ইতিহাসের কোন ভুলগুলো পরবর্তীতে পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে ?
শেয়ার করুন
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
কথায় বলে মানুষ ভুল করেই মানুষ শেখে। প্রতি সপ্তাহে আমরা কমবেশি সবাই ডজনখানেক ভুল করি, যদিও সেসব ছোটখাটো তুচ্ছ ভুল। আমাদের বেশিরভাগ ভুলই আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে না। মাত্র কয়েকটি ভুল কদাচিৎ আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইতিহাসেও তেমনি কিছু ভুল ঘটনা ঘটেছে যা পরবর্তীতে পৃথিবীর আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। আজ তেমনি ৪ টি ভুল আপনাকে জানাচ্ছি।
১. অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করেও ডাচরা জানতো না তারা অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করেছে!
বইপত্রে আপনি হয়তো পড়েছেন ইংরেজ জাহাজ ক্যাপ্টেন জেমস কুক অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করেছেন। তথ্যটি আসলে ভুল! জেমস কুক অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করার আরো প্রায় ২ শতাব্দী বছর আগেই ডাচরা অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করেছে।
১৮০২ সালে ইউরোপীয়দের অস্ট্রেলিয়া ম্যাপ
১৬০৬ সালে ডাল ক্যাপ্টেন উইলেম জ্যান্সজুন তার জাহাজ ডুইফকেনে যাত্রা করেন এবং কেপ ইয়র্ক উপদ্বীপের পশ্চিম দিকে ২০০ মাইলেরও বেশি দূরত্ব অন্বেষণ করেন এবং অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করেন। অন্যান্য অনেক ডাচ একই এলাকার পশ্চিম ও দক্ষিণ উপকূল অন্বেষণ করে এবং এই জায়গার নামকরণ করেন নিউ হল্যান্ড। তবে, ডাচরা এই এলাকাটি উপনিবেশ বা সেখানে বসতি স্থাপনের কোন প্রচেষ্টা করেনি। এর ফলে ১৭৭০ সালে ইংরেজ ক্যাপ্টেন কুক তার দাবি দাখিল না করা পর্যন্ত তাদের আবিষ্কার দীর্ঘকাল অজানা ছিল।
২. হ্যাবসবার্গের প্রহসন যুদ্ধ
১৭৮৮ সালে অস্ট্রো-তুর্কি যুদ্ধ শুরু হলে উসমানীয় এবং হ্যাবসবার্গের মধ্যে একটি ভুল-বোঝাবুঝি ঘটনা ঘটে।
আর এই ঘটনাটি অটোমানদের ক্ষমতায় একটি অপ্রত্যাশিত ঊর্ধ্বগতি দেয়। সেই বছরের সেপ্টেম্বরে, অস্ট্রিয়ান হুসাররা তুর্কি পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করার জন্য একটি নদী পার হয়েছিল। তবে, তারা শত্রু পক্ষ থেকে কাউকে খুঁজে পায়নি; এবং পরিবর্তে কয়েকজন স্থানীয়কে দেখা গেল যারা মদ বিক্রি করছিল।
Image source: Wikimedia Commons
অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় কিনে মাতাল হয়ে পড়ে। নদীর অপর প্রান্তে, অস্ট্রিয়ান কমান্ডার ধৈর্য ধরে ক্যাম্পে তাদের শত্রু সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন।
হুসাররা ফিরে না এলে কমান্ডার কয়েকজন অফিসারকে তাদের খোঁজ করতে পাঠান। সেখানে গিয়ে তারা মাতাল সৈন্যদের আবিষ্কার করে। দেখা যাচ্ছে, অস্ট্রিয় সৈন্যদল মাতাল হয়ে দুটি আলাদা দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং একে অপরকে তুর্কী শত্রু ভাবতে শুরু করেছে।
একজন আর্টিলারি অফিসার দূর থেকে লড়াইটি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন যে তারা তুর্কী সৈন্য; তারা হয়তো অস্ট্রিয়ান ক্যাম্পে আক্রমণের অপেক্ষায় রয়েছে, তাই তিনি তার সৈন্যদের গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফলে সেই আক্রমণে ১ হাজারেরও বেশি সৈন্যের মৃত্যু হয়।
অবশেষে, যখন অটোমানরা এই স্থানে পৌঁছায়, তখন তারা অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীর বেশ কিছু হতাহত দেখতে পায় এবং কোন যুদ্ধ ছাড়াই কারানসেব দখল করে নেয়।
৩. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রাশিয়ার আলাস্কা বিক্রি
