হোমপেজ/হাড় ভাঙার চিকিৎসা
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
হাড় ভাঙার ক্ষেত্রে ভাঙা স্থানকে অনড় রাখা অত্যন্ত দরকারি একটি বিষয়। স্থিতিশীলতা দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করে। হাড় ভাঙার চিকিৎসায় এ কৌশলটি হাজার বছরের পুরনো। হিপোক্রেটিস কিংবা আল রাজির ন্যায় চিকিৎসকদের সময়েও এ পদ্ধতির ব্যবহার শোনা যায়। তবে ভাঙা স্থান অনড় রাখার বস্তু-সামগ্রীতে ছিল ভিন্নতা। মোম,বিস্তারিত পড়ুন
হাড় ভাঙার ক্ষেত্রে ভাঙা স্থানকে অনড় রাখা অত্যন্ত দরকারি একটি বিষয়। স্থিতিশীলতা দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করে। হাড় ভাঙার চিকিৎসায় এ কৌশলটি হাজার বছরের পুরনো। হিপোক্রেটিস কিংবা আল রাজির ন্যায় চিকিৎসকদের সময়েও এ পদ্ধতির ব্যবহার শোনা যায়। তবে ভাঙা স্থান অনড় রাখার বস্তু-সামগ্রীতে ছিল ভিন্নতা। মোম, রেজিন, ডিমের সাদা অংশ, স্টার্চ, বাঁশ কিংবা কাঠের টুকরা হয়ে বর্তমানের প্লাস্টার কাস্ট (cast) ও ফাইবারগ্লাস কাস্ট- অস্থি কিংবা অস্থিসন্ধি নিশ্চল করার ক্ষেত্রে ইতিহাসে এমন সব পদার্থের ব্যবহারই সবচেয়ে বেশি শোনা যায়।
বর্তমানে ভাঙা স্থান অনড় করার কাজে বহুল ব্যবহৃত একটি পদার্থ হলো প্লাস্টার অব প্যারিস। খনিজ জিপসাম (CaSO4.2H2O) থেকে প্লাস্টার অব প্যারিস তৈরি করা হয়। হাড় ভাঙার চিকিৎসায় ব্যবহারের আগে বাসা-বাড়ি তৈরির কাজেই এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হতো।
প্লাস্টার অব প্যারিসের নামকরণ নিয়ে নানা মত দেখা যায়। ১২৫৪ সালে রাজা তৃতীয় হেনরির প্যারিস ভ্রমণের সময় এখানকার দালান-কোঠার নান্দনিক সাদা দেয়াল মুগ্ধ করে তাকে। তখন থেকে ইংল্যান্ডেও একই রকম প্লাস্টার পদ্ধতি চালু হয়, যা প্লাস্টার অব প্যারিস নামেই পরিচিতি পায়।
শুরুর গল্প
উনিশ শতকের শুরুতে ইউরোপে হাড় ভাঙার চিকিৎসায় প্লাস্টার অব প্যারিস ব্যবহারের একটি পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়। এ পদ্ধতিকে বলা হতো ‘plâtre coulé’। ভাঙা স্থানকে ঘিরে একটি কাঠের কাঠামোর মধ্যে ঢেলে দেওয়া হতো প্লাস্টার অব প্যারিস। প্লাস্টারের ভারে রোগী বিছানা ছেড়ে উঠতে পারত না। তবুও পা ভাঙার চিকিৎসায় এটি বেশ জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি ছিল। বেলজিয়ান চিকিৎসক লুইস সিউটিন রোগীদের অসুবিধার কথা ভেবে স্টার্চ ব্যান্ডেজের প্রচলন করেন। ১৮৩৯ সালে লাফার্গ স্টার্চ দ্রবণের সাথে প্লাস্টার অব প্যারিস পাউডার মিশিয়ে তা লিনেন ব্যান্ডেজের উপর প্রয়োগ করেন। এ পদ্ধতিতে প্লাস্টার জোড়া লাগার সময় কমে ছয় ঘণ্টায় নেমে আসে।
১৮৫২ সালের দিকে ডাচ মিলিটারি সার্জন অ্যান্থোনিয়াস মাথিজসেন দ্রুত কয়েক মিনিটের মধ্যে প্লাস্টার জমাট বাধার একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। পানি ও প্লাস্টার অব প্যারিসে ভেজা ব্যান্ডেজ ভাঙা স্থানকে কয়েক মিনিটেই মোটামুটি অনড় করতে সক্ষম হতো। তার এ পদ্ধতি অনেকটাই পূর্বে ব্যবহৃত সিউটিনের পদ্ধতির ন্যায়। তবে সিউটিনের পদ্ধতির চেয়ে এ প্রক্রিয়ায় কম সময় লাগার পাশাপাশি কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ন্যায় বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। মাথিজসেনের মৃত্যুর পর প্লাস্টার করার এ প্রক্রিয়া বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
