চোরাবালি কি সত্যিই আমাদের মেরে ফেলতে পারে?
Share
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
একটু ভাবুন তো, আপনি এরকম ক’টি সিনেমা দেখেছেন যেখানে নায়ক চোরাবালির মধ্যে পড়ে যায়, আর ঠিক শেষ মুহূর্তে হয়তো গাছের ডাল ধরে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে বের হয়ে আসে? সিনেমাতে যদি না-ও দেখে থাকেন, গল্পে চোরাবালির কথা পড়েননি কিংবা চোরাবালির নাম অন্তত শোনেননি এমন কাউকে হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে সিনেমাতে দেখে থাকা চোরাবালির দৃশ্যকে সত্যি ভেবে বসলে হয়ত কারও কাছে একে কোনো মারাত্মক গভীর কোনো গহ্বর মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে চোরাবালির গভীরতা কয়েক ফুটের বেশি হয় না। বলা বাহুল্য, এই কয়েক ফুট গভীরতাই যে কারো মনে মৃত্যু-শঙ্কা তৈরি করার জন্য যথেষ্ট। আপনি যদি চোরাবালিতে কখনো পড়েও যান, সেখানে কেউ কিন্তু আপনাকে ভেতরের দিকে নিয়ে যাবে না। চোরাবালিতে তলিয়ে যাওয়ার কাজটি করবেন আপনি নিজেই! অদ্ভুত ঠেকছে না ব্যাপারটা?
Source: bournemouthecho.co.uk
চোরাবালি কী?
চোরাবালি আসলে সাধারণ বালির মতোই এক ধরনের বালি। কিন্তু সাধারণ বালির সাথে একটি বড় পার্থক্যও আছে এর। পার্থক্য হলো এই বালি পানি দ্বারা অতি-সম্পৃক্ত হয়ে থাকে। আমরা যখন সাধারণ বালির উপরে দাঁড়াই, তখন পা কিছুটা ভেতরে ঢুকে গেলেও বেশিদূর যেতে পারে না। এর কারণ, বালিতে থাকা ঘর্ষণ বল আমাদেরকে তলিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে পানি দ্বারা প্রচুর পরিমাণে সম্পৃক্ত হবার দরুন চোরাবালিতে এই বল সাধারণ বালির তুলনায় অনেক কমে যায়। এর ফলে পানি ও মাটি মিশ্রিত হয়ে স্যুপের মতো হয়ে যায়। যখন পানি ঝরঝরে-আলগা বালির মধ্যে আটকা পড়ে, তখন এটি তরলীকৃত মাটি তৈরি করে। ফলে এই মাটি কোনো ধরনের ভার বহন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আর এরকম প্রাকৃতিক কারণেই মূলত তৈরি হয় ‘চোরাবালি’ নামক ফাঁদের।
যেভাবে চোরাবালির সৃষ্টি হয়; Source: quoracdn.net
বাঁচার উপায়
চলচ্চিত্রে দেখা চোরাবালির দৃশ্যকে সম্পূর্ণ সত্যি মনে করে আপনি হয়তো ধরেই নিয়েছেন যে, এর থেকে পরিত্রাণের সহজ কোনো উপায় নেই। আবার কেউ হয়তো এর থেকেও ভয়াবহ কিছু ভাবছেন, কল্পনা করছেন মৃত্যু! কিন্তু বাস্তবে এমনটা হওয়ার সুযোগ অনেক কম, যদি আপনি নিজে শান্ত থাকেন।
চোরাবালিতে পানি-বালির যে স্যুপ তৈরি হয়, তা অনেক সময় প্রাথমিকভাবে দেখে বোঝা খুব কঠিন। চোরাবালিতে পানি নিচের দিকে চুয়ানোর কারণে এর উপরের অংশ কখনো কখনো সাধারণ বালির মতোই দেখায়। আবার মাঝে মাঝে সাধারণ কাদা বলেও মনে হতে পারে। অর্থাৎ, অনেক ক্ষেত্রেই এমন হয় যে সেটার উপর পা রাখার আগে পর্যন্ত কেউ বুঝতে পারবে না সে চোরাবালিতে পা দিতে যাচ্ছে!
