অতি সংক্ষেপে মহাবিশ্বের শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত কিছু ইতিহাস কে জানে?
শেয়ার করুন
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
আমাদের এই মহাবিশ্ব বড়ই অদ্ভুত। এর পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে বিস্ময়। বিশাল এই মহাবিশ্বের খুব অল্পই আমরা জানতে পেরেছি। অজানাকে জানার উদ্দেশ্যে এখন মানুষের গন্তব্য হয়ে উঠেছে বিভিন্ন নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ। নানা যান পাঠানো হচ্ছে সেসব ঠিকানায়। নতুন নতুন তথ্য আসছে সেসব অভিযানের কল্যাণে। কিন্তু এই মহাবিশ্ব এতটাই বিশাল যে এর কোনো কূলকিনারা নেই, জানারও শেষ নেই। আমাদের মাথার উপর যে আকাশ আছে তাতেই রয়েছে বিস্ময়ে ভরা কোটি কোটি উপাদান। এসব একেকটি উপাদান যেমন বিস্ময়ে ভরা, তেমনি অদ্ভুত তার গঠন, ক্রিয়া এবং প্রভাব। মহাকাশের এমন বিস্ময়কর উপাদানের কয়েকটি সম্পর্কে জানানো হবে এ লেখায়।
রহস্যময় রেডিও সিগন্যাল
হাবল স্পেস টেলিস্কোপে তোলা প্রক্সিমা সেন্টেরাইয়ের ছবি; Image credit: ESA/Hubble & NASA
২০০৭ সালে মহাকাশ গবেষকরা রহস্যময় কিছু রেডিও সিগন্যালের সন্ধান পান। রহস্যময়তার কারণ হলো সেই সিগন্যালগুলো পৃথিবীর কোনো রেডিও সিগন্যাল ছিল না। বহির্জাগতিক কোনো তারকা থেকে আসছিল। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়েই গবেষকরা রহস্যময় রেডিও সিগন্যালের সন্ধান পেয়ে আসছেন। এখন পর্যন্ত ৬০টির মতো রেডিও সিগন্যাল জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নজরে এসেছে। আল্ট্রাস্ট্রং, আল্ট্রাব্রাইট এই সিগন্যালগুলো মাত্র কয়েক মিলিসেকেন্ড স্থায়ী হয়, যার নাম দেওয়া হয়েছে ফাস্ট রেডিও বার্স্টস (এফআরবি)।
প্রথম যখন পৃথিবীর মানুষ এই সিগন্যাল সম্পর্কে জানতে পারে তখন ধারণা করেছিলে এগুলো হয়তো এলিয়েনদের পাঠানো সংকেত। যদিও সেই রহস্যের এখনও সমাধান হয়নি। তবে বিজ্ঞানীরা এখন জানতে পেরেছেন, সংকেতগুলো আসছে ৪.২ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত প্রক্সিমা সেন্টেরাই থেকে। সায়েন্টিফিক আমেরিকানের তথ্যমতে, বিজ্ঞানীরা উপগ্রহ এবং মহাকাশযানের মতো মানবসৃষ্ট ডিভাইস থেকে যেসব সংকেত পর্যবেক্ষণ করতে পারেন তার চেয়ে এই সংকেতটি খুবই সংকীর্ণ ফ্রিকোয়েন্সির। তবে রহস্যময় এ সিগন্যালের উৎস নিয়ে বেশ মতপার্থক্য আছে।
কোনো কোনো বিজ্ঞানী বলছেন, শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র নিয়ে কোনো নিউট্রন তারকার খুব দ্রুত ঘূর্ণনের ফলে এই সিগন্যাল তৈরি হচ্ছে। কারো মতে, দুটি নিউট্রন তারকার একত্রে মিশে যাওয়ার ফলেই এমন সিগন্যাল পৃথিবীতে আসছে। তবে অনেকেই আবার এসব সিগন্যালকে ভিনগ্রহের প্রাণীর মহাকাশযান থেকে আসা তরঙ্গ বলে উল্লেখ করেছেন। ২০১৯ সাল থেকে বহির্জাগতিক সিগন্যালের রহস্য সমাধান করতে আমেরিকাসহ পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশ গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এমন রেডিও সিগন্যাল ধারণ করতে পেরেছেন যেটি অল্প সময়ে পর পর ছ’বার সংকেত পাঠিয়েছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে শীঘ্রই এ রহস্যের সমাধান করা সম্ভব হতে পারে।
