হোমপেজ/অ্যাপেন্ডিসাইটিস
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ‘সার্ফেস মার্কিং’ নামক একটি পরীক্ষা হয়ে থাকে। এই পরীক্ষাতে একজন শিক্ষার্থীকে জীবিত মানুষের শরীরে নির্দিষ্ট কোনো অঙ্গ, ধমনী, শিরা কিংবা স্নায়ু এঁকে দেখাতে বলা হয়। প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী শরীরের প্রধান অঙ্গগুলো শরীরের যেখানে থাকে প্রায় হুবহু সেভাবে এঁকে দেখাতে পারে।বিস্তারিত পড়ুন
চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ‘সার্ফেস মার্কিং’ নামক একটি পরীক্ষা হয়ে থাকে। এই পরীক্ষাতে একজন শিক্ষার্থীকে জীবিত মানুষের শরীরে নির্দিষ্ট কোনো অঙ্গ, ধমনী, শিরা কিংবা স্নায়ু এঁকে দেখাতে বলা হয়। প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী শরীরের প্রধান অঙ্গগুলো শরীরের যেখানে থাকে প্রায় হুবহু সেভাবে এঁকে দেখাতে পারে। চলচ্চিত্রে অপারেশন থিয়েটারের কোনো দৃশ্যে দেখে থাকবেন আপনারা, অপারেশনের শুরুতেই মার্কার দিয়ে কিছু জায়গা চিহ্নিত করা হয়, এগুলো হচ্ছে অপারেশনের নিয়ম। কোথায় কীভাবে কাটতে হবে, একজন সার্জন ভালোমতোই জানেন।
জীবিত মানুষের বুকে অঙ্কিত রয়েছে হৃৎপিণ্ড। এমনিভাবে শরীরের সকল অঙ্গ, ধমনী, শিরা, স্নায়ু সবকিছু চিহ্নিত করা যায়; Source: web.duke.edu
ম্যাকবার্নি’স পয়েন্ট (McBurney’s Point) নামক একটি জায়গা রয়েছে মানুষের শরীরে, এই বিন্দুতে কাটা হলেই মাংসপেশী সরানোর পর অ্যাপেন্ডিক্স পাওয়া যাবে। দেখা যাবে, ছোট্ট একটি থলির ন্যায় বাড়তি অংশ সিকামের (বৃহদান্ত্রের একটি অংশ) সাথে জুড়ে আছে।
১ নম্বর পয়েন্টটি হলো ম্যাকবার্নি’স পয়েন্ট; Source: Wikimedia Commons
উপরের ছবিতে ১ নম্বর পয়েন্টটি হলো ম্যাকবার্নি’স পয়েন্ট। আপনি কোমর বরাবর হাত দিয়ে দেখুন, দু’পাশে দুটি জায়গাতে শক্ত হাড়ের উপস্থিতি টের পাবেন। Ilium নামক হাড়ের একটি অংশ এটি, একে বলা হয় Anterior Superior Iliac Spine। ৩ নম্বর পয়েন্টটি হলো এই Anterior Superior Iliac Spine। ২ নম্বর পয়েন্টটি দেয়া হয় একদম নাভীতে। ২ আর ৩ নম্বরকে সংযুক্ত করে একটি লম্বা রেখা আঁকা হয়, এই রেখাকে যদি উপরে দুই ভাগ আর নিচে এক ভাগ রেখে বিভক্ত করা হয়, তবেই আমরা পাবো ১ নম্বর পয়েন্ট তথা ম্যাকবার্নি’স পয়েন্ট।
অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যাসার্ধ ৭-৮ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে সাধারণত, আর দৈর্ঘ্য হয় ২-২০ সেন্টিমিটার। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অ্যাপেন্ডিক্স ৯ সেন্টিমিটার হয়। এছাড়াও অ্যাপেন্ডিক্সের অবস্থান অনুযায়ী এর বিভিন্ন ধরনও রয়েছে। সাধারণত তলপেটের ডান পাশে অবস্থান করে অ্যাপেন্ডিক্স, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে Right Iliac Fossa নামে ডাকা হয়।
অবস্থানভেদে অ্যাপেন্ডিক্সের বিভিন্ন ধরন; Source: jcol.elsevier.es
সিকামের সাথে যুক্ত ছোট্ট থলিটিই হলো অ্যাপেন্ডিক্স; Source: news-medical.net