যখন ক্রিমিয়ান যুদ্ধ শুরু হয়, তুরস্ক, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স তাদের অভিন্ন শত্রু রাশিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। সেই সময়ের পরিস্থিতি রাশিয়ার জন্য ছিল জটিল। দূরত্বের জন্য তারা আর তাদের আলাস্কান অঞ্চলকে সামরিক সমর্থন করতে পারছিল না। সুতরাং, তাদের একমাত্র শক্তিশালী সমর্থন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তখন রাশিয়ার সাহায্যে এসেছিল।
ক্রিমিয়ান যুদ্ধ Image Source: Wikimedia Commons
দুই দেশ তখন সিদ্ধান্ত নেয় যে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আলাস্কাকে ‘বেচবে’। এই সিদ্ধান্তটি বিশ্বজুড়ে সমালোচনা সত্ত্বেও, ১৮৬৭ সালের মার্চ মাসে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, চুক্তি অনুসারে রাশিয়া মাত্র ৭.২ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আলাস্কা বিক্রি করে।
সেসময় রাশিয়া হয়তো আন্দাজই করতে পারেনি তারা কি ভুলটিই না করেছে। তবে সেই ভুল বুঝতে বেশিদিন লাগে নি রাশিয়ার,১৮৮০ ও ১৮৯০ এর দশকে এই অঞ্চলে সোনার খনি আবিষ্কার করে মার্কিনরা। যা মার্কিন অর্থনীতিতে লক্ষ লক্ষ ডলার এনেছিল এবং আমেরিকান অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলে।
৪. দুর্ঘটনাবশত ল্যাবরেটরিতে আবিষ্কৃত হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক পেনিসিলিন।
সেন্ট মেরিস হাসপাতালের জীবাণুবিদ আলেকজান্ডার ফ্লেমিং গ্রীষ্মের ছুটি কাটিয়ে যখন স্কটল্যান্ডে নিজের কর্মস্থলে ফেরেন, পুরো ল্যাবরেটরি তখন ধুলোভর্তি অবস্থায়। একটু পরিষ্কার করে কাজ শুরু করতে গিয়ে খেয়াল করলেন, তাঁর পেট্রি ডিশে (ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত একধরনের ছোট গোল স্বচ্ছ পাত্র) রাখা স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস ব্যাকটেরিয়াগুলোতে পেনিসিলিয়াম নোটাটাম নামক একধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ হয়েছে।
আলেকজান্ডার ফ্লেমিং
কৌতূহলী বিজ্ঞানী ফ্লেমিং সংক্রমিত সেই পেট্রি ডিশকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রাখতেই খেয়াল করলেন, পেনিসিলিয়াম নোটাটাম ছত্রাকটি স্ট্যাফাইলোকক্কির স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা তৈরি করছে।
আলেকজান্ডার ফ্লেমিং আরও কয়েক সপ্তাহ সময় নিয়ে বেশ কিছু পেনিসিলিয়াম ছত্রাক জোগাড় করে পরীক্ষা করে দেখেন, পেনিসিলিয়ামের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যেগুলো শুধু ব্যাকটেরিয়ার স্বাভাবিক বৃদ্ধিকেই বাধা দেয় না, সংক্রামক অনেক রোগ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখতে পারে।
পেনিসিলিয়াম ছত্রাক থেকে পেনিসিলিন আবিষ্কারের পেছনে অবশ্য বিজ্ঞানী ফ্লেমিংয়ের চেয়ে জার্মান বংশোদ্ভূত ইংরেজ প্রাণরসায়নবিদ আর্নেস্ট চেইনের (১৯০৬-৭৯) কৃতিত্ব বেশি। এই বিজ্ঞানী ১৯৩৮ সাল থেকে চেষ্টা চালাতে থাকেন কীভাবে মানুষের শরীরের উপযোগী একটি অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা যায়। চেষ্টার ফল মেলে ১৯৪২ সালের মার্চ মাসে। যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের নিউ হ্যাভেন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে থাকা অ্যান মিলারের ওপর সফলভাবে পেনিসিলিন প্রয়োগ করা হয়। বেঁচে যান অ্যান মিলার। আর্নেস্ট চেইনের মতোই অস্ট্রেলীয় জীববিজ্ঞানী হাওয়ার্ড ফ্লোরিও (১৮৯৮-১৯৬৮) পেনিসিলিনের অগ্রগতিতে বিশাল অবদান রেখেছেন। অবদান রেখেছেন বলেই তো ১৯৫৫ সালে এই তিন চিকিৎসাবিজ্ঞানী যৌথভাবে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।