একটু চেষ্টা করলেই চোরাবালি থেকে উঠে আসতে পারবেন; Source: ytimg.com
আপনি যদি ঘটনাক্রমে চোরাবালিতে পড়েও যান, তাহলে আপনার প্রথম কাজটি হবে- আতঙ্কিত না হওয়া। আগেই বলেছি, চোরাবালি কয়েক ফুটের বেশি গভীর হয় না। তাই চোরাবালিতে পড়ে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনার জুতা জোড়া হারানোর সম্ভাবনাই প্রকট!
চোরাবালির ফাঁদে পড়লে যে কয়টি ব্যাপার মনে রাখবেন:
১. আপনি মারা যাচ্ছেন না, এটা নিশ্চিত!
২. আপনি যতটা বল প্রয়োগ করবেন, ততটাই ঐ ফাঁদে ফেঁসে যাবেন। তাই নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। কখনোই হাত-পা ছোঁড়ার চেষ্টা করবেন না। এই কাজ করলে আপনি শুধু একটাই সাফল্য পাবেন- আপনি নিজেকে চোরাবালির আরও গভীরে নিয়ে যাবেন!
৩. মানবদেহের ঘনত্ব প্রতি ঘনফুটে ৬২.৪ পাউন্ড। আর এই ঘনত্ব নিয়েই আমরা দিব্যি পানিতে ভেসে থাকতে পারি। অন্যদিকে চোরাবালির ঘনত্ব প্রতি ঘনফুটে ১২৫ পাউন্ড। তার মানে বুঝতেই পারছেন, পানির চেয়েও অনেক সহজে ভেসে থাকা যাবে চোরাবালিতে!
এখন তাহলে চোরাবালি থেকে পরিত্রাণ পাবার পদ্ধতিতে যাওয়া যাক। প্রথমত, আপনার কাঁধে কোনো ব্যাগ থাকলে তা খুলে ফেলার চেষ্টা করুন। আপনার ভর যত কমবে ততই ভালো। একইসাথে চেষ্টা করুন পায়ের জুতাও খুলে ফেলতে। জুতা থাকলে সেটা আংটার মতো কাজ করতে পারে এবং আপনাকে চোরাবালি থেকে বের হতে একটু বেশিই পরিশ্রমে পড়তে হতে পারে। অবশ্য পায়ের জুতা খুলে ফেলা সম্ভব না হলেও নিরাশ হওয়ার কিছু নেই, একটু বেশি পরিশ্রম করতে হবে, এ-ই যা!
