শেয়ার করুন
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
ছোটবেলায় ইংরেজি বিষয়ে অনুচ্ছেদ লেখায় যখন শখের কথা বলতে হতো আমাদের, তখন একটি বহুল প্রচলিয় শখের কথা শোনা যেত মুখে মুখে- বাগান করা। বাড়ির সামনে একটি ছোট্ট বাগান, সেখানে নানা রঙের ফুল আর সবজির সমারোহ। এমন ভাবনা স্বপ্নে দেখা আর সেটা সত্যি করে তোলায় আজকাল ফারাক থেকে যায় শহুরে বাস্তবতায়। কংক্রিটের নগরীতে সংকীর্ণ জায়গায় বাগান করার ধারণা বেশ চ্যালেঞ্জের ব্যাপার ঠেকে। কিন্তু পৃথিবী যখন জলবায়ু সংকটের মতো ভয়াবহ এক পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে আছে, তখন সবুজ পৃথিবীর স্বপ্ন বাস্তব করে তোলা বেশ জরুরি হয়ে উঠেছে। সেই ভাবনায় বাগান করা ঠিক কতটা গুরুত্ব বহন করতে পারে- এই লেখায় জানা যাক সেই ব্যাপারে।
গাছ লাগানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
গাছের ছাউনিগুলো একটি শারীরিক ছাকঁনি হিসেবে কাজ করে। এরা ধুলো আটকায়, এবং বায়ু থেকে দূষক শোষণ করে। গাছ সৌর বিকিরণ থেকে ছায়া প্রদান করে এবং শব্দ কমায়।
গবেষণা বলছে, আপনি যদি গাছ এবং সবুজে ঘেরা স্থানে মিনিটখানেকও অবস্থান করেন, তাহলে আপনার রক্তচাপ কমতে থাকবে, এবং হৃদস্পন্দন ধীর হবে। একইসাথে আপনাকে মানসিক প্রশান্তিও এনে দিতে সক্ষম গাছ।
আপনি যদি গাছ এবং সবুজে ঘেরা স্থানে মিনিটখানেকও অবস্থান করেন তাহলে মানসিক প্রশান্তি পাবেন। Image Courtesy : http://www.birstall.co.uk Caption
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি গাছ লাগানোর মতো উদ্যোগ জলবায়ু সংকট মোকাবেলা করার জন্য বায়ুমণ্ডল থেকে ক্ষতিকর কার্বন ডাইঅক্সাইড বের করে নেওয়ার সবচেয়ে বড়, এবং সুলভ উপায়গুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রতিটি পৃথক গাছ প্রতি বছর ১.৭ কেজি পর্যন্ত কার্বন অপসারণ করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গাছ লাগানোর উদ্যোগে ফসলি জমির ক্ষতি করা যাবে না। শহুরে এলাকায় বাস্তবায়ন করতে হবে সবুজায়নের এই প্রচেষ্টা। বাগান করা তাই হতে পারে এই উদ্যোগের সহজ সমাধান।
কার্বন ডাইঅক্সাইডকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয়। মানুষের নানা কার্যকলাপের দরুন বায়ুমন্ডলে এর উপস্থিতি ক্রমশই বাড়ছে। একটি গাছ যত বড় হতে থাকে, এই কার্বন ডাইঅক্সাইড সঞ্চয় ও শোষণের ক্ষমতা বাড়তে থাকে তার।
গাছ বাতাসের গতি কমিয়ে একে শীতল করে। এর পাতা সূর্যের তাপ প্রতিফলিত করে। এতে কমে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা। অনুমান করা হয়, গাছ একটি শহরের তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমাতে পারে।
গাছ শহরের তাপমাত্রাও কমাতে সক্ষম; Image Courtesy : Asean Foundation
শুধুই গাছ লাগানো বাগান করা নয়
দেখতে যেমনই হোক, পৃথিবীর সকল বাগানই প্রায় একই ভিত্তির উপরই তৈরি। বাগান করার মূল উপাদানগুলো সেখানে থাকবেই।
বাগান করার অর্থ শুধু চারা লাগানোই নয়। কিংবা সৌন্দর্যের ভাবনা থেকেই বাগান করা হয়- এমন ভাবনাও অমূলক। বরং এর সংজ্ঞা বেশ বিস্তৃত পরিসর জুড়ে ছড়িয়ে আছে। সংশ্লিষ্ট স্থানের মাটি, পোকামাকড়, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী, সরীসৃপ এসব কিছুই একটি বাগানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। একটি বাগান স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের উন্নতিতে দারুণ প্রভাব রাখতে পারে। একইসাথে এটি দূষণ কমাতে এবং উষ্ণায়নের বিরুদ্ধেও বেশ কার্যকর। প্রকৃতির প্রতিটি বিষয়ের সাথে নিবিড় সম্পর্কে মিশে থাকে বাগানের নাম।
এ কারণেই যদি আপনার লক্ষ্য হয়ে থাকে শুধু গাছের বৃদ্ধি, তাহলে সেটি হবে হতাশার। কারণ সেখানে অর্থনৈতিক চিন্তারই বহিঃপ্রকাশ ফুটে ওঠে। কিন্তু প্রকৃতির ভাবনায় লক্ষ্যের জায়গাতে আনতে হবে পরিবর্তন, চিন্তার পরিধিকে করে তুলতে হবে বিস্তৃত। জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে এবং সবুজ পৃথিবীর স্বপ্নকে সত্যি করে তুলতে বাগানকে করে তুলতে হবে পরিবেশ ও প্রাণীবান্ধব।
বাগানে গাছ লাগানো কতটা পার্থক্য গড়ে দিতে পারে?
