এই প্রশ্নটি দেখায় কিভাবে Kabir Singh এবং Animal এর মত সিনেমা সামাজিক নিয়ম এবং আচরণকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে সম্পর্ক এবং পুরুষত্ব সম্পর্কিত।
Adnan bin zamanপণ্ডিত
Kabir Singh এবং Animal এর মতো সিনেমাগুলি কীভাবে সমাজকে প্রভাবিত করে, বিশেষত সামাজিক নিয়ম (social norms) এবং আচরণের ক্ষেত্রে?
শেয়ার করুন
Kabir Singh এবং Animal-এর মতো সিনেমাগুলি সমাজে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এগুলো একদিকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে, অন্যদিকে কিছু বিতর্কিত বার্তা বহন করে, যা সমাজের সামাজিক নিয়ম এবং আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে।
Kabir Singh-এর প্রভাব
Kabir Singh সিনেমাটি একাধিক দিক থেকে সমাজকে প্রভাবিত করেছে।
টক্সিক পুরুষত্ব (Toxic Masculinity)
সিনেমার প্রধান চরিত্রের রাগ, সহিংসতা, এবং সম্পর্কের প্রতি তার অধিকারবোধ অনেক তরুণ দর্শকের মধ্যে ভ্রান্ত বার্তা দিতে পারে। এমন একটি চরিত্রকে রোমান্টিকাইজ করা হলে, এটি সমাজে টক্সিক আচরণকে বৈধতা দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে।
সম্পর্কের বার্তা
সিনেমাটি ভালোবাসার গভীরতা দেখালেও, এটি সম্পর্কের মধ্যে সম্মানের ঘাটতির দিকটিও তুলে ধরে। অনেক দর্শক এই আচরণকে গ্রহণযোগ্য বলে ভুল করতে পারেন।
Animal-এর প্রভাব
Animal সিনেমার প্রভাব কিছুটা ভিন্ন।
পিতৃ-পুত্রের সম্পর্ক
সিনেমাটি পারিবারিক সম্পর্ক এবং পিতৃত্বের জটিলতাগুলি নিয়ে আলোচনা করে। এটি অনেকের মধ্যে পরিবারকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ করে দেয়।
সহিংসতার রূপ
এই সিনেমাটি সহিংসতার মাধ্যমে ক্ষমতা প্রদর্শন এবং প্রতিশোধের গল্প বলে। এটি তরুণ সমাজের একটি অংশকে সহিংসতাকে সমস্যার সমাধান হিসেবে দেখার ঝোঁক বাড়াতে পারে।
সংবেদনশীলতা
সিনেমাটি গভীর আবেগ ও মানসিক টানাপোড়েন দেখায়, যা পারিবারিক মূল্যবোধ এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তাভাবনা উসকে দিতে পারে।
সামাজিক প্রভাব
এমন সিনেমাগুলোর ভালো এবং খারাপ দিক দুটোই থাকে।
ভালো দিক
এই সিনেমাগুলো দর্শকের কাছে নতুন গল্প ও চরিত্রের গভীরতা তুলে ধরে। সমাজের সম্পর্কের জটিলতা ও অভিজ্ঞতার বিভিন্ন দিক নিয়ে ভাবতে সাহায্য করে।
খারাপ দিক
সহিংসতা এবং টক্সিক আচরণের গ্লোরিফিকেশন সমাজে ভুল বার্তা প্রেরণ করতে পারে। বিশেষত তরুণ প্রজন্ম এ ধরনের আচরণকে অনুকরণ করার ঝুঁকিতে থাকে।
যদিও সিনেমাগুলি শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যম, তবে এগুলোর গল্প এবং চরিত্রগুলি সমাজের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, এই ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং উপস্থাপনায় দায়িত্বশীলতা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দর্শকদেরও সচেতন থাকতে হবে এবং সিনেমাগুলোর বার্তা বিশ্লেষণ করে গ্রহণ করতে হবে।
Kabir Singh এবং Animal—এই দুই সিনেমাই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে এবং তা সমাজে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে সামাজিক নিয়ম এবং আচরণের ক্ষেত্রে। এগুলি যে ধরনের চরিত্রের মাধ্যমে গল্প বলা হয়েছে এবং যে ধরনের বার্তা এগুলোর মাধ্যমে সমাজে পৌঁছায়, তা একটি বড় ধরনের আলোচনার সৃষ্টি করেছে। চলুন, বিস্তারিতভাবে দেখি কীভাবে এই সিনেমাগুলি সামাজিক নিয়ম এবং আচরণে প্রভাব ফেলতে পারে:
১. গণমাধ্যমের প্রভাব এবং নেগেটিভ চরিত্রের প্রশংসা
Kabir Singh এবং Animal—এ দুটি সিনেমাতেই প্রধান চরিত্রগুলি মানসিক অস্থিরতা, অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক আচরণ এবং ভুল পথে চলার প্রবণতা প্রদর্শন করে। Kabir Singh-এর মূল চরিত্রটি একজন অত্যন্ত আবেগপ্রবণ এবং দখলদারি প্রকৃতির পুরুষ, যিনি প্রেম এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেন। একইভাবে, Animal-এও একজন জটিল চরিত্র দেখা যায়, যিনি ক্ষোভ এবং আত্মবিধ্বংসী প্রবণতার শিকার।
এই ধরনের চরিত্রগুলির প্রতি সামাজিক আগ্রহ এবং তাদের থেকে কিছুটা স্বীকৃতি (যেমন, তাদের যন্ত্রণার এবং একে অপরের প্রতি ভালোবাসার দৃশ্যের প্রতি সহানুভূতি) সমাজে কিছু নেতিবাচক বার্তা পাঠাতে পারে। যদিও সিনেমাগুলি সম্ভবত তাদের নিজস্ব পরিস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ সংগ্রামের মাধ্যমে এদের আচরণের কারণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে, তবুও সাধারণ দর্শক যে এটি একটি “cool” বা “romantic” আচরণ হিসেবে গ্রহণ করবে, তার সম্ভাবনা রয়েছে।
