জিহ্বার রং বদলে যাওয়া আর জিহ্বায় ফাটল দেখা দেয় কেন? এসব কোন কোন রোগের ইঙ্গিত দেয়? করনীয় কি?
ashad khandakerনতুন
জিহ্বার রং বদলে যাওয়া আর জিহ্বায় ফাটল দেখা দেয় কেন? এসব কোন কোন রোগের ইঙ্গিত দেয়? করনীয় কি?
শেয়ার করুন
জিহ্বা দেখেই চিকিৎসকরা বলে দিতে পারেন কে কোন সমস্যায় ভুগছেন। এর কারণ হলো শরীরে কোনো রোগ বাসা বাঁধলে তার প্রভাব জিহ্বাতেও পড়ে। এক্ষেত্রে জিহ্বার রং বদলে যায়।
একটি স্বাস্থ্যকর জিহ্বার আদর্শ রং হালকা গোলাপি। তবে এর চেয়ে বেশি হালকা, ধূসর, সাদা, লাল, হলুদ কিংবা বেগুনি দেখলে তা হতে পারে বিভিন্ন রোগের ইঙ্গিত। এই রঙের পরিবর্তনগুলো যদি কয়েক দিনের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে তবে আপনাকে চিন্তা করতে হবে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক, জিহ্বার রং বদলে যাওয়া কীভাবে বিভিন্ন রোগের ইঙ্গিত দেয়-
গোলাপি জিহ্বা
জিহ্বার প্রাকৃতিক রং হলো সামান্য সাদা আবরণসহ গোলাপি। এমন জিহ্বা থাকলে বুঝে নেবেন আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ ও শরীর স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে।
একটি সুস্থ জিহ্বায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছোট ছোট মাংসল বাম্প থাকবে, যা জিহ্বাকে একটি মোটা টেক্সচার দেবে।
হলুদ জিহ্বা
একটি হলুদ জিহ্বা প্রায়ই পেটের সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। হজম বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে আপনার জিহ্বা হলুদ বর্ণের হবে।
ইউএস ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায়ও দাবি করা হয়েছে, হলুদ জিহ্বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে।
আবার হলুদ জিহ্বা জন্ডিস এমনকি খারাপ মৌখিক স্বাস্থ্যবিধির কারণেও হতে পারে। এর অর্থ হলো আপনার জিহ্বায় ব্যাকটেরিয়া জমেছে।
সাদা বা ধূসর
জিহ্বায় সাধারণত একটি সাদা আবরণ থাকে, তবে কিছু ধূসর অংশের সঙ্গে যদি এটি স্বাভাবিকের চেয়ে সাদা মনে হয় তাহলে বুঝবেন এটি শরীরে ইস্ট সংক্রমণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আবার ধূমপানের ফলে বা অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণেও জিহ্বায় সাদা দাগও লক্ষ্য করা যায়। যাকে বলা হয় লিউকোপ্লাকিয়া।
বেগুনি
শরীরের রক্ত সঞ্চালন খারাপ হলে জিহ্বা বেগুনি হয়ে যায়। ফুসফুস বা হার্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনুপযুক্ত রক্ত সঞ্চালন হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরেই যদি জিহ্বার রং বেগুনি দেখেন তাহলে বুঝবেন আপনি হৃদরোগে ভুগছেন।
লাল জিহ্বা
একটি উজ্জ্বল লাল জিহ্বা সাধারণত ফোলা ও আঁশযুক্ত হয়। চিকিৎসকরা একে ‘স্ট্রবেরি জিহ্বা’ হিসাবে অভিহিত করেন।
এটি প্রায়ই রক্তের ব্যাধি বা হার্টের সমস্যা নির্দেশ করে। ভিটামিন বি এর ঘাটতি বা স্কারলেট ফিভারের ইঙ্গিতও হতে পারে লাল জিহ্বা।
শরীরের ভেতরের বিভিন্ন সমস্যার লক্ষণ কিন্তু ফুটে ওঠে জিহ্বায়। আর এ কারণেই চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি রোগীর জিহ্বা পরীক্ষা অবশ্যই করেন। জিহ্বায় কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলেই বুঝতে হবে শরীরে হয়তো কোনো রোগ বাসা বেঁধেছে।
জিহ্বায় ঘা হওয়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর তেমনই একটি সমস্যা হলো জিহ্বায় ফাটল দেখা দেওয়া। অনেকে হয়তো এ সমস্যাকে সাধারণভাবে দেখেন, তবে এটি কিন্তু একটি গুরুতর লক্ষণ। শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি হলে জিহ্বায় ফাটল দেখা দিতে পারে। একে স্ক্রোটাল টাং বলা হয়।
স্ক্রোটাল টাং বা স্ক্রোটাল জিহ্বা কী?
এ ক্ষেত্রে জিহ্বায় ফাটল দাগ দেখা দিতে পারে কিংবা খাঁজকাটা বা কুঁচকে যেতে পারে। ভিটামিন বি ১২, ভিটামিন বি ৯ (ফোলেট) ও ফেরিটিন (লোহা সঞ্চয় করে এমন একটি প্রোটিন) এর ঘাটতির কারণে এই অবস্থা ঘটতে পারে।
জিহ্বায় এমন ফাটল দেখা দিলে অস্বস্তি হয়, বিশেষ করে মসলাদার খাবার খাওয়ার সময় জ্বালাপোড়া হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে সাইট্রাস ও মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন।
স্ক্রোটাল জিহ্বা হলে কী করবেন?
এক্ষেত্রে মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। জিহ্বা পরিষ্কার করার রুটিন অনুসরণ করতে হবে। তবে স্ক্রোটাল জিহ্বা দেখা দিলে প্রথমে খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে। কী কী খাবেন জেনে নিন-
ভিটামিন বি ১২এর ঘাটতি মেটাতে গরুর মাংস, কলিজা, মুরগির মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, মাখন, পনির ইত্যাদি খেতে হবে। চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্টও গ্রহণ করতে পারেন।
ভিটামিন বি ৯ কে ফোলেট বলা হয়। ব্রাসেলস স্প্রাউট, ছোলা, কিডনি বিনস, বাঁধাকপি, কেল ও পালং শাক ইত্যাদি শাক-সবজিতে পাওয়া যায় এই ভিটামিন। ফলিক অ্যাসিডের সাপ্লিমেন্টও খেতে পারেন এক্ষেত্রে।
কুঁচকানো বা ফাটা জিহ্বা ছাড়াও, ফোলেটের ঘাটতির কারণে ক্লান্তি, শক্তির অভাব, হাত পায়ে ঝি ঝি ধরা, জিহ্বায় ঘা, মুখের আলসার, পেশী দুর্বলতা ও দৃষ্টি বিঘ্নিত হতে পারে।
এছাড়া মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা যেমন- বিভ্রান্তি, বিষণ্নতা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, বোঝাপড়া ও বিচারের মতো সমস্যা হতে পারে।
ভিটামিন বি ৯ এর ঘাটতির কারণে হার্টেও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এমনকি হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা, অস্থায়ী বন্ধ্যাত্ব ও গর্ভাবস্থার সমস্যা হতে পারে এই ভিটামিনের ঘাটতিতে।