প্লাস্টার অব প্যারিস যেভাবে কাজ করে
খনিজ জিপসামকে (CaSO4.2H2O) ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত অবস্থায় পানি অপসারণ করে প্লাস্টার অব প্যারিস প্রস্তুত করা হয়। প্লাস্টার অব প্যারিসের রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম সালফেট হেমিহাইড্রেট (CaSO4.1/2H2O), যা সাধারণত পাউডার আকারে আর্দ্রতামুক্ত পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়। এ প্লাস্টার অব প্যারিসের সাথে যখন আবার পানি যোগ করা হয়, তখন তা ৫-১৫ মিনিটের মধ্যে জিপসামে পরিণত হয় ও শক্ত আকার ধারণ করে। আর ভাঙা স্থানে ব্যান্ডেজের উপরে শক্ত এ কাঠামো অস্থি ও অস্থিসন্ধিকে অনড় করে রাখে।
শুধু ভাঙা অস্থিই না, বরং এটি আঘাতপ্রাপ্ত লিগামেন্ট ও মাংসপেশীকেও নিরাময়ের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে প্লাস্টার অব প্যারিস জমাট বাধলেও এটি পুরোপুরি শুকাতে ৩৬-৭২ ঘণ্টা অবধি সময় লেগে যেতে পারে। পায়ের প্লাস্টার মোটামুটি ৪৮ ঘণ্টা পর থেকে এর ওজন নিতে পারে। প্লাস্টারের গুণগত মান, পানি ও জিপসামের অনুপাত প্রভৃতি বিষয়ের উপর প্লাস্টারের সফলতা নির্ভর করে। প্লাস্টার করা অবস্থায় এক্সরে করার সুবিধাও পাওয়া যায় । হাড় ভাঙার চিকিৎসায় এ পদ্ধতি বেশ স্বল্পমূল্যের, ও তেমন কোনো অ্যালার্জিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।
জটিলতা
প্লাস্টার কাস্ট ঠিকমতো প্রয়োগ করতে না পারলে নানা জটিলতা দেখা দেয়। এজন্য প্লাস্টার করার ক্ষেত্রে মানবদেহের অ্যানাটমি সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা থাকা দরকার। তবে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের পরও অনেক সময় নানা জটিলতা তৈরি হয়। প্লাস্টারের অভ্যন্তরে চাপ অনেক বেড়ে গেলে সেখানে রক্ত চলাচল কমে যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় ‘কম্পার্টমেন্ট সিন্ড্রোম’। ফলে উক্ত অঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়, এমনকি মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। এছাড়া শিরায় রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটা এবং ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিসও হতে পারে। আঘাতপ্রাপ্ত স্থান ফুলে ভাঙা স্থানকে পুনরায় স্থানচ্যুত করতে পারে। সেক্ষেত্রে আবার নতুন করে প্লাস্টার করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।
হাড় ভাঙার চিকিৎসায় আক্রান্ত স্থান নিশ্চল করার ক্ষেত্রে বর্তমানে ফাইবারগ্লাস প্লাস্টার কাস্টের মতো আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। তবে এতে প্লাস্টার অব প্যারিসের আবেদন খুব একটা কমেনি। হাড় ভাঙার চিকিৎসা সম্পর্কে ১৮৯৩ সালে এ জে স্টিলের করা নিম্নোক্ত উক্তি এখনও তাই সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
সংক্ষেপে দেখুন