হোমপেজ/নতুন জায়গায় আমাদের সহজে ঘুম আসেনা কেন
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
প্রতিরাতে যে বিছানায় ঘুমান, শরীর তাতে এলিয়ে দিতেই ঘুম আসে। হয়তো বলবেন, ক্লান্তি থেকে এমন হয়। চেনা পরিবেশে ঘুম যেন আপনাতে এসে যায়। কিন্তু নতুন একটি জায়গায় গেলেন। হতে পারে কোথাও বেড়াতে গেলেন, হতে পারে হলে কিংবা হোস্টেলে প্রথম উঠেছেন, হতে পারে সেন্টমার্টিনে গেছেন প্রথম রাত্রি যাপন করতে এক হোটেলে। মাঝ রবিস্তারিত পড়ুন
প্রতিরাতে যে বিছানায় ঘুমান, শরীর তাতে এলিয়ে দিতেই ঘুম আসে। হয়তো বলবেন, ক্লান্তি থেকে এমন হয়। চেনা পরিবেশে ঘুম যেন আপনাতে এসে যায়।
কিন্তু নতুন একটি জায়গায় গেলেন। হতে পারে কোথাও বেড়াতে গেলেন, হতে পারে হলে কিংবা হোস্টেলে প্রথম উঠেছেন, হতে পারে সেন্টমার্টিনে গেছেন প্রথম রাত্রি যাপন করতে এক হোটেলে। মাঝ রাতে কোনো কারণ ছাড়াই ঘুম ভেঙে গেল, তারপর চেষ্টা করছেন ঘুমাতে। যেন আর ঘুম আসে না রাতে।
যেখানেই যান, নতুন পরিবেশে সহজে ঘুম আসে না। এটি হয়তো আমরা স্বাভাবিক ভাবি। প্রথম রাতটি যেন একটু ঘুম, একটু ঘুমের ব্যাঘাতে কাটে। ঘুমের চেয়ে এপাশ ওপাশ হয় বেশি। ঘুমের চেয়ে ঘুম ভেঙে যায় বেশি।
অথচ শরীর ক্লান্ত। পরিবেশ সুন্দর। নরম বিছানা। মনে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তারপরও কেন এমন হয়। কেন অচেনা, অজানা নতুন পরিবেশে আমাদের ঘুম আসে না সহজে!
নতুন পরিবেশে ঘুমের এ সমস্যাটি সম্পর্কে চিকিৎসকরা অনেক দিন থেকে জানে। চিকিৎসকদের কাছে এটির নাম : First-Night Effect। সংক্ষেপে বলে FNE। এক দশক আগেই এ সম্পর্কে চিকিৎসক বিজ্ঞানীরা ধারণা পায়।
যে কোনো নতুন পরিবেশে ঘুমের কমতি হওয়াকে বলে এই FNE। এটি মূলত প্রথম রাতেই বেশি হয়। তার পরের রাতগুলোতে হয় না অথবা হলে অনেক কম হয় ঘুমের সমস্যা।
First Night Effect (FNE)-এর কারণে ঘুমের আর্কিটেকচারের পরিবর্তন হয়। ঘুমের যে দুটি স্টেজ REM এবং Non-REM, তাদের REM স্টেজটির পরিবর্তন হয়। তাতে ঘুমের পরিমাণ কমে যায়, চোখ বন্ধ থাকলেও কোয়ালিটি ঘুম হয় না।
অনেকদিন থেকে ভাবা হতো যে নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সময় নেয় বলে হয়তো এমন হয়। অনেকেই ভাবত যে বিছানা বদল মানে ঘুমের ধকল! ঘুমের উপকরণের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট হতে সময় নিচ্ছে বলে এমন হয়।
এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করতে গিয়ে দেখতে পেল অন্য জিনিস। আমরা যখন ঘুমাই, মস্তিষ্কের সব অংশই ঘুমায়। মানুষের মস্তিষ্ক দুটি ভাগে বিভক্ত। এক একটি ভাগকে হেমিস্ফিয়ার বলে। সহজ করে বললে ডান মস্তিষ্ক এবং বাম মস্তিষ্ক। ঘুমাতে গেলে ডান এবং বাম, দু’মস্তিষ্কই একসঙ্গে সমন্বয় করে এবং ঘুমায়।
ঘুমের দুটি স্টেজ আছে সঙ্গে। একটিকে বলে REM বা Rapid Eye Movement-যেখানে চোখ ঘুরে। আরেকটি হলো Non REM-যেখানে চোখ ঘোরে না। ঘুমের শুরুতে Non REM ধাপ শুরু হয়। ধীরে ধীরে REM স্টেজে ঘুম গভীর হয় এবং এই স্টেজেই মানুষ স্বপ্ন দেখে।
বিজ্ঞানীরা নতুন জায়গায় ঘুমের এমন ব্যাঘাত হয় কেন, তার কারণ জানার এবং চেষ্টার অনেক আগ থেকেই একটি মজার বিষয় জানত যে-প্রাণীদের অনেকেই রাত্রে ঘুমাতে এক চোখ খোলা রাখে এবং আরেক চোখ বন্ধ করে রাখে। যেমন : ডলফিন, সিল, কিছু মাছ, বিভিন্ন ধরনের মাইগ্রেটরি পাখিদের মাঝে দেখা যায় তাদের অনেকে ঘুমানোর সময় এক চোখে ঘুমায়, আরেক চোখে উড়ে। পরীক্ষা করে দেখল ওই সময়ে প্রাণীগুলোর মস্তিষ্কের এক অংশ জেগে থাকে এবং আরেক অংশ ঘুমিয়ে থাকে। এমনকি পুকুরের হাঁসদের দেখবেন রাতেরবেলা পানিতে সাঁতার কাটছে, আবার অন্ধকারে এক চোখে ঘুমাচ্ছে।
