sumiনতুন
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শূন্য থেকে “কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন” এর মাধ্যমে আমাদের মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়েছে। এটা কী করে সম্ভব? শূন্য থেকে হুট করে আমাদের এ মহাবিশ্ব তৈরি হয়ে গেল।
শেয়ার করুন
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
জ্বি, স্রেফ “শুন্য” থেকেই আমাদের এই আশ্চর্যরকম সুন্দর মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়েছে। কিন্তু তা কী করে সম্ভব? চলুন দেখা যাক।
তবে প্রথমেই বলে রাখি, আপনার হাতে যদি মিনিমাম ১০ মিনিট সময় ও অসাধারণ এ বিষয়টি নিয়ে মোটামুটি ধারণা নেওয়ার আগ্রহ থাকে তাহলেই কেবল পড়বেন। এখানে মূল পড়া খুব বেশি নয়। কিন্তু সকলের বোঝার উপযোগী ও একটুখানি “রস” দ্বারা লিখতে গিয়ে একে দীর্ঘায়িত করে রীতিমতো একটা “প্রবন্ধ” বানিয়ে ফেলেছি!! পাঠকরা তাই একে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
উত্তরটিতে যা যা আলোচনা করেছি –
যথেষ্ট আগ্রহ ও শেখার মানসিকতা নিয়ে মনোযোগ সহকারে পড়লে “বোরিং” লাগবেনা আশা করি। শুভকামনা রইল। ধন্যবাদ।
ছবি ১ঃ “শূন্য” থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টির ইতিহাস
মানুষের হাজার হাজার বছরের ঐতিহাসিক প্রশ্ন –
আমরা কে? আমাদের চারপাশে যে গাছপালা আর পশুপাখি, দূর আকাশে জ্বলন্ত ওই নক্ষত্র আর তারকারাজি, মহাকাশে ছুটে চলা ধূমকেতু আর উল্কারাজি-কোথা থেকে এলো এতকিছু? কেনই বা আমরা এখানে অবস্থান করছি?
এমন কোনো মানুষ এই ধরণীর বুকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যাকে এ প্রশ্নগুলো একটিবারও ভাবায়নি।ছোট্ট খোকা একটুখানি বড় হতেই প্রশ্ন করে- মাগো! বলোনা,এলাম আমি কোথা থেকে? মা তখন ছেলেকে বুকে তুলে নিয়ে রূপকথার গল্প শোনায়। সে গল্প শুনতে শুনতে খোকার চোখ ঝিমিয়ে আসে।সেই সাথে খোকা হারিয়ে যেতে থাকে স্বপ্নের অতল গহ্বরে।
আদিম মানুষরা যখন ঐ দূর আকাশটার পানে তাকিয়ে তাকিয়ে নির্বাক হয়ে ভাবতো, কল্পনা তখন তাদেরও তীব্রভাবে আচ্ছন্ন করে রাখতো। আর সেই কল্পদেশেই তারা বুনে বেড়াতো অসাধারণ সব রূপকথার মায়া ছড়ানো কল্পজাল।
কিন্তু বিজ্ঞান কি আর কল্পলোকের এরূপ দাসত্ব করতে পারে? বিজ্ঞান তো এমন এক বিদ্রোহী সত্ত্বা যার “এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আরেক হাতে রণতুর্য”। সত্যকে সে যেমন করে অভিনন্দিত করতে জানে,মিথ্যেকেও সে তেমনিভাবে চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে জানে।তাইতো বিজ্ঞান শত সহস্র বছরের রুপকথাকে এক তুড়িতে ছিটকে ফেলে উন্মোচন করেছে আসল সত্যের,যে সত্য দিয়েছে সকল প্রশ্নের সমাধান,করেছে সকল চিন্তার অবসান।
কিন্তু কী সেই সত্য জানতে চাও? শুনে নাও তবে জগত কাঁপানো সেই নির্ভেজাল সত্যঃ-
“চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারকা
কোথা হতে সব সৃষ্ট,
শুন্য হইতে আসিয়াছে এ
নিরন্তর মহাবিশ্ব।“
কথাটি দেখে হয়তো অনেকে ভুরু কুঁচকে ভাবছে-এ আবার কেমন কথা? জিরো মানে তো অ্যাবসলিউট জিরো। সেখানে আবার অন্য কিছু আসবে কী করে? ০=১ কি হয় কখনো?জ্বি না,তা হয়না।তবে নির্মম হলেও সত্য যে স্রেফ শুন্য থেকেই এসেছে এ জগত সংসারের সবকিছু । কিন্তু কেমন করে তা সম্ভব?