মহাকাশের বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল
সাউথ আটলান্টিক অ্যানোমালি; Image credit: Division of Geomagnetism, DTU Space
ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের নভোচারীরা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় এসেই হঠাৎ আলোর তীব্র ঝলক দেখতে পান। বেশ কয়েকজন নভোচারী এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। তবে এই ঘটনাটি ঘটে দক্ষিণ আটলান্টিক অ্যানোমালি (এসএএ) দিয়ে যাওয়ার সময়। এটি পৃথিবীর বিশেষ একটি ম্যাগনেটিক ফিল্ড। চিলি থেকে জিম্বাবুয়ের আকাশের ১,০০০-৬০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। আমাদের পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ড পৃথিবীর ঘূর্ণন অক্ষের সাথে সব জায়গায় সমানভাবে অবস্থান করছে না। ফলে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনটি যখন পৃথিবীর বিশেষ এই জায়গার উপর দিয়ে যায় তখন স্টেশনের ইলেক্ট্রনিক সিস্টেমে প্রভাব পড়ে এবং কম্পিউটারও কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সেই সাথে নভোচারীরা বিশেষ আলোর ঝলক দেখতে পান। এজন্য এই জায়গাকে বলা হয় ‘মহাকাশের বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল’।
নিউক্লিয়ার পাস্তা
নিউক্লিয়ার পাস্তা; Image credit: NASA/JPL-Caltech
আমরা জানি, পৃথিবীতে পাওয়া সবচেয়ে শক্ত পদার্থ হচ্ছে হীরা। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে শক্ত পদার্থ কোনটি? সেটি হচ্ছে নিউক্লিয়ার পাস্তা। মহাকাশের কোনো মৃতপ্রায়/নিউট্রন তারকার অবশেষ থেকে নিউক্লিয়ার পাস্তা গঠিত হয়। নিউট্রন তারকা হচ্ছে সূর্যের চেয়েও ভারী কিন্তু ব্ল্যাকহোলের মতো বড় নয় এমন বৃহৎ তারার ধ্বংসের মাধ্যমে সৃষ্ট অবশিষ্টাংশ। ধ্বংসের আগে নিউট্রন তারকার ভর হয়ে থাকে ১০ থেকে ২৯ সৌর ভরের সমান। আর এমন বৃহৎ নিউট্রন তারকার অবশিষ্টাংশই হচ্ছে নিউক্লিয়ার পাস্তা। উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন, নিউট্রন তারকা থেকে সৃষ্ট নিউক্লিয়ার পাস্তা ঠিক কতটা শক্তিশালী। নির্দিষ্ট পরিমাণ স্টিলকে চুর্ণবিচূর্ণ করতে আপনাকে যতটুকু শক্তি প্রয়োগ করতে হয় সমপরিমাণ নিউক্লিয়ার পাস্তাকে চূর্ণবিচূর্ণ করতে তার চেয়ে ১০ বিলিয়ন গুণ বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে হবে! নিউক্লিয়ার পাস্তা এতটা শক্তিশালী হওয়ার কারণ এর ভেতরে অবস্থিত পদার্থের ঘনত্ব। এখন পর্যন্ত মানুষের জানা সবচেয়ে শক্ত পদার্থ এটিই।
আয়তাকার লাল নীহারিকা
আয়তাকার লাল নীহারিকা; Image Credit: NASA
