খাঁটি ঘি কীভাবে বোঝা সম্ভব?
শেয়ার করুন
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
ঘি হচ্ছে স্বাস্থ্যকর একটি মাখন জাতীয় তেল। ইংরেজিতে বলে ক্লিয়ারিফাইড বাটার। গরুর দুধের সর থেকে ঘি হয়।
ভারতের অবদান হচ্ছে এই ঘি। ভারতের, পাকিস্তানের ও বাংলাদেশের গরুগুলো থেকে যে দুধ পাওয়া যায় সেটা হচ্ছে A2 টাইপের গরুর দুধ। “দেশী” গরুর সব কিছুই ভালো। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের গরুগুলোকে বলা হয় দেশী গরু বা A2 গরু। এই তিন দেশের গরুগুলো থেকে প্রাপ্ত দুধের ঘি সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর।
খাটি ঘি চেনার উপায়ঃ
খাটি ঘি চেনার উপায় হচ্ছে ঘি যখন জমা অবস্থায় থাকে তখন হলুদ বা সোনালী থাকে কিন্তু চুলার তাপে গেলে সাথে সাথে গলে গাড় বাদামী বা লালচে বাদামী হয়ে যায়। ঘি গলতে যদি টাইম নেয় ও রং যদি তেলের মতো সোনালী রংয়েরই থাকে গলার পরেও তবে সেটা ভেজাল ঘি।
বর্তমানে বাজারে প্রিমিয়াম ঘি বলে যা পাওয়া যায় সেটা ভেজাল ঘি। ফ্লেভার দেয়া ঘি। এসব ঘি চুলার তাপে দিলে গলতে একটু সময় নেয় এবং সয়াবিন তেলের মতো সোনালী রং এর হয়ে যায়। খাটি ঘি চুলার তাপে সাথে সাথেই লালচে বাদামী বা গাড় বাদামী হয়ে যাবে। প্রিমিয়াম ফ্লেভার মেশানো ঘি হচ্ছে সয়াবিন তেলে ফ্লেভার ও জমাট বাধা কেমিকেল মিশিয়ে বিক্রি করা তেল।
খাটি গাওয়া ঘি পাওয়া কষ্ট। যা পাওয়া যায় সেখানেও কেমিকেল মেশায়। কেমিকেল মেশানো ‘খাটি’ গাওয়া ঘি।
গরুর খামারের গরুগুলো বেশির ভাগই ক্রস গরু। দেশী গরুকে বিদেশী গরু দিয়ে উর্বর করা গরু। এটা বেশি দুধ পাওয়ার জন্যে করে। তাই ফার্মের গরুর দুধের সরের ঘি A1 (বিদেশি গরু) ও A2 (ভারতীয় দেশি গরু) এর সংকর গাওয়া ঘি যা খুব বেশি খাটি না।
খাটি ঘি বানানোর ঘরোয়া পদ্ধতিঃ
যদি খাটি ঘি করতে হয় গেরস্থের যে খাটি দেশি ভারতীয়, বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি গরুগুলো আছে যেখানে বিদেশি বা অস্ট্রেলিয়ান, ফিজিয়ান জাতের গরু দিয়ে উর্বর করা না হয় সেই সব দেশি গরুর দুধ কিনে এনে সেটা ফুটিয়ে সর বের করে ৫ / ৬ দিনের সর জমিয়ে সেই জমানো দুধের সর চুলায় কড়াইতে ৩০ মিনিট ধরে ঘন ঘন নাড়িয়ে শেষের দিকে দুই তিনটা লেবু পাতা দিয়ে আরো কিছুক্ষন নাড়িয়ে যখন সরের শক্ত অংশ দানা দানা হয়ে যাবে এবং তেল যখন গাড় বাদামী হবে তখন সেই তেল একটা বোতলে ভরে কয়েকদিন রাখলে সেই তেল জমে গিয়ে হলুদ বা গাড় হলুদ হয়ে যাবে। এটাই আসল ঘি। লেবু পাতা দেয়া হয় যাতে ঘি অনেকদিন ভালো থাকে এবং ঘি এর সুগন্ধ অটুট থাকে।
এই ভাবে ঘরে বানানো ঘি অনেকদিন সংরক্ষন করলে বাজার থেকে ভেজাল প্রিমিয়াম ঘি খাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