চলুন,ব্যাপারটা আরেকটু খোলাসা করা যাক।
“শুন্যতা” আসলে কীঃ
প্রথমেই যে শব্দ আমাদের সবচেয়ে বেশি ভাবিয়ে তোলে সেটি হলো “শুন্য” কথাটি। আচ্ছা “শুন্য” শব্দটার মানে কি? অথবা শূন্যতা বলতেই বা কি বুঝায়? সাধারণভাবে আমরা বুঝি যে কোন কিছু না থাকার অর্থই শুন্যতা। পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় সেখানে কোন প্রকার বাহ্যিক কনিকা থাকতে পারবে না। যেমন টরিসেলির পরীক্ষায় নলের ভেতরে পারদের উপরতলে সৃষ্টি হওয়া খালি জায়গাটিই হচ্ছে শূন্যস্থান। অথবা কোন একটি খালি কাচপাত্র থেকে পাম্পের মাধ্যমে এর ভেতরের সমস্ত বায়ু বের করে নেয়া হলে কাচপাত্রের ভেতরটাকে বলা হবে শূন্যস্থান বা ভ্যাকুয়াম। কিন্তু এই শুন্যস্থানে কোনো কণিকা না থাকলেও সর্বদা শক্তি উপস্থিত থাকে। কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুসারে যেটাকে বলা হয় “কোয়ান্টাম শূন্যতা”।
আমাদের এই মহাবিশ্বের অধিকাংশ স্থানই শূন্যস্থান। একটি হাইড্রোজেন পরমাণুর ৯৯.৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৬% অংশই হলো এই শূন্যস্থান বা ভ্যাকুয়াম। এছাড়া আমাদের চারপাশে কী পরিমান শূন্যস্থান আছে,একটা উদাহরনে তা বোঝা যাবে। যেমন আমরা যদি পৃথিবীর সকল পরমাণুর ভেতর হতে সমস্ত শূন্যস্থান বের করে বাকি অংশগুলোকে একত্র করি তাহলে পুরো পৃথিবী একটি আপেলের মত আকার ধারন করবে। যদিও তার ভর থাকবে অপরিবর্তিত।
আচ্ছা পাঠক তাহলে কেন শুধু শুধু এত “জায়গা” অপচয়? কেন একটা হাইড্রোজেন পরমাণুর ৯৯.৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৬% অংশই শূন্যস্থান দখল করে আছে? শুন্যতা না থাকলেই বা ক্ষতি কি ছিলো?
জি,শুন্যতা না থাকলে যেটা হত সেটা সম্ভবত হত মহাকালের সবচেয়ে বড় ক্ষতি! আর আমাদের জন্য হত সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য! কারন শূন্যতা না থাকলে হয়ত আমাদের সুন্দর-সুশীতল মায়া-জড়ানো এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব হতোনা। আর এখানেই লুকিয়ে আছে আসল রহস্য! শূন্যতাকে আমরা যতটা সাধারণ ভাবে চিন্তা করি বাস্তবে কিন্তু এতটা সাধারণ সে নয়। শূন্যতাকে বাইরে থেকে দেখতে যতটা “ইনোসেন্ট” আর ভদ্র মনে হোক না কেন, সে কিন্তু ভিতরে ভিতরে তার চেয়েও বেশি অভদ্র। কারণ তার প্রতিটা সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম স্তরে সবসময়ই ঘটে চলেছে নানান প্রক্রিয়া। কিন্তু কী সেই নানান কর্মকান্ড যা কিনা শূন্যতাকে প্রতিনিয়ত এতটা অশান্ত করে রেখেছে?
