প্রতিদিন হাজার কথা বলতে হয় আমাদের। কিন্তু কথার শব্দ গুলো কতোটা সঠিক তা কি কখনো লক্ষ করি? শব্দ কাকে বলে, কত প্রকার ও পারিভাষিক শব্দ কি? এগুলো আমাদের জানা উচিৎ।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
শেয়ার করুন
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
তাপানুকূল, বাতানুকূল: ইংরেজি ‘Air-Conditioned’-এর বাংলা ‘বাতানকূল’ বা ‘শীতাতপনিয়ন্ত্রিত’ কিন্তু লেখা হচ্ছে ‘তাপানুকূল’। ‘তাপানুকূল’ শব্দের ইংরেজি হচ্ছে ‘Thermo-Conditioned’।
দেই, দিই: ক্রিয়াপদ হিসেবে ‘দেই’ শব্দটি আঞ্চলিক বা কথ্যরীতির। এর পরিবর্তে লেখ্যরীতিতে ‘দিই’ , ক্রিয়াপদ হিসেবে এ রকম অশুদ্ধ শব্দ ‘নেই’; শুদ্ধ ‘নিই’। যেমন: আমরা পাঁচ বছর পর ভোট ‘দিই’।
দেয়া, দেওয়া: ‘দেওয়া’ শব্দের স্থানে ‘দেয়া’ লেখা হচ্ছে। ‘দেওয়া’ শব্দের অর্থ প্রদান করা। অপরদিকে ‘দেয়া’ শব্দের অর্থ মেঘ বা বৃষ্টি। কাজেই আমরা আদেশ ‘দেওয়া’ হলো লিখব। ‘দেয়া’ কথ্যরীতির শব্দ। লেখ্য ভাষায় বেমানান। সুতরাং সাধু ও চলিতে ‘দেওয়া’ লিখব। এ রকম একটি শব্দ ‘নেয়া’ নয়; ‘নেওয়া’ হবে।
ধরন, ধারণ: ‘ধরন’ শব্দটি তদ্ভব বা খাঁটি বাংলা শব্দ। কাজেই এখানে ‘ণ’ হবে না। যেমন: তোমার ব্যবসায়ের ‘ধরন’ কী? কিন্তু ‘ধারণ’ শব্দে ‘ণ’ হবে। কারণ এটি তৎসম শব্দ। ণত্ব বিধানে বলা হয়েছে, সাধারণত তৎসম শব্দে র, ঋ, ষ এর পরে ‘ণ’ ব্যবহার হয়। যেমন: ধারণক্ষমতা, কারণ কী, করুণ দৃশ্য প্রভৃতি। কিন্তু ক্রিয়াপদে ‘র’ থাকলেও ‘ন’ হবে। যেমন: এখন কাজটি করুন।
পদক্ষেপ: ‘পদক্ষেপ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘পা ফেলা’ বা ‘পদার্পণ’/ ‘পদচারণা’/ ‘হাঁটা’। ‘ব্যবস্থা গ্রহণ’ অর্থে ‘পদক্ষেপ’ শব্দটির প্রয়োগ প্রচলিত হলেও সংগত নয়। এ ক্ষেত্রে ‘যথাযথ পদক্ষেপ’ না-বলে ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ বলা যেতে পারে।
ফলশ্রুতি, ফলশ্রুতিতে: ‘ফলশ্রুতি’ শব্দের একটি অর্থ হলো কর্মের ফল, শ্রবণ, অর্থাৎ কোনো পুণ্যকর্ম করলে যে ফল হয় তা শোনা এবং তার বিবরণ। অন্যদিকে, পুণ্যকাহিনি শ্রবণে যে ফল পাওয়া যায় তা-ও ফলশ্রুতি। ফলশ্রুতি শ্রবণে মানুষের মনে ধর্মভাবের উন্মেষ ঘটে। এ উন্মেষ ঘটাও ফলশ্রুতি। তাই ‘ফলে’ কথাটির পরিবর্তে ফলশ্রুতিতে
লেখা ঠিক না।
ইদানীংকাল: ‘ইদানীং’ শব্দের অর্থ বর্তমান সময়। তাই ইদানীংয়ের সঙ্গে ‘কাল’ শব্দটির প্রয়োগ ভুল।
ইতিপূর্বে, ইতিমধ্যে: সংস্কৃতে ‘ইত’ একটি অব্যয়, যার অর্থ এই, এই স্থানে। ইতঃ-এর সঙ্গে পূর্বে ও মধ্যে শব্দের সন্ধি করলে সন্ধির নিয়মে ইতঃপূর্বে ও ইতোমধ্যে হয়। এই কারণে শব্দদ্বয় অশুদ্ধ।
উপরোক্ত: উপরে লেখা হয়েছে এমন বোঝাতে প্রায়ই উপরোক্ত শব্দটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সংস্কৃত ব্যাকরণের সন্ধির নিয়মে ‘উপর্যুক্ত’ বা ‘উপরিউক্ত’ শব্দটি শুদ্ধ। উপরোক্ত শব্দটি প্রচলিত হলেও ভুল।