মানুষ কোনো নতুন পরিবেশে গেলে মস্তিষ্কে কিছু স্টিমুলেশনের পরিবর্তন হয়। পরিবেশের এ উদ্দীপনা শুধু পরিবেশ থেকে হয় না। ভালো-মন্দ পরিবেশ যেমনই থাকুক, মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু প্রতিক্রিয়া করে। এ প্রতিক্রিয়াতে আপনার আমার কোনো হাত নেই। না চাইলেও মস্তিষ্ক এমন আচরণ এবং প্রতিক্রিয়া করবে। কারণ হল-হাজার বছরের বিবর্তনে মানুষের মস্তিষ্ক ঠিক এমন করে গড়ে উঠেছে।
কিন্তু কী পরিবর্তন হয়, কেন পরিবর্তন হয়, কীভাবে হয় এবং পরিবর্তনের ফলাফল জানলেও প্রথম তিনটির উত্তর বিজ্ঞানীদের কাছে এতদিন ছিল না। বর্তমানে চিকিৎসক কিংবা ঘুম বিজ্ঞানীরা জানে নতুন পরিবেশে কেন আমাদের FNE হয়, কেন এবং কীভাবে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
একটি ঘুম গবেষণা টিম এ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখতে পেল-নতুন পরিবেশে মানুষের মস্তিষ্কের অর্ধেক ঘুমায়, বাকি অর্ধেক জেগে থাকে। ফলে দীর্ঘ জার্নির পরেও হোটেলে প্রথম রাত যেন নির্ঘুম কাটে। পরদিন সকালবেলা দু’কাপ কফিতেও যেন ঘুমের ক্লান্তি দূর হয় না।
প্রথম রাতে নতুন পরিবেশে মস্তিষ্ক সতর্ক হয়ে ওঠে। মস্তিষ্ক নতুন পরিবেশে অজানা আশঙ্কায় থাকে। বিবর্তনে মানুষের মস্তিষ্ক নতুন পরিবেশে নতুন দৃশ্য, নতুন তাপমাত্রা, নতুন গন্ধ, সব সেন্সরিগুলোর মাধ্যমে সংগৃহীত স্বয়ংক্রিয় উপাত্ত আড়ালে মস্তিষ্ককে সতর্ক করে দেয়। ঘুমের ল্যাবে পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, প্রথম রাতে বাম মস্তিষ্ক সতর্ক থাকে এবং ডান মস্তিষ্ক ঘুমায়। কারণ বাম মস্তিষ্কের কাজ বিপদের গন্ধ পাওয়া, আত্মরক্ষার কৌশল নির্ধারণ করা, প্ল্যান করা, সতর্কের সঙ্গে শরীরকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে।
একদল ছাত্রের ওপর গবেষণায় ঘুম বিজ্ঞানীরা দেখল যে, প্রথম রাতে নতুন পরিবেশে তাদের বাম মস্তিষ্কে স্লো ওয়েব তরঙ্গ কম প্রবাহিত হয় এবং ডান মস্তিষ্কে এই প্রবাহ বেশি থাকে। আমরা যখন ঘুমাই, আমাদের গভীর ঘুমের সময় মস্তিষ্কের দুই অংশেই এই স্লো ওয়েব তরঙ্গ বেড়ে যায়। গবেষক দল আরও দেখতে পেল, প্রথম রাত্রিতে বাম মস্তিষ্কের অনেক অংশ যেমন একটিভ থাকে এবং স্লো ওয়েব কম হয়, পরদিন থেকে সেটি চলে যায় এবং দু-মস্তিষ্কের একই অবস্থা থাকে। ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে দু-রাতের ঘুমের পার্থক্য জেনে এবং মস্তিষ্ক স্ক্যানিং করে প্রাপ্ত ফলাফল তুলনা করে বিজ্ঞানীরা বুঝল যে, নতুন পরিবেশে বাম মস্তিষ্ক অজানা অচেনা পরিবেশের অনাকাক্সিক্ষত বিপদের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করতে, সেই সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় এবং বিবর্তনমূলক সুবিধা পেতে এমন করে জেগে থাকে, কিন্তু ডান মস্তিষ্ক স্বাভাবিক নিয়মে ঘুমাতে চেষ্টা করে কিংবা ঘুমায়।
দুই মস্তিষ্ক প্রথম রাতে নতুন পরিবেশে সমানভাবে ঘুমাতে পারে না অথবা ঘুমায় না। এতে বিবর্তনের দৃষ্টিতে সুবিধা পেলেও শরীরের স্বাভাবিক প্রয়োজন এবং ক্লান্তি থেকে বের হতে পারে না। ফলে প্রথম রাত্রির পরদিন সকাল শারীরিক ক্লান্তি অবসাদ এবং নির্ঘুমতার ছাপ থাকলেও একদিন বা দুদিন পর মস্তিষ্কের আর এমন করার দরকার পড়ে না। তখন পুরো মস্তিষ্কই স্বাভাবিক নিয়মে ঘুম যায় এবং ঘুমের কোয়ালিটিও তখন ভালো হয়।
তাহলে এখন থেকে নতুন কোথাও প্রথম রাতে ঘুম না এলে উদ্বিগ্নতার কারণ নেই। ধরে নিতে হবে এটি মস্তিষ্কের একটি বিবর্তনমূলক ধারা এবং গঠন, যা মূলত শরীরের আত্মরক্ষার্থের প্রয়োজনে একটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
সংক্ষেপে দেখুনসূত্রঃ যুগান্তর