ব্যাপারটা বোঝার জন্য প্রথমে প্রতিকণার বিষয়টি ক্লিয়ার করা যাক।
কণা-প্রতিকণার ধারণাঃ
সময়টা গত শতকের তৃতীয় দশকের দিকে। বিজ্ঞানীরা তখন অতি ক্ষুদ্র কিন্তু আলোর বেগের কাছাকাছি গতিশীল কনার আচরণ ব্যাখ্যা করতে মরিয়া। তাদের হাতে ছিল দুটি জনপ্রিয় তত্ত্ব। একটি আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আর অন্যটি প্লাঙ্কের বিখ্যাত কোয়ান্টাম তত্ত্ব। কিন্তু বিজ্ঞানীরা কিছুতেই এ দুটোকে এক করে সেই কণাগুলোর আচরণ ব্যাখ্যা করতে পারছিলেন না। এমন সময় অসাধারণ এক সমাধান নিয়ে হাজির হন পল ডিরাক নামক এক বিজ্ঞানী যেটা কিনা তেমনি একটি কণা ইলেকট্রনের আচরণ সম্পূর্ণ রূপে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। সমীকরণ টি দেখতে এরকম-
কিম্ভূতকিমাকার এই সমীকরণটি দেখে আঁতকে ওঠার কিছু নেই। শুধু কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকুন।
এ এমন এক রহস্যময় সমীকরণ যেটি কিনা এমন এক কণার ভবিষ্যৎবানী করে যা তখনকার কোনো মানুষের কল্পনাতেও ছিল না।এই সমীকরণটি বলছে যে প্রকৃতিতে এমন এক কণার অস্তিত্ব আছে যা আমাদের পরিচিত কণা ইলেকট্রনের সম্পূর্ণ বিপরীত।আর একটি কনাকে আমরা অন্য একটি কণার বিপরীত তখনই বলি যখন তাদের মধ্যকার ভর সমান কিন্তু চার্জ পরস্পরের বিপরীত। অর্থাৎ ইলেকট্রনের ক্ষেত্রে এর বিপরীত কণিকাটি হবে ধনাত্মক চার্জ বিশিষ্ট। তাহলে কি সেটি প্রোটন? না। প্রোটন আর ইলেকট্রনের ভর তো সমান নয়।তাহলে কী সেই কণিকা?
পল ডিরাক যদিও বেশ একটা আমলে নেন নি বিষয়টি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এর গুরুত্ব বুঝে উঠে পড়ে লাগলেন সেই কনিকার খোঁজে।
অতঃপর 1932 সালের দিকে কার্ল দি এন্ডারসন নামের এক বিজ্ঞানী সন্ধান দিলেন সেই রহস্যময় কণিকার তথা প্রতি-ইলেকট্রনের। [এখানে বাংলায় “প্রতি” উপসর্গটি ব্যবহার করা হয় কোন কিছুর বিপরীত বুঝানোর জন্য। যেমন কারো নাম যদি কুদ্দুস হয় তাহলে তার বিপরীত মানুষটির নাম হবে “প্রতি-কুদ্দুস”।] বিজ্ঞানীরা এই প্রতি-ইলেকট্রনের নাম রাখলেন পজিট্রন। এই পজিট্রন এর ভর ইলেক্ট্রন এর একদম হুবহু সমান কিন্তু চার্জ বিপরীত তথা ধনাত্মক। এই মহান কাজের জন্য নোবেল কমিটি 1936 সালে তাকে নোবেল পুরুস্কারের জন্য মনোনীত করে।
কিন্তু এই পজিট্রন আবিষ্কার হওয়ার পর আরও একটি বিষয় বিজ্ঞানীদের সামনে চলে আসে।এই যে ইলেক্ট্রন কে আমরা দেখি পরমানুতে নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঘুরতে, তাহলে প্রতি-ইলেকট্রন তথা পজিট্রন ঘুরে কার চারদিকে? নিশ্চয়ই তার ঘোরার জন্যও অন্য কিছু থাকবে।
বিজ্ঞানীরা তখন ধারণা করে নিলেন যে ইলেকট্রনের ঘুরার জন্য যেমন পরমাণু আছে, ঠিক তেমনি প্রতি-ইলেক্ট্রনের ঘুরার জন্যও নিশ্চয়ই প্রতিপরমানু বা প্রতিকণা আছে। যেই প্রতিকণার কেন্দ্রে থাকবে প্রতি-প্রোটন ও প্রতি-নিউট্রনের সমন্বয়ে গঠিত প্রতি-নিউক্লিয়াস এবং এর চারপাশে ঘুরবে প্রতি-ইলেক্ট্রন তথা পজিট্রন। কিন্তু এই অনুমান নিয়ে বিজ্ঞানীদের বেশিদিন থাকতে হলোনা। কারন পজিট্রন আবিষ্কার হওয়ার কয়েক দশকের মধ্যেই বিজ্ঞানীরা প্রতি-প্রোটন ও প্রতি-নিউট্রন আবিষ্কার করে ফেলেন যারা মিলিতভাবে জন্ম দেয় প্রতিকণার।
