দেজা ভু কী ?
শেয়ার করুন
সাইন আপ করুন
লগিন করুন
পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? আপনার ইমেইল এড্রেস দিন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরির লিংক পেয়ে যাবেন।
আপনি কেন মনে করছেন এই প্রশ্নটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই উত্তরটি রিপোর্ট করা উচিৎ?
আপনি কেন মনে করছেন এই ব্যক্তিকে রিপোর্ট করা উচিৎ?
কিছুদিন আগে যখন আমি ঢাকা অ্যাটাক মুভিটি দেখছিলাম তখন মুভিটির শেষ দৃশ্য যেটিতে জিসান অর্থাৎ খলনায়ককে মারা হয় সেই দৃশ্যে এসে আমার বার বার মনে হচ্ছিল আমি এটি আগেও দেখেছি।
আমি নিজেকে যতই বোঝাতে চাচ্ছিলাম যে এটি আগে দেখার কোন প্রশ্নই আসে না, তারপরেও মনে হচ্ছিল আমি এটি দেখেছি। আর এই অনুভূতি একদমই প্রথম নয় আমার জন্য, এর আগেও অনেকবার আমি এর সম্মুখীন হয়েছি।
যেমন বালিয়াটি জমিদার বাড়ির পেছনের পুকুরটি দেখার পর ওই পুকুরটি আমার খুব চেনা চেনা লাগছিল। প্রথম যেদিন এই জিনিসটি আমি অনুভব করতে পারি সেদিন অনেকের সাথে কথা বলেও জানতে পারিনি এটি কী বা কেন এটি হয়।
পরে একদিন কোন একটি গল্পের বই পড়তে পড়তে জানতে পারি এই অনুভূতির নাম হচ্ছে ‘দেজা ভ্যু’, ইংরেজীতে যার অর্থ ‘already seen’, বাংলায় আমরা বলতে পারি ‘ইতিপূর্বে দেখা’। সহজ ভাষায় দেজা ভ্যু হচ্ছে কোন কিছুকে প্রথমবার দেখেই পরিচিত বলে মনে হওয়া যদিও সেটি আমাদের পরিচিত হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।
এই কোন কিছুটা যে শুধু কোন জিনিস তাই নয়, হতে পারে কোন জায়গা, কোন মানুষ অথবা বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা দেয়ার কোন মুহূর্ত।
দেজা ভ্যু কেন হয়?
যেদিন জানতে পারলাম কোন কিছুকে পরিচিত মনে হওয়ার এই অনুভূতির নাম হচ্ছে দেজা ভ্যু সেদিনই বসে পড়লাম নেট ঘাঁটতে। মূল উদ্দেশ্য ছিল দেজা ভ্যু কেন হয় তা জানা। কিন্তু দেজা ভ্যুর আসল কারণ জানতে গিয়ে আরো ধাঁধায় পড়ে গেলাম।
কারণ, দেজা ভ্যু হওয়ার আসল কারণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো একমত হতে পারেন নি। একেকজন একেকরকম কারণ দেখিয়েছেন দেজা ভ্যু সংঘটিত হওয়ার। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি কারণ তুলে ধরছি তোমাদের জন্য:
১। স্বপ্নের খেলা
দেজা ভ্যু হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রথম যে ধারণার কথা আমি বলবো সেটি স্বপ্ন সম্পর্কিত। কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে, মানুষের মনে যে জিনিসটি নিয়ে সন্দেহ জাগে যে সে সেটি আগে দেখেছে অর্থাৎ দেজা ভ্যু হয় যে জিনিসটি নিয়ে সেটি সে আগেই স্বপ্নে দেখে।
কিন্তু মানুষ খুব কম স্বপ্নই মনে রাখতে পারে। আর তাই সকালে উঠে সেই স্বপ্নটি আর তার মনে থাকে না কিন্তু অবচেতন মনে ঠিকই সেই স্বপ্নটি সংরক্ষিত থাকে। পরে যখন সে বাস্তবে সেই ঘটনা বা জিনিসটির সম্মুখীন হয় তখন তার অবচেতন মন সেই স্বপ্নে দেখা স্মৃতিটিকে মনে করিয়ে দেয়। তখনই তার মনে হয় যে ওই জিনিসটি সে আগেই দেখেছে বা ওই ঘটনা আগেও ঘটেছে।
আমার যখন প্রথম দেজা ভ্যু হয় তখনো আমার এমনই মনে হয়েছিল। আমার এমন একটি জায়গা দেখে মনে হয়েছিল যে আমি এখানে আগেও এসেছি যেখানে তার আগে আমার যাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে জায়গাটি আমার এত পরিচিত মনে হচ্ছে কেন। পরে আমার বারবার মনে হচ্ছিল যে আমি হয়তো স্বপ্নে দেখেছি জায়গাটি।
২। স্মৃতির অন্তরালে
