী হন।
টিন্ডাল ইফেক্টের কারণেই চোখের রং নীল হয়
অকুলার অ্যালবিনিজম
অ্যালবিনিজম দুই প্রকার, এর মধ্যে যে অ্যালবিনিজমের কারণে চোখের রং বদলে যায়, সেটাই অকুলার অ্যালবিনিজম। অকুলার অ্যালবিনিজমে মানুষের চোখের মণির রঙ সবুজ থেকে নীল এমনকি বাদামী রঙ ধারণ করতে পারে। এক্ষেত্রে খুব অল্প পরিমান পিগমেন্ট চোখে থাকে বলে আলো সরাসরি আইরিসে প্রতিফলিত হয়। যা তৈরি করে টিন্ড্যাল ইফেক্ট। বদলে যায় রং। বিজ্ঞান বলে, অকুলার অ্যালবিনিজম বংশানুক্রমে বিস্তার লাভ করে থাকে৷ পিতামাতার দুইজনই যদি অ্যালবিনিজম রোগের বাহক হয়ে থাকেন, তাহলে সন্তানেরও অ্যালবিনিজম হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
একটুখানি ইতিহাস
অকুলার অ্যালবিনিজম ছাড়াও চোখের রং নীল হতে পারে। কীভাবে? জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত ধারার কারণে। আপনি যদি ইউরোপের মানুষদের দিকে তাকান, দেখবেন প্রচুর ভিন্নরংয়ের চোখসমৃদ্ধ মানুষ ঘুরছে চারদিকে। তারা কি সবাই রোগী? অবশ্যই না। এটা হয়েছে বংশানুক্রমিকভাবে। বিবর্তনের এক পর্যায়ে জেনেটিক পরিবর্তনের কারণে যার সূত্রপাত, সেই ধারা অব্যাহত হচ্ছে অনেক সময় ধরে।
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলে, চোখের রংয়ের এই বদলের উৎস খুঁজতে হলে ফিরতে হবে ১০ হাজার বছর আগে! বিজ্ঞানীরা বলছেন, আনুমানিক ৬ থেকে ১০ হাজার বছর পূর্বে জেনেটিক এক পরিবর্তন ঘটে এক জাতির মধ্যে। এই পরিবর্তন মেলানিন ও পিগমেন্টের উপরে হয় যা আমাদের ত্বক, চুল, চোখের রং নির্ধারণ করে। ক্রমোজমে থাকা OCA2 নামক একটি জিন বিবর্তনের কারণে চোখের রং নীল হতে শুরু করে। তার আগে পৃথিবীতে ছিল না কোনো নীল রংয়ের চোখ।
একটা ইন্টেরেস্টিং তথ্য গবেষণায় দাবি করা হয়। সেটা দিয়েই লেখাটি শেষ করি। গবেষণায় বলা হয়, যাদের চোখের রং নীল তাদের চোখের ডিএনএ প্রায় অনুরুপ, একই। অর্থাৎ, এই নীল চোখের মানুষগুলো সরাসরি সম্পর্কযুক্ত না হয়েও চোখের রংয়ের কারণে অলিখিত এক সম্পর্কে জড়িয়ে আছেন নিজেদের অগোচরেই!
সংক্ষেপে দেখুন