চুম্বক বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী আবিস্কার।
Share
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
ছোটবেলায় যে চুম্বক আমাদের কাছে রহস্য হয়ে ধরা দিতো, আজ তার আদ্যোপান্ত জেনে নেয়া যাক-
যেকোনো চুম্বক বা চুম্বকীয় বস্তুর দু’টি মেরু থাকে। একটি উত্তর মেরু ও অন্যটি দক্ষিণ মেরু। এই মেরুগুলো চৌম্বক পদার্থসমূহকে আকর্ষণ করে। দু’টি বিপরীত মেরু পরস্পরকে আকর্ষণ করে, কিন্তু দু’টি সমমেরু পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। একারণেই দক্ষিণ মেরুকে সহজেই উত্তর মেরুর সঙ্গে মেলানো যায়, কিন্তু উত্তর মেরুকে অন্য একটি উত্তর মেরুর দিকে কিংবা একটি দক্ষিণ মেরুকে অন্য একটি দক্ষিণ মেরুর দিকে আনতে গেলেই ঘটে বিপত্তি।
এসবই জানা কথা, তাই না? চুম্বকের রয়েছে বহু প্রকারভেদ। এগুলোর মধ্যে একটি হলো প্রাকৃতিক চুম্বক পদার্থ, যেমন: আলনিকো। আলনিকো হলো লোহার একটি সঙ্কর। আরো রয়েছে তড়িৎ চুম্বক বা ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটস।
বৈদ্যুতিক তারের কুণ্ডলী পাকিয়ে তার মধ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করে এ ধরণের চুম্বক তৈরি করা হয়। প্রাকৃতিক চুম্বকের মতো এ চুম্বকের চুম্বকত্ব স্থায়ী নয়। বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধের সঙ্গে তড়িৎ চুম্বকের চুম্বকত্ব লোপ পায়। আধুনিক বিশ্বে মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে গাড়ি পর্যন্ত সব জায়গাতেই চুম্বকের ব্যবহার দৃশ্যমান।
চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এমআরআই এর মতো যন্ত্রগুলোতে চুম্বকের যথেষ্ট ব্যবহার রয়েছে। তবে আমাদের চারপাশে থাকা চুম্বকের চৌম্বকত্বের পরিমাণও কিন্তু চিন্তার বিষয়! বিশেষ করে স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যার পেছনে অতিরিক্ত চৌম্বকত্বের প্রভাব থাকতে পারে। যেমন: কারো হৃদযন্ত্রে যদি পেসমেকার বসানো থাকে তবে চারপাশের শক্তিশালী কোনো চুম্বক ক্ষেত্র থেকে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে।
ভুলক্রমে উচ্চ চুম্বকত্বের কোনো পদার্থ সেবন করে ফেললেও তা স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি করে। অনুমেয়ভাবেই সবার প্রথমে যে চুম্বক আবিষ্কার হয় তা ছিলো প্রাকৃতিক চুম্বক। ম্যাগনেটাইট বা লোডস্টোন নামক পাথরের ভেতর সর্বপ্রথম চুম্বকের অস্তিত্ব শনাক্ত করা হয়। কেউ কেউ বলেন, কোনো এক ব্যক্তির জুতার ধাতব অংশে ম্যাগনেটাইট লেগে গেলে এই রহস্যময় পাথরের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মানুষ অবগত হয়। আবার অনেকে এ পাথর আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেন গ্রীক বা মেসিডোনীয়দের। তবে আবিষ্কারক যারাই হোক না কেন সর্বপ্রথম চুম্বক যে প্রাকৃতিক উৎস থেকেই উদ্ধার করা হয় এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই।
চুম্বক নিয়ে মজার সব তথ্য!
এ পর্যন্ত খোঁজ পাওয়া সবচেয়ে বড় চুম্বকটি পাওয়া যায় সুইজারল্যান্ডে, নাম ‘লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার’। সাধারণ ফ্রিজ ম্যাগনেটের তুলনায় যেটির চুম্বকত্ব ৪০০ গুণ বেশি। অন্যদিকে, সবচেয়ে শক্তিশালী চুম্বকের আকার কিন্তু হ্যাড্রন কোলাইডারের থেকে অনেক ছোট, সেটি পাওয়া গেছে ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। সবচেয়ে শক্তিশালী ওই চুম্বকটি বিক্রি হয়েছে ২৫ লাখ ডলারের বিনময়ে। আড়াই হাজার ফ্রিক ম্যাগনেটের সমান শক্তি ধারণ করে আছে চুম্বকটি! অন্য একটি চমকপ্রদ ব্যাপার হলো পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে প্রাকৃতিক চুম্বক পাওয়া যায় স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলে।
একটি কাঠের তক্তার সঙ্গে চুম্বক সংযুক্ত করে যদি পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়, তবে তার উত্তর মেরু পৃথিবীর উত্তর মেরুর দিকে মুখ করে থাকবে। চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রতি কিছু কিছু প্রাণী বেশ সংবেদনশীল। মৌমাছির যোগাযোগ প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণার কাজে চুম্বক ব্যবহার করা হয়। সমুদ্রের হাঙরের দল চৌম্বক ক্ষেত্র আন্দাজ করতে পারলে দূরে সরে যায়। অন্যদিকে, পাখিসহ আরো বেশ কিছু প্রাণী চুম্বকক্ষেত্র দ্বারা আকর্ষিত হয়। মহাকাশে রয়েছে ম্যাগনেটার নামের একটি তারা যেটি সুপারনোভা বিষ্ফোরণের ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। এর চুম্বকত্ব এত বেশি যে, পৃথিবীর মতো দু’তিনটি গ্রহ এর কাছ দিয়ে গেলে তা এদের গ্রাস করতে সক্ষম!