এই প্রতিকণার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে,একে যদি কোনো কণার সংস্পর্শে নিয়ে আসা হয় তাহলে এটি সেই কণার সাথে মিলিত হয়ে উভয়কে ধ্বংস করে দেয় এবং বিনিময়ে তাদের ভরের সমতুল্য পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে।(আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ E=mc^2 অনুসারে)
[ প্রক্রিয়াটি নিচের ছবিতে দেখুন। ]
ছবিঃ কণা-প্রতিকণার পারস্পরিক ধ্বংস ও বিনিময়ে শক্তি উৎপাদন । [ কণা = (+),প্রতিকণা = (-) ]
তাই ল্যাবরেটরিতে প্রতিকণা উৎপাদন ও সংরক্ষণ বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। কারণ আমাদের ল্যাবরেটরির সবকিছুই কণা দিয়ে তৈরি। ফলে উৎপন্ন প্রতিকণা যদি কোনোভাবে ল্যাবরেটরির কোনো কিছুর সংস্পর্শে আসে তাহলে মুহূর্তেই তা কণার সাথে বিক্রিয়া করে শক্তিতে পরিণত হয়ে যাবে।
কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন কীঃ
এবার চলুন আবার সেই শুন্যস্থানের কাছে ফিরে যাই। আমরা জেনেছিলাম,শুন্যস্থানে কোনো কণিকা না থাকলেও সর্বদা শক্তি উপস্থিত থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন,শুন্যস্থানের সূক্ষ্মস্তরে প্রতিনিয়ত সেই শক্তি ও ভরের অদল-বদল ঘটছে। এবং এর ফলে সেখানে প্রতি মুহূর্তে শক্তি রুপান্তরিত হচ্ছে ভরে তথা কণায়।
ছবি ৪ঃ “শূন্য” থেকেই কণা-প্রতিকণা সৃষ্টি
পদার্থবিজ্ঞানে শূন্যস্থান হতে কণা সৃষ্টির এই বিষয়টাকে বলা হয় “কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন” বা “ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন”। বাংলায় বললে “শূন্যতার অস্থিরতা”। কিন্তু এই কণা স্থায়ী হতে পারে না,সাথে সাথে ধ্বংস হয়ে গিয়ে আবার শক্তিতে পরিণত হয় ও শুন্যতার সাথে মিশে যায়। কারণ শূন্যস্থান থেকে যখন কণা সৃষ্টি হয় তখন সে কখনোই একলা একলা উৎপন্ন হতে পারে না। তার সাথে প্রতিকণাও যুগপৎ ভাবে উৎপন্ন হয়।
অর্থাৎ তাদের মধ্যে সম্পর্কটা হচ্ছে “বাঁচা-মরা একই সাথে” সম্পর্ক। তারা উৎপন্ন হবে একসাথে আবার পরস্পর মিলে ধ্বংসও হবে একইসাথে। 0 থেকে যেমন +x ও -x হয় আবার এরা মিলে (-x)+x=0 হয়ে যায়,কণা-প্রতিকনার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক সেরকম। কণা যদি হয় +x তবে প্রতিকণা হবে –x।একইভাবে উল্টোটিও সঠিক।
কিন্তু এ যে কেবল তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব তা কিন্তু নয়। বিজ্ঞানীরা হাতে কলমেই এর ব্যবহারিক প্রমান দেখিয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দুটি প্রমাণ হল “ল্যাম্ব শিফট ” এবং বিখ্যাত “কাসিমিরের প্রভাব”।
কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন এর প্রমান-১ঃ
ল্যাম্ব শিফটঃ