বৈশ্বিক উষ্ণতা কার্বন ডাইঅক্সাইডের মতো অত্যধিক গ্রিনহাউজ গ্যাসের কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই গ্যাস বায়ুমণ্ডলে তাপ আটকে রাখে। সময়ের সাথে সাথে এই উষ্ণতা ব্যাপক জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান রাখে, যার ফলে বরফের টুকরো গলে যেতে পারে, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে পারে, এবং ক্রমবর্ধমান তীব্র ঝড় ও দাবানল হতে পারে।
আপনার ছোট্ট জমিতে কয়েকটি গাছ, গুল্ম, ফুল এবং শাকসবজি রোপণ করা এই প্রভাবকে প্রশমিত করতে সহায়তা করতে পারে। বাড়ির উঠোনে করা বাগানের গাছগুলো পরিমাণে কম হলেও কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণে সক্ষম। এমন ছোট্ট জায়গায় বপন করা গাছের চারা খুব একটা পার্থক্য গড়ে দিতে পারে না। কিন্তু আমরা এখন যে পরিস্থিতিতে আছি, সেটা আমলে নিলে প্রতিটি সামান্য পদক্ষেপও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
একটি গাছের চারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে; Image Courtesy : Billion Tree Initiative
যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম বনভূমি সংরক্ষণ বিষয়ক দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘উডল্যান্ড ট্রাস্ট’ এর উডল্যান্ড আউটরিচ ডিরেক্টর জন টাকার বলছেন, “একটি গাছের চারা হয়তো কোনো পার্থক্য তৈরি করবে না, কিন্তু যদি ১ কোটি মানুষ একটি করে গাছ লাগায় তাহলে সেটি অবশ্যই পার্থক্য গড়ে দিতে সক্ষম। ” লোকেরা যদি মনে করে যে তারা কিছু করতে চায়, তাহলে সঠিক জায়গায় একটি গাছ লাগানো একটি ভালো কাজ বলে মত দিয়েছেন টাকার।
আপনার নিজের জন্য খাদ্যের জোগান দেওয়া আপনার পরিবেশগত প্রভাবকেও কমিয়ে দিতে পারে, কারণ এর অর্থ হলো মুদি দোকানে কম যেতে হয়। বাজারে কিংবা সুপারশপ থেকে কেনা সবজি ও ফল প্রায়ই দূরের এলাকা থেকেই আসে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য আমদানি করা পণ্যের চেয়ে পরিবেশের জন্য সর্বদা ভাল।
এগুলোর পরিবহনে জ্বালানী শক্তি ব্যয় হয়। এটি একইসাথে উচ্চ কার্বন ফুটপ্রিন্টের মাধ্যমে পরিবেশে দূষণ ছড়াচ্ছে। কিন্তু নিজের বাগানেই যদি সেই সবজি বা ফল উৎপাদন করা সম্ভব হয়, তাহলে নিজের খাবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পরিবেশেও রাখা যাবে ইতিবাচক প্রভাব।
জন টাকার মানুষকে আমদানির মাধ্যমে এসেছে এমন গাছ কেনা থেকে বিরত থেকে নিজ দেশ বা এলাকায় জন্মানো গাছের চারা লাগানোর উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলছেন, “আমদানী করা গাছ কিনতে লোকেদের উৎসাহিত করা এড়াতে চাই। কারণ এটি রোগের ঝুঁকি নিয়ে আসে।”
চাইলেই বাগানে সব গাছ লাগানো যায় না। আবার বাগানের আকারভেদেও চারা লাগানো নির্ভর করে। আপনি যেখানে থাকেন, সেখানে কোন প্রজাতির গাছের বৃদ্ধি ভালো হবে, এবং এটি কত বড় হতে পারে সেই সম্পর্কে আপনাকে ভাবতে হবে। জন টাকার বলছেন, “আপনার পেছনের দরজার বাইরে দুই ফুট একটি ওক গাছ লাগিয়ে কোনো লাভ নেই- এটি আপনার বাড়ির ক্ষতি করবে।”
বাগানে কী গাছ লাগাচ্ছেন সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত; Image Courtesy :cwf-fcf
তার মতে, বাগান করার ক্ষেত্রে বাড়ির ভিত্তি, ভূগর্ভস্থ ড্রেন, ওভারহেড পাওয়ার লাইন সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে, এবং নিশ্চিত করতে হবে যে গাছটি এমন জায়গায় থাকবে যেখানে এটি বাড়তে পারে, এবং কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। আপনার প্রতিবেশীদের উপর প্রভাব সম্পর্কেও চিন্তা করতে হবে। ছোট প্রজাতির মধ্যে আপেল গাছ বা রোয়ান অন্তর্ভুক্ত।
শুধু রোপণের কাজকে এই প্রক্রিয়ার শেষ হিসেবে দেখা উচিত নয়। সদ্য রোপণ করা গাছের জন্য পরিচর্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যত্ন ছাড়াই আমরা এমন অনেক গাছ রোপণ করতে পারি যেগুলো অকালেই মারা যায়, বা এমন আকারে বাড়ে না যেখানে তারা কার্বন শোষণ করার মতো সুবিধা প্রদান করতে পারে।