আমাদের দেহে অ্যাপেন্ডিক্স কোন দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে, সেই ব্যাপারে এখনো নিশ্চিতভাবে বের করা যায়নি। একে ধারণা করা হয় ভেস্টিজিয়াল র্যামনেন্ট হিসেবে। র্যামনেন্ট হলো শরীরের এমন একটি অংশ যা গর্ভে থাকা অবস্থায় কোনো এক দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলো, কিন্তু জন্মের পর আর কোনো কাজ নেই তার, একটি অবশিষ্টাংশ হিসেবে দেহে রয়ে গেছে। দেহের কিছু লিগামেন্টও র্যামনেন্ট হিসেবে তৈরি হয়েছে। দেহের সবচেয়ে চাক্ষুষ র্যামনেন্ট হলো আমাদের নাভী (আম্বিলিকাস), এই নাভী আম্বিলিক্যাল কর্ডের র্যামনেন্ট। আর ভেস্টিজিয়াল র্যামনেন্ট বলা হয় সেসব অংশকে যা বিবর্তনের মাধ্যমে তার দায়িত্ব হারিয়ে ফেলেছে। আমাদের পূর্ব পুরুষদের কোনো একসময় হয়তো খাদ্য পরিপাকে এর প্রয়োজনীয়তা ছিলো, দিন দিন বিবর্তনে এই অ্যাপেন্ডিক্স ছোট হয়ে তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে এবং র্যামনেন্ট হিসেবে দেহে রয়ে গিয়েছে। মানবদেহে এমন ভেস্টিজিয়াল র্যামনেন্টের নাম প্রায় একশোটি বলা যাবে।
আম্বিলিক্যাল কর্ড, যার সাহায্য গর্ভাবস্থায় সন্তান মায়ের প্লাসেন্টার সাথে যুক্ত থাকে; Source: open.edu
তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, দেহের কিছু লিম্ফয়েড কোষ অ্যাপেন্ডিক্সে রয়েছে, যার দরুন অ্যাপেন্ডিক্স ইনফেকশনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলায় সাহায্য করতে পারে। একটি সময় ছিলো, যখন সার্জনরা কোনো সার্জারির উদ্দেশ্যে কারো পেট কাটলে, এমনি অ্যাপেন্ডিক্স কেটে ফেলে দিতেন, যাতে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা তৈরি না করতে পারে। তবে পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, অ্যাপেন্ডিক্সবিহীন ব্যক্তিদের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি খানিকটা বেড়ে যায়। ২০০৬ সালের পর থেকে তাই এমন ফ্রি অপারেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অ্যাপেন্ডিক্স কেটে দেহ থেকে সরিয়ে ফেলা খুবই সাধারণ একটি অপারেশন। এই অপারেশনটির নাম হলো অ্যাপেন্ডেকটোমি, আর সমস্যাটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয়ে থাকে অ্যাপেন্ডিসাইটিস। মানুষ প্রায়ই বলে থাকে, অমুকের অ্যাপেন্ডিক্স হয়েছে, এখানে শব্দের প্রয়োগটি ভুল। শরীরের এই অংশটির নাম অ্যাপেন্ডিক্স, কিন্তু এতে যখন ব্যাকটেরিয়াল আক্রমণ ঘটে, প্রদাহ (জ্বলুনি) শুরু হয়, তখন একে বলা হয় অ্যাপেন্ডিসাইটিস। ঠিক সেই মুহূর্তেই দেহের অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যাথা শুরু হয়, ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে, একসময় অসহ্য হয়ে দেখা দেয়। অ্যাপেন্ডেকটোমি ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না তখন।
ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে প্রদাহ সৃষ্টি হয় অ্যাপেন্ডিক্সে, এতে করে অ্যাপেন্ডিক্স ফুলতে শুরু করে; Source: news-medical.net