আমরা আগেই জেনেছি যে, পরমাণুর অধিকাংশ স্থানই ফাঁকা, উদাহরণস্বরূপ আমরা দেখেছি,হাইড্রোজেন পরমাণুর ৯৯.৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৬% স্থানই হল শূন্যস্থান।আচ্ছা যদি সেখানে এত শূন্যস্থান থাকে তাহলে তো সেখানে অবশ্যই কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন ঘটার কথা, আর যদি তা ঘটেই থাকে তাহলে কি এর ফলে নতুনভাবে সৃষ্ট কণা-প্রতিকণা গুলো নিউক্লিয়াসের চারদিকে গতিশীল ইলেকট্রনের গতিপথে খানিকটা হলেও বিঘ্নতা সৃষ্টি করবে না? এর ফলে কি ইলেকট্রনগুলো তাদের কক্ষপথ হতে খানিকটা হলেও বিচ্যুত হবে না? হবে এবং হয়ও।আমেরিকান বিজ্ঞানী উইলিয়ামস ল্যাম্বস এই বিষয়টিই প্রমাণ করে দেখান।আর এই বিচ্যুতিই প্রমান করে যে, শূন্যস্থনে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন ঘটে আর সেই সাথে সৃষ্টি হয় নতুন কনা-প্রতিকনা ।এ হলো একদম সরলীকৃত ভাষায় ল্যাম্ব শিফটের ধারনা।
ছবি ৫ ঃ লাম্ব শিফটের ফলে ইলেকট্রনের শক্তিস্তরে খানিকটা পার্থক্য সৃষ্টি হয়
কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন এর প্রমান-২ঃ
কাসিমিরের প্রভাবঃ
সবচেয়ে বড় যে প্রমাণ পাওয়া যায় সেটি হল বিখ্যাত “কাসিমিরের প্রভাব” থেকে।১৯৪৮ সালে ডাচ পদার্থবিদ হেনরিখ কাসিমির বলেন যে, যদি কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন সত্যি হয়ে থাকে তাহলে দুটো ধাতব পাত খুব কাছাকাছি আনা হলে তারা একে অপরকে ধীরে ধীরে আকর্ষণ করবে। কারণ তখন ধাতবদ্বয়ের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ স্থানটিতে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন ঘটার ফলে এক প্রকার উচ্চ কম্পাংকের তড়িৎ চুম্বকীয় “মোড” এর উৎপত্তি ঘটে। আর উদ্ভুত সেই “মোড” ই পাতদ্বয়কে পরস্পরের দিকে আকর্ষণে বাধ্য করে। এই অসাধারণ বিষয়টিই পরবর্তীতে মার্কস স্পারনে,স্টিভ লেমোরাক্স প্রমুখ বিজ্ঞানীরা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন। এবং এর মাধ্যমে ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন সবচেয়ে শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
অতএব আমরা বুঝলাম যে শূন্যস্থানে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন ঘটার ফলে স্রেফ শূন্য হতেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে কণা-প্রতিকণা সৃষ্টি হয়। গবেষকদের ধারণা,সৃষ্টির আদিতে মহাজাগতিক শূন্যতায় কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের ফলে যেসকল কণার সৃষ্টি হয়েছিল,সেগুলিই গঠন করেছে আমাদের আজকের এই মহাবিশ্ব।
পরিশেষে একটি “অমীমাংসিত” প্রশ্নঃ
আচ্ছা সুপ্রিয় পাঠক, একটা বিষয় কি লক্ষ্য করেছেন? শূন্য থেকে সমপরিমাণ কনা ও প্রতিকনা সৃষ্টি হয়ে যদি আবার তারা পরস্পরকে ধ্বংস করে দিয়ে শূন্য হয়ে যায় তাহলে তো কোনো কণা অবশিষ্ট থাকার কথা নয়! তাহলে এতকিছু এলো কোত্থেকে? কেন আমরা আজ চারপাশে এত কিছু দেখছি? এখানে তো থাকার কথা ছিল নিরব নিস্তব্ধ এক প্রগাঢ় শূন্যতা! কিন্তু সেই শূন্যতা না থেকে বরং কেন এত কিছু আছে?