প্রসঙ্গত একটা কথা বলে রাখা ভালো, চোরাবালিতে পুরো শরীর নিয়ে না পড়ে যদি কখনো এক পা পড়ে যায়, তাহলে সাথে সাথে পিছনে ফিরে আসুন। চোরাবালি প্রায় এক মিনিট সময় নেয় তরলিত হওয়ার জন্য। আপনি সচেতন থাকলেই নিজের পা-কে ঐ সময়ের মধ্যে বের করে নিয়ে আসতে পারবেন।
আর আপনি যদি চোরাবালিতে পুরো দেহসমেত পড়েই যান, তাহলে আরো কিছু কাঠখড় পোড়াতেই হবে। চলুন অন্য একটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করি। ধরুন, আপনি চোরাবালিতে না পড়ে একটি বিশাল বড় পুকুরে পড়ে গেছেন। তখন আপনি কী করবেন? সাঁতরে পাড়ে ওঠার চেষ্টা করবেন অবশ্যই। একই কাজ করতে হবে চোরাবালির ক্ষেত্রেও। নিজের দেহকে আনুভূমিক করে পিঠের উপর ভর দেয়ার চেষ্টা করুন। এতে আপনার শরীরের ভর সমানভাবে বণ্টন হবে। এর ফলে আপনি সহজে ভেসে থাকতে পারবেন। এরপর মূলত আপনাকে চিৎসাঁতার দিতে হবে! নিজের পা দুটোকে ঝাঁকিয়ে পায়ে লেগে থাকা বালিগুলোকে আলগা করার চেষ্টা করুন এবং ধীরে ধীরে সেগুলোকে উপরে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। সাঁতারে যেভাবে হাতকে কাজে লাগান ঠিক সেভাবে এখানেও করার চেষ্টা করুন। তবে সাবধান! নিজের হাত দুটোকে ডুবিয়ে একসাথে করবেন না যেন। তাহলে ওগুলো আবার চোরাবালিতে আটকে যেতে পারে! এভাবে সাঁতরে আপনি যখন একটু শক্ত মাটির নাগাল পাবেন, নিজেকে টেনে বের করে নিয়ে আসুন।
হলিউডের একটি মুভিতে নায়কের চোরাবালিতে পড়ে যাওয়ার দৃশ্য; Source:slate.com
তাহলে কি চোরাবালিকে একদম ভয় পাবেন না?
চোরাবালি যে একদম অহিংস- এমন বলা যাবে না। আবার অত্যন্ত বিপদজনক- এ কথাও বলা যাবে না। নিজে নোংরা হওয়া, জুতা কিংবা কাঁধের ব্যাগ হারানোর থেকে তেমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা এতে তেমন নেই। কিন্তু ব্যাপারটা মারাত্মক হতে পারে এতে আটকা পড়ার জায়গার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। চোরাবালিতে আটকা পড়ার পর মৃত্যুর খবরও শোনা যায়নি, এমন বলা যাবে না। সমুদ্রের তীরে চোরাবালিতে আটকা পড়ে পরবর্তীতে সমুদ্রে ঢেউয়ের কারণে মারা যাওয়ার ঘটনাও শোনা গেছে। আবার জনমানবহীন জায়গায় চোরাবালিতে আটকা পড়ে যদি নিজেকে উপরে তুলে আনতে কেউ ব্যর্থ হন, তাহলে সেটাকেও যথেষ্ট বিপদজনক বলতে হবে। তাই বলা যায়, মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করলে আপনার তেমন কোনো ক্ষতিই হবে না চোরাবালি থেকে।
এবারে আপনাদেরকে একটু চমকে দেয়া যাক! চোরাবালি যে পানি আর বালির সংমিশ্রণেই হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। চোরাবালি শুষ্কও হতে পারে। শুষ্ক চোরাবালি তখনই তৈরি হয়, যখন বালুকণা অত্যন্ত আলগা গঠন ধারণ করে। এর এমন পরিস্থিতি হয় যে, এটি খুব কষ্টে নিজের ভরই ধরে রাখে। তাহলে ভাবুন আপনি পড়ে গেলে কী হবে? তাসের ঘর যেভাবে পলকের মধ্যে ভেঙে যায়, ঠিক সেভাবেই টুপ করে এর ভেতরে হারিয়ে যাবেন আপনি! এখন মনে মনে আপনি হয়তো ভাবছেন, তাহলে চোরাবালিকে বিপদজনক বলবো না কেন? সৌভাগ্যবশত শুষ্ক চোরাবালির অস্তিত্ব গবেষণাগার ছাড়া প্রকৃতিতে কখনো পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা বিশেষ পদ্ধতিতে বালির মধ্য দিয়ে বায়ু প্রবাহিত করার মাধ্যমে শুষ্ক চোরাবালি তৈরি করেন। তবে বিজ্ঞানীরা শুষ্ক চোরাবালির অস্তিত্ব একেবারেই নাকচ করে দেন না। তবে কখনো যদি এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, ভাগ্যের উপর ভরসা করা ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না বৈকি!