২. পোশাক, সম্পর্ক এবং পুরুষত্বের ভুল ধারণা
এই সিনেমাগুলিতে পুরুষ চরিত্রদের মধ্যে একটি প্রচলিত “toxic masculinity”-এর প্রকাশ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে যে আচরণগুলির মধ্যে পুরুষত্বের শক্তি বা আধিপত্যের ধারণা থাকে, তা সমাজে কিছু ভুল বার্তা দিতে পারে। যেমন:
এধরনের সিনেমাগুলি অনেক সময় সম্পর্কের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ, সহিংসতা বা বিষাক্ত সম্পর্কের অস্বাস্থ্যকর দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে, যা তরুণ সমাজের মধ্যে ভুল ধারণা গড়ে তুলতে পারে।
৩. আবেগ এবং মানসিক স্বাস্থ্য
উপরিউক্ত সিনেমাগুলিতে, বিশেষ করে Kabir Singh-এ, চরিত্রগুলির মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং আবেগের অস্থিরতা তুলে ধরা হয়। Kabir Singh-এর চরিত্রটি মানসিকভাবে অস্থির, তবে তার মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর প্রতি গুরুত্ব কম দেওয়া হয়েছে। সে নিজের যন্ত্রণা এবং আবেগে অনেকসময় অন্যদের ক্ষতি করে, এবং সমাজে এমন আচরণের কিছুটা প্রশংসা পাওয়াও সম্ভব হতে পারে।
যদিও এটি একটি নাটকীয় চরিত্রের গভীরতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু সাধারণ দর্শক এটি অনুকরণীয় আচরণ হিসেবে দেখলে, তা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে। “পুরুষকে আবেগ বা দুর্বলতা দেখানোর দরকার নেই”—এমন সামাজিক বার্তা পুরুষদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি স্বীকার করতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
৪. সামাজিক নীতি এবং সম্পর্কের ধরণ
Kabir Singh এবং Animal—এই সিনেমাগুলিতে সম্পর্কের কিছু মূল ধারণা যেমন, আধিপত্য, মালিকানা এবং কন্ট্রোল, খুবই সাধারণ এবং প্রতিষ্ঠিত। তবে, এগুলি আধুনিক সমাজের সম্পর্কের স্বাস্থ্যকর ধারণার বিপরীতে। সামাজিক নিয়মে আসলে সম্পর্ককে ভারসাম্যপূর্ণ, সমতাভিত্তিক এবং পারস্পরিক সম্মানজনক হওয়া উচিত। এই ধরনের সিনেমাগুলি ভুলভাবে দেখাতে পারে যে সম্পর্কের মধ্যে আবেগের অতিরিক্ত প্রাদুর্ভাব, সহিংসতা বা একপেশে নিয়ন্ত্রণ আসলে ‘প্যাশন’ বা ‘ভালোবাসা’র অংশ হতে পারে।
এছাড়া, একে অপরের মধ্যে প্রতিশোধ, প্রতারণা, কিংবা মানসিক নির্যাতন এই সিনেমাগুলির কিছু দৃশ্যের মাধ্যমে সাধারণ হতে পারে, যা বাস্তব জীবনে ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে।
৫. বিপদজনক আচরণের স্বীকৃতি
Kabir Singh এবং Animal—এটি সাধারণত এক ধরনের “bad boy” বা “rebel” চরিত্রের তৈরি করা হয় যারা শেষ পর্যন্ত তাদের সহিংসতা বা ভুল আচরণে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। তবে, সিনেমাগুলির কিছু দর্শক এটি “romanticize” বা মায়াবী ভাবে গ্রহণ করতে পারেন, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, যারা সামাজিক এবং সম্পর্কগত অভিজ্ঞতা কম।
এটি সমাজের কাছে কিছু আচরণকে উত্তেজনাপূর্ণ, বা অতি সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে, যা আত্মবিশ্বাসী, সুস্থ এবং দায়িত্বশীল আচরণের প্রতি আস্থা কমাতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, এটি পুরুষদের মধ্যে নেগেটিভ মানসিকতা এবং সম্পর্কের প্রতি ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে।
উপসংহার:
Kabir Singh এবং Animal এর মতো সিনেমাগুলি সমাজে কিছু গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বিতর্কিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণকে তুলে ধরে। এগুলি একটি নির্দিষ্ট ধরনের “romanticized” বা “cool” বিপথগামী চরিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি প্রচার করে, যা কিছু সমাজে বিপজ্জনক, বিষাক্ত অথবা আত্মবিধ্বংসী আচরণের প্রতি এক ধরনের স্নেহ বা প্রশংসা তৈরি করতে পারে। এসব সিনেমাগুলির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সম্পর্কের প্রতি, বিশেষ করে পুরুষদের আবেগ এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ভুল ধারণা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সামাজিক সম্পর্ক এবং আচরণ নিয়ে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে কেউ বিষাক্ত আচরণের স্বীকার না হয় বা এমন ধরনের অবৈধ আচরণকে সাধারণ ভাবে গ্রহণ না করে।