ছায়াপথের মধ্যে বিভিন্ন গ্যাস এমনভাবে অবস্থান করে যেন সেগুলো কোনো বিশেষ আকার ধারণ করে আছে। তবে এসব নীহারিকার মধ্যে অদ্ভুত আকার ধারণা করে আছে একটি নীহারিকা যা দেখতে আয়তাকার। এরকম জ্যামিতাকৃতির নীহারিকা খুব কমই দেখা যায়। এই আয়তাকার লাল নীহারিকাটি পৃথিবী থেকে ২,৩০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এ ধরনের আকার তৈরি হওয়ার পেছনে বিজ্ঞানীরা যে কারণ দাঁড় করিয়েছেন সেটি হচ্ছে এই নীহারিকার ঠিক মাঝখানে দুটি তারকা রয়েছে। এই দুই তারকা থেকে উজ্জ্বল আলো নির্গত হওয়ার কারণে এই নীহারিকার রঙ লাল দেখায় এবং আকৃতি দেখায় আয়তাকার। তবে কিছু গবেষক মনে করেন তারকা দুটি থেকে অতিবেগুনি রশ্মি নির্গত হয় যেগুলো নীহারিকার কার্বনসমৃদ্ধ ধূলিকণার সাথে মিশে লাল রঙের সৃষ্টি করে।
রহস্যময় নিউট্রিনো
নিউট্রিনোর কল্পিত রুপ; Image Credit: DESY, Science Communication Lab
নিউট্রিনো হচ্ছে বৈদ্যুতিক চার্জবিহীন, কম সক্রিয় পারমাণবিক কণা। এসব কণা ইলেক্ট্রন এবং প্রোটনের সাথে দুর্বলভাবে যোগাযোগ করে। এই কণার বিশেষত্ব হচ্ছে এগুলো যেকোনো পদার্থের মধ্য দিয়ে অবিকৃতভাবে চলাচল করতে পারে। যে বস্তুর ভেতর দিয়ে এগুলো চলাচল করে সেই বস্তু টেরও পায় না। এই যেমন- মানুষের শরীর দিয়ে লাখ লাখ নিউট্রিনো চলে যাচ্ছে, কিন্তু মানুষ টের পাচ্ছে না। তবে কোথা থেকে আসে এই কণাগুলো সেই রহস্য এখনও সমাধান করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তবে এসব কণা যে মহাজাগতিক কণা সে বিষয়ে সকল বিজ্ঞানীই একমত। তাদের ধারণা, মহাজাগতিক ঘটনা, যেমন- ছায়াপথের সংঘর্ষ কিংবা ব্ল্যাক হোলের মধ্যে নক্ষত্রের পতনের ফলে এসব নিউট্রিনো জন্ম নিতে পারে।
২০১০ সাল থেকে নিউট্রিনো শনাক্তে কাজ করা আইসকিউব নিউট্রিনো অবজারভেটরি প্রায়শই এ ধরনের কণার সন্ধান পাচ্ছেন। কিন্তু ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তারা এমন এক নিউট্রিনোর সন্ধান পান যেটি নিউট্রিনোর উৎস সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। এ কণার ব্যাপারে গবেষণা করে তারা জানান, এটি ৪ বিলিয়ন বছর আগে ছায়াপথের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল থেকে পৃথিবীর দিকে প্রবাহিত হয়েছিল। ২০১৫ সালে নিউট্রিনো নিয়ে গবেষণা করে পদার্থে নোবেল পুরস্কার পান জাপানের তাকাআকি কাজিতা এবং কানাডার আর্থার বি. ম্যাকডোনাল্ড।
অদ্ভুত নক্ষত্র
উজ্জ্বলতা কমে আসা নক্ষত্র; Image credit: NASA/JPL-Caltech
এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুত নক্ষত্রটির নাম KIC 846285। লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানী তাবেথা বয়াজিন এবং তার দল যখন প্রথম এই নক্ষত্রের সন্ধান পান তখন সবাই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। কারণ এটি এমন একটি নক্ষত্র যার উজ্জ্বলতা ক্ষণে ক্ষণেই কমে যায় যা একে অন্যান্য নক্ষত্র থেকে আলাদা করেছে। সূর্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল এবং ১,৪০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই নক্ষত্রকে ট্যাবিস স্টার নামেও ডাকা হয়। এর উজ্জ্বলতা মাঝে মাঝেই ২০ শতাংশের মতো কমে যায়। এ থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এর চারপাশে কিছু উপাদান রয়েছে যা এর আলোকে বাইরে আসতে বাঁধা দেয়। এই নক্ষত্রকে নিয়ে নানা মতবাদ প্রচলিত আছে। কোনো কোনো জ্যোতির্বিজ্ঞানী একে বলছেন এলিয়েনদের তৈরি মেগাস্ট্রাকচার। তাদের মতে এর বাইরের দিকে সোলার প্যানেলের কক্ষপথ তৈরি করা আছে যার কারণে এর উজ্জ্বলতা মাঝে মাঝে কমে যায়। তবে আধুনিক গবেষকরা জানাচ্ছেন, বাইরের দিকে ধূলি-বলয় থাকার ফলেই এটি অন্যান্য নক্ষত্র থেকে আলাদা।
মহাকাশ থেকে আসা ইনফ্রারেড প্রবাহ
ইনফ্রারেড প্রবাহের কল্পিত চিত্র; Image Credit: NASA, ESA, and N. Tr’Ehnl (Pennsylvania State University)
কোনো তারকা যখন মরে যায় তখন তাকে বলা হয় নিউট্রন তারকা। এ ধরনের নিউট্রন তারকা এক্স-রে’র মতো উচ্চশক্তির রেডিয়েশন বা রেডিও তরঙ্গ নির্গত করে। কিন্তু ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ৮০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত একটি নিউট্রন তারকা থেকে ইনফ্রারেড লাইটের লম্বা প্রবাহ লক্ষ্য করেন। এ ধরনের ঘটনা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর আগে কখনোই দেখেননি। তাদের মতে, তারকাটি ঘিরে থাকা ধুলির ডিস্ক এ ধরনের ইনফ্রারেড সিগন্যাল তৈরি করছে। তবে এর সঠিক ব্যাখ্যা এখনও অজানা।
গ্রহ সাদৃশ বস্তুতে অরোরা
গ্রহসদৃশ বস্তুতে অরোরা; Image credit: Chuck Carter; NRAO/AUI/NSF/Caltech
আমাদের এই মহাবিশ্বে এমন কিছু গ্রহসদৃশ বস্তু রয়েছে যেগুলো মহাকর্ষীয় শক্তির দ্বারা তাদের মাতৃ-নক্ষত্র থেকে দূরে সরে গেছে। এগুলো অন্যান্য তারকার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। সম্প্রতি এ ধরনের বেশ কিছু বস্তুর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ২০১৬ সন্ধান পাওয়া এ ধরনের একটি হচ্ছে SIMP J01365663+0933473। এটি আমাদের জানা গ্রহগুলোর আকারের মতোই। আমাদের পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ২০০ আলোকবর্ষ। তবে এর চৌম্বকক্ষেত্র বৃহস্পতি গ্রহের চৌম্বকক্ষেত্র থেকে ২০০ গুণ বেশি। এটি এতটাই শক্তিশালী যে এটি অরোরা সৃষ্টি করতে পারে। পৃথিবী থেকে এর অরোরা দেখা যায় রেডিও টেলিস্কোপের মাধ্যমে।
হাউমিয়ার বলয়
বামন গ্রহ হাউমিয়াকে ঘিরে থাকা বলয়; Image credit: IAA-CSIC/UHU
যেসব গ্রহের ভর সাধারণ গ্রহের সমান কিন্তু গ্রহও নয়, উপগ্রহও নয়, সূর্যকে সরাসরি প্রদক্ষিণ করে কিন্তু কক্ষপথকে অন্যান্য বস্তু থেকে আলাদা করতে পারেনি, তাদেরকে বামন গ্রহ বলা হয়। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল ইউনিয়ন প্লুটোকে বামন গ্রহের তালিকাভুক্ত করার পর থেকে বর্তমানে মোট বামন গ্রহের সংখ্যা পাঁচ। তেমনই একটি বামন গ্রহ হচ্ছে হাউমিয়া যেটি কুইপার বেল্টে নেপচুনের বাইরে ঘুরে বেড়ায়। এটি দেখতে ডিমের মতো। এর দুটি চাঁদ রয়েছে এবং দিনের দৈর্ঘ্য মাত্র ৪ ঘন্টা। ফলে সোলার সিস্টেমের সবচেয়ে দ্রতগতির বস্তু এটি। তবে এর চেয়ে বিস্ময়কর তথ্য সামনে আসে যখন বিজ্ঞানীরা এটিকে একটি নক্ষত্রের সামনে দিয়ে প্রদক্ষিণ করতে দেখেন। সেসময় তারা দেখতে পান ডিম্বাকৃতির এই বামন গ্রহটিকে কেন্দ্র করে একটি বৃত্তাকার বলয় রয়েছে।
