শেয়ার করুন
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান এর পর টোল সম্পর্কিত এটা একটা বার্নিং কোশ্চেন। পৃথিবীর বহুদেশেই টোল ব্রিজ বা টোল সড়ক আছে। উইকিতে একটা তালিকা পাবেন। একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে চিন্তা-ভাবনায় উন্নত দেশের মানুষেরা বিভিন্য ফোরামে প্রশ্ন করে “টোল ব্রিজ কী?/টোল ট্যাক্স কী? আমি কিভাবে এটা পে করতে পারি?”
অন্যদিকে আমাদের ভারত উপমহাদেশের দেশগুলোতে এটার উলটো প্রশ্ন করা হয়। কারণ এ অঞ্চলের মানুষেরা বিশ্বাস করে তারা যে পরিমান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর দিচ্ছে শুধু সেটা দিয়েই লাগামহীন অর্থ কেলেঙ্কারীর এ অঞ্চলগুলোতে উন্নয়ন কাজ সম্ভব।
প্রকৃতপক্ষে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কিভাবে ভুল তা নিয়ে কোন ব্যাখা বিশ্লেষণে যাবোনা, চেষ্টা করবো এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে।
তবে এটা জানার আগে বুঝতে হবে বিভিন্য সরকারী অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলো কিভাবে কাজ করে। আমাদের দেশে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ সংক্ষেপে পিপিপি নামে একটা অথোরিটি আছে যারা প্রাইভেট ফাইন্যান্সিং নিয়ে পাবলিক ফাইনান্সিং এর সাথে সংযুক্ত করে কোন একটা প্রকল্প শুরু করে। যেমন বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক, ২য় পদ্মা সেতু এগুলো পিপিপি’র অন্তর্ভুক্ত।
একই রকম ভারতে যেটা হয় সেটা BOT (Build, Operate, Transfer) ম্যাকানিজম। এখানে কর্পোরেটগুলোর কাছে সরকার পুরো দায়িত্ব দিয়ে দেয়, এরপর তারা সেটা নির্মান করে সরকারকে হস্তান্তর করে সরকারের কাছ থেকে নির্মান ব্যায় তুলে নেয় এরপর নিজেরাই টোল আদায় করে পুরো অবকাঠামোর অপারেশন এবং মেইনটেনেন্স এর দায়িত্ব নিয়ে নেয়। অনেকটা আমাদের দেশের লোকাল সড়ক বা সেতুর কাজ ঠিকাদারদের দিয়ে দেয়ার মত।
তবে এদুটোর কোনটায় ট্যাক্স পেয়ারদের টাকায় নির্মান হয়না বিধায় এখানে টোল আদায়ের ব্যাপারটাকে সম্পূর্ণ যৌক্তিক চোখে সবাই দেখতে চাইলেও, পদ্মা সেতুর মত কোন অবকাঠামো নির্মানের ক্ষেত্রে ট্যাক্স পেয়ারদের টাকা নিলেও আবার কেন টোল দিতে হবে এই প্রশ্নের জাগরণ কে যৌক্তিক চোখে দেখলেও কেউ প্রশ্নটাকে অযৌক্তিক বলে মানতে চান না।
প্রথম সরকার কেন ট্যাক্স এর টাকা ব্যবহার করে? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে খুঁজতে হবে অর্থকড়ি ছাড়া যদি সরকার দেশ চালাতে না পারে তাহলে সেই অর্থের জোগান কোথা থেকে আসে? ঋণ নিয়ে? রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিভিন্য বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত মুনাফা দিয়ে? না কি রাজস্ব থেকে? আসলে এই সবগুলো খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়েই সরকার দেশ পরিচালনা করে।
রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে রয়েছে অনেক, মাধ্যম দুইটা। একটা প্রত্যক্ষ কর অন্যটা পরোক্ষ কর। প্রত্যক্ষ কর হচ্ছে যেটা আপনি নির্দিষ্ট সম্পদ এর জন্য সরাসরি প্রদান করছেন এবং যার জন্য আয়কর বিভাগ আপনাকে একটা ছাড়পত্র দিচ্ছে। অন্যদিকে পরোক্ষ কর যেটা আপনি সরাসরি দিচ্ছেন না বরং আপনার হয়ে কোন প্রতিষ্ঠান কর দিচ্ছে এবং সমপরিমান মূল্য আপনার থেকে সেই প্রতিষ্ঠান কর্তন করে নিচ্ছে। যেমন আপনি যখন এক লিটার তৈল কিনছেন বাজার থেকে সেই তৈলের মূল্য বাবদ যা দিচ্ছেন সেটা যদি ২০০ টাকা হয় তাহলে আমরা বোঝানোর সুবিধার্তে ধরে নিতে পারি ১৯০ টাকা মূল্য দাম এবং বাকী ১০ টাকা কর বাবদ কেটে নিচ্ছেন। অর্থ্যাৎ আয়কর বিভাগ সেই তৈল বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি লিটারে ৫% করে শুল্ক নিচ্ছেন (যেটা প্রকৃতপক্ষে ভোক্তা প্রদান করবে) সেই ৫% শুল্ক ওই প্রতিষ্ঠান ভোক্তাদের কাছ থেকে আবার আদায় করে নিচ্ছেন। পুরো ব্যাপারটা হয়তো আরো সহজে ব্যাখা করা যেতে পারে বা আপনি ইতোমধ্যে আমার চেয়েও ভালোভাবে জানেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এগুলোর সাথে টোলের সম্পর্ক কী? সম্পর্ক বেশ নিবিড়। এই টোল ও একধরণের ট্যাক্স যাকে টোল ট্যাক্স বলা হয়। একবার চিন্তা করে দেখেন একটা সেতু বা সড়কের রক্ষনাবেক্ষন বা পরিচালন ব্যায় আছে। সরকার আপনার কাছ থেকে ট্যাক্স নিয়েছে শুধু সেটার নির্মান ব্যায় হিসেবে, রক্ষনাবেক্ষন ব্যায় তো একটা চলমান প্রক্রিয়া। সেটার জন্য সরকার আপনার আমার কাছ থেকে কোন ট্যাক্স কিন্তু নিয়ে রাখেনি। কারণ এই ব্যায়টা ধ্রুবক নয়।
ইতোমধ্যে জেনে থাকবেন সরকার বলেছেন পদ্মা সেতু ৩৫ বছর পর লাভের মুখ দেখতে শুরু করবে। অর্থ্যাৎ সরকার রাজস্ব খাত থেকে অর্থ নিয়ে সেতু নির্মান করতে যে অর্থ ব্যায় করেছে সেটা তুলতে ৩৫ বছর লাগতে পারে। এরপর যা টোল আদায় হবে তা সরকারের লাভের খাতায় প্রবেশ করবে। অনেকটা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মত। এখনও প্রশ্ন থেকেই যায় রাজস্ব থেকেই তো নির্মান হলো, সেক্ষেত্রে সরকার শুধু রক্ষনাবেক্ষন ব্যায় বাবদ এত টাকা টোল কেন নেবে বা ৩৫ বছর পর কি টোল আদায় বন্ধ হয়ে যাবে? কেন নেবে এটাই তো মূল বিষয়, সেখানে যাবো। তবে তার আগে আরো কিছু জেনে নেয়া যাক। আর ৩৫ বছর পর টোল আদায় বন্ধও হয়ে যাবেনা।
একবার চিন্তা করেন, দেশের মূল মালিক দেশের জনগণ। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো পদ্মার উপর পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ রুটে আরেকটা সেতু বানাবে। কিন্তু ১৬ কোটি মানুষের সবাইতো আর খাওয়া-পরা বাদ দিয়ে সেতু নির্মানে লেগে যাবেনা! একারণে সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে একটা সংঘের কাছে সেই দায়িত্ব দিয়ে দিলো। তারা হিসেব নিকেষ করে দেখলো এখানে সেতু বানাতে ৪০ হাজার কোটি টাকা লাগবে। দেশের সবাই মিলে চাঁদা তুলে ৩০ হাজার কোটি টাকা তাদের প্রদান করলেন এবং বাকিটা ম্যানেজ করে নেয়ার জন্য বললেন। ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যায় করে সেই সংঘ সেখানে সেতু নির্মান করে আমাদের প্রত্যেকের হাতে হস্তান্তর করলেন ১৬ কোটি দলিলে প্রত্যেকের স্বাক্ষর নিয়ে তাদের অংশীদারিত্ব বুঝিয়ে দিলেন।
