জরায়ু ক্যান্সার
জরায়ুর ক্যান্সার কে গর্ভাশয় ক্যান্সার ও বলা হয়। জরায়ু কলা থেকে সৃষ্ট যেকোন ধরনের ক্যান্সারই জরায়ুর ক্যান্সারের অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে পরিচিত সার্ভিকাল ক্যান্সারও জরায়ুর ক্যান্সারের অন্তর্ভুক্ত।
জরায়ু ক্যান্সার english
জরায়ু ক্যান্সার কে ইংলিশে Cervical cancer বলা হয়।
জরায়ু ক্যান্সারের কারণ – মেয়েদের জরায়ু ক্যান্সার কেন হয়
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসকে (এইচপিভি) জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। ১০০টিরও বেশি প্রজাতির এইচপিভি আছে।
এর মধ্যে দুই ধরনের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের কারণে এই ক্যান্সার হয়ে থাকে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
অল্প বয়সে যৌন সম্পর্ক, একাধিক যৌন সঙ্গী, একাধিক পূর্ণ গর্ভধারণ, কলামাইডিয়া, গনোরিয়া, সিফিলিস বা হরপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস টাইপ-২ সংক্রমণ, ধূমপান, দীর্ঘ সময়ের জন্য গর্ভনিরোধক বড়ি ব্যবহার, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
এছাড়া বাল্যবিবাহ, ১৮ বছরের কম বয়সে সন্তানধারণ, অধিক সন্তান, ঘন ঘন সন্তানধারণ, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব, অপুষ্টি, বহুগামিতা ও হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে নারীরা জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় বেশি।
জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ – জরায়ু ক্যান্সার এর লক্ষণ
জরায়ু ক্যান্সারের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ যা বুঝতে পারলেই সতর্ক হয়ে যান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
১. আচমকা ক্ষুধা কমে যাওয়া।
২. সবসময় বমি বমি ভাব কিংবা বার বার বমি হওয়া।
৩. পেটে অতিরিক্ত ব্যথা কিংবা পেট ফুলে থাকা।
৪. গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য। হালকা খাবারের পরও ভরপেট অনুভব করা, পেটে অস্বস্তি লাগা, ইত্যাদি পেটের কোনো সমস্যা খুব বেশি হলে তা জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
৫. যৌনাঙ্গের চারপাশে চাপ চাপ বোধ হওয়া এবং ঘন ঘন মূত্রত্যাগ করা।
৬. অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া কিংবা হঠাৎ করে ওজন অনেক কমে যাওয়া।
৭. অভ্যস্ত থাকার পরেও যৌনমিলনের সময় ব্যথা অনুভূত হওয়া।
৮. অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করা।
৯. নারীদের মেনোপজ হয়ে যাওয়ার পরেও রক্তক্ষরণ হওয়া।
জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়
১৬ বছরের আগে কোনো মেয়ের বিয়ে না দেওয়া, জন্মনিয়ন্ত্রক পিল ৫ বছরের বেশি সময় ধরে সেবন না করা, বহুগামিতা রোধ ইত্যাদি। এ ছাড়া ধূমপান, সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ কিংবা অপরিচ্ছন্নতার কারণেও জরায়ুমুখের ক্যানসার হয়ে থাকে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। তা ছাড়া সময়মতো টিকা নিতে হবে।
জরায়ু ক্যান্সার এর চিকিৎসা – জরায়ু ক্যান্সার ভ্যাকসিন
গবেষক ও চিকিৎসকরা বলছেন, জীবাণু প্রবেশের পর ১৫ থেকে ২০ বছরও সময় লাগে জরায়ুমুখের ক্যান্সার হতে। তার মানে হলো এটি নির্ণয়ে অনেকটা সময় পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। জরায়ু মুখের ক্যান্সারের মুল সমস্যা হল এটি শেষ পর্যায়ে গেলেই শুধুমাত্র ব্যথা দেখা দেয়।
আশার কথা এই যে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পেলে জরায়ুমুখের ক্যানসার সম্পূর্ণ রূপে ভালো হয়ে যায় এবং এটিই একমাত্র ক্যানসার, যার টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে।
গার্ডাসিল ও সিভারিক্স নামের দুইটি টিকা জরায়ু ক্যান্সারের জন্য চিকিৎসকরা দিয়ে থাকেন। এই দুটি টিকাই সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রায় ১০০ ভাগ কার্যকরী এবং ভবিষ্যতে জরায়ু ক্যান্সারের সম্ভাবনা ৭০ ভাগ পর্যন্ত কমাতে পারে।
জরায়ু ক্যান্সারের টিকার দাম
সারভারিক্স (Cervarix Vaccine) [যা HPV – 16 ও 18 – এর প্রতিরোধক টিকা] – দাম প্রতি ডোজ ২৫০০ টাকা ।
গার্ডাসিল (Gardasil Vaccine) [যা HPV – 6, 11, 16 ও 18 – এর প্রতিরোধক টিকা] – দাম প্রতি ডোজ ৩৫০০ টাকা ।
জরায়ু ভ্যাকসিন কখন দিতে হয়
সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলে বিবাহিত জীবন বা যৌনজীবন শুরুর আগে। আমরা বলি, ৯ থেকে ১৩ হলো উপযুক্ত সময়।
৯ থেকে ১৩ বছর বয়সের একটি মেয়েকে যদি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, তাহলে তাকে দুটো ডোজ দিতে হবে। তখন একটি ডোজের দাম তার এমনিতেই কমে যাচ্ছে। তারপরও সে দিতে পারবে; বিবাহিত মেয়েরা দিতে পারবে। কারণ, ভ্যাকসিন দিলে জরায়ুমুখ ক্যানসারের আশঙ্কাও কমে আসবে।
সর্বোপরি উপরোক্ত লক্ষণ দেখা দিলে হেলাফেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টার্নেট