ডার্ক-ম্যাটারবিহীন ছায়াপথ
Image credit: NASA, ESA, and P. van Dokkum (Yale University
আমাদের এই মহাবিশ্বের খুব অল্প কিছুই আমরা দেখতে পারি। বাকি সব পদার্থই অদৃশ্য। কিন্তু এই অদৃশ্য পদার্থগুলো কেবল মহাকর্ষ বলের মাধ্যমে অন্যসব পদার্থের সাথে ক্রিয়া করে। ফলে মহাকর্ষ বল ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে তাদের শনাক্ত করা যায় না। ধারণা করা হয়, মহাবিশ্বের মোট যে ভর তার পাঁচ ভাগের চার ভাগই হচ্ছে এই ডার্ক-ম্যাটার। অর্থাৎ মহাবিশ্বের প্রায় ৮৫ শতাংশ পদার্থই ডার্ক ম্যাটার। এসব পদার্থ তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ নিঃসরণ বা শোষণ কোনাটাই করে না। ফলে দূরবীক্ষণ দিয়ে এদের সরাসরি দেখা যায় না। কিন্তু এমন কোনো ছায়াপথ কি আছে যেখানে ডার্ক ম্যাটার নেই? এমন ছায়াপথের সন্ধান করতে করতে ২০১৮ সালে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের একটি দল এমন একটি অদ্ভুত ছায়াপথের সন্ধান পান যেখানে ডার্ক ম্যাটার নেই বললেই চলে। যদিও তাদের সে আবিষ্কার নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে।
বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত হাইপেরিয়ন
শনি গ্রহ; Image credit: NASA/JPL-Caltech/Space Science Institute
মহাকাশের অদ্ভুত উপগ্রহ হয়তো অনেকগুলোই আছে। কিন্ত এসবের মধ্যে অদ্ভুতুড়ে উপগ্রহটি হলো শনি গ্রহের হাইপেরিয়ন। এটি দেখতে অনেকটা আলুর মতো। এর অদ্ভুত আকৃতির জন্য একে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। এই উপগ্রহে পাথরের তুলনায় কঠিন বরফের পরিমাণ বেশি বলে ধারণা করা হয়। এটি শনি গ্রহকে কেন্দ্র করে টাইটান উপগ্রহেরও বেশি ব্যাসার্ধ নিয়ে প্রদক্ষিণ করছে। এর অরবিটাল বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত। তবে অবাক করা বিষয় হলো- এই উপগ্রহটি নিজেই বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত। ২০০৪ থেকে ২০০৭ সালে নাসার নভোযান ক্যাসিনি যখন শনি গ্রহে অনুসন্ধান চালাচ্ছিল, তখন এতে ধরা পড়ে যে শনির উপগ্রহ হাইপেরিয়ন বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত ।
আমেরিকান জ্যোতির্বিদ এম. এল. হিউমাসন লাল সরণ পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেকগুলো নাক্ষত্রিক বস্তু পর্যবেক্ষণ করেন। এই পর্যবেক্ষণের সাহায্যে বিজ্ঞানী এডউইন হাবল দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করেন যে, আকাশপটে দৃশ্যমান অধিকাংশ ক্ষীণ বস্তুই আসলে আলাদা আলাদা গ্যালাক্সি। দেখতে স্বল্প উজ্জ্বলতার হলেও বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্রের সমন্বয়ে একেকটি গ্যালাক্সি গঠিত। খুব বেশি দূরে অবস্থান করছে বলে তাদেরকে ক্ষীণ বলে প্রতিভাত হয়।
