আপনি কি জানতেন প্যারাসুট নারিকেল তেল আসলে খাওয়ার জন্য, চুলে মাখার জন্য নয়?
রূপচর্চার ব্যাপারে আমার জ্ঞান লজ্জাজনক রকমের কম। তাই কোনোরকম জ্ঞানের কথা বলে আপনার সময় নষ্ট না করে, আমি বরং একটা মজার গল্প শোনাই।
খায় না মাথায় দেয়
আপনারা প্যারাস্যুট তেল এর নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই ?
কিন্তু এইটা কি জানতেন, যে ওটা খাবার জিনিস, চুলে মাখার না?
এটা ভারত সরকারও জানতো না। আর সেখান থেকেই আমাদের এই গল্পের সূত্রপাত।
GST চালু হবার আগে, ভারতে ভোজ্য তেল করমুক্ত হলেও প্রসাধনী তেলের ওপর ৮% হারে কর (excise duty) দিতে হতো।
প্যারাসুট নারিকেল তেল কোন কোম্পানির
একদিন সরকারের নজরে পড়লো Marico প্যারাস্যুট নারিকেল তেল (যেটা তাদের সব থেকে জনপ্রিয় পণ্য) এর জন্য কোনো কর দিচ্ছে না। কোম্পানিকে নোটিশ পাঠানো হলো। জবাবে তারা বললো এটা তো গায়ে বা চুলে মাখার তেল না, এটা তো খাবার তেল। আমাদের কোনো বিজ্ঞাপনেই তো এটাকে চুলে মাখার তেল বলা হয়নি, তাহলে কর চাইছেন কোন দুঃখে ?
তাদের বিজ্ঞাপন বা পণ্য কোথাও কিন্তু চুলের উল্লেখ নেই
চলুন প্যারাসুট কোম্পানির একটি বিজ্ঞাপন দেখি
সরকার থেকে তখন জানতে চাওয়া হলো, এই ছোট্ট স্যাশে গুলো দিয়ে কেউ কিভাবে রান্না করতে পারে ?
কোম্পানির উত্তরও তৈরিই ছিল, তারা বললো এই গুলো তো সেই সব ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েদের জন্য যারা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। কোনো দিন হোস্টেলের খাবার পছন্দ না হলে টুক করে পকেট থেকে একটা পাউচ বার করে কিছু রান্না করে খেয়ে নেবে। তাছাড়া এটা যে একটি সম্পূর্ণ নিরামিষ তেল তারও চিহ্ন রয়েছে।
তখন সরকার তাদের শায়েস্তা করার জন্যে, ২০০৯ সালে একটা নতুন আইন পাস করলো; ২০০ ml এর কম পরিমাণে যে সব নারকোল তেল বিক্রি করা হবে তাদের প্রসাধনী পণ্য হিসাবে গণ্য করা হবে।
তবে কোম্পানিও ছাড়ার পাত্র নয়, তারাও দিল কেস ঠুকে। Marico gears up for excise battle
এই ফাঁকে তারা fssai’র ছাড়পত্রও নিয়ে নিয়েছে, আর প্যারাসুট তেল ১ লিটার এর বোতলেও বিক্রি করতে শুরু করেছে।
প্রায় ৬ বছর কেস চলার পর শেষ পর্যন্ত Marico’র ই জয় হলো। ২০১৫ সালে সরকার ওই আইনটি বাতিল করে দিলো।
তাই আপনি যদি নারকোল তেলের রান্না খেতে পছন্দ করেন, তাহলে খাওয়া আর গায়ে মাখার জন্য আলাদা আলাদা তেল না কিনে একটা তেল দিয়েই কাজ চালাতে পারেন।
লেখকঃ সুশোভন চ্যাটার্জী (কোরা)
তথ্যসূত্র:
১. Marico
৩. FSSAI