1905 সালে বঙ্গভঙ্গের কারণ কী এবং তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার?
শেয়ার করুন
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
1905 সালে বঙ্গভঙ্গের কারণ
১৯০৫ সালে ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জন কর্তৃক বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয়, যা বাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বঙ্গভঙ্গের পেছনে প্রধানত প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় কারণসমূহ বিদ্যমান ছিল।
প্রশাসনিক কারণ
বাংলা প্রদেশের আয়তন ছিল প্রায় ১,৮৯,০০০ বর্গমাইল এবং জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৮৫ লাখ। এত বৃহৎ প্রদেশের কার্যকর প্রশাসন ব্রিটিশ সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। পূর্বাঞ্চল ভৌগোলিকভাবে পশ্চিমাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল এবং যাতায়াত ব্যবস্থার অভাব ছিল। এই প্রশাসনিক অসুবিধা দূরীকরণের লক্ষ্যে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রাজনৈতিক কারণ
ব্রিটিশ সরকার ‘Divide and Rule’ (ভাগ কর, শাসন কর) নীতি অনুসরণ করে বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে। এছাড়া, বাঙালি হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছিল, যা ব্রিটিশ শাসকদের জন্য উদ্বেগের কারণ ছিল। বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা করা হয়।
অর্থনৈতিক কারণ
পূর্ব বাংলার অর্থনীতি ছিল মূলত কৃষিভিত্তিক এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক উন্নয়ন ছিল সীমিত। কলকাতা ছিল ব্রিটিশ ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র, যা পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য সুবিধাজনক ছিল। বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করা হয়।
সামাজিক কারণ
ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলমান সম্প্রদায় সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে ছিল। বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলায় মুসলমানদের জন্য নতুন প্রদেশ গঠিত হয়, যার রাজধানী হয় ঢাকা। এটি মুসলমানদের মধ্যে আশার সঞ্চার করে এবং তারা বঙ্গভঙ্গকে সমর্থন জানায়।
ধর্মীয় কারণ
অবিভক্ত বাংলার পূর্বাংশে মুসলমান এবং পশ্চিমাংশে হিন্দু সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দুটি সম্প্রদায়ের জন্য দুটি প্রদেশ গঠনের চেষ্টা করা হয়, যা ব্রিটিশ সরকারের ‘Divide and Rule’ নীতির অংশ ছিল।
উপরোক্ত কারণসমূহের সমন্বয়ে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয়, যা পরবর্তীতে বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।
বঙ্গভঙ্গ বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার ছিল
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জন-এর উপর। লর্ড কার্জন এই বিভাজনের প্রস্তাব করেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন।
তাঁর প্রশাসনিক যুক্তি ছিল, বাংলা প্রদেশ ছিল অত্যন্ত বড় এবং জনসংখ্যা ছিল বিপুল, যা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে উঠেছিল। তবে এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও ছিল, বিশেষ করে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দুর্বল করা এবং হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা।
লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করেন, যা বাংলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে:
1. পূর্ব বাংলা ও আসাম (মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল)।
2. পশ্চিম বাংলা (হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল)।
তবে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বাঙালিদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯১১ সালে এটি বাতিল করা হয়।
বঙ্গভঙ্গ 1905 সালের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা ছিল, যা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল। এর কারণ এবং বাস্তবায়নের দায়িত্বের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা যাক:
বঙ্গভঙ্গের কারণ:
বাস্তবায়নের দায়িত্ব:
বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করেন তখনকার গভর্নর লর্ড কার্জন। তিনি 1905 সালে 16 অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা করেন। এই সিদ্ধান্তে, বাংলাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় — একটি হিন্দু অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গ এবং একটি মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশের বেশিরভাগ অংশ)।
কার্জনের লক্ষ্য ছিল, বাংলার মুসলিম এবং হিন্দু জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি করা এবং ব্রিটিশ শাসনকে আরো শক্তিশালী করা। যদিও বঙ্গভঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলন শুরু হয়েছিল, কিন্তু এটি ব্রিটিশ শাসনকেই দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করেছিল।
উপসংহার:
বঙ্গভঙ্গ 1905 সালে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ, যার উদ্দেশ্য ছিল ভারতবর্ষে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন সৃষ্টি করে তাদের শাসন বজায় রাখা। এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নকারী ছিলেন লর্ড কার্জন, যিনি তৎকালীন বাংলার গভর্নর ছিলেন।