এরপর এরা দেখতে পেলেন সেই সেতুর লাইট জ্বালানো, রঙ করা, ধোয়া-মোছার জন্য তাদের নিজেদের সেখানে যেতে হচ্ছে। একারণে তারা আবার আগের সেই সঙ্ঘকে দায়িত্ব দিলেন এই কাজগুলো করার। সেই সঙ্ঘ আদায়কৃত টোলের মাধ্যমে রক্ষনাবেক্ষন খরচ ওঠানো শুরু করলেন। এক পর্যায়ে দেখা গেলো রক্ষনাবেক্ষন খরচ বাবদ যে টাকা তারা আদায় করছেন তার কিছু অংশ অবশিষ্ট থেকে যাচ্ছে, এবার সেই অবশিষ্ট অংশ ১৬ কোটি মানুষের কাছে সমান ভাগ করে তাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এই টাকাই আবার পরবর্তী কোন উন্নয়ন কাজে ১৬ কোটি মানুষ খরচ করছে। এভাবে চললে জগাখিচুড়ি হয়ে যাবে না? এগুলো যেন না হয় সেজন্যই জনগণ তাদের নিজেদের মধ্য থেকেই কোন ব্যক্তি/গোষ্ঠীকে বেছে নেয় সমস্ত কাজগুলো ম্যানেজমেন্ট এ আনার জন্য।
একই পরিস্থিতিকে এবার ম্যানেজমেন্ট এর আওতায় আনা যাক। জনগণ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেই গোষ্ঠী এবার সব সেতু আর সড়কের দেখভাল করার জন্য আলাদা আরেকটা শাখা খুললেন যার নাম দিলেন সড়ক ও সেতু বিভাগ। নতুন সড়ক/সেতু নির্মান, পুরাতন গুলোর দেখভাল করার দায়িত্ব এদের। এরা এসে দেখলো দেশে অনেক সড়ক আছে যেগুলোতে প্রতিবছর রক্ষনাবেক্ষন বাবদ অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। তারা অর্থ বিভাগের কাছে তার জন্য টাকা চাইলো। অর্থ বিভাগ জানিয়ে দিলো জনগন তাদের যে টাকা দিয়েছে সেখান থেকে সব বিভাগের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব না, সেকারণে সড়ক ও সেতু বিভাগকেও চাহিদা মাফিক টাকা প্রদান সম্ভব নয়। সড়ক ও সেতু বিভাগ সেই অল্প টাকা নিয়ে মাঠে নেমে পরলেও ঘাটতি টাকাটার জোগান এর ব্যবস্থা করে নিলো বড় কোন সড়ক বা সেতু থেকে আদায়কৃত টোলের মাধ্যমে।
একই সাথে সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে আর কিছু টাকা অর্থ বিভাগ থেকে নিয়ে অন্য কোথাও একটা সড়ক নির্মান করলেন যার জন্য সরকার অতিরিক্ত কোন ট্যাক্স বা কর নিলেন না। অর্থ্যাৎ সড়ক/সেতু বিভাগের প্রধানতম আয়ের উৎস হচ্ছে এই টোল ট্যাক্স যার সাথে সামগ্রিক রাজস্ব খাতের কোন সম্পর্ক নেই আবার একে সম্পূরক খাতও বলা যায়না। অর্থ্যাৎ এই টোল ট্যাক্স কখনোই সরকারের রাজস্ব হিসেবে জমা থাকেনা (সহজ অর্থে রাজকোষাগারে) বরং সড়ক এবং সেতু বিভাগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্য কাজেই সেই অর্থের ব্যায় করে থাকে। মোটাদাগে টোলের থেকে আদায় করা অর্থ আবার আপনাকেই ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো খাতে। এবং সেসব কাজের জন্য সরকারের রাজস্ব খাত (বিশেষঃত ট্যাক্স পেয়ারদের) থেকে কোন অর্থ তারা নিচ্ছেন না।
টোল ব্রিজের তালিকাতে সম্ভবত কানাডা শীর্ষে। যার অধিকাংশই কানাডার নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত, তবুও তারা টোল নিচ্ছেন, সেখানকার জনগণ দিচ্ছেন। কারণ তারা জানেন সরকার এভাবেই তাদের কাছ থেকে পয়সা-কড়ি নিয়ে দেশ চালাবে। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস মুদ্রা-বৃষ্টি হয়না, অতএব সড়ক বিভাগের চলতে হলে এই এক টোল ট্যাক্সই অন্ধের ষষ্ঠী। সড়ক বিভাগকে চলতে দিন, কেন টোল দেব প্রশ্ন না করে বরং প্রশ্ন করুন “ট্যাক্স এর টাকায় নির্মিত সড়কের রক্ষনাবেক্ষন কেন এত খারাপ? বৃষ্টি হলেই সড়কে খানা খন্দে ভড়ে যায় তার জন্য আপনাদের R&D আছে? টাকা তো আমাদের গাছে ধরেণা যে আমি ছিড়ে ছিড়ে আপনাকে দেব আর আপনি তার অপচয় করবেন?”
ধন্যবাদ!