গবেষকরা বলছেন,প্রকৃতি কখনোই শূন্যতাকে পছন্দ করে না। শূন্যতা হলো প্রকৃতির জন্য একটি অস্থির অবস্থা। শুধু প্রকৃতি কেন, এই মহাবিশ্বের কোনকিছুই শূন্যতাকে পছন্দ করো না। কোন বিজ্ঞানী,গবেষক,দার্শনিক,কবি-সাহিত্যিক,মুনি-ঋষি হতে বর্তমান আধুনিক কালের আইয়ুব বাচ্চু পর্যন্ত কারোই শূন্যতা কাম্য নয়। আইয়ুব বাচ্চুর কন্ঠেই তা স্পষ্ট-
“শূন্যতায় ডুবে গেছি আমি ,আমাকে তুমি ফিরিয়ে নাও”
শূন্যতা থেকে মুক্তি পাবার সে কি ব্যাকুল আকাঙ্ক্ষা! একটুখানি ভালবাসা পাবার সে কি আকুল প্রার্থনা! সৃষ্টির আদিতে প্রকৃতি বোধ হয় এমন করেই মহাজাগতিক শূন্যতা হতে মুক্তি প্রার্থনায় বিভোর ছিল।
মিঃ আইয়ুব বাচ্চু সেই ভালোবাসা পেয়েছেন কিনা জানি না। তবে প্রকৃতি কিন্তু ঠিকই পেয়েছিল। কারণ গবেষকরা বলছেন, প্রকৃতিকে কেউ শূন্য থাকতে দেয়নি, সৃষ্টির আদি মুহূর্তে অতি ক্ষুদ্র অনুপাতে কিছু (প্রায় 1 বিলিয়নে মাত্র 1 টি) কনা “মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে” স্লোগান দিয়ে টিকে থাকতে পেরেছিল এবং সেই বিপ্লবী কনা গুলোই প্রকৃতির সঙ্গী হয়ে আমাদের আজকের মহাবিশ্ব তৈরি করেছে।
কিন্তু সেটি কীভাবে সম্ভব হয়েছিল? কে তাদের শিখিয়ে দিয়েছিল এমন বিপ্লবী স্লোগান? কে-ই বা তাদের বুলিয়ে দিয়েছিল সেই এক্টুখানি ভালবাসার পরশ?
ছবি ৬ঃ মহাজাগতিক শূন্যতায় কণা-প্রতিকণার অসমতা।
এই প্রশ্নের উত্তর কনা পদার্থবিদদের কাছে এখনো প্রায় অজানা। তবে বিজ্ঞানীরা এখনো গবেষণা করে যাচ্ছেন এবং ইতোমধ্যে সমাধানের অনেক ইঙ্গিতও আসতে শুরু করেছে।তবে সেগুলোর কোনোটিই এখনও পর্যন্ত পরীক্ষালব্ধ ফলাফল দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত নয় এবং সর্বজন স্বীকৃতও নয়।
এখনও এই প্রশ্নটি তাই উইকিপিডিয়ায় পদার্থবিজ্ঞান এর অমীমাংসিত প্রশ্ন গুলোর তালিকায় অতি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।।
সূত্রঃ সরাসরি কোরা থেকে কপি পেস্ট
লেখকঃ মোহাম্মদ সাহিদুল ইসলাম