এখানে একটি মজার ব্যাপার রয়েছে, অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যাথাটা হয়ে থাকে সাধারণত রেফার্ড পেইন (Referred Pain) হিসেবে। এক স্থানের ব্যথার অনুভূতি তৈরি হয় অন্য স্থানে। কম-বেশি সকলেরই ঠাণ্ডা লেগেছে নিশ্চয়ই, নাক-গলাতে ব্যথার বদলে সামান্য ব্যথা হয় কানে, লক্ষ্য করে দেখবেন। এটাও একধরনের রেফার্ড পেইন। আমাদের স্পাইনাল কর্ডের বিভিন্ন অংশ রয়েছে পুরো মেরুদণ্ড জুড়ে, এই অংশগুলোর নামকরণ করা হয়েছে মেরুদণ্ডের কশেরুকাগুলোর নামে। অ্যাপেন্ডিক্সের স্নায়বিক অনুভূতি মস্তিষ্কে বহন করে থাকে দশম থোরাসিক স্পাইনাল সেগমেন্টটি।
স্পাইনাল কর্ডের সবগুলো সেগমেন্ট, কশেরুকার নামে নামকরণ করা হয় প্রতিটি সেগমেন্টের; Source: humananatomylibrary.com
Regions of Anterior Abdominal Wall; Source: web.duke.edu
দশম থোরাসিক সেগমেন্টটি একইসাথে আবার আম্বিলিক্যাল রিজিওনের অনুভূতি মস্তিষ্কে বহন করে থাকে। পেটকে মানচিত্রের গ্রিডের ন্যায় নয়টি রিজিওনে ভাগ করা হয়ে থাকে অপারেশনের সময় অঙ্গগুলোকে খুঁজে বের করার সুবিধার্থে। নাভী ও নাভীর চার পার্শ্বস্থ বর্গাকার অল্প অংশকে আম্বিলিক্যাল রিজিওন বলা হয়।
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা তাহলে সবসময় অনুভূত হবে নাভীর চারপাশের দিকে, তবে আবার নাভীর দিকে ব্যথা করলেই ভয় পেয়ে যাবেন না আপনার অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে ভেবে। দশম থোরাসিক স্পাইনাল সেগমেন্ট আরো অনেক অঙ্গের অনুভূতি বহন করে থাকে।
খাদ্যের পরিপাক সমস্তই সম্পন্ন হয়ে যায় ক্ষুদ্রান্ত্রে, পরিপাক না হওয়া অংশই ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে বৃহদান্ত্রে প্রবেশ করে। বৃহদান্ত্রের প্রথম অংশই হলো সিকাম। সিকাম একটি থলির মতো, এই সিকাম থেকে অপরিপাককৃত খাদ্যাংশ উপরের দিকে কোলনে প্রবেশ করবে। পেরিস্ট্যালসিসের মাধ্যমে এমনটি হয়ে থাকে, পেরিস্ট্যালসিস ছাড়াও অনেক ধরনের মুভমেন্ট ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের দেহের পরিপাকতন্ত্রের। এই মুভমেন্টগুলো খাবারকে পুরো পরিপাকতন্ত্র ঘুরে বেড়াতে সহায়তা করে। অভিকর্ষের টানে সিকামের নিচের দিকে সংযুক্ত অ্যাপেন্ডিক্সে খাদ্যাংশ যখন প্রবেশ করতে যায়, অ্যাপেন্ডিক্সের মাংসপেশি তখন সংকুচিত হয়ে একটি ধাক্কার মতো তৈরি করে দেয়, এর দরুন অ্যাপেন্ডিক্সের দিকে ধাবিত খাদ্যাংশ উপরের দিকে কোলনে প্রবেশ করে।
সিকাম আর অ্যাপেন্ডিক্সের সংযোগস্থলে একটি ছিদ্রসদৃশ অংশ রয়েছে, এতে যদি অল্প পরিমাণে খাদ্যাংশ জমা হয়ে যায়, একসময় জমতে জমতে ছিদ্রটি বন্ধ হয়ে যায়, তখন ভেতরে থাকা কোনোকিছু আর বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। এভাবেই শুরু হয় প্রদাহ, প্রদাহ বাড়তে শুরু করে, ব্যাকটেরিয়াও বাড়তে শুরু করে। সরু নালীর মতো অ্যাপেন্ডিক্স তখন ফুলে উঠতে থাকে। যদি অ্যাপেন্ডেকটোমি সময়মতো করা না হয়, একসময় অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে বেরিয়ে আসে ভেতরের সমস্ত কিছু। পেটের ফাঁকা স্থানগুলোর সব জায়গায় তখন সমস্ত ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে।
আপনার শরীরের ছোটখাট একটি অংশ, যা প্রায় কার্যক্ষমতাবিহীন; সেটিও আপনার এত বড় ক্ষতি করতে সক্ষম। তাই সচেতনতা তৈরি করুন, অ্যাপেন্ডিসাইটিসকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করুন।
সংক্ষেপে দেখুন