আপনি এমন কী জানেন, যা বেশিরভাগ লোকই জানেন না?
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
শেয়ার করুন
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
ছবির ছেলেটাকে চেনেন? মাঝখানের জনকে?
বলতে গেলে ঢাকার সবচেয়ে বড় লোক পরিবারের ছেলে ছিল। তখনকার দিনে যখন ১ম শ্রেণীর অফিসারের বেতন ছিল খুব বেশি হলে ৫০০-৬০০ টাকা, সে এলভিস প্রিসলির গান শোনার জন্য এক ধাক্কায় ১০০০ টাকার রেকর্ড কিনে আনতো। তাদের বাড়িতে হরিণ ছিল, সরোবরে সাঁতার কাটত ধবল রাজহাঁস, মশলার বাগান থেকে ভেসে আসত দারুচিনির গন্ধ(ডাকে পাখি খোলো আঁখি, এই গানটার শুটিং হয়েছিল তাদের বাড়িতে)।
জ্বী হ্যা, আমি মাগফার উদ্দিন চৌধুরী আজাদ এর কথা বলছি।
আজাদ ক্লাস সিক্সে পড়ে, সেন্ট গ্রেগরি। ১৯৬০ এর দশক। আজাদের বাবা আরেকটা বিয়ে করবেন। আজাদের মা বললেন, তুমি বিয়ে করবে না, যদি করো, আমি একমাত্র ছেলে আজাদকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাব। আজাদের বাবা আরেকটা বিয়ে করলে আজাদের মা সাফিয়া তার বালকপুতের হাত ধরে ওই রাজপ্রাসাদ পরিত্যাগ করেন এবং একটা পর্ণকুটীরে আশ্রয় নেন। ছেলেকে লেখাপড়া শেখান। আজাদ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করে।
তার বন্ধুরা যোগ দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে, ফিরে এসেছে আগরতলা থেকে, ট্রেনিং নিয়ে। তার ঢাকায় গেরিলা অপারেশন করে। বন্ধুরা আজাদকে বলল, চল, আমাদের সাথে, অপারেশন করবি। তুই তো বন্দুক পিস্তল চালাতে জানিস। তোর আব্বার তো বন্দুক আছে, পিস্তল আছে, তুই সেগুলো দিয়ে অনেকবার শিকার করেছিস।
আজাদ বলল, এই জগতে মা ছাড়া আমার কেউ নেই, আর মায়েরও আমি ছাড়া আর কেউ নেই। মা অনুমতি দিলেই কেবল আমি যুদ্ধে যেতে পারি।
মাকে আজাদ বলল, মা, আমি কি যুদ্ধে যেতে পারি?
মা বললেন, নিশ্চয়ই, তোমাকে আমার প্রয়োজনের জন্য মানুষ করিনি, দেশ ও দশের জন্যই তোমাকে মানুষ করা হয়েছে।
আজাদ যুদ্ধে গেল।
দুটো অপারেশনে অংশ নিল। তাদের বাড়িতে অস্ত্র লুকিয়ে রাখা হলো। গেরিলারা আশ্রয় নিল।
১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট। ধরা পড়ে ক্র্যাক প্লাটুনের একদল সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। সেসময় আজাদকেও আটক করা হয়। তাকে ধরে নিয়ে রাখা হলো রমনা থানা সংলগ্ন ড্রাম ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এম.পি হোস্টেলের মিলিটারি টর্চার সেলে।
গরাদের ওপারে দাড়িয়ে থাকা আজাদকে তার মা চিনতে পারেন না। প্রচণ্ড মারের চোটে চোখমুখ ফুলে গেছে, ঠোঁট কেটে ঝুলছে, ভুরুর কাছটা কেটে গভীর গর্ত হয়ে গেছে।
–“মা, কি করব? এরা তো খুব মারে। স্বীকার করতে বলে সব। সবার নাম বলতে বলে।“
–“বাবা, তুমি কারোর নাম বলোনি তো?
–না মা, বলি নাই। কিন্তু ভয় লাগে, যদি আরও মারে, যদি বলে দেই…
–বাবারে, যখন মারবে, তুমি শক্ত হয়ে থেকো। সহ্য করো। কারো নাম বলো না।
–আচ্ছা মা। ভাত খেতে ইচ্ছে করে। দুইদিন ভাত খাই না। কালকে ভাত দিয়েছিল, আমি ভাগে পাই নাই।
–আচ্ছা, কালকে যখন আসব, তোমার জন্য ভাত নিয়ে আসব।
সাফিয়া বেগমের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যায়। গায়ে হাত তোলা তো দূরে থাক, ছেলের গায়ে একটা ফুলের টোকা লাগতে দেননি কোনোদিন। সেই ছেলেকে ওরা এভাবে মেরেছে… এভাবে…
মুরগির মাংস, ভাত, আলুভর্তা আর বেগুনভাজি টিফিন ক্যারিয়ারে ভরে পরদিন সারারাত রমনা থানায় দাড়িয়ে থাকেন সাফিয়া বেগম, কিন্তু আজাদকে আর দেখতে পাননি। তেজগাঁও থানা, এমপি হোস্টেল, ক্যান্টনমেন্ট-সব জায়গায় খুজলেন, হাতে তখন টিফিন ক্যারিয়ার ধরা, কিন্তু আজাদকে আর খুঁজে পেলেন না।
ছেলে একবেলা ভাত খেতে চেয়েছিলেন। মা পারেননি ছেলের মুখে ভাত তুলে দিতে। সেই কষ্ট-যাতনা থেকে পুরো ১৪টি বছর ভাত মুখে তুলেন নি মা! তিনি অপেক্ষায় ছিলেন ১৪ টা বছর ছেলেকে ভাত খাওয়াবেন বলে। বিশ্বাস ছিলো তাঁর আজাদ ফিরবে। ছেলের অপেক্ষায় শুধু ভাতই নয়, ১৪বছর তিনি কোন বিছানায় শোন নি। শানের মেঝেতে শুয়েছেন শীত গ্রীষ্ম কোন কিছুতেই তিনি পাল্টান নি তার এই পাষাণ শয্যা। আর এর মুল কারণ আজাদ রমনা থানায় আটককালে বিছানা পায়নি।
প্রজন্ম কিংবদন্তি আজাদদের চিনেনা, চিনে হলিউডের অ্যাকশন চলচ্চিত্র।
ভালো থাকুক জীবনের প্রেমগুলো। ভালো থেকো কিংবদন্তী।”
[লেখাটি প্রিয় লেখক ‘আনিসুল হক’ এর “মা” বই থেকে নেওয়া হয়েছে।]
সৌজন্যে—লেখক আনিসুল হকের ফেসবুক পেজ