তখন পর্যন্ত এটি পরিষ্কার যে, সমস্ত মহাবিশ্বই গ্যালাক্সি দিয়ে পরিপূর্ণ। সবচেয়ে শক্তিশালী অপটিক্যাল টেলিস্কোপ বা সবচেয়ে শক্তিশালী রেডিও টেলিস্কোপের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে সবচেয়ে দূরে পর্যবেক্ষণ করলেও দেখা যাবে সে অংশটি গ্যালাক্সি দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। বিস্তৃত শূন্যস্থানের মাধ্যমে এসব গ্যালাক্সি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। মহাবিশ্ব নিয়ে আলোচনার গভীরে যাবার আগে পরিষ্কার হওয়া উচিত ‘মহাবিশ্ব’ বলতে কী বোঝায়।
শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানেও আমরা গ্যালাক্সির অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছি। এমনটা মনে করা অযৌক্তিক হবে না যে পর্যবেক্ষণকৃত সবচেয়ে দূরের গ্যালাক্সির বাইরেও আরো অনেক গ্যালাক্সি বিদ্যমান আছে। ধারণা করা হয়, আমাদের চোখে দৃশ্যমান সবচেয়ে দূরের গ্যালাক্সিতে যদি বুদ্ধিমান প্রাণের অস্তিত্ব থাকে এবং তারাও যদি টেলিস্কোপ দিয়ে মহাবিশ্বকে পর্যবেক্ষণ করে তাহলে আমাদের মতোই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবে। যেদিকেই তাকাক না কেন, যত দূরেই তাকাক না কেন, সবদিকে সবখানেই গ্যালাক্সির অস্তিত্ব খুঁজে পাবে। এভাবে হিসাবকৃত সকল গ্যালাক্সির সমষ্টিকে বলা যেতে পারে ‘মহাবিশ্ব’।
চিত্র: প্রত্যেকটি বিন্দুই এক একটি স্বতন্ত্র গ্যালাক্সি; Source: NASA
উপরের বক্তব্যকে মহাবিশ্বের সংজ্ঞা বলে ধরে নিলে এখান থেকে একটি প্রশ্নের জন্ম হয়। এমন কোনো গ্যালাক্সির অস্তিত্ব থাকতে পারে কি যারা এই সমষ্টির বাইরে অবস্থিত? এই প্রশ্ন আবার মহাবিশ্বের আরেকটি বিকল্প সংজ্ঞার সাথে সাথে সম্পর্কিত- জগতে অস্তিত্বমান সকল বস্তুকে একত্রে মহাবিশ্ব বলে। সংজ্ঞা দুটির মাঝে মিল থাকলেও তারা উভয়ে এক নয়। আমরা এখানে প্রথম সংজ্ঞাটিকেই ব্যবহার করবো, কারণ দ্বিতীয় সংজ্ঞাটি কিছুটা জটিলতার জন্ম দেয়।
কিছু কিছু গ্যালাক্সি একত্রে একটি গ্রুপ তৈরি করে। এধরনের গ্রুপকে বলে ক্লাস্টার। একেকটি ক্লাস্টারে কয়েকটি থেকে কয়েক হাজার পর্যন্ত গ্যালাক্সি থাকতে পারে। কিছু তথ্য-উপাত্ত বলছে ক্লাস্টারগুলোও একটি আরেকটির সাথে মিলে গ্রুপ তৈরি করে। এধরনের গ্রুপকে বলা হয় সুপারক্লাস্টার। কয়েকটি সুপার ক্লাস্টার মিলে আবার আরো বড় গ্রুপ তৈরি করে কিনা? সুপার ক্লাস্টারের গ্রুপ কিংবা তার চেয়েও বড় কোনো গ্রুপের সন্ধান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
গ্যালাক্সির অনেকগুলো ক্লাস্টার মিলে তৈরি করে সুপারক্লাস্টার, ছবিতে লানিয়াকিয়া সুপারক্লাস্টারে লাল চিহ্নিত অংশে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অবস্থান; Image: Nature