গণপ্রজাতন্ত্রী: শব্দটি ভুল। বিশেষণের শুদ্ধ প্রয়োগ‑ ‘গণতান্ত্রিক’ বা ‘গণপ্রজাতান্ত্রিক’ দেশ।
ছাত্র–ছাত্রীরা: ‘ছাত্র-ছাত্রী’ শব্দটিই বহুবচনজ্ঞাপক। সুতরাং এরপর ‘রা’ যুক্ত করার আবশ্যকতা নেই।
তবুও: তবুও শব্দটির ‘ও’ প্রত্যয় আধিক্য অর্থে ব্যবহৃত হয়। শব্দটি প্রচলিত হলেও ভুল। শুদ্ধ শব্দটি ‘তবু’।
ভাষাভাষী: ভাষা ব্যবহারকারী অর্থে ভাষীই যথার্থ। তাই ভাষাভাষী প্রয়োগ অশুদ্ধ।
শুধুমাত্র: ‘শুধু’ শব্দের সঙ্গে ‘মাত্র’ যোগ করলে একই অর্থে বাহুল্য দোষে অশুদ্ধ হবে। শুদ্ধরূপ ‘শুধু’ অথবা ‘মাত্র’। যেমন: রাজু শুধু কোরআন পড়তে পারে, কিন্তু আরবি লিখতে পারে না। কিন্তু টাকার চেকে লিখতে হবে‑ এক লক্ষ টাকা মাত্র। এখানে শুধু শব্দ লেখা যাবে না।
সৌজন্যতা: ‘সৌজন্য’ শব্দটিই বিশেষ্য। অতিরিক্ত ‘তা’ প্রত্যয় যোগে বিশেষ্য করা বাহুল্য।
সৌন্দর্যতা: ‘সৌন্দর্য’ শব্দটিই বিশেষ্য। অতিরিক্ত ‘তা’ প্রত্যয় যোগে বিশেষ্য করা অশুদ্ধ।
হার/শতাংশ: ‘আমদানি শুল্কের হার ৩০ শতাংশ’ এই বাক্যটি ভুল। কারণ হার এবং শতাংশ একই অর্থবোধক শব্দ। তাই শুদ্ধ বাক্য হবে ‘আমদানি শুল্কের পরিমাণ ৩০ শতাংশ’।
থাকাকালীন সময়: থাকাকালীন শব্দের অর্থই থাকার সময়ে। অতিরিক্ত ‘সময়’ এখানে বাহুল্য দোষ।
অন্যতম: ‘অন্যতম’ শব্দটির অর্থ অনেকের মধ্যে একজন। ব্যক্তি বা মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার ঠিক। কিন্তু বস্তুর ক্ষেত্রে যেমন‑ অন্যতম খাদ্য, অন্যতম কাপড় ইত্যাদি ব্যবহার করা ভুল।
আলস্যতা, অলসতা‑ আলস্য শব্দের পর অতিরিক্ত ‘তা’ প্রত্যয় যোগে বিশেষ্য শব্দ গঠনের প্রক্রিয়া এ ক্ষেত্রে অনাবশ্যক। ‘আলস্য’ নিজেই একটি বিশেষ্য পদ ও শুদ্ধ শব্দ। তবে ‘অলস’ শব্দটি বিশেষণ হওয়ায় ‘তা’ প্রত্যয় যোগ করে বিশেষ্য ‘অলসতা’ শব্দটি শুদ্ধ হবে।
হত / হতো: নিহত অর্থে ‘হত’ আর ক্রিয়াবাচক শব্দ হিসেবে ‘হতো’ ব্যবহৃত হয়।
বুঝা / বোঝা: ক্রিয়া অর্থে ‘বুঝা’ আর বিশেষ্য অর্থে ‘বোঝা’ হবে। কিছু উদাহরণ দেখে নেওয়া যেতে পারে: ১. এটি তোমার বুঝার ভুল। ২. ভাষা বলতে কী বুঝায়? ৩. বুঝতে পারছি না, শেষ পর্যন্ত আমি তোমার বোঝা হয়ে দাঁড়াই কি না।
ওঠে / উঠে : বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়ার বর্তমান কাল বুঝাতে ‘ওঠে’ আর অসমাপিকা ক্রিয়া বুঝাতে কিংবা সমাপিকা ক্রিয়ার পূর্ববর্তী অসমাপিকা ক্রিয়ার ক্ষেত্রে ‘উঠে’ ব্যবহৃত হবে।
যেমন: ১. সে ভোরে ঘুম থেকে ওঠে। ২. সূর্য পূর্ব দিকে
উঠে পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। তবে অতীত এবং ভবিষ্যৎকাল বুঝাতে সমাপিকা ক্রিয়ায় ‘উ’ থাকবে। যেমন: ১. তপু উঠত সবার আগে। ২. আমি এবার একাদশ শ্রেণিতে উঠব।
অনেকগুলো: অনেক বহুবচন শব্দ। তাই আবার ‘গুলো’ বহুবচন শব্দ লিখে বাহুল্য দোষ করা ঠিক হবে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, গাছে অনেকগুলো আম আছে। শুদ্ধ হবে—গাছে অনেক আম আছে।