ঘি যদি এক চামচ প্রতিদিন দুধের সাথে মিক্স করে রাতে ঘুমানোর আগে খান তবে সব ধরনের উপকারিতা পাবেন। ওজন কমাতেও সাহায্য করবে খাটি ঘি। স্বাস্থ্যকর খাটি গাওয়া ঘি দিনে এক চামচ এমনিতেই বা দুধের সাথে মিশিয়ে খান বা ভাতের সাথে মিশিয়ে খান তবে সেটা শরীরের জমানো ফ্যাট গলতে সাহায্য করবে। স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খারাপ ফ্যাট কাটাবে। তাই প্রতিদিন ১ চা চামচ ঘি খান।
ভেজাল ঘি শনাক্তকরণ পরীক্ষাঃ
ভেজাল ঘি শনাক্তকরণের জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি ও ল্যাবরেটরি পদ্ধতি রয়েছে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে শুধু ঘি ভেজাল কিনা তা জানা যাবে। তবে কি দ্বারা ভেজাল করা হয়েছে সেটি শনাক্ত করতে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার প্রয়োজন হবে।
ঘরোয়া পদ্ধতিঃ
হাতে কিছু ঘি নিয়ে রগড়ান। তারপর শুঁকে দেখুন। যদি কিছুক্ষণ পরই গন্ধ আসা বন্ধ হয় তবে বুঝবেন এতে ভেজাল মেশানো আছে। তবে এভাবে ঘিতে কি মেশানো আছে তা জানা যাবে না।
হাতের তালুতে এক চামচ ঘি নিন। যদি নিজে নিজে গলতে শুরু করে তবে তা খাঁটি। সাধারণত খাঁটি ঘি শরীরের তাপমাত্রায় গলতে থাকে।
এক চামচ ঘি নিয়ে গরম করতে থাকুন। যদি দ্রুত গলে যায় এবং বাদামী বর্ণ ধারণ করে তবে তা খাঁটি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই খাঁটি ঘি গলে যায়। যদি ভেজাল মেশানো থাকে তবে তা গলতে দীর্ঘ সময় নেয়।
ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষাঃ
ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার মাধ্যমে ঘিতে মিশ্রিত উপাদানটি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
কোলটার ডাই শনাক্তকরণঃ
এক চামচ ঘিয়ের মধ্যে ৫ মিলি. হাইড্রোক্লোরিক এসিড যোগ করুন। যদি ঘি লাল হয় তবে বুঝবেন ঘিতে কোলটার ডাই মেশানো হয়েছে।
সিদ্ধ আলু শনাক্তকরণঃ
এক চামচ ঘিতে ৪-৫ ড্রপ আয়োডিন যোগ করে ফেলুন। যদি ঘিয়ের রং পরিবর্তিত হয়ে নীল হয়, তবে বোঝা যাবে ঘিতে সিদ্ধ আলু মেশানো হয়েছে।
ডালডা শনাক্তকরণঃ
একটি বাটিতে এক চামচ ঘি, হাইড্রোক্লোরিক এসিড এবং সামান্য মেশান। যদি ঘি হালকা লাল বা লালচে বাদামী হয় তবে বোঝা যাবে ঘিতে ডালডা মেশানো হয়েছে।
তিলের তেল শনাক্তকরণঃ
১০০ মিলি. ঘি নিন। তাতে ফারফিউরাল এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিড মেশান। এরপর অ্যালকোহল যোগ করুন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। যদি লাল রং আসে তবে বুঝবেন তিলের তেল মেশানো হয়েছে।
ভেষজ ও আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে, ঘিয়ের অনেক উপকারীতার কথা বলা হয়। তবে তা অবশ্যই খাঁটি ঘি হতে হবে। এই সকল সহজ পদ্ধতির মাধ্যমে সহজেই খাঁটি ও ভেজাল ঘি শনাক্ত করতে পারবেন।