পর্যবেক্ষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, গড়পড়তাভাবে মহাবিশ্বের সকল স্থানে গ্যালাক্সিগুলো সমানভাবে বণ্টিত। আমরা যদি মহাবিশ্বের দুটি অংশকে বিবেচনা করি এবং গড়পড়তাভাবে তুলনা করি তাহলে তাদেরকে একইরকম বলে মনে হবে। দুই ভিন্ন অংশে গ্যালাক্সির পরিমাণ এবং গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে গড় দূরত্ব প্রায় একই থাকবে।
হিসাব অনুসারে এক গ্যালাক্সি থেকে আরেক গ্যালাক্সির গড় দূরত্ব প্রায় এক মিলিয়ন আলোক বর্ষ। এখন আমরা যদি এই মহাবিশ্বের মাঝে একশো মিলিয়ন আলোক বর্ষ দৈর্ঘ্য, একশো মিলিয়ন আলোক বর্ষ প্রস্থ এবং একশো মিলিয়ন আলোক বর্ষ উচ্চতার দুটি ঘনক কল্পনা করি এবং তাদেরকে তুলনা করি তাহলে দেখা যাবে তারা প্রায় একইরকম। দেখা যাবে উভয়ের মাঝে মোট গ্যালাক্সির পরিমাণ প্রায় একই এবং গ্যালাক্সিগুলোর মাঝে গড় দূরত্বও প্রায় একই।
Source: Paolo Bottarelli
ঘনক দুটি মহাবিশ্বের যে স্থানেই অবস্থান করুক না কেন তাদের মাঝে গ্যালাক্সির বণ্টন গড়পড়তা একই হবে। এটি শুধু বর্তমান কালের জন্যই নয়, অতীত বা ভবিষ্যতের যেকোনো সময়ের বেলাতেও তারা এরকম সদৃশ হবে। এখানে ‘যেকোনো সময়’-এর নামে মহাবিশ্বের গঠনবিন্যাস সম্পর্কে যে শর্তটি উল্লেখ করা হয়েছে সেটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মহাবিশ্ব পরিবর্তনশীল এবং মহাবিশ্বের যেকোনো স্থানে গ্যালাক্সির সংখ্যাও সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়।
পাশাপাশি দূরের গ্যালাক্সির বর্তমান অবস্থা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। দূরের গ্যালাক্সি থেকে অবমুক্ত হওয়া আলো অনেক অনেক পথ অতিক্রম করে আমাদের চোখে এসে ধরা দেয়। এই দূরত্ব অতিক্রম করতে আলোর মিলিয়ন মিলিয়ন বছর লেগে যায়। বর্তমানে গ্যালাক্সিকে যেরকম দেখছি তা আসলে গ্যালাক্সির মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগের রূপ। সেসব গ্যালাক্সির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্যই নেই আমাদের কাছে।
আমাদের সাপেক্ষে গ্যালাক্সির বিন্যাস আইসোট্রপিক। এর মানে যেভাবেই পর্যবেক্ষণ করি না কেন, সবদিক থেকে গ্যালাক্সির বিন্যাস একইরকম বলে মনে হবে। আর যদি মেনে নেই মহাবিশ্বে আমাদের অবস্থান বিশেষ কোনো স্থানে নয়, ‘শ্রেষ্ঠ’ তকমার কোনোকিছু দখলও করে রাখছি না, আমাদের গ্যালাক্সিও অন্যান্য সকল গ্যালাক্সির মতোই সাধারণ, তাহলে আরো চমকপ্রদ কিছুর প্রত্যক্ষ করবো। তাহলে দেখতে পাবো গ্যালাক্সিসমূহের বিন্যাস মহাবিশ্বের যেকোনো স্থানের সাপেক্ষেই আইসোট্রপিক। শুধু আমাদের সাপেক্ষেই নয়, মহাবিশ্বের যেকোনো কিছুর সাপেক্ষেই গ্যালাক্সিগুলো সমরূপে বিন্যস্ত। শুধু বর্তমানের কালের জন্যই নয়, অতীত ও ভবিষ্যতের যেকোনো সময়ের জন্যই এটি প্রযোজ্য।
তার উপর গ্যালাক্সির বিন্যাস ও বিস্তৃতি যদি মহাবিশ্বের যেকোনো স্থান থেকেই আইসোট্রপিক হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবে দেখানো যায় যে, গ্যালাক্সিগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