এখন যে ব্যাখ্যার কথা বলব সেটি স্মৃতির সাথে সম্পর্কিত। এই ধারণায় বলা হয় যে, যেই জিনিস বা স্থান বা ঘটনা সম্পর্কে দেজা ভ্যু হয় সেই জিনিস বা স্থান বা ঘটনা পূর্বেও মানুষ দেখে। কিন্তু অনেক আগে তা দেখার কারণে তা স্মৃতিতে পুরোপুরিভাবে থাকে না। কিন্তু অবচেতন মনে বা স্মৃতিতে তার একটা ছাপ থাকে।
এর ফলে যখন সে পুনরায় সেই জিনিস বা স্থান বা ঘটনার মুখোমুখি হয় তখন স্মৃতির গভীর থেকে ওই পুরনো স্মৃতিও তার সামনে চলে আসে। তখন তার মনে হয় যে এটি আগেও ঘটেছে বা সে এটি আগেও দেখেছে।
এটি একটি ভালো ব্যাখ্যা হতে পারে কিন্তু খুব বেশি শারীরিক নয়। কারণ দেজা ভ্যুর অভিজ্ঞতা যাদের হয়েছে তাদের মধ্য বেশিরভাগই জোর দিয়ে বলে পূর্বে ওই জিনিস বা জায়গা বা ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।
৩। সব দোষ মস্তিষ্কের
এবারের ব্যাখ্যাটি মস্তিষ্কের উপর নির্ভর করে দেয়া। আমরা সবাই জানি যে, মস্তিষ্কের এক এক অংশ এক এক কাজ করে থাকে। দেখার কাজটি মস্তিষ্কের যেই অংশটি করে থাকে সেটি মস্তিষ্কের পেছনে অবস্থিত। এটি কোন কিছু দেখে এবং সেটিকে ব্যাখ্যা করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে যার ফলে আমরা বুঝতে পারি আমরা কী দেখছি।
অনেক বিশেষজ্ঞ দেজা ভ্যু কে মানসিক রোগের সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন
কোন কিছু দেখে সেটিকে ব্যাখ্যা করতে মস্তিষ্কের এই অংশটির খুব কম সময় লাগে, সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ের মধ্যেই এই কাজটি সম্পন্ন হয়ে যায়। কিন্তু যদি কোন কারণে কোন কিছু দেখা আর ব্যাখ্যা করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করার এই ক্ষুদ্র সময়ে আমাদের মন সামান্য সময়ের জন্য বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় তাহলে দেজা ভ্যু হয়।
এর কারণ হচ্ছে একবার চোখ জিনিসটি বা ঘটনাটি দেখে, তারপর মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় কিছু সময়ের জন্য। পরে যখন চোখ আবার সেই জিনিসটি বা ঘটনাটি দেখে এবং তা ব্যাখ্যা করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে তখন একটু আগে দেখার ঘটনাটাও মনে পড়ে যায়। তখন মনে হয় এটি আমি আগেও দেখেছি। কিন্তু সে আগে যে একটু আগেই তা মাথায় আসে না। ফলে মনে হয় অনেক আগের ঘটনা এটি।
এই ব্যাখ্যাটি মোটামুটি চলনসই বলা চলে। এগুলো ছাড়াও আরো কিছু ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে দেজা ভ্যু সম্পর্কে। অনেকেই আবার অতিপ্রাকৃত ঘটনার সাথে দেজা ভ্যুর যোগসূত্র আছে বলে মনে করেন।
দেজা ভ্যু হওয়া কি খারাপ?
অনেক বিশেষজ্ঞ দেজা ভ্যু কে মানসিক রোগের সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী দেজা ভ্যু তাদেরই হয় যাদের কিছুটা মানসিক সমস্যা আছে। কিন্তু এর পক্ষে তারা কোন প্রমাণ দেখাতে পারেন নি। পৃথিবীর প্রায় ৬০%-৭০% মানুষ দেজা ভ্যুর মুখোমুখি হয়। তাদের বেশিরভাগেরই কোন রকম মানসিক সমস্যা নেই।
আর যারা দেজা ভ্যু এর সাথে অতিপ্রাকৃত ঘটনার সম্পর্কে খুঁজে পান তারাও কোন শক্ত প্রমাণ দেখাতে পারেন নি। আর তাই হলপ করে বলা যায় না যে দেজা ভ্যু হওয়াটা খারাপ কিছু।
দেজা ভ্যুর যে সকল কারণ আমরা দেখতে পাই সেগুলো থেকে দেখা যায় যে এগুলো মস্তিষ্কের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই পড়ে। আর তাই এটিকে খারাপ বা ক্ষতিকর কিছু হিসেবে অভিহিত করা যায় না।
দেজা ভ্যু হওয়াটা খারাপ কিছু নয়, এটা আমার জন্য বেশ ভালো সংবাদই বলা চলে। আমার তো মাঝে মাঝে মজাই লাগে। প্রায়ই আমার এমন হয়। আগে খুব বেশি ভাবতাম, ঘাঁটাঘাঁটি করতাম দেজা ভ্যু নিয়ে। এখন এটা বেশ উপভোগ করি।
ক্রেডিটঃ 10minuteschool