গ্যালাক্সিগুলো আইসোট্রপিক; Source: phy.olemiss.edu
১৯৩০ সালের দিকে হাবল আবিষ্কার করেন দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলো আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। শুধু এতটুকুই নয়, তিনি তাদের মধ্যে সুস্থিত কিছু নিয়মবদ্ধতাও খুঁজে পান। তিনি দেখতে পান, কোনো গ্যালাক্সি আমাদের কাছ থেকে যত দূরে অবস্থিত তার অপসরণের বেগ তত বেশি। দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলোর অপসরণের এই বেগ একটি নিয়ম মেনে চলে। একে বলা হয় হাবলের নীতি বা Hubbles’ Law।
এই নীতি বলছে যে, গ্যালাক্সির দূরত্ব কত সেটি জানলেই তার অপসরণ বেগ বের করা যাবে। দূরত্বকে বিশেষ একটি ধ্রুবক দিয়ে গুণ করলেই তার বেগ পাওয়া যাবে। বিশেষ এই ধ্রুবককে বলা হয় হাবল ধ্রুবক। এই ধ্রুবক সকল গ্যালাক্সির জন্য এবং সকল সময়ের জন্য একই থাকে।
গ্যালাক্সির অপসরণের এই ব্যাপারটিকে অন্যাভাবেও বলা যায়। গ্যালাক্সির অপসরণ বেগ তার দূরত্বের সমানুপাতিক। উদাহরণ হিসেবে দুটি গ্যালাক্সির কথা বিবেচনা করতে পারি। একটি গ্যালাক্সি আমাদের কাছ থেকে কোনো এক বেগে দূরে সরে যাচ্ছে। অপর গ্যালাক্সির অবস্থান প্রথম গ্যালাক্সির দ্বিগুণ দূরে। দ্বিগুণ দূরত্বে অবস্থানের কারণে তার অপসরণ বেগও হবে প্রথম গ্যালাক্সির দ্বিগুণ।
হাবলের এই নীতিটি সকল প্রেক্ষাপটে সঠিক নয়, এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেসকল গ্যালাক্সি আমাদের নিকটে অবস্থান করছে তাদের বেলায় এই নীতি কাজ করে না। সকল গ্যালাক্সিতেই অপসরণ বেগের পাশাপাশি আরো কিছু বেগ কাজ করে। যেমন এক গ্যালাক্সির প্রতি আরেক গ্যালাক্সির আকর্ষণ বেগ। আমাদের নিকটবর্তী গ্যালাক্সিগুলোতেও এরকম কিছু বেগ ক্রিয়াশীল আছে। হয়তো এই ক্রিয়াশীল বেগ এবং অপসরণ বেগ পরস্পর কাটাকাটি হয়ে যায়, যার কারণে তারা আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যায় না। এর অন্যতম একটি উদাহরণ হলো এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি। এটি দূরে সরে তো যায়ই না উপরন্তু আরো কাছে ধেয়ে আসছে ধীরে ধীরে।
আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কি ওয়ের কাছে চলে আসছে প্রতিবেশী এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি; Source: Pop Science
অন্যদিকে খুব নিকটের গ্যালাক্সির পাশাপাশি খুব বেশি দূরের গ্যালাক্সির বেলাতেও হাবলের নীতি কাজ করে না। কারণ, অতি-দূরের গ্যালাক্সিগুলোর বেলায় যদি হাবলের সূত্র প্রয়োগ করা হয় তাহলে দেখা যাবে এদের অপসারণ বেগও হয়ে গেছে অকল্পনীয় পরিমাণ বেশি। এতই বেশি যে এর পরিমাণ হবে আলোর বেগের চেয়েও অধিক। কিন্তু আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব বলছে কোনোকিছুই আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলতে পারে না। বেগের এই সমস্যার অবশ্য সুরাহা আছে, তবে এই সুরাহা অনেক সূক্ষ্ম ও জটিলতাপূর্ণ।